মহাশ্বেতা! দেবীর
শে গন্গ
এরা
& ওয়েস্ট রেঞ্জ 1 কলকাতা-১?
প্রথম প্রকাশ
পয়লা ৫ঠবশাখ ১৩৫১
প্রচ্ছদ
খালেদ চৌধুরী
প্রকাশক
স্থবূজিৎ ঘোষ
প্রমা প্রকাশনী ॥ « ওয়েস্ট রেঞ্জ
কলকাতা-১৭
মুদ্রাকর
মন্সধ সিংহরায়
বূপ-লেখা ॥ ২২ সীতারাম ঘোষ স্ট্রীট
কলকাতা-”
ব্লক ও প্রচ্ছদ মুদ্রণ
রিপ্রোডাকসন সিপ্ডিকেট 1 ৭/১ বিধান সরণী
কলকা তা-ঙ
চিন্সোহন সেহানবীশ ও উমা সেহানবীশকে-_
একটি সময়কে সংগ্রহ কমে
ধান জাতিন জন্য বেখে গেলেন -”
মহাশ্থেত। দেবী আজ বাংলা সাহিত্যে এমনই একটি নাম যা পরিচিতির
অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিন ধরে এত বিভিন্ন শ্বাদের গল্প তিনি
আমাদের উপহার দিয়েছেন, যে তার থেকে নির্বাচন করে শ্রেষ্ঠ গল্পের
সংকলন করতে গেলে তা আকারে বিশাল হয়ে পড়বে । সাম্প্রতিক
কালে প্রকাশিত তার বহু বিখ্যাত গল্পই বিভিন্ন গল্পসংগ্রহের মাধ্যমে
পাঠকের কাছে অল্লায়াসলভ্য । আমরা তাই এই শ্রেষ্ঠ গল্পের সংকলনে
তার অধুনালুপ্ধ পুরনো বইগুলি থেকে আশ্চর্য উজ্জল কিছু গল্প বেশি
পরিমাণে নিয়েছি, পাঠকদের কথা ভেবেই । সেই কারণেই তার
বত্তমান কালের বহুলপ্রচারিত বিখ্যাত গল্পগুলি সংকলনে তুলনায় কম
স্থান পেয়েছে, যদিও শ্রেষ্ঠত্বের দাবি তাদের কোনে। অংশে কম নয়।
যেমন এই মুহূর্তেই মনে পড়ছে প্রম! পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত
“বেহুলা” বা “ক্রৌপদী”র মতো গল্পের নাম।
এই' বইয়ের গল্পগুলি যথাসম্ভব সাজানো হয়েছে প্রকাশকালের
ক্রম অনুসারে । এতে তাঁর গল্পের রীতি পরিবর্তন এবং ৰিকাশের
ধারাটিকে বোঝ] সহজ হবে। তবু তার মতো একজন নিয়ত স্ত্রিশীল
লেখকের শ্রেষ্ঠগল্পের নির্বাচন নিশ্চয়ই ৰার বার পরিবর্তন, পরিবর্ধন
ও পরিমার্জনের স্থযোগ রেখে দেয়। পরবর্তী সংস্করণে আরও অনেক
অসাধারণ গল্পই হয়তো এই সংস্করণের কিছু গল্পকে জায়গা ছেড়ে
দিতে বাধ্য করবে। তবু এই সংস্করণের গল্প নির্বাচনে সহায়তা করার
জন্ত লেখকের সঙ্গে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই শ্রীনির্মল ঘোষকে ।
লেখকের কথা
বর্তমান সংকলনটি আমার লেখক জীবনের প্রথম দিকের লেখা থেকে
পরবর্তী সময় কাল--একটি দীর্ঘ পরিক্রমার মোটামুটি পরিচয়বাহী। সেই
অর্থে পাঠক কৌতুহলী হতে পারেন। ইদানিং কালে একট! কথা! বারবার
আমার সম্পর্কে শুনতে হয়, যে সত্তরের দশকে “হাজার চুরাশির মা” থেকে
আমি নতুন পথ নিলাম কেন। এই ধারণাটি সম্ভবত আমার ক্ষেত্রে ঠিক নয়।
সাধারণ মানুষে আমার আগ্রহ প্রথম থেকেই । প্রথম বই “বাসীর রাণী”-তেও
আমি অক্ষম ভাবে দেখাতে চেষ্টা করেছিল।ম যে সমগ্র মধ্য ভারতে ১৮৫৭-৫৮
গণবিদ্রোহের রূপ নিয়েছিল এবং লক্মীবাইয়ের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের প্রেক্ষিত
গণবৃত্তে বিচার্ধ। সাধারণ মানুষই €ষ ইতিহাসের প্রত শ্রষ্টা, সে ধারণাও
আমার বরাবরই ছিল। একই বিশ্বাস, উৎস থেকে মোহনা! অবধি আমার
ক্ষেত্রে। সত্তরের দশক খুব গুরুত্বপূর্ণ আজও আমার কাছে । আপাত
সিদ্ধিতে নয়। প্রচণ্ড অভিঘাতে। তার প্রতিঘাত ও প্রতিক্রিয়া দুইই আজ
অনেক বেশি সত্য । সময়টিকে আমি ধরতে চেয়েছিলাম মাত্র । কী পেরেছি,
কী পারিনি; পাঠকই শ্রেষ্ঠ বিচারক। অতীত ইতিহাসও ইতিহাস,
(চম্পা, দেওয়ান! খইমাল! )--আবার বর্তমান ইতিহাসও ইতিহাস ( শরীর,
ধীবর, পিগুদানঃ জল, রং নাস্বার)। কোন কোন ইতিহাস সর্বকালের
(আজীর, স্তনদায়িণী )। আমি বিশ্বাস করি, ইতিহাস চেতনা (গল্প
লেখকের ক্ষেত্রে ) এমন হওয়া! বাঞ্ছনীয়, যা বর্তমান সময়কে বুঝতে সহায়তা
করবে। শিল্পের জন্য শিল্প করার ক্ষমতা বা সাধ আমার ছিল না, করিনি।
যেহেতু অন্ত কিছু কাজের কাজ করতে শিখিনি, তাই পারি না-পারি লিখে
গেছি। অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবার জন্যও যথার্থ
দলিলীকরগীকেই যোগ্যতম মাধ্যম মনে করেছি। ছুই একটি গল্পের “কি ও
কেন পাঠকের কাছে রাখছি। “চিন্তা” গল্পের ঘটনাটি হ্বচক্ষে দেখেছিলাম ।
“চম্পা” গল্পের ধারণাটি পেয়েছিলাম; ১৮৫৭-৫৮ বিষয়ে পড়তে পড়তে।
প্বণসীর রানী" লেখার সময়ে অনেক পড়েছিলাম, দলিলদত্তাবেজ ঘেটে ছিলাম।
লোকবৃত্ধ থেকে বা লেখা নয়, ছাপা নয়, তেমন গাথা, ছড়া, গান ও কিংবদস্তী
সংগ্রহ করেছিলাম। লোকবৃত্ত থেকে সংগৃহীত উপাদানকে আমি গভীর
শ্রদ্ধা করি, কেনন। তা থেকে বোঝ যায় অতীত ও বর্তমানের সাধারণ লোক
কি চোখে ঘটনাটিকে দেখেছেন । সেই সব পুজি করেই “নটী” ও “অমৃতসঞ্চয়”
লিখি এবং “চম্পা” লহ কয়েকটি গল্প। “ছায়াবাজি*্র নায়ক পশ্চিণবঙ্গে প্রজন্ম
থেকে প্রজন্মে সত্য । “খাজীর” গল্পটি উলো-বীরনগরের মুস্তফি বংশের
ইতিহাসে মুদ্রিত এক আংত্মবিক্রয়কারী দাঁসের দাসপাট্রা দেখে মনে আসে।
"দেওয়ান খইমালা”্র গুরুবাব। ও প্ধীবর*-এর নায়ক দেখা চরিত্র। “উর্বশী
ও জনি* জরুরি অবস্থার প্রেক্ষিতে সেই সময়েই লেখা পন্তনদার়িনী”্র
যশোদাকে পশ্চিমবঙ্গ বলে মনে করে লিখেছি, যদিও স্তনে ক্যানসারের
ব্যাপারটি সাধ্যমত জেনে নিই সদাশয় ডাক্তার টম চৌধুরীর সহায়তায়।
অবশ্তই মেডিক্যাল ভিকশনারিও ছিল। গল্পগুলকে নিছক বিষয়বস্ত, ভাষা,
শৈলী ও আঙ্গিকের নিরিখে না দেখে বক্তব্য, প্রেক্ষিত ও বক্তব্য প্রকাশে
সার্থকতা ও ব্যর্থতা, এগুলো জড়িয়ে সামগ্রিকতায় দেখতে পারলে ভালো।
এ কথ সম্ভবত আমার সব লেখা বিষয়েই এবং সকলের মৰ লেখা,
সাহিত্যবিচার ক্ষেত্রেই সত্য। সাহিত্যকে শুধু ভাষা, শৈলী, আঙ্গিক
নিরিখে বিচার করার মানদগুটি ভূল। সাহিত্য বিচার ইতিহাস প্রেক্ষিতে
হওয়া দরকার | লেখকের লেখার সময় ও ইতিহাসের প্রেক্ষিত মাথায়
না রাখলে কোনো লেখককেই মুল্যায়ন কর! যায় না। পুরাকথাকে,
পৌরাণিক চরিত্র ও ঘটনাকে জমি বর্তমানের প্রেক্ষিতে ফিরিয়ে এনে
ব্যবহার করি অতীত ও বর্তমান যে লোকবৃত্বে আসলে অবিচ্ছিন্ন
ধারায় গ্রথিত তাই বলার জ্বন্ত,-যেমন “পিগুদান*--এ দশরথের
কাহিনী এবং “ৰীয়েন”--এ কালু ডোমের উপাখা।ন। এই তো সৰ
কথ!। যেহেতু এখনো লিখছি, সেহেতু আমি আম'র বর্তমানে যতটা
আগ্রহী, অতীতে ততটা নয়। তবে অতীত থেকে বর্তযান মোটামুটি
একটা! ঠিকানায় পৌছবার জন্তই পথ চলা। পথ পথের নিয়মে বহুধা»
বিস্তৃত, ব্যাপক ও বিচিত্র হয়েছে মাত্র। এই পথিক পারুক না
পারুক+ কোনে! পথের আহ্বানকেই এড়িয়ে যাচ্ছে না এখনে।
সব পথন। হাটলে ঠিকানায় পৌছনে! যাবে না, আমি এখনে! হাটছি।
চম্পা । ৯
পরম আত্মীয় । ২২
চিন্তা । ৩১
ছায়াবাজি ॥। ৪০
সোনালী মাছ । ৫৫
দেওয়ান। খই মাল1 ও ঠাকুরবটের কাহিনী | ৬৫
শরীর | ১১৬
ধীবর | ১২২
পিগুদান । ১৩২
জল | ১৩৭
বং নাম্বার | ১৪৭
উর্বশী ও জনি । ১৫৪
বায়েন । ১৮
আজীর | ১৯৭
স্তনদায়িনী | ২১৯
চ্পাঃ
১৮৫৭ সাল। কানপুর ক্যাণ্টনমেন্ট |
ল্যাংড়া কোতোয়ালি পিওন হুরচান্দ, সিং কানপুর রেজিমেণ্টে সকলের
চেনা । বুড়ে গাড়োয়ালি। তুরু অবধি সাদা । কাঠামোখান! শক্ত বলে চলে
ফিরে বেড়াচ্ছে । ১৮৩৭ সালে হুইণার সাহেবের ঘোড়াকে ছুট করাতে গিয়ে
উলটে পড়ে একখান] পা জখম হয়ে যায় হরচান্দের । হুইলার সাহেবের দয়াতে
মাসে দুই টাকা মিলছে তার আজও | বিশবছর বাদেও সামরিক দপ্তর থেকে ।
তাতে পেট চলবার কথা নয়। তাই হরচান্দ, রেজিমেণ্টের রিসালাবাঁজারে
একখানা ঘর ভাড়া করে শ'কসবঙ্জি বেচবার পারমিট নিয়েছে । তার পাশে
বসে থকে তার বাইশ বছরের নাতজ্বামাই ব্রিজ্লাল। মা-বাপ মরা নাতনি
চম্পর সঙ্গে ব্রিজ্বনালকে বিয়ে দিয়ে সংসারে বাঁধন জড়িয়েছে হরচান্দ,। বড়ে।
ভালে মেয়ে চম্পা। বড়ো ভালব'সেন তাকে ক্যাণ্টনমেণ্টের মেমসাহেব ॥
বিশেষত শেরিভান সাহেবের বিবি তো চম্পাকে ছোটোবেল। থেকেই শ্সেহ্
করেন। বাইবেলের ছবি দিয়ে, চুল বাঁধতে শিখিয়ে, সেলাই শিখিয়ে নানাভাবে
চম্পার গ্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন মেমসাহেব । হিন্দু বিয়ের রীতিনীতি
আলাদা । ইচ্ছে থাকজেও এই বিয়েতে কেক বানাবার সুযোগ ছিল ন|।
তাই অনেক অংশীর্বাদ জানিয়ে একটি লাল থলিতে দশটি টাকা দিয়েছিলেন
মেমসাহেব চম্পাকে। চম্পার কানের গহনা সেই টাকাতেই কেনা। চম্পা
আর ত্রিঙ্গলালকে নিয়ে স্থখে থাকে হরচান্দ। কেউ জিজ্ঞাসা কবে যখন---
কেমন আছ? কী খবর?
কে।ম্পানিকী দয়! মে”.."বলে কথা স্তর করে হুরচান্দ,। সকলেই কৌতুক
অনুভব করে হাসে। সবাই জানে বথা শুরু করতে হুলেই হরচান্দ, বলবে-.
কোম্পানিকী দয়! মেঁ**' ৷ একদিন হুইলার সাহেবকেও পথে সেলাম দিরেছিল
হরচান্দ | হুইলার বলেছিলেন- তবিয়তের কী হাল হুরচান্দ,?
কোম্পানিকী দয়া মে**.-*হরচ!ন্দের জবাব শুনে খুব কৌতুক অনুভব করে-
ছিলেন হুইলার। সেই থেকে হয়চান্দ, আরে! বুক ফুলিয়ে বেড়ায়
কোম্পানিকী দর! মেঁ..তার মুখে এই কথাটা! শুনবে বলেই লোকজন
১ ৰ
১ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করে-কেমন আছ হুরচান্দ'? তবিরতের কী হাল?
হাসতে হ'সতে হর়চান্দ, বলে--কোম্পানিকী দয়! মে"*"*
দোকানে বসে প্রভুলালের সঙ্গে দাঁবা খেলছে হরচান্দ, আর আলু তৌল
করছে ব্রিঙ্গলাল এমন সময় চুডি বাজাতে বাজাতে দোকানে ঢুকল চম্পা । রাস্তা
থেকে উঠে আসতে ব্রিঙ্জলালকে যেন দেখেও দেখল না। অংহ্লাদ করে ফরস।
কাপড পরেই দাদার কাছে বসে পড়ল মাটিতে । বলল- দেখ দাদা, যেমসাহেৰ
কী দিল আমায়।
মে'রাদ।বাদের পেতলের জালিকাজ কর। কাস্কেট। তাতে থরে থরে স্ুুচ,
নান! রঙের স্থুতো, বোতাম সাজানো । হরচান্দ, বলল--দেশে চলে যাঁৰে
মেমনাহেব | তার কাছ থেকে এটা কী জিনিস নিলি চম্পা? দামি কিছু নিলি
না কেন?
এটাও দেখ।
পোর চেনে ছোট্ট একটা লকেট । দিল্লির রেজিমেণ্টের চ্যারিটি ফেয়ার
পরচ'লনায় পারদশিতার জন্য ক্লাবের তরফ থেকে মার্গারেট খেরিডানকে দেওয়!
উপহার । চম্পা বলল - মেমসাহেব বললেন, চম্পা* কী চাস তুই বল? আমি
বললামঃ এমন একট! কিছু দিনঃ যাতে আমার সর্বদা আপনাকে মনে পড়ে আর
সকলকে দেখাতে পারি । মেমসাহেব বললেন, এট] তাঁর অল্পবয়সের মেডেল।
কখনও পরেননি গলায়। যত্তবের জিনিস, তাই এটাই দিলেন।
কী করবি?
-গনায় পরব--বলে ঘরে উঠে গেল চম্প| | ব্রিঞ্জলালকে চোখ টিপে ইশারা
করন। করুণ চেখে দাদাশ্বশু;রর দিকে তাকাল ব্রিঙ্রলাল। একহাত কাচের
চুড়ি আর পেতলের চাবির গোছ! ঝনঝনিয়ে রাগ জানিয়ে গেপ চম্প।। ব্রিজ-
লাঙল দেরা'লের গাথে কুলুঙ্গতে গণেশ-মৃতির দিকে তাকাল । তার বিপদের
কথা সে-ই জানে । এদিকে খদ্দের দোকানে,--দাদাশ্বস্তত দাবা খেলছে, বো
হয়তো! রাগ করণ। সবদিক কি ঠেকা দেওয়া যায়? স্থজনকে অ'দ1 দিয়ে
পয়স! নিতে নিতে মনে মনে তারিফ করল ত্রিঙ্ব। এই কালো রোগা, বাতিক
আর ব!তগ্রত্ত লোকটা কী অসীম দক্ষতার সঙ্গে ছুটো দজ্জাল বৌ আর ছুই প্রস্থ
শ্বশুববাড়ি সমলে যাচ্ছে সাত বছর ধরে। পয়স! দিতে দিতে বলল--বাহাছুর |
সন্নিপ্ঝ তোথে তাকাগ স্থ্ন। ব্রিঙ্গের ওপর তার অনাস্থা অসীম। চারপাশে
এতগুলো মামুলি চেহারা থাকতে এই রকম লঙ্া-চওড়া.গেঁফ ওয়ালা একটা
চম্পা ১১
বর্বরকে কেন মে নাতনি দিল হরচান্দ, কে জানে। লাভের মধ্যে কুয়োতলায
বসে বাসন মাজতে মাজতে রামসহায় মিশিরের গলির সব মেয়েরাই বলাবলি
করে, বর চাই বিরিজের মতো॥ অমনি গোঁফ ন' থাকলে পুরুষের শোভা হর
ন1।
পেতলের সানকিতে আটা ঢেগে জল ছিটিয়ে বেগুন কুটল চম্পা । চুলে!
জালিয়ে ডাল চাপিয়ে দিল। পরিষ্কার ঠাণ্ডা আধার ঘরখানার আবার ঝাড়,
দিল। তারপর যত্ব করে মেম-সাহেবের দেওয়। মালাট! টাঙিয়ে রাখল দেয়ালে ।
একী রকম মালা? কোনো কারুকাজ নেই, কী সব লেখা । এমাল! সে
কোনোদিনই পরবে ন1।
শেষ অবধি অবিশ্টি শেরিডান সাহেবের দেশে যাওয়া হল না। বাজার
গরম করে নানারকম কানাঘুযো। শেন! গেল। রেজিমেপ্ট বাজারে গুজবের যেন
পাখা গজিয়েছে। ফৌজ আর রিসালার মধ্যে কানাকানি চলতে লাগল । তাই
নিয়ে জটলা হতে লাগল হুরচান্দের ছোট্ট দোকানে । এই গোলমালের মধ্যেই
খেরিডান সাঁহেব ঘোড়া থেকে পড়ে পা ভাঙলেন। বুড়ে৷ ডাক্তার ম্যাকলে'
মাথা ন।ড়লেন। মিসেস শেরিডানের বিয়ের উপহারের রুপোর পেয়ালায় কফি
খেতে খেতে বললেন-_-জায়গ। বদলানো চলবে না। ডাকের গাড়িতে নিয়ে
যাওয়।! অসম্তব।
মে মাসের প্রথম দ্িক। গরম পড়ছে। ছোট্ট পাহ্াকুলিটা ুমিয়ে
পড়েছে। ধুলোর ঘৃণি পাকিয়ে উঠছে বাতাসে । গঙ্গার ওপার থেকে খেয়া
মাঝির গলার ডাঁকটা কেমন উদ[স করে দিচ্ছে মন | সেইর্দিকে তাকিয়ে মিসেন
শেরিডানের হাতট। টেনে নিলেন শেরিভান। বললেন--ইত্য়াতে পঞ্চীশট!
বছরই কাটিয়ে দিলাম, কী হুবে ছুটির কথা ভেবে । এখানেই থাকি, কী বল
ম/গারেট ? মার্গারেট শ্বামীর হাতে মৃদু চাপ দিলেন। বৈশাখের সকালের
এই মন উদাস করা ধূ ধু পরিবেশে মনটা শান্ত হলে এল। মনে হল, কী হবে
আর নতুন করে ঝামেলা! করে। এই তো! বেশ আছি। ছেলে-মেয়ে নেই,
আছে একমাত্র শেরিভানের ছোট ভাইয়ের ছেলে এভায়েট | সেও আগগ্রাতেই'
রয়েছে। বললেন--তাহলে মিসেস ড্যানিয্বেল্সকে লিখে দিই, কী বলো
অরফান স্কুলটার় জন্তে চ্যারিটি যদি কিছু করা যায়। ূ
সেই মালাটায় কখা সবাই ভূলে গেল। ব্রিগ্গ চম্পাকে বলব--ও কি গণার
১২ মহাশ্থেত। দেবীর শ্রেঠ গল্প
পরে? তোকে আমি সোনার হার দিচ্ছি, সবুর কর। চম্পা ম্বামীর হাত গলায়
জড়িয়ে নিয়ে বলল--বা রে, আমি কি গয়না! চেয়েছি? টাকা হলে সবচেয়ে আগে
দাদাকে একবার কাশী ঘুরিয়ে আনতে হবে। কথা দেওয়া আছে, মনে নেই।
ব্রি্গ বলল- নাতনি ভাবে দাদার কথা, দাদা ভাবে শাতনির কথা» আমার
কথা কে ভাববে বল। বিয়ের আগে কি এত জানতাম?
_-জাঁনলে বুঝি বিয়ে করতে না?
এই সব কথাবাতার ভেতর দিয়ে মালাটার প্রসঙ্গ সবাই ভূলেই গেল।
দেওয়ালে তেমনিই টাঙানো! রইল মালাটা। মেমসাহেবের সঙ্গে আর একবার
দেখ! করবে ভাবল চম্পা । সংসারের নানা! কাজে সময় পেল না। যাই যাই
করেও যাওয়া হল না। আর গরমও পড়ল প্রচণ্ড । ভরা বৈশাখ। মাটি যেন
জলে যাচ্ছে, গঙ্গার জল শুকিয়ে যাচ্ছে । নৌকে। চলাই কঠিন হয়ে উঠবে মনে
হয়।
সেই প্রভাতের প্রশান্তি ভেঙ্চেরে ঘনিয়ে নামল কালবৈশাখী । মীরাট
ছাউনিতে তুফান উঠল। ১০ই মে। ঝাপটায় টালমাটাল হয়ে গেল কানপুর।
বিজিত ও বিজেতা, ছুই জাতের মোকাবিলার সময়ে দিনগুলো হয়ে গেল
রক্তাক্ত । কানপুরে খুন হয়ে গেল ইংরেজ নরনারী ও শিশু.। গঙ্গায় জল ছিল
না। নৌকোয় চড়ে পালাবার চেষ্টা মর্মাস্তিকভাবে বিফল হল। সতীচৌড়া
ঘাটের জল লাল হয়ে গেল। বিবিঘরে ইংরেজ নারী আর শিশুরা হল নিহত।
তার জবাব নিতে এগিয়ে এল হাভলকের বিজয়ী ফৌজ। কানপুরের যে সৰ
ভারতীয় নাগরিক ইংরেজ হত্যায় কোনে। সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেনি, তার] ছাড়া
সরুলেই পালিয়ে গেল শহর ছেড়ে । রইল তারাই, যার] খুব ভালো! করে জানে
যে তার! নিরাঁপদ।
আজ তারিখ কত? ১৩ই জুলাই ১৮৫৭। হ্রচান্দের ঘরে বিছানায়
শুয়ে পাশের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে এভারেট শেরিডান আবার মনে মনে
উচ্চারণ করল তারিখটা। ছুরস্ত গরম। হ্যাভলকের ফৌজেরু সঙ্গে আলতে
আসতে ফতেগড়ে একটা ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়ে গেল। হতভাগ্য এভারেট |
নিহত্ব নারী ও শিশুদের হয়ে প্রতিশোধ নিতে প্রতিশ্রুত প্রত্যেকটি ইংরেজ
সৈনিক ।' যাদের অতীয়-ন্বনর1 নিহত হয়েছে তাদের মনের অবস্থা
অবর্ণনীর । কাক! আর কাকিমার মৃত্যু-সংবাদ এভাক্সেট বিশ্বাস করতে পারে
ঈম্পা ১৩
নি। কিন্তু সংশয়ের কোনো অবকাশই নেই। বুদ্ধ শেরিভান নিহত হয়েছেন
সতীচৌড়া ঘাটে। তার কাকিমা? বালিশে মুখ গুজল এভারেট। তার
কাকিম! কাছে থাকলে কী বলতেন? সাহস রাখো» ধৈর্য ধরো? ভালোই
হয়েছে । এই চরম বেইমানির দিনগুলো দেখছেন না তীরা। ঈশ্বরের
প্রত্যেকটি সন্তানকে ভালোবাসবার ও ক্ষমা করবার নীতিটা একমাসেই বরবাদ
হয়ে গিয়েছে | জানের বদলে জান, তরোয়ালের বদলে গুলি এই হচ্ছে নতুন
নীতি। বড় ছুঃখের কথা, এই সময়ই এভারেট চোট খেল পায়ে । পথে এই
বাড়িটা ছিল তাই ডুলির জন্যে অপেক্ষা করছে সে। কিন্তু নেটিভের বাড়ি?
দুধের নোটা নিয়ে হাপাতে হাপাতে ঢুকল হরচান্দ। বলল-এ চম্পা,
এ দিকে আয় | দুধ গরম করে দে সাহেবকে ।
ৰকরজোড়ে বলল-_সান্েবঃ একট, ছুধ খাঁও। বড়ো তকলিফ করে এনেছি ।
কোম্পানিকী দয়! মে".
মোমটা টেনে মুখ ঢেকে দুধের গ্লাস নিয়ে এল বুড়োর নাতনি। অদ্ভুত
নাম_ম্পা-"*."*ম্যাগনোলিয়।'"****ছুধের গ্লাসটা হাতে ধরে এমন হাসি পেল
এভারেটের-। আরনল্ড প্রেটারসের ভে-স্ুল*****বটানি ক্লাসে আলবামের
অন্য ফুল-পাতা সংগ্রহ করে ল্যাটিন নামগুলো মুখস্থ করণ স্কটল্যাণ্ডে ছুটি যাপন
আর লেক্ ভিস ইক্ট-এ পথ হারিয়ে নেভিলের সঙ্গে এক চাষীর কুটির. গিয়ে
রাত কাটানে***.*টেবিলে বসে বুদ্ধ। গৃহকত্রীর সঙ্গে এক-সঙ্গে প্রার্থনা কর! -
7৪119স৩৫ ৮০11) ট৪11৩--এই সবগুলো! কেমন অর্থহীন হয়ে গেল।
সে-জীবনটা সে -এভারেট শেরিভান, 84৫) ইন্ফ্যান্ট্রির সেকেওড ইপ্রি-
নিয়ার_কোনোদিনও কাটায়নি। সে-্সব অন্য কোথাও, অন্ত কারো! জীবনে
ঘটেছিল ।
ভয়ে ভয়ে চম্প। দুধের গেলাসট নিয়ে বেরিয়ে গেল। এভারেট হরচান্দ কে
বলল- ডুলি মিলতে কত দেরি আছে?
কোম্পানিকী দয়া মে"*"**''বলে হুরচান্ম, লাঠি ঠকঠক করতে করতে বেরিয়ে
গেল। মাথার নিচে ছু-হাত দিয়ে এভারেট চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। এই
নোংরা চেহারার বুড়োট। নাকি খুব বিশ্বীসী। বাড়িতে আর একজন পুরুষ-
মানুষও আছে, লম্বা-চওড়া, চোয়াড়ে চেহারা । মুখ দেখলে তো নেটিত
মাত্রকেই গুপি করতে ইচ্ছে করে। তবে এরপ। নাকি লুঠতরাজ কোনে!
কিছুতেই যোগ দেয়নি । আর এখন তো! ভয়ে ঠকঠক কৰে কাপছে সবাই ।
১৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
হাভলক মানুষ ধরে ফাসি দিতে দিতে এসেছেন ! মরতে কে না ভয় পান্ন!
এর] সেইজগ্যেই বিশ্বীদী সাজছে কিনা কে ব্বে। কানপুরে তদন্ত কমিশন
বদবে। তাদের রিপে।্ট অস্থায়ী দেধী-নির্দেষ সাব্যস্ত হবে। লুঠের মাল
যার কাছ থেকে বেরুবে__
বোধ হয় ডুলি এসেছে । নিচে বাদাস্থবাদ শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ উত্তেজিত
গল। শোন] গেল ব্রিঙ্জলালের--কে বলেছিল তোমাকে ছুটোছুটি করতে ?
ভুলিতে কাধ দিতে বলছ আমাকে? ন্যোরা কম পড়েছে তাতে আমি কী
করব? সব তাতেই বাঁড়/বাড়ি তোমার-নিজে পারে না। আমাকেও
বিশ্বাস করে! না.""আমি গেলে ঠিক বেয়ারাকে ধরে আনতাম"*পয়সা নেবে
কাজ করবে-_-
-_-চুপ কর্ ব্রিজ্লাল, চুপ কর্-__
আসছে তুমি আমাকে বিশ্বাস করে] না
সব্রিজজ!
»আমাকে বেরোতে দ1ও না
দাদা !
চম্পার গলার আর্ত মিনতি শোনা গেল! কৌতৃহনী এভারেট কান খাড়।
করল। ভাঁঙা"ভাঙা গলায় মেয়েটি বলছে- দাদ। যা বলছে তা তো ভালোয়
জগ্তেই-তুমি যে সেদিন উধমজীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলে--
সকলে তো! তা মানবে ন1। যদি কেউ বলে যে সতীচৌড়া ঘাটে ছিলে তুমি?
উধমজী নিশ্চর কারো নাম নামট। মুখস্থ করলে এভারেট।
-আমি যে কী ভয়ে দিন কাটা।টছই******ক্েউ কি ঠাণ্ডা মাথায় বিচার
করবে? "***" চারপাশে শুধু চোরা খবর ছড়[চ্ছে-''লখপতিয়ার কথ। ভাবো
“'*কোনো বিচারের আগেই ভঙ্গন সাহাকে ফাসি দিল"'*অ:মি কি লখপতিয়ার
মতো বিধবা হবো তা-ই চাও তুমি?
এভারেট উঠে দাড়াল। সেকি কোনে] ষড়যন্ত্রের কথ শুনছে? ******
কী ব্যাপার? তার পিস্তলট! পড়ে গেল মাটিতে । শব্ধ হল। আর হঠাৎ
একসঙ্গে কথাবার্তী থেমে গেল। এভারেট ভাকল- কোষ হায়? ছুটতে
ছুটতে ঢুকল হুরচান্দ,। ভয়ে কু'কড়ে গেছে রেখাঙ্কিত মুখখান1। খরথর করে,
কাপছে ঠোট। বলল -হী হুজুর, মেহ্রবান-*****্ডুলি এসে গিয়েছে ."'এক
বেয়ার কম'""
চম্পা ১৫
চলুন সাহেব**"দরজায় এসে প্রাড়াল ব্রি্লাল। হুরচান্দংকে বলল-_
আমিযাচ্ছি সঙ্গে। দেয়ালের সঙ্গে প্রায় মিশে এসে দীড়াল মেয়েট।।
--টোটা কোথায়? বলল এভারেট।
_.দরিচ্ছি""'
চম্পাকে অবকাশ না দিয়েই দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেল এভাবেট।
দেয়ালের গায়ে সামান্য রোদ এসে পড়েছে । পেরেকের গায়ে ঝুলছে টোটার
মালাটা। তাঁর পাশেই চকচক করছে কী যেন। পিঠের যন্ত্র! টেবিল ধরে
বেঁকে গিয়ে তীক্ষ চোখে নিরীক্ষণ করে দেখল জিনিসটা । বলল-উতারে!।
রূপোর চেনের সঙ্গে পুরোনে] ঢের একটা লকেট । দেখে রক্ত ছলাৎ
ছলাৎ করতে লাগল এভারেটের শির।-উপশিরায়। 42:৫6 (09 1:19,
71197891656 6. 91)611022) 008 6116 €59511906 ০0960985101) ০৫.**:*,
-আপনি মেমসাহেবকে জানেন হুজুর? "**হরচান্দের প্রঙ্জের জবাব
মিলল না। এই লকেটটার সঙ্গে এভারেটের ঠকশোর ও বাল্যের অনেক
স্বৃতি জড়িত। হ্রচান্দকে ঠেলে সরিয়ে দিল চম্পা। ঘোমটা খুলে ফেলল।
বলল- হুজুরঃ শেরিভান সাহেবের বিবি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। যখন
ঘরে যাবার কথা হল, তখন আমাকে উনি মেহেরবান করে এই মাল। আর...
_আর কী?
- এক সেলাই বাক্স দিয়েছিলেন--
__ দেখাও...
খুলে দেখাল চম্প|| “মার্গারেট শেরিভাপ নাম খোদাই করা কোনায়।
এভারেট জলত্ত ঘ্বণাভর] চোখে তাকাল তাদের দ্িকে। ভয়ঙ্কর কোনে
সম্ভাবনার ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠল, শ্বাসরৌধকারী হয়ে উঠল বাত'স।
এক মিনিট"*ছুইমিনিট'*'মাটিতে আছড়ে লম্বা! হয়ে পড়ে চিৎকার করে
কেঁদে উঠল চম্পা-_ হুজুর আপনি যা ভাবছেন তা নয়" আপনি অন্ত কিছু
ভাববেন না''**"'এ সাহেবদের কুঠি লুঠের মাল নয়-**.."
জুতোর শব্দে পাথরের মেঝেতে ঝড় তুলে ঘরে ঢুকল চ'বজন ইংরেজ
সৈনিক। স্টেচার তাদের সঙ্গে। এভারেটের হাতে রুপোর লকেটটা দেখে
থেমে গেল তারা ।
হাটু গেড়ে বসে পড়গ হুরচান্দ,| ব্রিজ্বলালও হতবুদ্ধির মতো! পাশে বসল
5৬ মহাশ্বেতা দেবীর শেষ্ঠ গল্প
প্রত্যেকের চোখে ফুটে উঠছে দণ্াজ্ঞা। কোম্পানিকী দয়া মে"*"*
হরচান্দের গলায় কথাটা ভয়ে ফুটতে পেল না। তবু কুদ্ধগলায় বলল--
কে:ম্পানিকী দয়া মে**"*
সমরকালীন জরুরি তদন্ত কমিশন অবশ্ঠ ব্যাপারটায় হস্তক্ষেপ করল, কিন্ত
সে শুধু আইনের ব্যাপার । তাতে বিচার উলটে গেল না। বারবার বলে-
ছিল বটে খোঁড়া বুড়ো--শেরিভানের বিবি তার নাতনিকে দিয়েছিলেন
জিনিসগুলে। | কিন্ত কে নাজানে এসব বান্তবে ঘটে না। নেটিভ একট!
নেয়েকে ব্যক্তিগত ম্মরকচিহ উপহার দেয় কোনে! ইংরেজ মহিলা? এরকম
পাগলামি কি কেউ করে? প্রশ্নরত শেরার সাহেবকে বুড়োট প্রাণের মায়ায়
বলেছিল-__হ" হুঙ্ছুর, বিবি শেরিভান পাগলই ছিলেন-**
-কী বলছ?
-নইলে কেন দিয়েছিলেন বলুন আবার নাতনিকে ?
স৬100019তআ) ড110)012জা ..
--না হুজুর, পাগল ছিলেন না"""
-_বল্ দোষ করেছিস?
_হা হুজুর-"'কোম্পানিকী দয়া মে**'"
তখন ব্রি্গলাল সম্বণায় বলেছিল- বুডঢা, কোম্পানির দয়ায় তি মি ফাসি-
কাঠ অবধি পৌছে গিয়েছে৷। । এখন ও মুর্দা কথা ছাড়ো ।
9090 1718 10009068..,
-একবার হাত খুলে দিতে পাবে সাহেব, এই কাপুরুষ বুড়োকে আমিই
গলা টিপে খতম করে দিই**'কেন, মরতে শেখোনি ? দয়? চাইছ ? ভিক্ষা করছ ?
স্পব্রিজ, চম্পা'"* আমার চম্পা""
হরচান্দ, ভেউ ভেউ করে শিশুর মত কেঁদেছিল। তাদের বয়ালগাঁড়িতে
চডিয়ে গছের নিচে নিয়ে ফাঁস পরাতে পরাতে মেথরট! হাসছিল। কোম্পা-
নিকী দয়া মে'***কোম্পনির দয়ায় ওকে পিধা শ্বর্গে পাঠিয়ে দাও.'"£সনিকরা!
বলছিল। শ্বর্গে চলে ঘা ব্যাটা'''বলে হাসছিল সিপাহির]।
কয়েকমাস কেটে গিয়েছে।
্যাক্স.ওয়েলের বিজয়ী বাহিনী কাল্লিরৌভের ধারে ভগবানপুরে ক্যাম্প
শম্পা ১৭
কেছে। পরিত্যক্ত গ্রাম। গ্রামবাসীরা! পালিয়েছে ইংরেজ আসবার
আগেই । অফিসার-ক্যাম্পের সামনে ধুনি জলছে। তার তাপে মাঘ মাসের
শীত টের পাওয়া মুশকিল। সামনে ছড়িয়ে রয়েছে খাট, চৌকি, খাটিয়া,
আলনা, ছোটছেলের দোলনা । সেগুলো আছড়ে ভেঙে শিখ সিপাহিরা
ধুনির মধ্যে ফেলছে । গাঁয়ে আগ্তন দিতে পারলে মজা জমত ভালো। কিন্ত
'বেশ কিছু গোলাবারুদ, বন্দুক মিলেছে । তাতে যদি আগুনের হুলকা এসে
পড়ে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।
শিপ সিপাহিদের জমায়েত। টৈশ-ভোজনের পর বিশামের ফাকে ফাকে
উল্লাস চলেছে । আজ একট! স্থবর্ণস্থযোগ এসেছিল। সন্ধের সময় গায়ের
অদুরে ঝোপের মধ্যে ঝুড়ি বোঝাই বোতল বোতল দেশি মদ পাওয়া গিয়েছে।
বয়ালবিহীন একট। গাড়িতে মদের বোতলগুলো নিয়ে বসে ছিল একটি মেয়ে।
বয়াল নিয়ে আঁসবার নাম করে লঙ্গী পুরুষটি পালিয়ে গিয়েছে । মেয়েটার
সঙ্গে দলবল নিশ্চয় ছিল। নইলে ভাটিথানা চালু করল কে? নিশ্চয়ই সে
একা নয়। যাই হোক ইংরেজের সঙ্গে দুশমনি করবার থেকে এ কাজ যে
'অনেক ভালো, তাতে সন্দেহ নেই । মেয়েটা দেখতে সুন্দর, কিন্তু মেজাজ
যেন সাপের মতো! । কানে বড়ো বড়ো৷ আংটাঃ পরনে ঘাঘরা| মাথায় রুমাল বাধা,
ইরানি মেয়ে হবে। ধরা পড়তে দ্লাতে একটা ছোরা কামড়ে ধরে, হাতে
পিস্তল নিয়ে লড়তে এসেছিল। সাহেবদের বারণ আছে তাই--নইলে শিখর!
দেখিয়ে দ্রিত যে, কেমন করে সায়েম্তা করতে হয় এইসব মেয়েকে । শিখ
সিপাহিদের সঙ্গে সে ঝগড়া করতে করতে এল । বেতের গাছের মতো ছিপ-
ছিপে শরীর ৷ ফু*সে ফু'সে উঠছিগ রাগে । পুরুষগুলোকে পেছনে রেখে রানীর
মতো সগর্বে নিজেই আসছিল আগে আগে। সে তাদের মালিক, এমনই
ভাবখানা । দাহেবের কাছে এসে মাটিতে শুয়ে পড়ল সেলাম জানিয়ে । ভালে!
'অভিনয় জানে। বিনয় ও ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে ছোটে] ছোটে কথায় জানাল
যে মদের বোতলগুলো কোম্প।নিসাহেবের সেবায় ছেড়ে দিয়ে সে চলে যেতে
চায়। দামসেচায় না। কোম্পান্ির কাছে সে এমনিতেই কৃতজ্ঞ। এভা-
রেট সাহেবের দয়ার প্রাণ। যুবতী দেখে পাঁচটা টাকা ফেলে দিলেন
মেয়েটাকে ।
তখনই চলে ন! গিয়ে মেয়েটা জ্ণাকিয়ে ববল। ধলল-সাহ্যে, সাপের
ওযুধ নেবে? কোনো! খেপা দেখবে?
১৮ মহাশ্েতা দেবীর তেষ্ঠ গল্প
অন্থান্য সাহেবেরা ভিড় করে গীড়াল। বলল- নাচ-গান কিছু জানে
নাকি?
ন'চতে জানে না বটে, কিন্ত গান গাইল মেয়েটা । ধুনির অ.গুন কমে
এসেছে। কাঠকয়লার অঙ্গারের আভায় কালে চোখে ঝিলিক খেলছে । লঙ্কা
বেণীছুটো লুটিয়ে পড়েছে কাধ দিয়ে । মাটিতে ঘাঘরা! বিছিয়ে বসে মেয়েট।
যখন গান গাইল, দেখতে তো ভালোই লাগল, কানে যেমনই শোনাক না কেন
গান।
--হাত দেখতে জানে নাকি ?
প্রশ্নটা শুনে মেয়েটা খিলখিল করে হাসল । বলল--কানপুর রেজিমেন্টে
যাব সাহেব, হাত দেখে দেব তোমাদের | টাকা নেব, কাপড় নেব। এখন
আধার হয়ে গিয়েছে, ঘরে যাব না?
কোথায় ঘর তোমার ?
--এই তো হুজুর একটু আগেই । তোমার সিপাহিদের দাও না, দেখে
আসবে ঘর।
দুজন সিপাহি সঙ্গে চলল, ক্যাম্প ছাড়িয়ে এসেই চোখে চোখে ইশার। করে
পরস্পর হাসল। মেয়েটিকে বলল-_পিক়্ারা, একটা গান শোনাবে?
মেয়েটা বলল-- একটা বেচালের কথা বলেছ কি সাহেবকে বলে দেব।
আরে রাগকর কেন?
মেয়েটার বাড়িতেই বোধহয় আলো। জ্লছিল। কাছাকাছি এসে মেয়েট।
বলল--এবার তোমরখ যাও সিপাহিজী। ক্যাম্পে যাও, মৌজ কর।
মেয়েটার গলায় কিছু বিদ্রপ ছিল কি? মুখে হাসি ছিল? অন্ধকারে
বোঝা গেল ন।। ক্ষেত পেরিয়ে টপকে চলে গেল মেয়েটা ।
এই সব লু:টর মালের মতো বোতিলগুলো নিয়েও জম করতে হবে নাকি--
এই নিয়ে যখন তর্ক চলেছে তখন ত্রিশ-বত্রিশ . সালের পাকা! লড়িয়ে বুড়ো
জঙ্গিরা ছোকর।-গোর!দের টিটকিরি দিতে লাঁগল। মুলতান, বল্সার আর
বোম্বাই-এ কখনো-সখনে! দেশি জিনিস থেয়ে দেখেছে তার। | নেশার কথা?
ইয়ংম্য।ন, এরা কী জানবে । আফগান লড়াইএর সময় হরদম কাট্টি-র বোতল
ফু'কে দিত গোরাগুলো। নেশায় বুদ হয়ে পড়ে থাকত। তখন ত.দের ওপর
ছুরি চালাত সার্জন স!হেব। কার্টি লিকাবের গুণের কথা বলতে গেলে এখনো
ম্যাকনীলের চোখ দিয়ে জল পড়বে। :010:109$ (1140198--! ছোকরা!
চম্পা ১১
লরেন্স কি গানই বানিয়েছিল কা্টি, নিয়ে। কোথায় গেল সেইসব দিন?
পেন্ট্রিক পড়ে আছে সাহাবাদের কবরখানায়, আর জবেন্স হয়ে গিয়েছে মন্ত
বড়ো মানুষ ।
- ক।টি.ব ওপর ভোট নেব নাকি? --বলতে গিয়ে কানিংহাম ধমক
খেল। - লে-আও, লে-আও | হুকুম পেয়ে দৌড়ল ছুইজন শিখ সিপাহি।
বোতলগুলো৷ খোলার আগেই কিস্ত দেশি সিপাহির জমায়েত থেকে হৈচৈ
শোন: গেল। ছুটতে ছুটতে এল একজন ছোকর1। সামরিক রীতিনীতি
সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ছুটে এল সাহেবদের মাঝখানে, এর ঘাড়ে হাত দিয়ে টপকে,
ওর গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলল-_ হুজুর, জহর*****' পুর] জহ্র''জ্বলে গেলাম !
উপুড় হয়ে পড়ে গড়াতে গড়াতে আগুনের কাছাকাছি গিয়ে কয়েকট।
ঝাকুনিতে আক্ষিপ্ত হয়ে চুপ করে গেল ছোকরা । মুখ দিয়ে গড়াতে গড়াতে
মাটিতে পড়তে লাগল ফেনা ।
ভয়াবহ মুহূর্ত কয়েকটা । সকলেই নিস্তৰ। কালো কালো বোতলগুলোর
উপর অ'গুনের শিখার আভা নাচছে । পরস্পরের দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠে
দাড়াল সাহেবর1। তিন ঘণ্ট। হয়েছে মাত্র। সেই মেয়েটা কখনোই পালাতে
পারে না বেশি দুর । নিশ্চয় কাছাকাছি আছে।
মেয়েটি ধর পড়ল ভে!রবেলা। যমুনার ঘাটে খেয়ামাঝিকে টাকা কবুল
করে তাড়াতাড়ি নৌকো ছাড়তে বলছিল সে। ভয়ার্ত চাহনি। এদিক ওদিক
তাকাচ্ছিল। সঙ্গে কোনে! জিনিসপত্র নেই । একরাতে দশ মাইল পথ এসেছে
কেমন করে কে জানে । নিশ্চয় প্রাণের ভয়ে ।
শিখ সিপাহিদের ওপর হুকুম ছিল এতটুকু ষেন ক্ষতি না কর] হয়। ধরে
নিয়ে যাবার হুকুম ছিল শুধু ।
মেয়েটি একবার তাকাল সামনের দিকে । যমুনার ওপারে অনেক দুরে
রয়েছে ভারতীয় ছাউনি । একবার যদি পেরিয়ে যাওয়া যেত। বিস্তীর্ণ চড়া।
জলের ওপর জমে রয়েছে নীল কুয়াশা । নৌকোর ছাউনিতে, পাড়ের ঘাসে
গাছের পাতায় শিশির জমে রয়েছে । তরল আধারের মধ্যে সাদা কুয়াশ।
কোনো শ্বপ্নরাজোর বিভ্রম রচনা করেছে। প্রশান্ত হুন্দর পরিবেশ ।
দৃপ্ত ভাবেই তাকাল মেয়েটি। শিখ ছু'জনকে উচ্চ গলায় বলল- মাবিকে
কিছু বোলো না। ওর কোনো দোষ নেই। ও আমাকে চেনে না। ঘাঘরার
২০ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
প্রান্ত ছুই হাতে একটু উ*চু করে ধরে শ্বল্ন জলে ছপছপ করে সে পাড়ের দিকে
এল। পাড় দিয়ে উঠতে উঠতে ঝকঝকে দ্াতে ঝিলিক দিয়ে হাসল একটু ।
বলল-স-একট] মেয়েকে ধরতে এসেছে এতগুলো মরদ !
রূঢ ঝাঁকুনি দিয়ে তাকে তুলে নিল একজন । বলল--বদ্ধ কর, তোর দিল্-
লাগি দেখতে কে চায়?
যখন তাকে ধরে আনা হল ক্যাম্পে, ধুলোমাখা ক্ষতবিক্ষত পাঁ, হাতছুটো৷
মুচড়ে পেছনে নিয়ে বাধা, এলোমেলো! চুল । সাহেবদের মুখে কথা! ফুটল না ।
তার দিকে তাকিয়ে অজ্ঞাতসারেই কোনো কোনো অনভিজ্ঞ সৈনিকের চোখে
তারিফ ফুটে উঠল। হ্যা, সাহস রাখে বটে। কিন্তু কেন? কেন এই
নিটুরতা। স্থগঠিত শরীর, যৌবনের আশীর্বাদে লাবণ্যধস্ তন্ন এই মেয়ের
মধ্যে কেন হিংসা আসে? কেন বর্ববের মতো! হত্যার আদিম প্রবৃত্তি জাগে?
রহস্যময় প্রাচ্য | ছুজ্ঞেপ হিন্দুস্থান আর তার মানুষ !
তখনই সমাপ্ত হতে পারত বিচারঃ কিন্ত কোনোমতে যদি দলটার সন্ধান
পাওয়া যায়, আর কে কে আছে যদি ধর! পড়ে? এই সৰ কথা বিবেচন।
করলেন সবাই । তবে যা করবার তাড়াতাড়ি সেরে নিতে হবে। ক্যাম্প
গুটিয়ে কানপুর ফিরবার তাড়। আছে। প্রত্যেকটি দিনের দাম আছে। সময়
অযথ। নষ্ট করা সম্ভব নয়।
জের] শুরু হতে প্রকাশ পেল মেয়েটির অনমনীয় অবাধ্যতা । কেউ তার
সঙ্গে ছিল না। মদ-চোলাইয়ের কোনো কারবার কাছাকাছি নেই । এ লুঠর
মাল। পলায়নপর ভারতীয় ফৌজ্জের গাঁড়ি থেকে সে পেয়েছিল। বিষ? সে
নিজেই বানিয়েছে। কিছু কিনেছে, কিছু তৈরি করেছে। কেন?
--সজে বিষ না রাখলে কোন্ ভরসায় তোমাদের ছাউনিতে আসব 1
গালাগালি করল সাহেব। বেলা বাড়ছে। রোদ চড়ছে আকাশে । সবাই
তাবুতে বসে আছে। মেয়েটা দশাড়িয়ে আছে তাবুর সামনে রোদে । সকলের
নজরবন্দী। নিজেকে একটা জানোয়ার মনে হচ্ছে তার । এতগুলো লোক,
সকলের কৌতুহলী দৃষ্টি তার উপরে ।
-_কিছু বলবে ?
শেষ করে! সাহেৰ, জলদি করো
--জ্রুর ৷ এত জলদি করব যে সিধে পাঠিয়ে দেব জাহান্নামে | বলো, কেন
বিষ এনেছিলে ?
চম্পা ২১
স-শুনবে সাহেব ?
সওয়ালরত বিচারককে কী বললেন একজন ।--এটা নাটক করবার সময় নয়।
তাড়াতাড়ি শেষ করে৷
_ শেখাতে এসে না আমাকে-_বিচারক চটে গেলেন__-বলো'"*বলো+**
সাহেব, সত্যি কথা'**কালকের গান গাওয়া গলা আজ ধুলো ও তৃষ্ণায়
চিরে চিরে যাচ্ছে । মেয়েটি বলল-_সাহেব, তোমরা বেইমানি করেছ।
_জবান্ রখ! সাহেবের অবমাননায় উত্তেজিত এক বৃদ্ধ শিখ চেঁচিয়ে
বলল। মেয়েটি তার দ্বিকে চেয়ে হাসল | বলল-_সাহেব কোনোদিন যদ্দি তালাশ
করে জানতে পারো! তো! জানবে, কানপুরের বুড়ো শেরিভানের বিবি আমাকে
কতকগুলে। জিনিস দিয়েছিল ভালোবেসে । তাকে লুঠের মাল ক্লে জাহির করল
সাহেবঃ শেরিভানের ভাতিজা ।
স্তভিত এভারেট এগিয়ে এল। তার দিকে চোখ তুলে মেয়েটা! বলল.
আমার বুড়ো দাদা আর আমার দ্বামীকে ফাাসিতে লটকে দিলে তোমর1।
ফ'1সে মরল বলে তাদের চৌথাক্রিয়া কিছু হল না। বলো--বিবিঘরের খুনের
জন্য কতজনকে মেরেছ তোমরা ?
এই জবানবন্দির জবাবে চোখে চোখে লেখ হয়ে যায় বিচার । উঠে দাড়ায়
সবাই । গলা ভেঙে যায় তবু বলে চম্পা-আফশোস যে তোমাদের কারে!
জন নিতে পারলাম ন1।.*
--চুপ করো চুপ করো» 8০০ 167 20096),
--তোমাদের শাপ দিচ্ছি আমি''*এর বিচার হবে''*বিচার হবে--নয় তো
মিথ্যে হয়ে যাবে জমান] ।
ধাকা দিতে থাকে ছুজন সিপাহী । বিশ্রত্ত চুল বাতাসে উড়ে ঝাপটায়
চোথে মুখে কপালে। প্রত্যেকের মুখ কিছুক্ষণ জলত্ত দৃষ্টিতে দেখে সমত্য
জমায়েতটার প্রতি থুধু ফেলে চম্পা বলে- সব বে-হিম্মত, কাপুরুষ |
মাঝরাতে পরিত্যন্ত গ্রামের পথ খু'জে খুঁজে এল কয়েকজন সওয়ার ।
সকালে যেখানে তীবুর খুটি ছিল, সেখানে কাড়াকাড়ি করছিল শেয়াল। মাহুষ
দেখে পালিয়ে গেল শবদেহ ছেড়ে।
গভীর গর্ত খুড়ে নীরবে চম্পার দেহ সমাধিস্থ করল তারা। কীটাবোপ
এনে ঢেকে দিল মাটি। একজন বলল-_শেষ পর্যন্তও কিছু ফাস করেনি চম্পা!
কপালে হাত ছয়ে সম্মান জানাল জার সবাই। তারপর পার হয়ে ওপারে
পরম আত্মীয়
অফিস ঘরের কলগুঞনন কানে আসছে । টাইপশ্রাইটার কাজ করে চলেছে
খটাখট -খটাখট-খটাখট ! ফ্যান ঘুরছে বো বো করে। ক্লাইভ বিজ্ডিংষ়ে
এই অফিসটা নতুন নেওয়া হয়েছে ।
ভ্য!নিশ ফার্সটা উঠে গেল মিশন রো-এ | তার ফণেই সম্ভব হল এই
জগায়গ। পাওয়া । এই যাওয়া আসার যাঝখানে যে-টাকাটা হাত বদল হল
তার অঙ্কটা মনে করতেও ভয় হয় আমার । এত টাকা পৃথিবীতে আছে?
অথচ কী সহজেই টাকাটার কথা বলেছিলেন অবিনাশবাবু আমার বোনের
বিয়েতে । কাকিমার সেজ জামাইবাবু অবিনাশ মুখোটিকে নিয়ে যে রকম সরগরম
পড়েছিল,_তাঁর কাছে বর আর বরপক্ষ তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল। উনিশ
হাজ্জার টাক!র গড়ি ঈড় করিয়ে রেবাঁর হাতে চারটি টাক গু'জে দিয়ে এক
গ্লাস ঘোলের সরব খেয়ে আবার গাড়িতে উঠতে যেটুকু সময় পেগেছিল তার
মধ্যেই অবিনাশবাৰু সেই আশ্চর্ধ অস্কটার কথা শুনিয়ে বলেছিলেন-
-এত করে তবে অফিসট1 পেলাম !
অত টাকা শুধু পাটিশণিতে-ই থ!কে জানি। রাম অতি শ্বচ্ছন্দে শ্যামকে
সেই টাকা ধার দেয় আবার চক্রবৃদ্ধি হারে স্থ্দ জুড়ে সেই টাকা গিয়ে ওঠে
যছুর ঘরে । আমাদের সম্মিলিত ক্ষমতায় তিন হাজার টাক] ধার করে টেলারিং
পাশ ছেলের সঙে রেবার বিয়ে দিচ্ছি। অবিনাশ বাবু আমাদের সেদিন বিভ্রাস্ত
করে রেখে গিয়েছিলেন।
নতুন অফিসের রিসেপশন রুমের সবটুকু সবুজ । পালিশ ছাড়া ত্বাভাবিক
রঙের দামি ফাঁনিচার সমুদ্র-সবুঙ্গ কার্পেটের ওপর ছড়িয়ে আছে। সবুজ
প্রা্টিকের পর্দায় মনোরম, ম্যাগাজিন-বিক্ষিপ্ত সুন্দর ঘর | দশটা থেকে বসে
আছি। এখন বাজল তিনটে । এর মধ্যে একবার মাত্র খেতে বেরোলেন
উান। একবার দেখা করলেন একটি ছোকর1 সাহেবের সঙ্গে। এখন কী
করছেন ভাবতে চেষ্টা করি। বিলিতি ম্য/গাঁজিনের মপাটের লোভনীয়, খাবার-
গুলোর ছবি থেকে চোখ ফেরাতে পারি না। কার! খায় ও সব খাবার ?. উনি
কী করছেন? হয় চিঠি লিখছেন, নয় চেয়ে আছেন টাইপিস্ট মেয়েটির দিকে ।
পরম অস্ত্ৰীয ২৩
ছিপছিপে স্থন্বর বাঙালি মেয়েটি। পাঞ্ধাবি স্টেনো মেয়েটির সঙ্গে খুটখুটে জুতোয়
শব্ধ তুলে যাওয়া-আসা করে দেখেছি। সম্ভবত তারই সঙ্গে কথা বলছেন
অবিনাশবাবু। বাবু কী করছেন, এ বেয়ারাটাকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করছে।
ইচ্ছে থাকলেও জিজ্ঞাসা করতে পারছি না। সেটা স্তর নয়। বে-মস্তর কিছু
আমি করতে পারি না। তাতে অফি:স মাথা হেট হবে কাকিমার সেজ
জামাইবাবুর । আমি যে গুর আতীয়, সে কথা অবিশ্তি কেউ জানে না। তারা
জানে আমি উমেদার মাত্র। সেই কত লাখ কত হাজারের একজন, যাদের
'নংম এপ্লনমেপ্ট এক্সচেঞ্ে লেখানো থাকে আর বারবার ঝালাই হয়। সকালে
কী খেয়ে বেরিয়েছি? ভুলে গিয়েছি। ক্ষিদেয় পেট জাল] করছে । অবিনাঁশ
বাবুর বাড়িতে কতো! রকম আলাজির কথ শুনি। জয়ামাসির ন1 কি মাছ
দেখলেই আ!লাজি হয়। একটু সিদ্ধমাংস আর একটু সাদা সস্-_কেমন করে
যেন উচ্চারণ করেন জয়ামাসি? ভাবতে গিয়েও কষ্ট হল। মাংস আর
সস্--সস্ অর মাংস- ।
কিন্ত এমনি করেই কষ্ট করতে হয়। তাহলে বড়ো হওয়া যায় জীবনে।
হওয়া যায় অবনাশ মুখোটি।
চারটে বেজে সাতাশ মিনিটে বেরুলেন উনি। আমি শশব্যন্তে উঠে
(ডাই । বললেন -
--আরে? মণিযে? কতক্ষণ?
--আজ্ঞে, এই দশটা থেকে--!
--তাই নাকি? টু ব্যাড-ছুষ্ট মেয়ে অ'মাকে খবর দেয়নি।
ুষ্, মেয়ে মানে রিসেপ শনিস্ট ভায়োলেট দত্ত । চুলের পোনিটে ইল নাচিয়ে
হৃন্দর করে হাসল। অবিনাশ ৰাবু তাড়া দিলেন আমাকে--
সচলে! চলে। মণি, বেরিয়ে পড়ি। গাঁড়িতে বসে ড্রাইভারকে বললেন--
স্"মোকান্থেো।
ঢুকলাম মোকান্থো তে।
তারপর বললেন-- বেচারা, বারের ল।ইসেব্স পাচ্ছে না কিছুতে ! ভাবতে
শারে।?
মোকাঘের চারপাশে তাকিয়ে মালিকের ছুঃখে ছুঃখী হবার সাহস হল
1 উনি বললেন--
- কিছু আলু ভীজী! দিতে বলো। জ্যায চিজ! কফির সঙ্গে সর্ধদ
২৪ মহাশ্বেত। দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
হালক1 কিছু খাবে জানলে? কীষেগ্রাম্যতা আমাদের | কাফে মানেই চপ
কাটলেট, মোগলাই পরোটা ।
নামগুলো শুনেছি। খাইনি কখনো! । ছোট ভাইয়ের জুতোর মধ্যে প
ছুটে] টন্টন্ করছে । বিগলিত বিনয়ে কফিতে চুমুক দ্িই। অবিনাশ মেসে!
বলেন-_
_ মণি, প্রেমে পড়েছ কখনো ? --জবাব জোগাল না মুখে। কান লাল
হয়ে গেল। সবেমাত্র ধার-কর্জ করে আই-কম পাশ করেছি। বয়েস হককে
গিয়েছে তেইশ । উনি ভরস! দিয়ে হাসলেন । বললেন-_
--তুমি জানো না মণি। তোমাদের সঙ্গে এ সব কথা কইতে আমর কী
রকম লাগে । মনে হয় যদি তোমাদের বয়সটা ফিরে পেতাম । একদিন--
একঘণ্টার জন্যে- আহ !
ৰলে চট্ করে নিজের মধ্যে ডুবে গেলেন উনি। চারিদিকের নানারকম
থাবারের গন্ধে আমার মাথা ঝিমঝিম করছে। উনি কিন্তু তদ্গত হয়ে কাচের
টেবিলে ফুলদানির ফুলের ছাঁয়! দেখতে লাগলেন। ডুব দিয়ে যেন মুক্ত!
পেলেন এমনি ধার! হেসে বললেন--
--আমার চেহার] দেখে তুমি বুঝবে না মণি-_- কিন্তু বিশ্বাস করো» ঢাকার
নাম কর] মেয়ে শীলা সেন একদিন এই আম!কেই দেখে'***** !
তার কৈশোর প্রেমের আখ্যানটি শেষ হলে রাত সাড়ে আটটায়। শেষ
দেড়ঘণ্ট1! বসতে হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনের মাঠে। সেখানে
আমাকে ছেড়ে দিয়ে চট্্করে উনি উঠে পড়লেন। নশ-্টায় না কি মেট্রোতে
জয়ামাসি অপেক্ষা, করবেন। বাসে চড়ে বাস|য় ফিরতে রাত সোরা, ন-টা
বার্জল। ফিরে তারপর রাস্তার কলের জলে সাবান দিয়ে সার্ট কাচলাম।
প্যা্ট ভাজ করে তোধকের নিচে রাখলাম। ভুতোয় কালি লাগালাম।
উদ্ধমেই লক্ষ্মী লাভ। কাল সকালে আবার দেখ। করতে হবে ও'র সঙ্গে।
অবিনাশ মেসে। আমাদের পরিবারের একটি আদর্শ । আজ নয় আমাদের
এই' অবস্থা। সেই সাতচগ্লিশের আগে, যখন টাকায় আমার শৈশৰ কেটেছে,
তখনো তীর নাম শুনেছি আমর1। তখন ক্রিমিনাল ওকালতি করে বাবা পাঁচ
ছয়শে! টাকা রোজগার করতেন। দাদ! মেজদা! কলেজে পড়তেন। পুজোতে
নতুন কাপড়ের গাঠরি বেঁধে আমরা যেতাম স্টিমারে। আমার পৈতের সময়
মা'নতুন চুড়ি পরে এক দালান মানুষকে পরিবেষণ করছেন। সে ছবিটা জামাকক
পরম আত্মীর ২৫
আজও মনে পড়ে। তখন অবিনাশমেসোর নাম করা হত অন্য স্থবে।
এখন সেই মা-র মুখের দিকে চাওয়া! যায় না। দাদা স্টেটবাসে জয়েন
করেছেন। মেজদা আর তার বন্ধু মিলে যা করেন, বাব অবশ্য তাকে বলেন
ব্যাবসা । আমর] সবাই জানি মেজদ] শ্যামবাজারের দিকে বাঞ্তায় বসে গেঞ্ডি
বেচেন। রাত বাড়লে ধৃূপকাঠি--এক আনা করে | ছু-আনা করে! এখন
অবিনাশমেসোর নাম কর] হয় অন্যভাবে । মানুষের জীবনের সমস্ত সার্থকতার
মূর্ত প্রতীক যেন অবিনাশমেসো। তিনি আছেন বলে ভরসা আছে।
স্বাবলঘ্িতার মহৎ উদাহরণ। পরিশ্রমই যে সার্থকতার সোপান? তার জজ্জন্নয-
মান নিদর্শন অবিনাশ মুখোটি।
ছোটে বেল! ভোরে উঠতেন। নিজের জামা নিজে কাচতেন। সাবান
মাখেননি। বিলাসিতাঁর বিরোধী ছিলেন। নিজের সব কিছুই নিজে
করেছেন। মায় চাকুরিটি জোগাড় কর! পর্যস্ত । সে চাকুরিতে চল্লিশ টাকা
মাইনের ছুঁচ হয়ে ঢুকে, কোম্পানির একজন ডিরেক্টর অর্থাৎ ফাল হয়ে
বেরিয়েছেন। সম্পূর্ণ নিজের কৃতিত্বে আজ তাঁর আলিপুরে বাড়ি, ক্লাইভ
বিজ্ডিংরে অফিস। গ্যারেজে স্টম্ডিবেকারঃ লা-মার্টিনিয়েরে ছেলে-মেয়ে ।
আমর। চিরকাল শুনে আসছি মানুষ হতে হয় অবিনাশের মতন।
সেই মতোই চেষ্টা করছি। আগে উনি বলেছিলেন, মণিকে আমার
অফিসেই নেবো । হালচাল শিধুক। ঘোরাঘুরি করুক। বাবাকে বলেছিলেন
--আমি মার্টিন সায়েবের ওখানে শ্রেফ চঙ্গিশটাকায় ঘসেছি কতোদিন | ভাই-
বোনকে পড়াতাম, খোলার ঘরে থাকতাম, আপনি তো৷ জানেন।
মহাজনের আচরিত পস্থাই তে। ধরতে হবে। এক ঠিকে বি-এর ভরসায়
উনিশজনের সংসার | জ্বামা-প্যাণ্ট সাবান দিয়ে কেচে কেচে পোক্ত হলাম।
নিজের খরচ টিউশনি করে নিজেই চালাই । জামা-প্যাণ্ট করিয়ে নিই।
জুতো কিনি। তখন রেবার বিয়েতে এসে উনি বললেন-_শুধু নিজের কথাই
ভেবে! না মণি । ছুনিয়াতে এসেছ, পরেরু কথাও ভেবো । তুমি তো৷ এক! নও,
মা, বাবা, ভাই, বোন। কার্নেগির জীবনী পড়েছ? রকফেলারের কথ!
জানে? ব্রিটিশ কাউদ্দিলে ভতি হয়ে পড়াশোনা করতে পারো! না? -্মাথ!
যেন কাটা গেল। এমন কথ! তো উনিই বলতে পারেন! উনি কি সোজ।
মান্য? এতথানি স্বার্থপরত! নিয়ে চলাফ়ের! করছি আমি? বিয়ের খাটা-
খাটুনিতে পাথর তলাটা। ধসে পড়ছে' ব্যখার়। একহাতে ভ্বালের বাতি,
২৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
আদব একছাতে কুমড়োর ছক্কার থালা ধরে আমি লজ্জায় মরে গেলাম। তখন
উনি হাসলেন | এমন সথন্বর হাসি ওর! বললেন--.
__মুষড়ে পড়লে তো? পাগল, পাগল তুমি মণি_-এসো, যোগাযোগ
রেখে। | কাজের খোজ পেলেই দেব। জানে! তে। কী রকম কম্পিটিশান?
আসা-যাওয়! করছি আজ ছয়মাস ধরে। উদ্ভমে ভাটা পড়লে চলবে না।
বাবা, মা» দাদা, মেজদ1! আমার দিকে খাবার সময়ে এমন করে তাকান ষে
আমার গায়ে বেধে। স্পষ্ট বুঝিঃ তাঁরা আমাকেই দোষ দিচ্ছেন পদে-পদে।
ছ্মবিনাশমেসোর সঙ্গে আমার এত আলাপ । সকাল দশটা থেকে রাত ন'টা
ম্মবধি তীর সঙ্গেই কাটাই । তবু যে কিছু হচ্ছে না_.সে জন্যে আমিই দায়ী ।
দিশ্চ্ন আমি পারছি না। হেরে মাচ্ছি। তীদের নীরব অভিযোগ হাজারটা
শলা হয়ে আমাকে বেঁধে! সকাল বেলা মরিয়া হয়ে উঠি। মনকে বলি,
"আর নয়, আজ য] হয় একটা করবই ।
সামনে গেলেই ভাষা হারায়। সেই চমৎকার হাসি! বলেন--
-মণি! তোমার জয়ামাসি “ফোন করেছেন, বিকেলে চা থেতে বলেছেন
কাদের | কেক চাই, আইস্ক্রীম-সন্দেশ। ফুল! যাও তো ভাই! এই তো
চাই। গুড বয়!
রজনীগন্ধা, কেক আর সন্দেশের পেছনে ছুপুর-ভোর ঘুরি। তারই
তিরিশটাক! পকেটে নিয়ে । তবু এক কাপ চা-এ শুকনে! গলা ভিজিয়ে নিতে
রস]! হয়.না। হলেই বা ছয়পয়সা ব! ছু'আনা! অসদাচরণ করা কি সম্ভব?
ক্অনেক পুরুষের উত্তরাধিকার আমাকে শাসন করে। পেটে খিদে চুয়ে চু'য়ে
রে । ফুল দেখে জয়ামাসির বোন মিনি সরু গলায় বিলাপ করে ওঠে । জয়া-
যাসি বলেন- আমার টি-সেট্, টেবিলের ম্যাটিং সবই যে হলদে রঙের । লন্দ্মীটি
ষণ্ি, কিছু হুর্যমুখী আনে1| ভ্যান গগের ছবিটার রিপ্রোভাকশনটার সঙ্গে এমন
ষানাবে।
আবার ছুটি নিউমার্কেটে। হৃুর্ধমূখী আসে। অভ্যাগতরা আসেন।
€পেটকাট। জামা আর সোচ্চার যৌবনের ওপর পাতলা নাইলনের আচল
কুপিয়ে মিনি চা ঢালে। আমি প্যান্টি'তে বসে চা কেক খেয়ে চলে
মামি ।
কোনোদিন উনি বলেন- চলো» দেখাই তোমাকে রাতের কলকাতা ।
.. ধর্দতল। অঞ্চলের চোরা গলিতে গেলাম ওঁর সাথে। বর্ঘধীর অবিনাশ
'পরম আত্মীয় ২ধ
মুখোটি আশ্চর্য নৈপুণ্যে হাউসি খেলে চারশো একচজ্লিশ টাকা জিতলেন।
বেরিয়ে এসে বললেন-
- তোমার পয়ে জিতলাম মণি। বলো কী চাও? চকোলেট খাবে?
আঅ.চ্ছ1 চলো ।
লোয়ার সাক্লার রোডের চীনে রেস্তেশারায় বসে প্রন্-ফ্রায়েড রাইস্ আর
ফাউল খেতে খেতে আমার দিকে চেয়ে দুষ্টু হাসতে লাগলেন অবিনাশমেসো।
বললেন-__
এখন থেকে আর তে ছাড়ছি ন৷ তোমায় । খুব লাকি তুমি!
কী জানি কেন, সেই মুহুর্তেই বললাম--আঁপনি আমাকে যা হয় একটা
জুটিয়ে দিন মেসোমশায় । আমি কেন! হয়ে থাকৰ আপনার কাছে! বাড়ির
অবস্থা জানেন তে।?
উনি আহত হুলেন--কী আশ্চর্য মণি, এই কথা তুমি বলছ আমায়?
তুমি? আমি কি তোমার জন্য ভাবছি না? তোমরা অমনিই মণি, মানুষ এমনিই
হয়। ভালবাসতে গেলে আঘাতই পেতে হয়! কেন সেবার আই এস* সি.
পড়তে বলিনি আমি? বলিনি, সায়েন্স ছাড়া ভবিষ্যৎ নেই? রেলওয়ে
ওয়ার্কশপে হাতুড়ি ঠুকতে হলেও চাই আই* এস্-সি ; বলিনি?
আমারই দেয! ও"রকি দোষ থাকতে পারে? পাঁচবছর আগে তো উনি
সত্যিই বলেছিলেন আই, এস্-সি, পড়তে । সে কথা না ভেবে চিন্তে হঠাৎ
আমার বড়দার টি' বি. হল সে তে। ও'র দোষ নয়!
বাড়ি ফিরতে ফিরতে নিজেকেই ধিক্কার দিলাম । আজ অবিনাশমেসোর
ওপর বিশ্বাস কমছে আমার? অবিনাশমেসোর আত্তরিকতায় সন্দেহ আসছে?
শত শত ধিক !
আমার আত্মাসুশোচনা দেখে উনি আমাকে ক্ষমা করলেন। আবার ঘনিষ্ঠ
হতে দ্রিলেন আমাকে । মিনির জন্তে এল, মল্লিক থেকে রঙ মিলিয়ে উল আনা,
জয়ামাসির চিঠি বরানগরে পৌছে দিয়ে আসা, জয়ামালির পিয়ানো-টিচার ললিত!
সিন্হার আর ও'র জন্ঘে সিনেমার টিকিট কেনা, এই সব কাজের ভার আবানগ
দিলেন আমাকে । অর্থাৎ ওর জগতে প্রবেশের ছাড়পত্র পেলাম এমনি কন্ধে ।
কাজের ফাকে ফাকে কত দিনে কত কথাই যে শোনালেন | একদিন
বাড়িতে বাগানে বেতের আসবাব ছিটিয়ে বলে এক্লারভেল কুকুরটাকে বল ছুড়ে
দিতে দিতে বললেন”
২৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
-টেক্নিক্যাল কিছু না জানলে"'*এই দিনকাল! আচ্ছা, পাবলিক
সার্ভিস কমিশনের এই পরীক্ষা! দেবার কথা ভাবছ? কী আশ্চর্য, ভুলেই
যাই তুমি গ্র্যাজুয়েট নও ! দেখ জয় |
ঘাড় ফিরিয়ে শুনতে গিয়ে জয়ামাসির আচল বুক ছেড়ে মাটিতে
লুটিয়ে গেল। অবিনাশমেসো একটুকরো! কেক কুকুরটাকে দিয়ে বললেন-
- জয়া, গ্র্যাজুয়েট হওয়াটা] যে কতো তুচ্ছ, এই মণিকে দেখলেই আমার
মনে হয়! চবিবিশ বছর বয়েস আর মাথা উচু করে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই
করা! কী যে ভালে। লাগে ভাবলে!
কোনোদিন বললেন-_
-এত শয়ে শয়ে প্ল্যান হচ্ছেঃ কলকাতার আশপাশ তো৷ কলোনিতে ছেয়ে:
গেল। জমি নিয়ে চাষ করো না? কলকাতার কাছাকাছি করেক বিঘা জমির
কিছু ধান, কিছু মুরগী-_একথান। ঘর তুলে স্বাধীন ভাবে বাস করা। আর কিছু
চায় না কি মানুষ? আমি তোমায় বলে দিচ্ছি মণি, এ সমস্যা আজ পশ্চিমেও,
উঠছে। টেলিভিশান আর স্কাইক্কেপার দেখে দেখে আবার চাইছে মাটির
স্পর্শ ।
কোনোদিন বললেন--
--নেভিতে চলে যাও না! ট্রেনিং নিয়ে এসো । আর কিছু কয়ো আর
না-ই করো শরীরট1 তো বানাতে পারবে? শ্বাস্থ্য থাকলে আর কী লাগে?
কাগজ বেচেও তে। দিন যাঁয়।
এমনি করে এগারো! মান হাজির] দ্িলাম। জুতো জোড়া ছি'ড়ে গিয়েছে।
শর ছুটে সেলাই করেও আর টে*কে না। সাবান কেচে যে স্বাবলক্বী হব,
দে' পথ রাম-রাবণ একজোটে ঘায়েল করেছে। পুরোনে। সাটে” সাবান,
ঘষা সইবে না। মেজদার ব্যাবসা বন্ধ। আমার তৃতীয় টিউশনিটার টাকাও
সংসারেই লাগে। মাঝখান থেকে চা» চিনি, সাবান এগুলে! বিলাসিতার,
পর্যায়ে চলে গিয়েছে। বাবার মেজাজ আরো! চড়া । কিন্তু অবিনাশ মুখোটির,
সঙ্গে আমার পরিচয় আজও কোনে। পরিণতিতে এল ন|।
আধার আকাশে তুবড়ির মতো! একটা খবর সহসা দীপ্যমান হয়ে উঠল ।,
চাকরি ! দাদা যাদবপুর ডিপো থেকে হস্তদস্ত হয়ে এলেন। বললেন---
স্আযাকাউন্টস ক্লার্ক নেবে অবিনাশবাবু। একশে। দশ মাইনে! তুই;
জার দেরি করিসনে মণি, দরখাত্তট। ঠুকে দে, এবার তোর হবেই ।
পরম আত্মীয় [৯৯
অবিনাশবাবুর সন্মান আমাদের বাড়িতে এতখানি যে, সবাই ধরে নিল
এবার চাকরিটা আমার হয়ে গেল। আর কোনে মতেই বিগড়ে যাবে না।
অবিনাশবাবু কথা দিয়েছেন নিজ মুখে ।
দরখাস্ত পেশ করে দিলাম । তারপর থেকে দিনগুলে! কাটতে লাগল
এমন ভাবে। প্রত্যেকটি মুহূর্ডও যেন আমার প্রতীক্ষায় ভারী হতে হতে
যন্ত্রণায় ফেটে পড়বার মত হল। দিন কাটে তো রাত কাটে না। ডাক
পিওনের আশায় চেয়ে চেয়ে চোখ ক্লান্ত । খবর আর আসে না।
দশদিন বাদে উনি ডাকলেন । গেলাম অবিনাশবাবুর অফিসে । চাকরিটা
আমার হলই, এই আশ্বাস নিজের মন থেকে নিজেই গ্রহণ করে বলীয়ান
হয়ে উঠলেন দাদা । আমাকে একট! সাদ! সার্ট আর খাকি প্যাণ্ট কিনে
দিলেন বিশ টকা খরচ করে। অগ্রতিভ হেসে বললেন-__এখন থেকে তো
লাগবেই তোর |
মেজ্রদার বন্ধু অনাদিদ! বাটায় কাজ করে। তার মারফতে সম্তায় বাটার
স্বুতে৷ কিনে আনলেন মেজদা] ।
দাদার কেনা জীমা! আর মেজদার কেনা জুতো! পরে যখন বেরুলাম,
মনে হল সমস্ত পরিবারটার আশাভরস নিয়ে চলেছি আমি।
আমাঁকে ঢুকতে দেখে বেয়ারাটা! অবধি হাসলো । হাসবেই তো। ওরাই
তো! খবর আগে পায়। কাল থেকে আমাঁকেই' সেলাম ঠুকবে ও। কেরানি
আর টাইপিস্ট, সকলেই এমনি ধারা সম্মান পেয়ে থাকে । এ হুল কমাশিয়াল
ফার্মের বৈশিষ্ট্য । এ তো সরকারি অফিস নয়। সেখানে শ্রীক্ষেত্র। সম্মান
গধু গ্রহ-বিগ্রহের ৷ অন্যদের বেল! সাম্যনীতি।
টাইপিস্ট মেয়েটি একতাড়া কাগজ হাতে বেরোয়। পাশের ঘরে যায়।
আমি আজ ছুঃসাহুসী। তার দিকে চেয়েও একটু হাসি। আমার চব্বিশ বছরের
বুকে হঠাৎ যেন একটা উত্তাপ অন্থভব করি। বেশ লাগে। রক্তটা কেমন
বিমিয়ে ছিল এতদ্দিন। এখন কেমন তাজ। হয়ে উঠেছে । নইলে এতদিনে
একবারও কি ভাবতে সাহস করেছি মেয়েটি কত স্ম্দর |
কমালে হাত ঘষতে ঘষতে হাসতে হাসতে বেরোন অবিনাশবাবু। চটপট
ভাবে, তাড়াহছড়ে। করে। সুইং ভোরটা ধাক্কার পেছনে সরে যায়। গানের
মতো] বলেন". |
স্চটলোঃ চলে॥ চলে! ।
৩, মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
ঝড়ের বেগে আমায় উড়িয়ে নিয়ে আসেন ব্রড ওয়ে-তে | বলেন--
তোমার ও সি লেগেছে, দিনটাও চমতকার । আজ সঙম্গঘ্য নিয়মই অমান্ত
করা চলে।
ছোট্ট গেলাসে প্রায় বর্ণহীন টলটলে পানীয়। সামনে তার গেলাসটা
নিয়ে একটু ঠুকে দেন। হা! করে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই
খেয়ে ফেলি। আব|র ভরে দেন গেলাসটা। আমার মাথা কেমন মেতে
ওঠে। উনি নীচু হয়ে মুখের কাছে মুখ এনে বলেন--
--মণিৎ আমার অফিসের কাজট1 তোমার হল না।"**মানে একটু ভালো
লোক পেলাম, এ তোমার মতে! আই* কম-ই*''তবে তোমার জয়ামাসির
কথ। ***যা হোক মণি...কিছু ভেব না''*একটা কিছু আমি করে দেবেই
তোমাকে '"'
চেয়ে থাকতে থাকতেই আমি গেলাসটা খালি করে ফেলেছি । উনিও
খচ্ছেন। সমস্য স্বপ্নের মতো! অবাস্তব । ওর কথাগুলো অসম্ভব জোরে আমার
মগজে পিটতে থাকে । উনি বলেন-_-আমি যখন আছি তোমার ভয়কী?
অ'্যা? বলি ভয়টাকী?
বলে ঝুকে পড়েন। জড়িয়ে জড়িয়ে বলেন--এইতো! আসছ !। চল্লিশ
টাকার মদদ খাচ্ছ। উনিশ হাজারের গাড়িতে চড়ছ**'একশো। দশটাকার
চাকরি? ছো চ্ছে। মণি.**ও চাকরিতে তোমার হবে কী?
-স্মানে ?
সমানে পরিষ্কার । যতদিন পারে' ভোগ করো! জীবনটাকে । মেয়েদের
পেছনেই ঘোরে] । তোমার বয়স থাকলে আমি"*'
আমার মাথা পরিষ্কার হয়ে যার । খুব সাফ দেখি সব। দেখি রং ফর্পাঃ
মোটা, আকাট মৃর্খ একটা লোক পুরু লাল ঠোট জিব দিয়ে চাটছে আর কী
বলছে। উঠে দীড়াই। আমার চেয়ে মাথায় এক হাত লক্বা! অবিনাশ মুখো-
টিকে মনে হয় আমার চেয়ে অনেক ছোটো।। একটা বে-পরোয়া সাহস আসে।
দাড়িয়ে মনে হয় অনেক ওপর থেকে দেখছি আমি অবিনাশ মুখোটিকে | মনে
হয় আমার সামনে বসে গবগবিয়ে মদ খাচ্ছে যে-লোকটা তার মতে। কুৎসিত
করুণার পাত্র আর দেখিনি । বলি
* "স্চুপ। আর একটা কথাও নয় !
স্পা?
পরম আত্মীয় ৩৯
-তোমার ধাক্লাবাজি আমি অনেক শুনেছি"'*তুমি একটি আত্ত বদমায়েশ-**
মনিবের পা-চাটা চরিত্রহীন উল্ল,ক--তোমাকে আমি এই এমনি করে--
বলে গায়ের জোরে একটা চড় মারি। কাচের গেলাস বোতল একটা
ঝটকায় ফেলে দিই তীর মুখে। ফলাফল কী হল না দেখেই বেরিয়ে আসি
নবাবের মতো |
এ হলো! কাশকের কথা । আজ সকালে ঘুম ভেঙে মাথা ব্যথা করছে।
ভাবতে পারছি না কী করে অমন ধার] ব্যবহার করেছি কাকিমার সেজ জামাই-
বাবুব সঙ্গে | এ কাজ না হোক অন্ত কাজ, কেরানি না হোক চাপরাশির কাজ,
এ বছর না হোক অন্ত বছর, একটা-না-একটা জুটিয়ে দিতেন তিনি আমাকে ॥
ওর মতো সদাশয়, কৃতী কর্মবীর কি ফেলতেন আমাকে? টিকে থাকলেই
আখেরের ব্যবস্থা করতেন |
টিকতে আমি পারলাম না। নিঃসন্দেহে আমারই দোষ। তবুতে। বসে
থাকলে চলবে না। এবার ধরব বৌদির সেজো৷ পিসেমশাইকে।
নতুন উদ্যমে জুতোয়-কালি ঘষতে লাগলাম।
চিন্ত।
মেদিনীপুর জেলার দাতন ও কণ্টাই-এর সমীপস্থ অঞ্চল থেকে বছর বছর
একদল নরনারী কলকাতায় আসে।
শুধু জান নয়, ভাতের নিরাপত্বাও মেদিনীপুরেরই দেওয়া উচিত। কিন্তু
দ1তন, ঘাটাল বা কথি সে-প্রতিশ্রতি কোনোবারই রাখতে পারে না। তাই,
হয় বর্ষার মুখে নয় শীতের ফসল তুলে দিয়ে এর এসে পড়ে । একেবারে মাঠ-
খামারের গন্ধ বেরোয় চেহারা থেকে । অনন্ত, উৎসব, চৈতন্য, অক্তুর এইসব
সাউ-প্রধান-মহাস্তিরা প্রথমে কর্পোরেশনের ফিটার-প্র'স্বার দাদাদের কাছে
ঘোরে । কেউ কেউ সোজা এসে আমাদের পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে অন্থান্ত-
দেশ-মুখো অনস্ত বা কৈলাসের বদলি দ্বর্ূপ রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। এক সময়
খাল-বিল জলাজমি দশটাক। কাঠা হিসাবে কিনেছিলেন ধার1, সেই সব হিসেৰি
ঘোষ-বোস-সরকার-চাটুক্যেদের অধস্তন বংশধরদের কাযরেো। কারো আজও
রাধূনে বামুন রাখবার ক্ষমতা আছে । পিতৃপুরুষের রেখে যাওয়া বাস করবার
মতো! একখানা-দুখ।ন! বাড়ি, ক্যানিং-এ ধেনে! জমি--এর কল্যাণে মোট। ভাত্ত
আর কুচো-ট্যাংরার গামল! ভাসানেো! ঝোলের প্রতিশ্রতি আজও আছে।
সেই প্রতিশ্রুতিই এইসব তথাকথিত একান্নবর্তাঁ পরিবারের বনিয়াদ। এ সৰ
পরিবারের ভাত-ঝোলটা একসঙ্গে চলে । এদিকে ঘরে ঘরে আলাদ1 মিটুসেফে
স্বামীর রোজগার-মাফিক চার পয়সার দানাদার থেকে চারটাকা সেরের
আপেল পর্ধস্ত হাজির] দেয়। এমনিধারা বাড়িতেই ঢোকে এইসব র'ণাধুনে
বামূন। এ ভাতট। নামার, ঝোলট! বসায়, ঝাল দিয়ে মাছ রেধেও খাওয়ায়
সম্তান সম্ভাবিতা ননদদের কখনো । নিজেরা গিম্নির সঙ্গে পান-স্থপুরি,
লোডা-সাবানের পাওনা নিয়ে ঝগড়া করে। দুপুরে গাড়িবারান্দায় দেশের
নোকগুলোর ওপর মুক্ষব্বিয্ান। চালায়।
তাদের মেয়ের] ঘর ভাড়া নিয়ে চাক বাধে । লোকের বাড়ি-বাড়ি কাছ
নেয় - তোলাকাজ, দিনরাতের কাজ।
এদের মধ্যেই আমি চিন্তাকে প্রথম দেখি । মাথায় খাটো, রং ফরল!,
হাতে রুপোর বালা, গলায় উল্কি দিয়ে হার আকা । একট! ছোটো েয়েকে
চিন্তা ৩৩
কোমরে দডি বেধে বসিয়ে রেখে সে কাজ করছিল আমারই পাশের বাড়ি।
গিঙ্লির ছোয়াছু*ঘির ব্যাপার আছে। ছুবছরের রোগ। মেয়েটা মায়ের পায়ে
পায়ে ঘুববে ঘরে-দোরে-_সে তার অসহ। চোখে দেখে প্রথমটা আমার
গাও জলে গিয়েছিল। একেবারে রোগা একট] মেয়ে। বসে আছে গাড়ি-
বারান্দার ধুলোর ওপর । রোগে তৃগে চেহারাটা জ্ঞানবৃদ্ধের মতে! | বড়ো বড়ো
চোখছুটোতে কোনো! কৌতুহল নেই । অনেক ক্লান্তি, ক্ষমা! আর ধের্য নিয়ে
সেবসে আছে। পাড়ার ছেলেমেয়েগুলো৷ কাছেই দাড়িয়ে মজা! দেখছে।
একটা পাঁশব কৌতুহল আর ছূর্বলকে খোচাবার একটা নিষুর তাগিদে তাদের
ছোটো ছোটো! মুখগুডুলে! কীরকম যেন হয়ে উঠেছে ! তাদেরও দোষ দিতে পারি
না। বহুদিন ধরে বাড়িভাড়ার টাকাটাই শুধু জমার ঘরে পড়ছে। স্ষেহ-
মমতা স্থুকুমার বৃত্তির ঘর বহুদিন দেউলে হয়েছে। এক সঙ্গে থাকবার
অভিশাপ এই, যে কতকগুলি মানুষ পরম্পরকে চূড়ান্ত স্বা করে। বড়োদের
ম্েহহীন সম্পর্কের দায় বহন করে ছোটে ছেলেমেম্বেরা। মরা সম্পর্কের শব
বহন করে বেডে ওঠে বলে শৈশবেই তারা বুড়য়ে যায়।
চিন্তার বাচ্চা! মেয়েটাকে দেখে আর ছেলেমেয়েগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখে
মনে একট] আঘাত লাগল । নিজের দেউলে ম্বরূপ এমন নগ্ন করে আর কথনো
দেখিনি। লজ্জা! পেলাম বলেই নিষ্ঠর হয়ে উঠলাম। দৈস্ত ঢাকবার এমন পন্থা!
তো নেই। তাই বললাম _বেঁধে রেখেছ কেন? ওর লাগছে না?
_কাজ করিব। বলে চিন্তা জন্তর মতো! গ্রতিবাদহীন দৃষ্টিতে তাকাল।
পাজা-পাজা বাসন মাজ্বল» তাল-তাল বাটন! বাটল। বেল! ছুপুরে দেখলাম
মেয়েটাকে কোলে নিয়ে ঘরে যাচ্ছে। ভেঙ্গা কাপড়ে বেহারি পাঁনওয়ালার
অঙ্গীল দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিন্তা আস্তে আত্মে যখন যাচ্ছে তখন দেখে বোবা
গেল কোলের আধমর! বাচ্চাটার দোসর হবার জন্ে আর একজন আসছে।
পরে না বলে পারিনি -ঘরে কেউ নেই তোমার 1 মেয়েটাকে রেখে আসতে
পারে না?
--মোর কেউ নাই।
ওর কেউ নেই। এই মেয়েটা আর অনাগতটির ভার বহন করে ওকেই
বাসার কাজ ধরে চলতে ও চালাতে হবে এই কথাটা ওর সমস্ত জীবনযাত্রাটা
দিয়ে বেরোয়--ও যখন পৌষেয় হাত্ঠকালানে! শীতে ভোরে চান ধরে যয়ল!
কাপড় পরে কাছে ছাত দের) বেলা দশটাক়' ছুটি বালি ভাত .গাড়িন্যাবান্মার
৩৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
মেয়ের কাছে বসে খার, অথব। মাসাস্তে আটটাকা মাইনের জনে দশদিন হাটে।
ওর অবস্থা নিঃসহায় দেখেই মাইনেটা জোরগণায় বারে! টাকার রেট থেকে
আটে নামিয়েছেন গিল্লি। সব অবস্থাতেই ওকে প্রতিবাদহীন অন্তর মতো
সহাশীল আর নীরব দেখি। সে-টাকা থেকেও কাটা যায়। ও বলে-মা
ফ'ইন করিল । কখনো বলে--কাপড়ালুগা৷ দিল না৷ ওর অবস্থা দেখে আমার
নিজের জঙ্জ! করে। মধ্যবিত্ত বিবেককে ঘুষ দিই ওকে পুরোনো কাপড় দিয়ে,
অথবা মেয়েটার হাতে এটা-সেটা দিয়ে । বরাত বারোটায় কাজ সেরে ঘরে
ফিরতে--মদ না খেয়ে ঠাণ্ডা মাথায়ই পানওয়ালাটা ওকে জাপটাতে গিয়ে
কাপড়খান! ছি'ড়ে দিয়ে চটচটে হেসে চেঁচিয়ে গান ধরে । সকালে মেয়েটার
হাত থেকে রুটিবিস্কুট বাড়িওয়ালার বৌয়ের নথ পর!নে! কাকটা ছিনিয়ে নেয়।
বাচ্চাটার কোমরে দড়ি বাধা আছে, সে অসহায়, এ সত্যটা কাকটা খুব
জানে। এমনি করে বিবেককে জোড়াতালি মারবার চেষ্টাটা আমার মিছে হয়ে
যায় - জোড়াতালি সংসারে চলে না।
এর মধ্যেই এল চিস্তার আর-একটা মেয়ে। চিন্তার দলের অন্তান্ত ধি-রা
বেশ গুছিয়ে নিয়েছে ইতিমধ্যে । তাদের কাছেই খবর মিলল। ইদানিং
আটট।কার কাজটাও ছিল ন1। বিদ্ের জটল] থেকে উদ্ধার কর! গেল যে
চিন্তার খুবই দুর্দিন চলেছে । হাতের খাড়ু বাধ! পড়েছে দশটাকায়। আয
দেখলাম ঝিরা চিন্তাকে বাসন-বাধা নিয়ে টাকা ধার দিতে চাইছে। তার!
বলল - ভালো ক।সা-পিতলের যা বাটি-গেলাস আছে» তা তে ছাড়াতে পারবে
না চিস্তা। বুধলাম, লাভ করবার এও একটা সুযোগ ।
ক-দিন বাদে আবার দেখি দুর্বলতায় কাপতে কাপতে কাজে বেরিয়েছে |
বলে--বড়োটাকে ছোটোটার কাছে রেখে এলাম গো, মা। গরিব কি একভাবে
মরে? --গরিব যে নানা ভাবে মরে, এ কথ! বোঝবার জন্তে আমি চিন্তার
কাছে যাব কেন? নিছ্েকে সাধারণ মানুষের দরদি মনে করবার একট? আত্ম
প্রসাদ আছে। প্রায় তার অবস্থিতি অবচেতনে নয়। সম্ভবত তার
তাগিদেই আমি ওর ফুটে! কপালে জোড়াতালি লাগাবার চেষ্টাকরি। কোনো
ক্ষয়ক্ষতি হ্বীকার না করে, পরের উপকার করে পরোপকানী নাম কেনবার
বাসনাটাও বোখহ্য় আমার শ্রেণীগতভাষে পাওয়া আর-একট] উত্তরাধিকার ।
সে উত্তরাধিকারের স্বরূপও গলাস্পচা । তাই আমায় ছেড়া জামা, পুরোনো
কাপড়, বাসি ক্ষটি অথবা বাড়তি কমলালেবুর আত্তরে চিন্তার ফাটা! কপাল
এতটুকু জোড়ে না। তেল-চিট.চিটে দেয়ালে ক্যালেগ্ডায়ের ছবিতে ফুটে?
চিন্তা] ৩৫
ঢাকার মতোই অর্থহীন হয়ে যায়। চিন্তা অবস্ত সময় পেলে ছুটে কথা বলে
যায়। বলে-কারো দোষ নাই। মুপাতকী।
কোন পাপের কথা সে বলেজানিনা। ব্যাখ্য। করবার উৎসাহও তার
নেই। এদিকে দিন কাটে । আমার গলিটা দিয়ে যে জীবন প্রবাহ-চলে
তাই দেখতে দেখতে রায়দের পাচিণটার ফাটলটা বাড়তে থাকে । এ পাচিণট?
বারোয়ারি ঘু'টে দেবার জন্তে। পাড়ার বনেধি বুড়ো একজন চাকর দিয়ে
হামল। করিয়ে ঘু'টে ছাড়িয়ে আনেন। তাই নিয়ে লখিয়ার ম৷ বাড়ির স।মনে
কুৎসিত কলহ করে যায়। এদিকে নিক্দ্ধেগ প্রসন্গতায় কাঠ-াপার গাছটা
বারোমাস ফুল ফোটায়। সে ফুলের যে-কট। ঝরে পড়ে তাই স্পর্শ বাচিয়ে
তুলে নিয়ে যান নিত্যবাবুর পিপি শিবপুজোর জন্তে । মানুষের অর্থহীন আচরণ
দেখে গাছটার উপরের ভাল-পালাগুলো সোনারোদ মাখামাখি করে হেসে
আকুল হয়। সকলে সে হাসি শোনে না, এই যা। এরই মধ্যে দেখি চিস্তার
শরীরে মাংস লেগেছে । শহরের গাছপাণাগুলোর মতে ছুর্বার খিদে সে
সমন্ত প্রতিকূল অবস্থা থেকে কেমন করে প্রাণরস আহরণ করেছে। স্বাস্থ
ফিরেছে। গলার উলকিট। এখন ভালোই দ্েখায়। সে দিন দেখলাম নতুন
কাপড় পরেছে। বলল-_মা দিয়েছে । মাইনেও দশে প্রোমোশন পেয়েছে ।
সেদিন সকালে খুব হৈ-চৈ পাডায়। চিন্তাকে কেন্দ্র করে বলেই মনে
হল। সে এক অভিনব দুষ্ট । ফুটপাথের মাঝখানে নতমুখে দাড়িয়ে চিন্তা ।
ওদিকে দেশ থেকে সগ্ভ আগত ছুজন পুরুষমান্য একটা ঝুপ্টিবীধা বছর-বারোর
ছেলের নড়া ধরে চেঁচিয়ে কী বলছে। গ্ার এবং ধর্ম যে তাদের পক্ষে এ বুঝতে
অস্থবিধে হল না। একজনের রং ফরসা, মুখে পান, চুলে সি'থি-টেঁচাচ্ছে
সেই বেশি। টেঁচিয়ে বলছে-তুই পাতকী করিবি তো, দাম দিবি না?
চিন্ত।র দেশের মানুষরা তাকেই সমর্থন করছে। চিন্তার মুখে কোনে! কথা
নেই। সে শুধু বলছে--মোক ক্ষমতা নাই । মু অপারগ | ছোটে! ছেলেটাকে
বার-বারই ধরতে যাচ্ছে । তাকে ঝটকা! মেরে পুকুষ-ছুজন সরিয়ে নিচ্ছে।
দুপুরে চিন্তা এল দরবার করতে । বলল--মোকে গোটে টাকা ধার
দিন। মু শোধ করিব।
ন। জেনে না চিনে টাকা ধার দেব, আবার সে টাক! ফেরত পাব» এত
ভরসা নেই। তবু গোড়াতেই 'না বলি না। ঘটনাটা জেমে নেবার
সুযোগ একট, হাজার হলেও। কৌতুহল কি আমর কায়ও চেথে কম ?
৩৬ মহাশ্বেত| দেবীর শ্রেষ্ঠ গ
উবু হয়ে বসে চিন্তা । কথা বলতে বলতে নাকের পটিটা ফুলে ফু
ওঠে। নাক ঝেড়ে আর চোখ মুছে নের়। কথার মাঝখানে সম্ রেখে বা:
বার বলে মহাপাতকী। মু হতভাগী।
চিন্তার কথাগুলোতে যে-দব কথা জানি তা, আমার কানে নতুন ঠেকে
চিন্তা বলে-যখন বিধবা হলাম, তখন আমার এ এক ছেলে গোপাল
আমার চারবিঘা জমি গো মা। ছুইখান1 টিনের ঘর, ছাগল ছুটো, গাঃ
একটা । আমার দুধের বাল্য ছেলে ও, চাষকাজের কী জানে গো মা, আর
আমার পাড়ার মানুষদের পায়ে ধরলাম। মামাশ্বশুর আদি আত্মমান্থযর] বহে
কী গো মাতুই নাবালক বিধবা, জমি আমাদের জমা করে দে। আর
রাজি হলাম না। আত্মীয়র1 রুখে উঠল। বড়ো অশান্তি । এদিকে মোক কচ
বস--সদ্ধেবেলা মাচুষ আমার আঙ্গিনায় হাটতে লাগল। আর
গোপালকে নিয়ে দরজা গড়! দিয়ে রাখি আর ভগবানকে ডাকি। বং
দুঃখের দিন।
বলে আর অল্প-অল্প কাদে চিস্তা। এমনি সময় কলকাত। থেকে গে
উৎসব। উত্সবের চেহারা ভালো । সে যে কত প্রতিশ্রুতি দিল চিন্তাকে
প্রথমে চিন্তায় মন টলেনি। দরজায় আগল দিয়ে বসে থাকত। তখন উৎসব
গোপালকে হাত করল। তাকে মিঠাই কিনে দের । ভালো কথা বলে।
দেখে দেখে চিস্তার মন নরম হল। এইখানে কাহিনী থামিয়ে চিন্তা বলল--
যৌবন বড় দুষ্ট গো! মা, শরীরের জালা _মু পাতকী হলাম।
তখন দশজন রুখে উঠল । বড় ভয় চিস্তার। দশজনকে ভয়, ছেলেকে ভয়,
উৎসবের হাতে পান-হ্থপারি দিতে ভয়--ভরসা! দিল শুধু 'উৎসব। বলল, তার
কোনে! ছষ্টচিত্তা নেই। চিত্তাকে সে বিয়ে করবে। কানে কাটি, গলায়
পলাকাটি, হাতে নতুন খাঁড়ু দেবে। প্রথমে দশজন অনেক কথা বলবে।
তাই গোপালকে রেখে তারা কলকাতা যাবে । কলকাতায় বিয়ে করবে । ফিরে
আসবে দেশে। ঘরে পুরুষ না থাকলে চিন্তার সংসার চলবে কী করে? চিন্তা
বলে--বাহা! বসিবে যখন নিশ্চর বলিল, তখন আমি ক্বীকার গেলাম গো! ম|।
সু এমন পাতকী। তারপর উৎসব তাকে কলকাতা নিয়ে এল । দশজন চুরি
করে নেবে বলে কীসা-পিতলের থালা-বাসন যা ছিল বেঁধে আনল চিন্তা ।
তারপর যা হুল তা যে কতকালের পুয়োনে! কথা সে চিন্তা জানে না। তাই
বার বার বলল-- আমার সর্বনাশ কবে পন্বধান পলাইল। না আমাকে বাঁকা
চিস্ত ৩৭,
করল, না কোনে! গহনা দিল, মারিল ধরিল, টাকাগুল| নিল, তারপর এই
দুটা বাচ্চা দিয়! পলাইল।
আজ সে ফিরে যেতে পায়ে না 1--বলতে, চিন্তা বলে-আমার নিজের
জমিতে ধান, পুকুরে ল্যাটা বেলে জাওল গজাড় মাছ--আমার কোন্ দুঃখ?
তবু যায় না কেন? -_সেখানেই গলদ। এখন তার পাতকীর জন্ে তাকে
ছুশো। টাকা দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হুবে। গায়ের দশজনকে ভাত-পিঠা
খাওয়াতে হবে। তা ছাড়া এই মেয়ে-ছুটোকে ত্যাগ করতে হবে। এত
পরীক্ষা দিলে তবে তার সমাজ নেবে চিন্তাকে। --আমি কোথা থেকে টাক!
পাব গো মা। টাকাও পাব না তাই দেশেও যাব না।
আজ যারা এসেছে তারা তার দেশের মুরুব্বি! তার মামাশ্বশুর আর
মামাতো দেওর। এতদিন ধরে ছেলেকে দেখেছে তারা । এখন এই ছেলের
বিয়ের সময় হয়েছে। আর কত দায়িত্ব টানবে তার।? মেয়ে ছুটোর ব্যবস্থ।
করে দেশে চলুক চিন্তা । প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা তবে জ/তিরা দেখবে । আমি
বলি--তুমি তোমার ছেলে নিয়ে এখানে থাক না কেন? ছেলে কাজ করুক»
তুমি কাজ কর। চলে যাবে।
মাথা নাড়ে চিন্তা । একে সে পাতকী। তাতে দ্শজনকে না। মানলে
তাকে কেউ মরলে কাধ দেবে না। ছেলেকে ত্যাগ করবে। দে চূড়ান্ত
সর্বনাশের কথ| কি ভাবতে পারে চিন্তা? পরলোক যে এর চেয়ে অন্ধকার হতে
পারে না তা চিন্তাকে বোঝাবে কে? সে শুধু বলে-_মেয়ে দুটোকে কী করিব?
আমার গিরি-গৌরীকে কি করিব?
ছুটো৷ টাকা ধার নিয়ে উঠে যায় চি্তা। দই-মিষ্টি-মুড়কি এনে তার
মামাশ্বশুরকে খাওয়াবে । চিন্তার হাতে ভাত তাঁরা খাবে না । যার কেউ নেই
তার ভগবান আছে--এ কথা বলে যায় বটে চিন্তা, কিন্ত তার আপাত সমস্টার
জট ছাড়াবে কোন্ ভগবান আমি ভেবে পাই না।
মিষ্টি-মুড়কি খেয়ে চিন্তার ইহলোকের কাগারীরা বাপব্যাটায় আমারই
রকের ছায়ায় ঘুমোতে আসে। চিস্তার ছেলেটাও দেখি পান খেয়ে তাস
খেলতে বসল বামুনদের সঙ্গে।
সমন্তার সমাধান ভগবান নয়, মান্গযই করে। বিংশ শতাব্ধীতে আমাদের
চেন! রাস্তাগুলোর আশেপাশে অনেক কিছু চলে, যা পাপ। এবং তার
বয়সও অনেক । চিন্তার ঘরে শুধুই বৈঠক বসে। দশজনে যুকতি-পরামর্শ দেয়
নি মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গলপ
টাকা ধার করে দশজনকে পান চা খাইয়ে মরে তিস্তা! । ধূর্ত হেসে পানওয়ালাট।
মঙ্গীলভাবে ঘনিষ্ঠ হতে চায় চিন্তার সঙ্গে । চিন্তা যে একাস্তভাবেই গিঃসম্বল
তা বুঝে তার মুখে পানের পিকের থুথুট1! উলে উলে ওঠে। ছুর্বার শরীর
যৌবনের অভিশাপ নিয়ে বাচিয়ে বাচিয়ে চলে চিন্ত। । পানওয়ালা আর চা-
এযালার দোকানে হেঁটে মরে। পানওয়ালার পয়সা আছে। বোক। এবং
পাঁপের ভয়ে ভীত না হলে নিঃসন্দেহে চিন্তা এ সময়ে গুছিয়ে নিতে পারত।
হিক্সাওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ মজা পায়। থেকে-থেকেই চেঁচিয়ে গান
করে ওঠে।
পরদিন আমার ঝি টিউবওয়েলে জল ধরতে গিয়ে খবর আনে । কোমরের
গ্রঁতোয় কলসি থেকে জল ফেলতে ফেলতে আসে উত্তেজনায়।
বলে--এমন পাপী মেয়েটা]! বাচ্চ। দুটোকে বিলিয়ে দিল? একটা জগুবাবুর
বাজারের ওপারে--কীরকম মায়ের প্রাণ? ছিছিছি! চিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে
ঝি-চাকরর! নিজেদের যে কতখানি স্য।য়ধর্ষে স্থপ্রতিষ্টিত বোধ করছে তা বেশ
বোঝা যায়।
বিলিয়ে তো দিল। কিন্ত নিণ কে? গিরি-গৌরীর ছালওঠা মুরগীর
ছানার মতো! চেহারার কথা মনে করি আর এঁ একটা প্রশ্নই মনে হয়। এত
দয়! কার?
বিকেলে ইভ্নিং-ওয়াকে বেরিয়ে পাভার গার্জেনবুড়ো হনহন করে হেঁটে
এসে পাশ ধরেন। বোঝা যায় কিছু একটা বলবার চাঁপা কৌতুহলে মুখচোখ
তাঁর জলজল করছে | বলেন--শুনেছেন ব্যাপার ? কিসের মধ্যে যে বাস করি !
এর মতো কৃতী ও বহুদশী লোককে এত মজা দিল কিসে, জানবার
কৌতুহুল আমার কম। কিন্তু তার বলবার আগ্রহ ছুর্দমনীয়। বলেন--কাল
রাতে সেযাব্যাপার ! যাকে বলে কেচ্ছা । এ চিন্ত! মেয়েটা, তার ব্যাপার
সব জানেনই বোধ হয়_-
উত্তরের জন্তে অপেক্ষা করেন না। বলেন--তার ছুটে আতি না কে,
কাল এসে বলে কিনা দশ, আট, আঠারে। টাকার ছু-জায়গায় ছুটে! মেয়েকে
বেচেছে। আমাকে সই করতে বলে। আমি তো ভাগিয়ে দিলুম। ব্যাপার
দেখছেন ? এসব নেয় কার] তা জানেন তো! ? নিলে এ দালালগুলো--তাদের
বড়ে। ব্যাবসা এ মবের*"তা আমি বলি-্যা করেছ করেছ-সএখাম থেকে যি
না যাও তো পুলিশে খবর দিয়ে***তা সে পৌ-দৌড় দিলে পুলিশের নাম শুনে !
চিন্তা ৩৯
বলে তিনি সিরিয়াস হয়ে ওঠেশ। বলেন--দেখেছেন আমাদের অবস্থা ?
আপনাদের কোনে! চাড নেই--পাড়া-বেদিসে যদি আপনার। সব সোশ্তাঙ্-
ওয়ার্ক করেন | বলে হনহন করে হাটতে থাকেন কাস্টম্স-এর ভদ্রলোককে
লক্ষ করে। ঘটনাটার মজা ও বরগডের দকটা তাকে সুড়সুড়ি দিয়েছে।
সকালে চিত্ত! বিদায় নিতে আসে । এবার আর একা নয়। ছুপাশে তার
মুরুবিবরা তার পৌটলাটা নিয়ে চলেছে। ছেলেটাও যাচ্ছে টিনের স্থ্যটকেস
হাতে। চিন্তার পরনে নতুন কাপভ, গানে জামা দেখি। কোন্ টাকায় কেনা,
জিজ্ঞাসা করি ন1। ভয় হয়। বিদায় নিতে এসে চিন্তা আর কাদে না। একটা
ভয়ঙ্কর কিছু ঘটলে পরে, য1 নাকি তার ধারণার বাইরে, মান্য যেমন হতভম্ব
ও হতবাক হয়ে থাকে- চিস্তার মুখ তেমনই । মাঝে মাঝে পশুর মতো!
তাকায় । বোধ হয় দেখে, আমিও ওকে দোঁধী মনে করছি কিনা ।
সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করে চিন্তা । বলে-তুমি ঝড় ভালো লোক গো মা!
তার পরেই চলে যেতে পারত, কিন্তু হঠাৎ চলে যায় না চিস্তা। জানল!
দিয়ে ভুরু কুঁচকে যেদিকে দেখে__তাকে আকাশ নয়, অনির্দেশ কোনে দিশা
বলা চলে। এখন চোখে পড়ে চিন্তার চোখছুটে। কালো, জোডা ভুরুর মাঝেও
উপকির টিপ আছে। তাকিয়ে তাকিয়ে সেই চোখে জল আ'সে--নাক টানে
চিন্তাঁ_গরিবের ভগবান নাই গো» মাঁ_গরিবের ভগবান নাই |
তার নক্গী দুটোর চোখে ধুরামি উকি দেয়। গলাটা! মোলায়েম করে
ছোকরাট1 বলে--ওদিকে বাস পাবেনি গে !'*চিন্তার ছেলেটা দেখি বুড়োটার
সঙ্গে কথা কাটছে-_বাস, ট্রেন, জলখাই দশটাকার মামলা-আমার টাকা-
তিনের জাম! কেনে কিনিলি ?
হব, হব-বলে ভবস| দেয় বুড়োট1। অর্থাৎ সেই আঠারো টাকা
থেকেই হবে ।
যার ভগবান নাই, তার কেউ নাই-এই শেষ কথা! বলে চলে যায় চিন্তা ।
রাস্তাটা পেরোয়। ছু পাশে ছুটো লোক চলে। ছেলেটা বুড়োটার হাত ধরে
চলে। এব|র তার বিয়ে হবে। কণ্ঠাপক্গ যে টাকা দেবে, তার থেকেই
প্রায়শ্চিত্ত, বা! এস্টাকার থেকে ও-্টাকা! মিলেঝুলে জোড়া-তালি দিয়ে যা-হ্র
একটা হয়ে যাবে চিন্তার কপালে--এই নিষ্ে চিন্তা ছাড়া আর তিনজন
আলোচন1 করে। চিন্তা আত্তে আন্তে হাটে । এপাশে ওপাশে তাকিয়ে রাস
পেরোর়। প্রায় দৌড়ে ওই ফুটে ওঠে। তার পর আর তাকে দেখি না।
ছারাবাজি
মাঝরাতে দরজায় ঘা পড়ল। মধ্য প্রদেশের যে জায়গাটায় এসেছি
সেখানে চেনা মান্য নেই। স্টেশানের কাছে একটি ছোটো বাড়ি নিয়ে আছি।
হাওয়া বদলের জন্তে এসে জায়গাটাকে ভালোবেসে ফেললাম । পঞ্চম বাধিকী
পরিকল্পনার একটি শিল্প-কেন্দ্রের উপাস্ত অঞ্চল। অনতিদুরে, শহরের সব
স্বিধেই অপেক্ষমাণ। এই নির্জনতায় স্বেচ্ছাকৃত আত্মনির্বাসনের পেছনে
আছে শুধু একটু শান্তিতে থাকবার কামনা ।
কেউ চেনে না জানে না। তাই আমার নাম ধরে ডাক শুনে অবাক হলাম ॥
আধিভৌতিক কিছু নয়। কেন না বিপন্ন কণ্ঠে ডাকছে একজন । পেছনে
সাত আটজন দাড়িয়ে ।
দরজা খুলতে যে ঢুকল তাকে দেখবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিজয়ের
ভাই কুমুদ। চুল উস্কোধুস্কো৷। বিভ্রান্ত, আতঙ্কিত চেহারা । ছুবছর
আগে শেষ দেখেছি তাকে ভালহোৌপসিতে। বিকেল পাঁচটার জনারণ্যে।
কোথ। থেকে ঠিকানা জানল কুমুদঃ কী ব্যাপার-_কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারলাম,
না। আমাকে জডিয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল কুমুদ । বলল--
-শীগ্গির স্টেশানে চলো বাদলদা, দাদ হ্থ্যইসাইভ করেছে।
স্্যইসাইড করেছে বিজয়? আমার কোনে! প্রশ্নকে মুখর হতে দিল ন!
কুমুদ । বলল-_
--সব পরে শুনবে বাদলদ1। এখন চলো।
গেলাম। ছোট্ট স্টেশান। এই সময় বছ্ে-মেল পাস করে আর ফোরটিন”
আপ লে করে মোশান। তাই চড়া আলোটা জলেছে। সই আলোর নিচে
স্টেশান মাস্টার আর কয়জন কুলি দাড়িয়ে আছে। প্লাটফর্মে শুয়ে আছে বিজয় ।
ছয় ফিট তিন ইঞ্চি চমৎকার শরীরটা, যা নিয়ে বিজয় চিরদিন মাথা উচু করে চলে-
ফিরে বেড়িয়েছে-_আজ সেই দেহটাই অসহায় ভঙ্গিতে পড়ে আছে দেখে মনে
ধাক! লাগল। কাচাপাক। চুল ভর! মাথাট] বিশ্রী একটা কোণ শ্টি করে
হেলে আছে। একখান! হাত কপালে ঢাক! দেওয়া । নেই হাতের আগু,লের
মধ্যে এমন অসহায় কিছু একট! দেখলাম আগ একট1 মিনতির ভাব, অখবা
ছায়াবাজি ৪১
পরাজয়ের ভঙ্গি,--য| বিজয়ের সারাজীবনের বহু আশাভঙ্গের প্রতীক । দেখে
পা কাপতে লাগল আমার । স্টেশন মাস্টারের বিবেচনা আছে। কক্বল ঢাকা
দিয়ে রেখেছেন বাকিটুকু ।
এমন রাত যেন কারো জীবনে না আসে। থানাপুলিশ ডাক্তারের
হাঙ্গাম। মিটিয়ে ছোটো ঝরনার ধারে নিয়ে বিজঘকে দাহ করবার ব্যবস্থা করতে
পরদিনের সন্ধে গড়াল। কুমুদকে সাম্বনা দেবার ভার নিয়েছিল আমাক
্ত্রী। তিনদিন বাদে কলকাতায় ফেরবার সময় হলে তাকে গাড়িতে তুলে
দেবার কাজটুকুও আমিই সারলাম। অনেক দুঃখের মধ্যেও মনে হল কুমুদ
যেন মুক্তি পেল এমনি একট ভাব। গাড়ি ছাড়বার আগে করুণ হেসে
কুমুদ বলল,
-কী জানে] বাদলদা, শেষ অবধি দাদাও বেঁচে গেণ। ও জীবন নিয়ে
বেঁচে থাক। তার পক্ষে******
একটা মানুষ কেমন করে যে মুছে যায় পৃথিবী থেকে, ভাবলে অবাক লাগে &
হয়তো জীবনের নিয়মই এই | অপ্রয়োজনীয় যা, তাকে নির্মম হয়েই পরিহার
করতে হবে। তাই বিজয়ের মৃত্যুতে এতটুকু নাড়াচাড়া পড়ল না &
পরিচিতজজন মুখে বিম্ময় আর সহানুভূতি জানালেন। কোনো শোকসভা হল
না, & চৈ পড়ল না। কাগজে কালো লাইন টেনে কোনে! সংবাদ
জানানো হল না। দুর্ঘটনা শীর্ষক সংবাদ বেরুল-+ট্রেন হইতে লাফাইয়া।
জনৈক বিকৃতমস্তিক্ক ব্যক্তির******
নিজেকে ছাড়িয়ে ঠাদসথর্যও চোখে দেখত না বিজয়। সে জানত এই
পৃথিবী স্থ্টি হয়েছে তারই জ্ভে । চমকপ্রদ মৃত্যু বরণ করে দুনিয়াটাকে চমকে
দেবার একট। ইচ্ছে তার অন্তরের অন্তস্তলে খেল। করেছিল না কি সেই সময
তাও জানি না। সে দুনিয়াকে ছাড়বার অনেক আগেই ছুনিয়া তাকে
ছেড়েছিল। তাই কোনে ছাপই রেখে যেতে পারল না৷ বিজয়। বাতাসের
মুখে ছেড়া কাগজের মতোই বাতিল হয়ে গেল।
বিজয়ের উ্র্যাজেডি কিন্তু শুরু হয়েছিল দূর কৈশোরে । গরিব বাপের
মেধাবী ছেলে বিজয় । ছোটো ভাইবোনদের বঞ্চিত করে সবটুকু ঘি-টুকু
বিজয়কে খাওয়াতেন মা। ছুনিয়াটাই যে তার জন্য, এ ধারণার অন্ভুরও
সেদিনই তার মনে হৃষ্ট হয়। বিজয় ভালো জামা-কাপড় পরত ভালো! স্কুলে;
১০
৪২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ট গল্প
পড়ত। গরিব বলে পরিচয় দিয়ে ফ্রি-শিপ অথবা বইপত্রের সাহায্য নিতে
বাধত তারু।
পনেরে। বছর বয়সেই মাথায় সাড়ে পাঁচ ফিট লম্বা! হল বিজয়। সব দিক
থেকে তারিফ করবার মতে! চেহারা । ইন্স্পেক্টর এলে তাকেই কবিতা
বলবার জন্তে ঠেলে দেওয়। হয়। প্রাইজ দিতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট-গিক্সি তার
সঙ্গেই কথা বলেন । বিসর্জন নাটকে সেই সাজে রাজ]।
নিজের সম্পর্কে বিজয়ের আস্তে আস্তে উচ্চ ধারণা হল। সে প্রিয় ছিল
তার মহ্ি ত্বভাবের জন্য। এখন তার মধ্যে এল উন্নাসিকত1। ব্যবহারে
এল দত্ত এবং তাচ্ছিল্য । মাস্টাররা তার এই পরিবর্তন দেখে তার সম্পর্কে
"অসন্তষ্ট হলেন। বিজয়ের বাবাকে ধার! জানতেন তীর1 গোঁপালবাবুর ভবিষ্যৎ
(ভেবে দুঃখিত হলেন । যাঁর ছেলে বাপের ছুঃখ বোঝে না* সে বাপের জীবনে
মার কী রইল!
আমর প্রথমটা হাসাহাসি শুরু করলাম। ক্লাসে যেখানে নেস্ফিন্ডের
গ্রামার পাঠ্য, বিজয় সেখানে আই-এর ইতিহাস বই নিয়ে ক্লাসে বসে থাকে।
মাস্টারর1 পাঠ্য বিষয়ে জবাব চেয়ে পান না। অথচ যখন-তখন সে এমন বিষয়
নিয়ে প্রশ্ন করে, যার জবাব তাঁদের মুখেও জোগায় না। ক্লাস টেন-এর ছেলে
পাঠ্য বই না পড়ে এলিয়ট নিয়ে কেন মাথা! ঘামাচ্ছে, এ প্রশ্ন তাঁদের মনে
হ্বতই উদিত হয়।
ছেলের! তাকে চালিয়াৎ ডাকতে শুরু করল | আমি, প্রণব, অনাদি,
অরুণ, দিলীপ--আমর! সত্যিই বিশ্বাস করেছি বিজয়কে । বিশ্বাস করেছি সে
“এতবড় একটা প্রতিভাঃ যা এদেশে দুর্লভ। সমসাময়িক কালে যে প্রতিভার
সমাদর হয় না সে সম্পর্কে বিয়ই শ্বদেশ-বিদেশের অনেক মানুষের উপম!
টেনে এনে বুঝিয়েছে আমাদের |
আযাদের মর্মাহত করে বিজয় টেস্টে খারাপ রেজাণ্ট করল। তার বাব!
বাগারাগি করলেন। মা কাদলেন। তার পন্সেও বাব! পরীক্ষার ফি
এজোগাড়ের চেষ্টায় বেরুলেন। আমাদের বিজয় বললে,
-টেস্টট! দেখে ঘাবড়াস না। দেখিস ফাইনালে টেনে বেরিয়ে যাবো।
কিন্ত যত সামান্য হোক, ম্যাট্রিক একট! পরীক্ষা। তার জন্ত প্রস্ততি
ধ্বয়োজন। বিজয়ের গগনবিহারী মন স্থুতো গুটিয়ে এসে আকবর, শেরশাহ,
কমার অস্ট্রেলিয়ার কৃষিসম্পদ নিয়ে ভাবতে চাইল না। পাটিগণিতে গজ ফুট
ছায়াবাছি ৪৩
মেপে তেলমাখানে৷ লাঠিতে যে-বাদরটা উঠছে আর নামছে তার গতিবিধি
সম্পর্কে আগ্রহটা জাগাতে পারল ন1। ফলে দ্বিতীয় বিভাগে মোটামুটি পাশ
করল বিজ্য়। রাতারাতি চলে এল কলকাতা।
কলকাতায় কলেজ-জীবন শেব হতে ন! হতে বিজয়ের ধারণ। হল সে সবরকষে
অসাধারণ। কোন্ দিক দিয়ে স্ফর্থরত হবে তার প্রতিভা ? আমরা বারবার
জানতে চেয়েছি। প্রণব বলেছে,
--একটা এমন কিছু কর বিজয়, যাতে--
বন হেসে চুপ করেছে বিজয়। সবাইকে পেছনে রেখে এগিয়ে যাবে,
চমকপ্রদ কিছু করবে সে, এই তার পণ। জীবন নিয়ে এ রকম পণ ফেলতে
কেউ জোর করেনি তাকে । নিজের সঙ্গে নিজেই বাঁজি ফেলল বিজয়। ফলে
তার অবস্থা দাডাল কোনো হতভাগ্য রেসের ঘোডার মতো । রেস তার
সারা জীবনেও শেষ হয়নি। এরেসের আদি ছিল। কিন্তু বিজয়ের বত্যু
পর্যস্ত তার অস্ত ছিল ন]া।
সাঁধারণ ছেলে আময়!। সাধারণ রুচি আমাদের । কলেজে আমরা অন্ত
ছেলেদের সঙ্গে মিশে সিনেম! দেখেছি। খেলাধুলা করেছি, মেয়েদের পেছনে
লেগেছি+ আবার ছাত্র আন্দোলন নিয়ে গলা ফাটিয়ে মাইকে বক্তৃতা দিয়ে
ইউনিভাপিটির দেয়ালে পোস্টার সেঁটেছি।
আমাদের মধ্যে পাব বিজয়কে? ইংরেজির ছাত্র বিজ্রয়। কিন্ত সবিতা
রায় দুষ্টুমি করে জানিয়ে গেল--ফিলজফির ছাত্র-ছাত্রীরা রেফারেন্সের বই
পায় না। বিজয় সব বই নিয়ে বসে আছে।
প্রোফেসর লেকচারাররা বিজয়কে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগলেন।
ছেলের! যা বলল, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা উপহাসাম্পদ হলাম।
মেয়েদের মনে শ্বতঃই জাগল কৌতুহল।
নরমসরম সুশ্রী একটি লাজুক মেয়ে। মাধবী নাম তার। বিজয়ের সমস্ত
উন্নাসিকতাকে সে প্রতিভার শ্বাভাবিক রূপ মনে করল। তার শ্রদ্ধা গিয়ে
ধাড়াল অনুরাগে । কলেজ সোশ্তালে গান করে নাম করেছে অরুণ অরুণ
মভুমদার নাম করা গাইয়ে। অরুণ মাধবীকে সত্যিই ভালবেসেছিল। আমি
বিজয়কে বললাম,
--তুমি তো কোনো খবরই রাখ না। এদিকে মর্তলোকে ষে বিপ্লব বাধল।
'অক্লণের কথা ভেবে দেখেছ? মাধবীর সম্বন্ধে ঠিক করো একটা বিছ্ু |
৪6 মহাশ্থেত। দেবীর শ্রেঠ গল্প
অরুণের প্রশ্ন নয়। মাধবী যে তাকে ভালবাসতে সাহস করেছে তাতেই
বিরক্ত হল বিজয় । তাঁদের বাড়ির ছাদের ঘরের নিচু ল্যাম্পটার আলোতে
বিজয়কে অদ্ভূত দেখাচ্ছিল। ফর্ণা রঙ। ন্ুপ্রী চেহারা । রুক্ষ চুল। চওড়া
কপাঁল। ছয়ফিট তিন ইঞ্চি শরীরটা নিয়ে বসে থাকলেও অনেক উচু দেখায়।
তবু সেদিন বিজয়কে ভালে! লাগল ন1 আমার । মনে বিদ্রোহ জাগল।
আবার বাল্যের বিশ্বস্ততাই জয়ী হল। মাধবীর জঙন্তে কষ্ট হল। একেই
বোধ হয় বলে 'পতঙ্গের ব্যর্থ প্রেম নক্ষত্রের লাগি ।' অরুণকে পরদিন বলে
এলাম--নির্ভয়ে এগিয়ে যা।
অরুণ মাধবীকে কিছু বলেছিল কিনা জানি না। অরুণের যা স্বভাব,
হয়তো বা গুটিয়েই নিল নিজেকে ৷ বিজয় মাধবীর সম্পর্কে ব্ঢভাবে উদাসীন
হয়ে উঠল। মাধবীর মনোযোগে সে নিঃসন্দেহে খুশি হরেছিল মনে মনে।
তাই উপেক্ষাও করল দ্শজনকে জানিয়ে ।
এই ত্রিতুজের সম্পর্কে ইউনিভারসিটি মুখর হল। অরুণ মাধবীকে
ভালবাসে, মাধবী চায় বিজয়ের প্রেম আর বিজয় নিজেকে ছাড়া কারুকে চায়
না। “নাপিসাস ও মাধবিকা' নামে একটি ইনঙ্গিতপূর্ণ কবিতা লিখে ফেলল
একজন।
শেষ অবধি দৌ-টানায় পড়ে অনেক ভেবে মাধবী উপযাচিকা হয়ে গেল
বিজয়ের কাছে । বলল-_-বিজয়, আজ এ কথা আমার বল্লবার নয়--তবু
আমিই বলছি !
অরুণের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব শুনে বিজয় জানাল তার কোনো আগ্রহই
নেই। কলকাতায় রোজ অজন্র বিয়ে হয়। সে সব কিছু খোজ রাখতে যায়
না। তবু মাধবী মরিয়া হয়ে আবে নিলাঁজ হল। বলল,
--তবুও ত সব কথা বলা হল না! বিজয়! আমি তো' এ বিয়ে চাই না।
তোমার কথা পেলে-_-বিজ্য় অত্যন্ত বিশ্মিত হল। বলল,
_ তোমার সঙ্গে পরিচয় আছে এই মাত্র । তার বাইরে তোমার সম্পর্কে
আমার কোনো আগ্রহই নেই | জানাল তার মতে মেয়ের! হচ্ছে শুধুই
জন্মদানের এক একটি সামাজিক গ্রয়োজন। তার বাইকে মেয়েদের সততা আছে ?
হাস্যকর কথা ! $
_ভাবান করুন বিজয়, এই নিষ্ুর ব্যবহারের প্রতিদান তুমি পাও |.
বলে ছাইমুখ করে ছুটে বেধিয়ে গেল মাধবী ।
ছায়াবাজি
বিশ্ববিষ্ঠালয় থেকে বেরুবার পর বিজয় দাসকে ঘিরে একটি উন্নািক
তক্তমণ্ডলী গড়ে উঠল। তাদেরই একজনের বালিগঞ্জের বাড়িতে কাচঘরে
বসল তাদের “সিলেক্টসএর অরধিবেশন। মাসে মাসে সেখানে
সন্ধে বেল। জমতে লাগল কিছু বাছাই করা নরনারী। সেই উন্নাসিক
মণ্ডলীর পুরুষ-মেয়ের! বিজয় দাসদের নাম শুনে.থাকে। সাক্ষাৎ পরিচয় হয় না।
মধ্যবিত্ত পেখানে প্রবেশের ছাড়পত্র পায়নি ।
বিজয়েয় দীর্ঘ বলিষ্ঠ চেহারা, অতি সহজে সবাইকে উপেক্ষা করবার
অভ্যাস, এই সব দেখে ঝুঁকলেন বিবলি বোস, বুল! রায়, পিক্পিক্ সোম
প্রমুখ বিবাহিতা অবিবাহিতা মহিলারা । তীর! যেস্তর থেকে এসেছেন,
সেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবনখান! স্থুবৃহৎ রুপোর চামচের বুকে
নিরাপত্তার আবাসে অটল । সেখানে ভালো৷ নামে ডাকবার রেওয়াজ নেই।
ভাই বাংগার শিল্পপতিদের অন্যতম মান্যবর অমূককে এইখানে দেখে প্রখ্যাত
ডাক্তারের কৌ পিক্পিক্ সোম সচ্ছন্দে রুমালের টোকা মেরে-_বুবলুঃ তুমি কী
দু হয়েছ! বলে আকা তুরু কাপালেন। শ্বামী অজয় রায়ের গাড়ি, বাড়ি,
স্থদর্শন কাস্তি দেখে দেখে ক্লান্ত লতিকা রায় বিজয়ের পাশে গিয়ে বললেন _ মনের
দোসর পেলাম না।
বিজয়ের সম্পর্কে বান্ধবী রুমা! তালুকদারকে বললেন__এমন রুখা তুখ।
ইপ্টারেস্টিং চেহারা! আমি ওকে আমাকে বুল বলেই ডাকতে বলেছি।
শ্বর্যের আফিসে জীবনে বাচবার আনন্দ যাদের কাছে একেবারেই অজ্ঞাত,
সেই সব মান্য সহসা বিজয়কে দেখে উৎসাহিত হুল। সকলেই বলল,
--পেয়েছি একট! প্রতিভা ।
আশ্চর্য কী, যে অর্থকূলীন সমাজের এই সব বত্রিশ পুতুলের মুখে স্ততিবাদ
গুনে বিজয়ের ধারণ। হল সত্যিই সে অসাধারণ ?
এই সময় মারা! গেলেন বিজয়ের বাবা । বিধবা ম! ছোটো ভাইবোনদের
সুখ চেয়ে বিজয়কে বললেন--তুই একটা চাকরি দেখে নে। সংসার তো আর
চলে না।
ছোটোভাই কুমুদ আর সজয় বলল - দাদা, অরুণ সোম এতবড়ো৷ একটা
লোক, খাস বিলাতি কোম্পানির ডিরেক্টর |. ও*কে বললেই তোমাকে একটা
বড় চাকরি দেবেন । ৰ
পিকৃপিক সোমকে সে এখন ক্যামাক্ স্টী-টের বাড়িতে বসে চীনে ছবি দেখতে
৪৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
শেখাচ্ছে। ঠিক আলোতে ছবিটি রেখে, তার! ছুজন কোলে হাত রেখে চীনে
ধুপের ধোঁয়ায় বসে থাকে । পিক্পিকের দেওর অরুণ। অরুপকে সে চাকরির
কথা বলবে? ছিঃ!
সোমের বাগানে রঙিন ছাতার তলে বসে সাদা খরগোশকে কাজুবাদাম
খাওয়াতে খাওয়াতে বিজয় পিকৃপিকের কাছে মধ্যবিত্ত মাদের ট্র্যাজেডির কথা
স্থন্দর ভাষায় বলল। আমাকে ওর] কাজ্জ কবতে বলে। আমি কাজ করছি
ভাবতে পারো?
পিকৃপিকের টানা টানা চোখ যেন মুছণ গেল। এম্নি করেই এলিয়ে
পডল। বিজয় বলল-_
-আমার ভাইর কাজ করুক। আমি বিজয় দাস'"'আমার সঙ্গে বাস
করে ওরা, তাই তো! একটা ভাগ্যের কথা ।
শেষ অবধি কুমুদ আর সুজয় চাকরি নিল। বিজয় নিউক্লিয়ার ফিজিকোর
এক ছৃরূহ তত্ব নিয়েমত্তো বই লিখল রাতজ্েগে বসে। বিজয়কে দেখবার
পর বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল লতিকা রায়, যে বিবাহিত জীবনে লে
অন্থথী। বিজ্বয়ের মধ্যে সে নিজের প্রাণমনের একটা দোসর পেয়েছিল ।
লতিকাই টাক দিয়ে বই ছাপাঁল বিজয়ের। 'সিলেক্ট'-এর শ্যাবকবৃন্দের
আর বুঝতে বাকি রইল না, সে এবার বিজয়েয় পায়ের কাছে দেশবাসীর
হৃদয়মন ঢেলে শ্রদ্ধাগ্ুলি পড়বে ।
কার্ধকালে ত1 মোটেও হুল না। কেমন করে যেন টিপ ফস্কে গেল।
সমালোচনার ভার শ্বতই বিজ্ঞানীদের হাতে পড়ল। তীরা কডা ভাষায়
লিখলেন--কোনো বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান না রেখে"
স্তাবকর| কিন্ত সমালোচকদের কথাবার্তা উড়িয়ে দিল । সেই কাচের ঘরে
বিজয়কে তারা অভিনন্দন জানাল। পার্টিতে যে খরচ হল- তাতে
ত্রচ্ছন্দে বিজয়কে বসিয়ে ও রকম আরো! পাচখানা বই পাচবছর ধরে লেখানো
চলতো ।
তাতেই খুশি হবে বিজয়? অন্য একটা পথ খুঁজতে লাগল সে।
মনে হল ভারতীয় সংগীতের উৎপত্তি নিয়ে অনেক কিছু করবার আছে।
আমাদের বন্ধু অরুণ মজুমদার তখন বাইরে গাইতে শুরু করেছে । অরুণ
বলল--বিজয়, গান তুই কোনোকালেও করিসনি। ও খেল! করবার জিনিস
নয় বিজয় |
৪%
ছায়াবাজি
গলায় গান গাইবার কথা কে বলছে 1 তোদের মতে! মেয়ে-ভোলানো
গানের কথ। আমি বলছি না। গান এল কোথা থেকে? আর্ধ-অনার্ধ
সভ্যতার মিশ্রণ আর আরব পারশ্ডের প্রভাব--
--এ বিষয়েও পশ্চিমের বু পণ্ডিত, আমাদের দেশের বহু জনঃ গভীর
গবেষণা করেছেন।
অপরে যা করেছে তার ওপর বিক্রয়ের অসীম অশ্রদ্বা। অরুণের সঙ্গে
নেমে আসছি যখন, দেখলাম বিজয়ের মা আগুন তাতে বসে রুটি ভাজছেন।
ভাব বোন বেল! বাটন! বাটছে। কুমুদ আর জয় খেতে বসেছে। খুব
ভদ্রভাবে গরিব হয়ে যাচ্ছে পরিবারটি । বেলার সুন্দর চেহারাটা! সতেবে)
বছবেই স্বাস্থ্যের অভাবে ফ্যাকাশে হয়েছে।
বেরিয়ে ব্বাস্তায় এসে অরুণ আমার মনের কথাটা বলল। বলল-_
বিজয়ট1 একেবারে অমানুষ |
গান ছেড়ে নাহিত্যোর বুডি ছুঁয়ে বিজয় ছবি আকতে ধরল কবে সে খবর
ঠিক জানি না।
হঠাৎ একদিন প্রতীপ দত্তের সঙ্গে দেখা । বলল -আপনাদের সেই
জিনিয়াসকে নিয়ে মহ ফ্যাসাদে পডেছি। বিজয় দাসের মা, সম্পর্কে আমার
পিসিমা। তার অনুরোধে এতদিন বাদে একট চাকরি করে দিতে পারলাম
বিজয় দাসকে । পাবলিসিটি ফার্মের কাজ। কে লুফে নেবে না বলুন! তা
সে ছুদিন ধরে আসছে না। আজ ফোন করে জ্বানিয়েছে চাকরি করবে সে
নিজের শর্ত অন্থুযায়ী। তাকে সন্মান দিতে হবে !
অত্যন্ত রাগ হল। প্রতীপ দত্বের মোটা চৌকে মুখখান! দেখে বুঝতে
বাঁকি রইল না বিজয় দাসের সম্মানের দাবিট! তার বোধের অতীত। বিজয়ের
ওপর রাগ হল। কেন, সে কথা আর কী বলি।
বিজয়ের বাড়ির চেহারাটা! আরো মলিন। কী ভাগ্য যে বেলার বিয়ে হয়ে
গিয়েছে । ছুই ভাই সংসার চালাচ্ছে। বিজয়ের মা ছেলের নাম করতে
অভিশাপ দিয়ে উঠলেন।
ঘরের মেঝে ভর] সিগারেটের টুকরো । চায়ের পেয়ালায় সর। ইজেল
পর্দা ঢাকা। প্যালেটে চাঁপ চাপ রঙ। তুলি গড়াগড়ি যাচ্ছে।
বিজয্বের চোখের চাহনি যেন কেমন দেখলাম। বসলাম। চোখ বুজে
8৮ মহাশ্বেতা দেবীর জেট গল্প
নিজের কথাই' বলে গেল বিজ্য়। কোন্ ক্রিটিক কী বলেছেন। কার কথার
ষুল্য কতখামি। শুনতে শুনতে অসহা বোধ হল। বললাম,
-- বন্ধুবান্ধবের খবর রাখিস ?
--না।
--প্রণবকে মনে পডে ?- লগুনের- লগ্ুনের ডক্টরেট পেল প্রণব। ওর
পেপারের খুব প্রশংসা বেরিয়েছে । দেখিস্নি? বিজয় অবাক হয়ে তাকিয়ে
রইল । বললাম-_
স্”আর কারু খবর রাখো আর না রাখো, অরুণের খবর নিশ্চয় জানো?
'ডেলিগেশনে হরদম বাইরে যাঁচ্ছে। লগুনে ক্লাসিকাল গানের প্রোগ্রা
করল। খুব নাম করেছে! এক ডাকে চেনে সবাই। ভালো কথা,
ক্মনাদি__
- অনাদি আবার কী করল?
বিজয়ের জসহিষুঃ কঠ আমি যেন শুনেও শুনলাম না। বললাম,
স্"অনা্দি সাউথে যাচ্ছে আর্ট কলেজে চাকরি নিয়ে। ওর তিনখাঁনা ছৰি
সেণ্টল থেকে কিনল দিল্লিতে আট” গ্যালারির জন্যে । কেন, ওর ছবি নিযে
এবারকার ক্যালেগডার দেখিস্নি
বিজয়ের গলার দ্বরটা কেমন যেন হয়ে গেল। আমার মুখের দিকে চোখটা
ভুলে বলল,
স্পঅনাদি ছবি কত, তাই না?
-এই শোন্্, অনাদিকে আমরা একট! রিসেপ শন্ দিচ্ছি। কোথায়
জানিস? তোদের সেই “সিলেক্ট'-এর সেই কাচঘর। মনে আছে তো?
-স্খোনে?
--দিলীপ যে ওবাঁড়ির মেয়ে রঞ্জনাঁকে বিয়ে করেছে। দিলীপই ব্যবস্থা
করছে। কেন, অনাদির খবর তুই জানিস না?
-্না।
--কাগজ পড়িস না?
--কোন্ শিক্ষিত 'লোক কাগজ পড়ে বলো 1 আমি হাসলাম। বিজয়
চটে উঠল। অস্থির হয়ে উঠল তার লম্বা লম্বা ফর্ী আও,লগুলো ৷ বেতের
ধচেয়ারের উপর লক্ষ্যহার। ভাবে চলাফেরা শুরু করল। বললাম,
তুমি যাই বলো বিজয় । আমাদের মধ্যে তুমিই ছিলে, সবচেয়ে গুণী।
ছায়াবাজি ৪৯
অনাদি, অরুণ, প্রণব, এদের তুমি কী রকম তাচ্ছিল্য করতে । দ্যাখো, প্রমাণ
হল তো প্রতিভাকে কাজে লাগাতে হয় ! পরিশ্রম করতে হয়।
কোন্ একটা নিষ্ঠুরতা পেয়ে বসেছিল আমাকে । বললাম,
-_তুমি একটা কিছু করো বিজয় ! প্রতিভা মানে এই নয় ষে ঘরে বসে
বসে তুমি সকলের ওপরে থাকবে, আর তোমাকে বুঝল না বলে দেশের মানু
হচ্ছে বোকা ।
তারপরই নিজের রূঢ় আচরণ লজ্জা দিল আমাকে । বেরিয়ে এলাম
আমি। বিজয়ের মাকে দেখলাম তরকারি কাটছেন, রান্নাঘরে বসে বসে।
বিভবিড় করে কথা বলে চলেছেন। একটা বিশ্রী কৌতুহল থেকে দাঁড়ালাম এক
মিনিট। তিনি শাপ দিচ্ছেন নিজের ভাগ্যকে । শ্বামীকে দোষ দিচ্ছেন।
বিজয়কে শাপ দিয়ে চলেছেন ।
বিজয়ের বাবার কথা মনে পড়ল। মনে হল অনেক স্থরুতি তাঁর।
মরে বেঁচেছেন !
আমি চলে আসবার পর আমার কথাগুলো নিশ্চয় ভেবেছিল বিজ্রয়।
অন্য সকলের জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের জীবনের চূড়ান্ত বিফলতা তাকে
আতঙ্কিত করেছিল কি? কেজানে?
তারও পরে চারটে বছর গেল। ছবি আকবার ক্যানভাস ছুরি দিয়ে ফাঁলা-
ফাল! করে বিজয় থিয়েটারের দিকে ঝুঁকল। কিন্তু কঠিন হয়ে আসছে
দিনকাল। যে প্রতিভার কোনো পরিচয়ই পাওয়া যাচ্ছে না, তার পেছনে
অনির্দিষ্ট কাল ধরে শ্ততিবাদ চালাতে নারাজ মানুয। তাছাড়া চল্লিশ বছর
বরসেও যে মানুষ এটা ছেড়ে ওটা ঠুকে £ঁকে নিজের পন্থা! আবিষ্কারের চেষ্টা
করছে, তাকে বোঝা কঠিন । তাকে ভালে! লাগ! কঠিনতর |
থিয়েটারের ট্র,প ভেঙে কার যেন টাকা নিম্বে এক মাসিক-পত্রিকা খুলল
বিজয়। প্রথম এবং সর্বাগ্রগণ্য হবার পাগলামিই তার শত্রু হল। নইলে
এত জিনিস হাঁতড়িয়েছে বিজয় সার] জীবন ধরে যে, মাঝামাঝি একরকম দীড়িয়ে
যেতে পারত যে কোনে! একটায়। ঘযেমেজে দ্বিতীয় শ্রেোীতে পৌঁছতে
পারলে অর্থাগমও 'হত। তার কোনোটাই হল না। সেই দীর্ঘছন্দ দেহ
পাঁকিয়ে উঠল। চোখের নিচে পড়ল কালি। বন্ধুবান্ধব তাঁকে দেখলেই
সরে পড়ত! কথাবারীয় সেই দত্ত এবং আত্মস্তরিতা তখনো৷ তার অটুট।
কিন্ত ভেতরে ভেতরে সে ছুর্বল হয়ে পড়েছে ।
বিজয় দাসকে তখনো দেখা! গিয়েছে, মাথা উঁচু করে চাদর লুটিয়ে কলেজ
চ্াটে হাটতে, অথবা! বিদেশী ছবির এগ. জিবিশনে ডেনমার্কের প্রতিনিধির সঙ্গে
আলাপ করতে । তার বহির্জগৎ তখনই সীমাবদ্ধ হয়ে এসেছে। তার ভক্ত
মহল অনেক দিন হল তাকে পরিহার করে নতুন প্রতিভার সন্ধানে ব্যন্য।
বিশ্ব সমাজ তাকে সন্দেহের চোখে দেখে । কেননা সর্বঘটের কাঠালি কলার
ওপর তাদের অনাস্থা অসীম।
ঘর তার কাছে অসহা। বাড়ির তাকভরা তার লেখা বইগুলে। পোকায়
কাটছে। দেওয়ালে অনাদৃূত সব ছবি। মিউজিকের বইগুলোতে ধুলো পড়ছে।
মা তাকে সহ করতে পারেন না। ভাইরা ভয় পায়। কেন-না তার সঙ্গে
তাদের মানসিক দূরত্ব হাজার হাজার ম'ইলেরও বেশি। ঘরে-বাইরে নিজের
দন্ড আর অঙ্গন হতাশার বোঝা! নিয়ে এই সঙ্গীহীন মাহ্ষটি মাথা উচু করেই
ফিরতে লাগল । নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায় একল! ছাদ্দের ঘরে বসে থাকত যখন বিজয়
খন দেওয়াল থেকে পনেরো! বছরের বিজয় দাসের স্থ্খী, হাসিখুশি চেহারাটা
তাকে ব্যঙ্গ করত।
শেষ অবধি ছোট্ট একটা ঘটনা তাকে চুরমার করে ভাঙল। তারই
পরিচিত ছেলে তপন আর শ্বাতী যখন প্রেম করে বিষ্বে করল, কথা৷ উঠল। শ্বামীর
ঘর ছেড়ে আসতে ম্বাতীর মানসিক প্রস্তুতির অভাব ছিল না। কিন্তু জবরদস্ত
পুরোনে! সিভিলিয়ান জোয়ারদার সাহেব স্বাতীকে বেঁধেছিলেন আইনের
মারপ্যাচে। বিয়ে করবার আগে আট বছর অপেক্ষা করতে হল তপনকে।
স্বভাবন্থলভ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বিজয় ধাক্কা খেল তপনেরই
ছোটো ভাই-এর কাছ থেকে । শুনল-_এখনো যদি বিয়ে না করো বিজয়দা,
আসাইলামে যেতে হবে।
অনেক কথাই মনে হুল বিজয়ের। মনে হল বয়স তার তেতাল্লিশ।
বুঝল জীবনট। তার কাছে কত বড়ো ফ্াকি। একলা ঘরে দাড়িয়ে দেওয়ালের
ছয়ফিট তিনইঞ্চি ছায়াট। দেখে ভয় হল তার। তার চেয়ে যেন তার ছায়াটা
অনেক জীবস্ত । তার রক্কমাংসের শরীরটাকে হারিয়ে দিয়ে এ কালে। নিরবয়ব
ছায়াট। কেবলি লাফ দিয়ে উঠতে চায়। ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল বিজয়।
মনে হল অনেকদিন আগে, বোধ হয় দশবছর আগেও মা তাকে বিয়ের কথা
বলতেন ! ঘুরতে ঘুরতে বিজয় গেল লতিকা রায়ের বাড়ি। একদ! বিবাহিত
জীবনে অন্ত্থী বলে বিজয়ের দিকে ঝু'কেছিলেন লতিকা রার। এখন তাক
ছায়াবাজি ৫১
জীবন পরিপূর্ণ । যে বিজয়কে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল ডাক্তার অজয় রায়
মান্য হিসেবে অনেক ফ্যাকাশে, আজকের বিজয্নের মধ্যে তাকে খুজে পেলেন
না লতিকা। বিজয়ের আধাময়ল! জামাকাপড়, চোখের অস্থির দৃষ্টি, ধুলোভরা'
চটি দেখে লতিকার জব উঠে গেল বিরক্তিতে | হালকাবাদামি “ডিসটেম্পার, কর!
ঘরে, যামিনী রায়েয় ছবি আর নাগাদের বেতের টুপি, তীর-ধহক সাজিয়ে যারা
বাস করে, তাদের মনের ভাব মুখে প্রকাশ পায় না। তাই লতিকা রায় অল্প
হাসলেন। বললেন,
_আঁপনাকে “সিলেক্ট-এ দেখতাম না? আপনি ত বিজযবাবু?
আপনার মুখে সেই “আরারগ*র কবিতা! ডোডো-__! বুবলা--!
সি*এল. টি'র হালকা হলদে আর সবুজের পোশাকে ছুটি স্থন্দর মেয়ে নাচতে
নাচতে এল স্কিপিং দড়ি হাতে । লতিকা বললেন,
-_গীডি বের করেছে? আমার ব্যাগট! নামিয়ে আনে !
তারপর বিজয়ের দিকে চোখ তৃললেন। বললেন,
-স্এখন কী করছেন?
বিজয়ের অসম্ভব হাসি পেল। সোডার মতো! ছুর্দঘষ হয়ে হাসি উঠে
এল। বলল,
__একদা আমাকে “তুমি” বলতে লতিকা ! ডোডোকে আয়ার কাছে রেখে
একদিন আমার সঙ্গে--! মনে পড়ে !
বিজয় উঠে ধভাল। লতিক] রায়ের মেক্আপের নিচে মুখখানা কতট।
ফ্যাকাশে হল দেখতে বসে থাকল না সে!
গেল তার সাহিত্য-জীবনের অন্ুরাগিণী দীপাদ্িতার কাছে। তার হাতে
যে কলম কোদাল হয়ে উঠেছিল, দীপান্বিতার হাতে তার নতুন মর্ধাদা হয়েছে।
পুজোর মুখে পত্র-পত্রিকার চাহিদ। মেটাতে ব্যস্ত দীপান্থিতার কথ! কওয়ার সময়
হল না।
ঘুরতে ঘুরতে নিউ আলিপুরে অভিনেত্রী স্থপ্রিয়াদেবীর কংক্রীটের সুন্দর
ছবির মতে! বাড়িটিতে কেন যে গেল বিজয় ! আঠারো! বছর বয়সের বাস্তহার
মেয়ে কমলাবাল! বিজয়ের কাছে এসেছিল বাপের সঙ্গে । বলেছিল,
এক্সট্রা মেয়ের অভিনয় করি। আমার একট। ছবি যদি আপনাদের
কাগজে ছাপিয়ে দেন !
-.আয্ম লেই সঙ্গে বেশ জালা দিয়ে এদের জীবনের কথাটা লিখে দেন।
৫২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গল্প
মিনতি করেছিল তার বাবা । বিজয় সেদিন ঘুরিয়েছিল কমলাবালাকে।
পুরে! রাত ফ্লোরের মশার কামড খেয়ে, এক পেয়ালা কড়া চায়ের কামডে খালি
পেট আলা করত কমলার বিজয়ের অপেক্ষায় বসে বসে। ঘুমে ভেঙে আসত
চোখ । বিজয় লেখাপড়া জানে, বিজয় শিক্ষিত এই ভরসায় কমলা তার নিজের
জীবনের ছুঃখদুর্ঘশার প্রতি অধ্যায় খুলে ধরেছিল বিজয়ের সামনে । ভেবে-
ছিল এ সব মানুষ সৎ। তাকে সাহায্য করবে। বিজয় সেদিন তার সঙ্গে যে-
ব্যবহার করেছিল কমলার পক্ষে তা ভোলা সম্ভব নয়।
আজ কমলার নাম স্থপ্রিয়। পঁচিশ বছর বয়েস। মাসে পচিশ হাজার
রোজগার । টনসিল দেখাতে জুরিথ যায়। গরম পড়লে আল্লস-এ যাবে
এবার । স্তুপ্রিয়াকে কে বিয়ে করবে সেই হিসেব করতে অনেকেই
ষ্যস্ত।
বিজয়ের নামের জিপ, পেয়েও সে নামল তিনঘণ্টা বাদে। সাদা
কাশ্মীরিতে লাল নীল হস্তীযুখ ছাপা । একপাল হাতির ভার ফ্যানের বাতানে
উড়িয়ে নেমে এল স্থপ্রিয়া। সঙ্গে সঙ্গে নামল মন্তো একটি দল। বোঝা
গেল ওপরে আর একটি ড্রয়িংরুম রয়েছে । অধৈর্য বিজয় বলল,
এতক্ষণ বাদে সময় হল? কী করছিলে?
-_-এই যদি কথা হয় তবে আস্থন আপনি । আমার শুটিং আছে।
- অথচ এই আমারই পা ধরে একদিন কেঁদেছিলে মনে নেই? বলেছিলে
আপনার কাগজ দিয়ে একটু স্থবিধে করে দিন ।
_বলেছিলুম বুঝি ?
বলে তাকাল স্থুপ্রিয়া। জলে উঠল তার নীল চোখ। বলল,
--বিজয়বাবু১ পা অমন আমি অনেকেরই রোজ ধরি । আবার হাত ধুয়ে
ফেলি ডেটল দিয়ে। মনে থাক। কি সম্ভব?
এবার চোথ ঘ্যিমিত হল আলম্তে । ছুই হাত উৎক্ষিপ্ত করে বলল--
--সেদিনকার কমলাবালা সরকারকে আমার তো! আর মনে পড়ে না।
'আপনি বেশ মনে রেখেছেন । আপনার স্বতিশক্তির প্রশংসা করতে হয়
বিজয়বাবু।
বলে আযলসেশিয়ানটার মাথা পা দিয়ে নেড়ে, উঠে পড়ল স্বপ্রিয়।
অপমানিত মর্মাহত বিজয় বাঁড়ি ফিরল। যা কোনোকালেও ভাবেনি, কাগজ
«দেখে, ভারতের বাইরের একটা চাকরির জন্বে দরখাত্ত করল। ভারতের
ছায়াবাজি ৫৩
বাইরে স্থুদদানে তেলের খনিতে কাজ । পায় যদি তো ভালো। চলে যাবে
সেখানে । এই জীবনটাকে ফেলে যাবে। নতুন করে শুরু করবে।
ইন্টারভিউ-এ চাকরি হল। বাড়িতে সবাই খুশি হলেন। মা হেসে-
কেদে আকুল হলেন। কালীঘাটে পুজে! দিয়ে এলেন। সুজয়, কুমুদ দাদার
যাবার অয়োজনে তৎপর হল। ওপরওয়াল] বাঙালি। খুব ভদ্রলোক ।
বিজয়কে চা খেতে ভাকলেন ম্যা্ডেভিলা গার্ডেনের বাড়িতে ।
স্থন্দর বাড়ি। কাচের মন্তো চৌবাচ্চায় হাঁস ছাড়া রয়েছে । বাগানে
ঘুরে বেড়াচ্ছে খরগোশ । ঘন সবুজ কার্পেট-মোডা বারান্দায় বসে অফিসারটি
টিন খুলে ধরলেন । বললেনস্সিগারেট হোক! পারবেন কি সে দেশে
টিকতে? মোটে তিন বছর। তারপরই ইগ্ডয়াতে আনবে দেখবেন।
ঈাডান স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই ! সে বেশ শিক্ষিত, বুঝলেন না !
একটি সুশ্রী লক্ষ্মীর মতো মহিল। দুটি ছেলের হাত ধরে এলেন। বললেন-_-
-ডাকছ 1? আমি যে ওদের ক্ষুলের ফাংশানে যাচ্ছি।
তারপর বিজয়ের দিকে ফিরলেন। তার মুখে বিম্ময়। চোখে করুণ! ।
মেয়েটি মাধবী । বিজয়ের ঘর থেকে যে একদিন কেঁদে পালিয়েছিল।
প্রত্যাখ্যাত হয়ে। বিজয়ের মুখে কথা ফুটল না। মাধবী বলল,
বিজয় কোনো কথা না! বলে বেরিয়ে এল। ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি এল।
সিড়ি দিয়ে উঠতে যেই মনে হল মাধবী তার ওপরওয়ালার স্ত্রী, সেই মাথা
ঘুরে গেল তার | পুরোনো! বাড়ি। খাড়া পিঁড়ি। একেবারে নিচে গড়িরে
পড়ল বিজয়।
ডাক্তার এলেন। জ্ঞান ফিরল মাঝরাতে । চোথ খুলল বিজর়।
চারিপাশে সম্পূর্ণ অপ্ররুতিস্থ চোখে তাকিয়ে বলল,
-কুমুঘ। দেওয়ালে ওট] কার ছায়া রে?
স্্তোমার, দাদা ।
স্পআমার ছায়।!
করুণ বিস্ময়ে ছায়াটার দিকে তাকিয়ে বিজয় বলল- আমার চেয়ে আমার
ছায়াট। লম্বা কেন রে? ওকে একটু ছোটো হতে বল্ নাঁ। শুনবে না?
মা চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। আর ছায়াটার দিকে তাকিয়ে একটা
অদ্ভূত আর্তনাদ করে উঠল বিজন । সে পাগল হয়ে গেল।
৫৫ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
আযসাইলামে নিয়ে আসবার পথে পাশের চলমান ট্রেনটার দিকে তাকিক্ে
বিজয় কুমুদের হাত ধরে বলেছিল,
-কুমুদ, আবার যদি ফিরে আসি, তবে পা ছুখান। আমার কেটে দিস্!
ভয়ে ও ছুঃখে কুমুদ্ধ মিনতি করে- দাদ] !
--কেটে সমান করে দিস্্। এই ধর্, তাহলে আমি আর ছ ফুট তিন
ইঞ্চি থাকব না, সকলের মতো পীচফুটের ওপর আট বা ছয় ইধি' হয়ে যাঁব |
বুঝলি কুমুদ?
--একটু ঘুমোও দাদা !
কিন্ত আবার উঠল বিজয় । বলল-_পাশের গাড়িটা কী রে?
- বন্ধে মেল।
স্৮অত জোরে যাচ্ছে কেন?
স্প্দাদা !
--আমার থেকে জোরে যাবে ? কখখনো নয়! আমাকে ফেলে যাবে?
জিতে যাবে? না!
বলে একট! চীৎকারে বিদীর্ণ হয়ে জানল! দিয়ে লাফিয়ে পড়ল বিজয়।
সোনালি মাছ
ছেলেটির উৎসাহে প্রোজ্জল মুখখানির দিকে চেয়ে সন্মেহে হাসলেন তিনি।
বললেন-কাল সকালেই যাব। তুমি আর আমি।
--গুধু আমর! ছু-জন 1 আর কেউ থাকবে না?
--তুমি কি চাও, আরো কেউ থাকুক ?
--আপনি পথ চেনেন?
-্এক সময় এমনিধারা! বনে-জঙ্গলেই দিন-রাত কেটেছে আমার।
চাটগীয় হিল-্র্যাক্টস | বৃষ্টিতে ভেসে আসছে সাপ, জোক, ম্যালেরিয়া ।
পেছনে পুলিশ । তখন কিন্ত বিপদের ভয় করিনি।
এই বিখ্যাত মানুষটির মুখের কথ! শুনতে শুনতে শ্রদ্ধায় বিগলিত হল তরুণ
ছেলেটির হৃদয় । বলল- আজ তাহলে বিশ্রাম করি। কেমন?
ছেলেটি শুতে গেল পাশের ঘরে । তিনি শুনতে পেলেন সে গান করছে।
তার গুন্গুন্ শুনতে শুনতে তিনি ঘুমের ওষুধ খেলেন। এমনি গান গলায়
আসে কখন? যখন মানুষ তরুণ থাকে। তারুণ্যের আত্বিশ্বাসই এই
গানের উত্স ।
চাকর মাসাজ করে গিয়েছে । সিলকের পাজাম। পরে পালকের বিছানায়
শুয়ে আছেন তিনি। সম্মানিত অতিথি । সমাদরও তাই রাজসমারোছে।
কোনো ক্রটি রাখেননি চা-বাগানের মালিকটি। তবুও ঘুম আসতে দেরি
হল।
ঘুম বড়ো মূল্যবান তাঁর কাছে। এবং দেশবাসীর কাছেও।
কাল দুপুরে যাবেন গ্রাম-মগ্ুলীর গ্রন্থাগার উদ্বোধন করতে । বিকেল
তিনটের প্রেন ধরবেন । তারপর তিনঘণ্টা বাদেই €পৌছবেন কলকাতা ।
ছটায় পৌঁছিয়ে সাড়ে দাতটার মধ্যে বান করে তৈরি হয়ে নিতে হবে।
রাত আটটায় হোটেলে বিদেশী অতিথিদের দন্বর্ধনা সভা ।
রাত দশটায়? শগিল! তালুকদারের ঝকঝকে হাসিটা মনে পড়ল।
শমিলার সঙ্গে তাল দিতে দিতে রাত এগারোটা] বাজবে । তীকে ভর করে
সাংস্কৃতিক জগতে পা বাড়াবার ইচ্ছে হয়েছে 'শখিলার। ছুটি ছেলে দেরাছুনে
৫৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
পড়ে। শ্বামী গিয়েছেন ফ্রান্দে। ভারত সরকারের প্রতিনিধি হয়ে। তার
চেহারা দেখে, তার সুন্দর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে শগিলা তালুকদার ঘনিষ্ঠ হয়ে
উঠেছেন।
তবু তার ঘুম এল না। তার ঘুম চুরি করেছে এঁ তরুণ আদর্শবাদ ছেলেটি ।
নিজেকে তিনি তরুণদের দলেই ফেলেছেন। তাই ছেলেটি যখন দেখা
করতে এল, আশ্চর্য হননি। ন! হয় সোনামুড়া থেকেই আসছে। তার সঙ্গে
একবার আলাপ করবার জন্যে, বা কথা কইবার জন্তে কলকাতায়ই কি মান্য কম
কষ্ট করে?
-ব্যক্তিপুজার দিন বিগত ।-_-এ কথা বলে তিনি নিজেও কতবার বক্তৃতা।
দিয়েছেন। তবু, তিনি নিজের বিষয়ে ব্যক্তিপৃজার উৎলাহী সমর্থক । সচেতন
মনে ব্যাপারটাকে স্বীকার করতে বেধেছে । ওর1 আসে, ওরা উৎসাহ চায়,
ওরা শ্রদ্ধা করতে চায়-_-এই সব বলেছেন আশপাশের মানুষকে । প্রথমে মনে
বিধতো। মনে হত প্রবঞ্চনা করছি। নিজেকে এবং পরকে। মনে হত
সারাজীবন যে-সব কথ! বলেছেন, যে-সব আদর্শ প্রচান্স করেছেন আজ তার
বিরোধিতা করছেন । আজ আর বাধে না। ক্রমে ক্রমে কথাগুলোকে বিশ্বাস
করতে শিখেছেন ।
ছেলেটি কিন্ত এল সম্পূর্ণ অন্ত বক্তব্য নিয়ে। বলল-_-কথ! আছে,
আপনার সে । অনেক প্রশ্নের জবাব চাই।
"রিপোর্টার? এখানেও?
স্্প্রতিনিধি বলতে পারেন।
"কাদের?
' অনেক মানুষের । যারা আপনাকে বিশ্বাল করেছে, সমর্থন করেছে,
আর আজ্জকে যাদের আপনি বিভ্রান্ত করেছেন।
এ ধরনের কথা শুনতে তিনি অভ্যত্ত নন। দীর্খছন্দ দেহটি ঈঘং ঝুকিয়ে,
কপালের রুক্ষচুলটি পরিয়ে তিনি মোটা! কাচের চশমার ভেতর থেকে তীস্ক নজর
করলেন। কে হতে পারে? কাঁ নাম?
চা-বাগানের মালিক ভদ্রলোকটি বললেন,_কে তোমাকে আসতে দিল?
আবার এসেছ তুমি ?
তাঁর কথায় মনে হল ছেলেটি তীর খুব চেনা। একে তিনি জানেন।
-ওর সঙ্গে দেখা করতেই হবে আমার ।
সোনালি মাছ €৭
-উনি সামান্ত বিশ্রামের জন্ত এসেছেন । তোমার এই লব আবোল-
তাবোল বকুনি শুনে এই সময়টুকু নষ্ট করবেন কেন? তোমরা বড় অবুঝ।
একটু শাস্তির যে ওর কত প্রয়োজন !
তিনি হাসলেন। বললেন--
--কী নাম ভাই তোমার?
__-অমলচন্দ্র বস্তু।
সাধারণ নাম। সাধারণ ছেলে। তিনি জানেন এদের সঙ্গে কী ভাবে কথা
কইতে হয়, কী ভাবে মেলামেশা করতে হয়। অন্যান্য নেতারা এইসব
সাধারণ ছেলেদের সঙ্গে মিশতে, এদের মুখোমুখি হতে ভয় পান। তিনি
কোনোদিনও ভয় পান ন1।
তিনি আবার স্থন্দর হাসলেন । বললেন-_-
_সান্তাল মশাই, আপনি ঘুরে আস্থুন। আমি আলাপ করি অমলের সঙ্গে ।
ঘাড় ঝাড় দিয়ে উঠে পড়লেন সান্তাল। তীর চাবাগানে গোলমাল
হয়েছে। কমিশন আসছে তদস্ত করতে । তাদের আনতে এয়।রোড্রামে যেতে
হবে। বলে গেলেন,
-_ পুরে] দিনটা রইলে। আপনার । বিশ্রাম করবেন কিন্ত । কাল আপনার
অনেক কাজ।
ংলো। ছেড়ে বাগানে নেমে এলেন তিনি।
ঝ|উগাছের নিচে বেতের চেয়ার ছড়ানে।। কাচের চৌবাচ্চায় অনেকগুলো
মাছ খেলা করছে না! বড় মাছট বোধ হয় ছোটগুলোকে তাড়া করছে।
মালীট খাবার ৫পোকা ছড়াচ্ছে । লাল, সোনালি» কালো-মিশমিশে পাতলা
ডানাওয়াল। মাছ । দেখে দেখে কে বলবে ওদের মধ্যে চণেছে অদ্ভুত একটা
মারণনীতি। ছোট মাছগুলো! প্র।ণভয়ে ত্রস্ত হয়ে পালয়ে বেড়াচ্ছে আর
দর্শকজনের মনে হচ্ছে বড়ো সুন্দর লীলায়িত এই সফরীখেণ! ।
কাচের বেড়া টপকে চলে এসেছে বড় মাছট1। তার রাক্ষুসে হ-টা দেখেও
নিদেশষ এক গতিছন্দ ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না।
এই যে পরম্পরকে সংহার করে সামঞ্তস্ত রক্ষা করেছে জীবজগৎ, এ সম্পর্কে
ছেলেটিকে কিছু বলতে চাইপেন তিনি । এখানেই তার বোশঙ্টা । এমনি সব
ছোট ছোট জিনিস নিয়ে এমন স্থন্দর কথা কইতে পারেন! নে কথা শুনতেই
ব। কতো লোকের অ।গ্রহ।
৪
৫৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
কিন্তু ছেলেটি তো শুনতে চায় না। বলতে চার়। নিঃশ্বাস ফেলে সিগারেট
হাতে বেতের চেয়ারে ডূবে গেলেন তিনি ছেলেটি কথা৷ কইতে স্থুরু করল।
অনেকদিনের বক্তব্য জমেছিল বোধ হয়। হ্বন্থর সুন্দর সাজানে! মন রাখা
কথ। নয়। আবেগে জড়িয়ে গেল গলা। উৎসাহে কেপে উঠন কখনো ।
আন্তরিকতায় উত্তপ্ত কথাগুলি তার মনের দরজার ধাক্কা দিতে লাগল। শুনতে
শুনতে মনে হন তার মনের অপেক ভিতরে সে-ই যে একজন ঘুমিয়েছিল,
সে-ই বেগে উঠেছে।
সেকি তিনি? সেই মানুষটার টাকাপয়সা ছিল না। ছিল নিষ্ঠাঃ
প্রেম, আবেগ । দীপ্ত আদর্শবাদের বাণী ভ্বদষে বহন করে সেই মাচুষটি কত
দুর্গম ও বন্ধুর পথে বনে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে কাটিয়েছে। কারাবরণ করেছে।
দশজনের দুঃখ ভাগ করে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে সংগ্রামের পথে । সেই মাম্থৃষ
এমনই লম্বা ছিল। এমনই রোগা আর ফস আধময়ল। জামাকাপড়
পরে সে ফুটপাত আর বেঞ্চিতে শুয়েও কাটিয়েছে কতো রাত | সেকি তিনি?
ছেলেটি বলে চলল,
--আপনাকে আমর] বিশ্বাস করেছি, ভালোবেসেছি । আপনি ছিলেন দল
আর গোঠীর বাইরে। শ্বার্থচিন্তাকে আপনি ঘেন্না করতেন। হুজুরীমঞ্
লেনের বাসায় যখন আপনি আর শঙ্কর দত্ত ছিলেন- শঙ্করের টি-বি হলো***
দেই থে কাগজে পিখলেন'**লেখক নন, তবু প্রয়োজনে তে! চিরকালই আপনি
কলম ধরেছেন***
সব কথা তার কানে যায় না। উদননশ-শে! ত্রিশ না একত্রিশ সে-ট।
শহ্বর"**শঙ্কর'**শঙ্কর ! সেই মেয়েটির কীহণ 1 শঙ্করের যাকে বিয়ে করবার
কথা .ছিল? বীণা। শঙ্কর-কে যে দেখতে আসত হাসপাতালে ? শঙ্কর !
মরল বলতে গেলে বিনা-চিকিৎসায়। চল্লিশ ট।কা। চন্লিশট1 টাকা সেদিন
তার কাছে ছিল স্বপ্ন । বড়ো সুন্দর দেখতে ছিল বীণা । আর মস্ত প্রতিভ।
ছিল শঙ্করের। মধাবী ছাত্র ছিল! একটি স্থন্দর মেয়ের প্রেম আর
বন্ধুবান্ধব্ধের. সেবা+ কিছুতেই বাচানো গেল না শঙ্করকে। তারপর বাঁণ। তার
কাছে কতবার এসেছে । শেষ অবধি বীনা৪ যে কোথায় হারিয়ে গেল--অনেক
মানুষের ভীড়ে--অনেক জীবন সংগ্রামের মোহনার । আর তার সঙ্গে তীর,
দেখা হয়নি । 0) ৃ
আজ তার কাছে চজ্িশ টাকার কোনে! ঘবামই নেই। সেদিনই চঙ্জিশ
সোনালি মাছ ৫৯:
টাকার ফুল কিনে শমিলাকে দিলেন । অথচ একদিন চল্লিশ টাকা পেলে শঙ্কর
নামে একটি ভালে! ছেলেকে ৰাচানে! যেত। বাণ! নামে একটি স্থন্দর মেয়ের
স্বপ্ন সার্থক হত।
অমলের কথা শুনতে শুনতে তরে মনে হয় বুকে যেন আবার ধাক্কা
লাগল। শঙ্করের ন।ম মনে পড়তে তার কেন মন খারাপ হল? নাকিতিনি
আর সে একই মান্য?
অমল বলে******এমন করে আপনাকে বলবার কোনে! মানে নাকি হয় না।
ওরা বলে আমি নাকি পাগল। মাথায় আমার ছিট আছে। হয়তো আছে।
বুঝি না। তবু মনে হয়, একটা মান্ষঃ যে ছিল আমাদের মুখপাত্র, যাকে
আমর] বিশ্বাস করতাম, তাকে কিছুতেই হারাতে পারবো না। আপনিও
এর-ওর-তার মতো দ্বার্থ ছাড়। কিছু ভাববেন না--নীতির বালাই রাখবেন না--
স্থবিধে মত দল বদলাবেন--তা কিছুতেই হতে পারে না। টাকা'**অনেক
টাকা তো করেছেন *"*বলুন টাকাই কি সব?
মোটা কাচট! মুছে নিয়ে তাকান তিনি । ঘাড় নেড়ে জানান, না। টাকা
সব নয়। অমল এগিয়ে আসে। বলে,
--আমাকে ওর! বলে পাগল। আপনাকে এসব কথা এমনভাবে বলবার
কোনে! মানেই হয় না। সত্যিই কি আমি পাগল ? আমার মনে হয় আপনি ষে
হুস করেছেন তা যেন আপনি নিজেও জানেন ন1। জানলে কি ভূল করতেন?
উস্কোথুস্কে। চুল। ঘাম চিকচিক করছে মুখে । অমল বলে,
_ চারিদিকে শুধু বিশ্বাসঘাতকতা । এ ওকে ঠকাচ্ছে**ও তাকে ঠকাচ্ছে -.
দেখে দেখে যে কী রকম লাগে । মনে হয় অন্ত।য়ের সঙ্গে এত আপোষ করে
মান্য বাঁচে কী করে ?"""
এখন, এই রাত ছুটোয়, সিন্ধ নেটের মশারির ভেতর শুরে শুয়ে ছেলেটির
কথা মনে করতে করতে লামান্ ঘুম নামলো চোখের পাতায় । ওষুধের লেশায
চোখ বুজে আসছে। তবু মনটা কি ঘুমোচ্ছে? নাতো। মনেষেন ভয়?
কাকে ভন ? এ ছেলেটিকে । একট। আধাখ্যাপ! ছেলেকে? হ্যা তাকেই । কেন ?
কেন না তাকে দেখে যার] বিভ্রাস্ত হয়, ও তাদের দলে নয়। ওর চোখে তিনি
নিজের পরায় দেখতে পাচ্ছেন। এমনি অনেক মানুষ তাকে অবিশ্বাস করে 6
অশ্রন্ধা করে। লোকের শ্রদ্ধা আর বিশ্বারই তার পুজি. সেখানেই 'ঘখন, ফ্লাকি
ড.কল তখন তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি অবহিত হতে হবে। সেই ছেলেট।য দু
শু মহাশ্বেত1 দেবীর শ্রেষ্ঠ গল
কী রকম যেন? তীর পঁচিশ বছর আগেকার চেহারাটার মতো | সেই ম|হৃষটা
ভার মন ছেড়ে যেন বেরিয়ে এসেছে । বেরিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসেছে।
বসে তাকে কী বলছে। সেই ছেলেটার মতো ঝুকে ঝুকে আবেগ-রুদ্ধ কণ্ঠে
তাকে বলছে.*.বাচবার উপায় হল মাথাঝাড়া দিয়ে ওঠা--মেরুদণ্ড তুলে
দড়ানো। চোর] কণ্টবক্ট-গুলোর লোভ ত্যাগ করা। একটা অক্ৃতদার
মানুষের পক্ষে যা দরকার তার অনেক বেশি তুমি পের়েছ। শেষ ক'্ট1 দিন
হুম্বরভাবে বাচতে চেষ্টা কর! সমূদ্রের ধারে চলে যাও। পাহাড়ে যাও :
দেশে দেশে ঘোরে | যাহ্র কর।
সেই কথাগুলো তিনি শুনছেন কি? না তো! শ্তনতে শুনতে তার
চোখ চলে যাচ্ছে সেই মাছটার দিকে । যে কাচের দেয়াল পেরিয়ে ছোট মাছ-
গুলোকে গিলে চলেছে । সুন্দর ও শোভনভাবে একটা হিং কাজ করছে ।
একটা ভয়াল মাছের মতোই হই] করে অশান্ত অন্ধকার এসে তকে গ্রাস
করল। ঘুমোলেন তিনি। কিন্তু ঘুমের মধ্যেও অন্বস্তির অনেক কটা বিধতে
লাগলো তাকে । এই নিরবয়ব আধারটার মুখের মধ্যে যেন ঘুমোচ্ছেন তিনি,
আর গায়ে বি'ধছে তারই অনৃশ্ট সব দাত।
সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ। ঘন সবুজ গাছের ছায়ায় ছায়ায় ুড়ি পথ ধরে:
তার! ছুঙজন চলেছেন । অনেক কথা হয়েছে । অমলের মন এখন খুব প্রসন্ন ৮
তার কাছে কথা দিয়েছেন তিনি। আর এমন করে আলেয়ার পেছনে ছুটবেন
না। ফিরে আসবেন। আগের মতো হবেন। কেমন করে যে হবেনঃ
কোথা থেকে যে শুরু করবেন, সে সব কথা হয়নি | হয়েছে শুধু হদয়ের কথা ॥
সেখানে আবেগটাই বড়ো । সত্য ভাষণই আসল কথ! | অমলের মনে হচ্ছে
মনটা তার হালকা হয়ে গেল। শেষ অবধি যে তার শুভবুদ্ধির জয় হল, পে
জন্ত নিজের ওপর বিশ্বাস তার ফিরে এসেছে।
তাঁকে খুব চিস্তাকুল দেখাচ্ছে। বুড়িয়ে গিয়েছেন যেন। এ সব পথ
নেহাৎ খুব জানা তাই এগিয়ে চলেছেন নিশ্চত্ত পদক্ষেপে ।
ছেলেটি বলে--আর কতদূর ?
জবাব দেন না তিনি। পিপাসার সময়ে বন্য জন্ত যেমন জলের গন্ধ ঠাহর
'করে করে এক লক্ষ্যে চলে, তেমনই এগোচ্ছেন তিনি, য| খু'জছেনঃ এখনো
পাচ্ছেন না। আর কত দুর? মা কি পচিখ বছরের ব্যবধানে সব-ই
স্গগলে গেল?
“সানালি মাছ ঙ$
না। পাওয়া গেছে নদীটা। আজ সারা সকাল শুধু তার যৌবনে
দিনগুলির গল্প করেছেন অমলের সঙ্গে। সেই দিনগুলির সঙ্গে নদীর এই
জায়গাটুকুর অনেক স্বতিই জড়ানো । এখন আবার সেখানে দাড়িয়ে তিনি
নিঃশ্বাস নিলেন বুক ভরে ।
ছোট নদী । এখানে এসে পাথরে পাথরে পাক খেয়ে ঢালুর দিকে নামছে
গমগম শব করে । নদীর ওপর ঝুকে পড়েছে জবামগাছের ডালপালা । অমলের
গেখে হয়তো একান্ত পরিচিত এ দৃশ্য । তবু আজকে আবার নতুন করে সে
মুগ্ধ হল। তিনি যখন মুগ্ধ হচ্ছেন, তখন তার চোখ দিয়ে অমল আবার
দেখল। সেও বললে- চমত্কার !
এখন প্রত্যেকটি পদক্ষেপ তাকে মেপে মেপে ফেলতে হবে | জলে নামলেন
[তনি। অল্প জল । দুরস্ত শ্রোত। জামগাছটার ডালটা হাতে ধরে অমলকে
বললেন_-ওপারে যাই চলো! ।--বলতে না বলতে তার পা পিছলে গেল । অক্ফুট
আর্তনাদ আর মুখের ভয়ার্ত ছবি দেখে আর কিছু ভাবল না অমল। সেও
লাফিয়ে নামল জলে। আর এই শ্টাওলা-পেছল পাথরে লাফিয়ে নামাই
বেয়াকুবি। সেই ভুলই করল অমল। চিৎকার করবার সময় হল না।
বেকায়দায় পা পিছলে জলের সঙ্গে পাকাতে পাকাতে সে গিয়ে পড়ন
একেবারে সাত ফিট নিচে আর ওরকম জায়গায় সাত ফিট উচ্চতাটাও
মারাত্মক |
জলের চোর! পাকের গ্রাসে পড়ে, পাথরের ফাকে অমলের শরীরটা যখন
স্থির হয়ে গেল, তলিয়ে গেল, তখন তিনি জামগাছের ভালটা ধরলেন। ওপর
দিকে চেয়ে আকাশ দেখতে পেলেন না। দেখতে পেলেন সবুজ পাতাঞ্জলো
আর মনে হল, আজকের এ ঘটনার সাক্ষী রইল একমাত্র এই গাছগুলো।
মার কেউ নয়, আর কিছু নয়। কী ভাগ্য, যে গাছপাল। কথা কয় ন|।
কিন্তু তাকে তো বাচতে হবে । আর সমস্ত ব্যাপারটার পরিসমাপ্তিও নিধু্ভ
অভিনয়ে সম্পূর্ণ করতে হবে।
জামগাছের ভাল ধরে কোনো মতে ওপরে এসে ঘাসের ওপর পড়ে গেলেন
তিনি। শীতার জানে নাঁ, তবু যে অমল লাফাবেই তাকে বাচাতে, তা! তিনি
জানতেন এবং তাই জেনেই ঠেঁচিয়েছিলেন। তবু ঘামতে লাগলেন দরদ
করে। ভেঙ্গ। গ| দিয়েই ঘাম বেরুতে লাগল । তারপর উঠে ছুটতে সক
করলেন । গাড়ি ছিল অনতিদূরে । ভ্বাইভার ছিল, টিফিন ক্যান্বিয়াক
ঙহ মহাশ্বেতা! দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
নিয়ে চাকর ছিল। তারা ছুটে এল। আরো আরো মানুষ এল ।
তোলপাড় হল জল! পাথরের আঘাতের চেয়ে অনেক মারাত্মক জলের একটা?
চোর পাক।
অমলকে যখন তোল হল, তখন তিনি হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন-_
গ আমাকে বাচাতে চেয়েছিল, আমাকে বাচাতে চেয়েছিল। একী করলাম ?
আমি ওকে হত্যা করলাম ।
তাড়াতাড়ি সান্তালমশাই-এর কাছে খবর গেল। সমবেত মান্ুষগুপি,
নিজেদের মধ্যেই চাপা! গলার প্রশ্নের গুন, গুন তুলল ।
--এ অঞ্চলে ও চোরাপাক বিখ্যাত । তবু ছেলেটি নামল কেন।
--গুকে বাঁচাবে বলে।
স্পাগল না বোকা ?
--চিরকালই খ্যাপাটে ।
তিনি এত ভেঙে পড়লেন মে তাকে সামলাতে সান্ঠ(লমশ!ই ব্যস্ত হযে
উঠলেন। তবু তাকে আশ্বস্ত কর1 গেল না। কোথ|য় কে আছে ছেলেটির?
আত্মীয়স্বজন 1 তাদের সাহায্যের জন্য মুঠো মুঠো টাকা দিলেন বের করে ।
বা কিছু একটা করা হোক । একটা সিমেপ্টের ফলক । একটা কিছু ।
অমলের মৃত্যুর দুই ঘণ্ট।র মধ্যেই এ লব ব্যবস্থার কথা শুনতেও খারাপ
লাগল ডাক্তারের । তবু তিনি এর মহান্ুভবতায় অভিভূত হলেন। যিনি
সন্ধ্যার আগে কলক।তা চলে ষাবেন--তার এ-রকম দুরদশিতা, সহৃদয়তা, মনে
হুল এর যেন তুলনা! নেই। ছূর্ঘটনার মারা গিয়েছে একটি সামান্ত ছেলে”
তার জন্যে তিনি কী রকম অভিভূত হুয়ে পড়েছেন । আবার মনে হলঃ এইসব
গুণের জগ্ঘেই তো তিনি বিখ্য।ত ! একটি মানুষের মধ্যে এতখাঁনি মহত্ব
কেমন করে যে সম্ভব হয় | অমলের জন্তে তার শোকই বা কী গভীর! সাধারণ
ছেলে অমল, তাঁর মুখের টুকরো! টুকরে! কথায় হয়ে উঠল অসামান্স | তার
সম্পর্কে তিনি এমন আস্তরিক আবেগের সঙ্গে বলতে লাগলেন ! এই সাধারণ
ছেলেটির মধ্যে যে কী অসাধারণ হ্ৃবদয়-সম্পদ ছিল কেউ তা জানেনি ।
কেউ তা৷ বোবেনি।
শুনতে শুনতে সান্বলমশাই গলা ঝেঁড়ে বললেন আমি ওর নামে শাদঃ
“পাথচরর একটা স্থতিফলক করিয়ে দেব । দেখবেন !
৮" সত্যি?
সোনালি মাছ ৬৩
বলে তিনি আবার অভিভূত হয়ে পড়লেন ! বললেন,
-আজ এ ছেলেটির এই পরকে বাচাবার জন্ত নিজের জীবনটাকে তুচ্ছ
কর! দেখে আমার মনে হচ্ছে ওর কাছে আমি কত ছোট, কত তুচ্ছ, সত্যি,
ওরাই হলো খাঁটি ইম্পাত। ওরাই যুগে যুগে ইতিহাস রচনা! করে। মানুষকে
ৰাচিয়ে রাখে।
আজ সকলেরই মনে হল এ ছেলেটি কী অসামান্ত !
আর সামান্তকে অসামান্ত করলেন ধিনিঃ সেই তার দিকে চেয়ে অভিভূত
ভাক্তার ছুদিকেই মাথা নাড়লেন।
অমল নেই | একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। আর তার কোনো ভয়
নেই। এবার আর কেউ এসে তাকে অস্থির করে তুলবে না। এখন তিনি
আবার আগেকার মতোই নিশ্ন্ত নির্ভয়ে চলেফিরে বেড়াতে পারবেন।
কলকাতায় কদিন বাদে এক ঝলমণে রাতে শমিলা তালুকদারের ছাদের
ঘরে উঠতে উঠতে খুব ভালো লাগল তার। ঘুমের কষ্টট1 একেবারেই নেই ।
বেয়াড়া সব প্রশ্ন করে বিব্রত করে তুলেছিল অমল। তাই ঘুম হত না।
বেচারা ! দারিদ্য আর আদর্শবাদের ভূতে মানযকে বে কী করে ফেলে!
শমিলাকে সেই কথাই বললেন।
শমিলা আজ কী রকম সেজেছে । হলদে ক!লো৷ পোষাক, কটা চুলে
উদ্ধত খেপা। বাছিনীর মতো |
ঘরে বসে শমিল। তালুকদার মাথা হেলিয়ে রাখল সোফায়। বলল-_
এবার সেই হতভাগ্য ছেলেটির কথা বলে] ।
--ব্যক্তিপৃজ্জার কেস আর কি!
--বলো | তোমার অপূর্ব ভাষায় বলে!। জানোন] তোমার জন্যে আমি
নতুন করে বাংলা শিখছি ।
-্" বলছি !
বলে থামলেন তিনি । সামনের জাপালায় একট! ক্যাক্টাস। ঘন সবুজ।
ত্বাকাবাকা। সতেঙ্গ। মুগ্ধ ও ঈষৎ ভয়া্তভাবে তাকিয়ে রইলেন। তারপর
বললেন,
--এী কুৎসিত দ্বিনিলট লয়াও !
৮8
৬৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
বেয়ার] সরিয়ে নিল টবট1|। এবার মুখ নিচু করে খোঁপা ঠিক করলেন
শগিলা। তিনি বললেন,_-
স্পকী বলছিলাম?
»-কী বলছিলেন?
মাসের মন জটিল। দুর্গম অরণ্যের মতোই ছুর্ভেছ্চ তার প্রবেশপথ । এঁ
গাছটা দেখে ক্ষণিকের জন্ত তার বিভ্রম হয়েছিল। মনে হয়েছিল বুৰি-ব!
গাছট। অরণ্যের সাক্ষী, আর তার মিথ্য।ভাষণ সে ধরে ফেণল।
সে আত্মবিত্রমকে তিরস্কার করলেন তিনি। স্পন্দত হৃদয়কে শাসন
করলেন। বললেন,
_বলছি। সেই দুর্ঘটনার কথ! ।
সত্যিটুকু ঢেকে সুন্দর ভাষায়, অনন্থুকরণীয় ভাঙ্গতৈ চমতকার করে তিন
বলতে শুরু করলেন।
শ্তনতে শুনতে শমিসা কাছে এলেন। শগ্সিলার উদ্ধত বুকের পোভনীয়
হাতছানি দেখতে দেখতে তার গল্প বলাটা আরো সুন্দর হয়ে উঠল। তার
অসমান তের সারিতে হাসি ঝিলিক দিতে লাগল । ্
সে গল্পে অমল রইল না তিনি রইলেন না--রইল শুধু সাজানো! কেয়ার
কর] ফুলের বাগানের মতো» গোছ। গোছা কথার ফুশঝুরি। আবেগে রডিন,
উত্তাপে মোহনীয় ।
প্রতিভার অন্ধ ভক্ত একটি মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত হতভাগ্য তরুণের শোচনীয়
স্তর কথা তার মুখে হয়ে দীড়াল চমৎকার একট] গল্প। সে গল্প শুনতে
শুনতে মুগ্ধ হয়ে শিলা আরে কাছে এলেন। বললেন,
বললোঃ আরও বলো**.
উৎসাহিত হয়ে উঠলেন তিনি, আর শমিপা শুনতে লাগল তীর কথা । এ
ঘর নিরাপদ । এখানে কোনো ভয় নেই। এখানে সেই দিনটার কোনো
সাক্ষী নেই- আকাশ, বাতাস অরণ্য ও নদী- সব কিছুর উদারতা এ ঘর
থেকে নির্বাদিত। এ ঘর মানুষের স্যষ্টি এক কুত্রিম অরণ্য _এখানে মানুষ সভ্য
পোষাক পরে বসে জানোয়ারের হৃদয় বুদ্ধি নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে লোভ ও
কামনার সংঘাতে মাতে
এই নিরাপদ পরিবেশে নিজের গল্পট1 নিজেই বিশ্বাস করতে শুরু করলেন
তিনি। তীর চমৎকার গল্পটি সত্যি হয়ে উঠতে লাগল আর এতদিনে যেন
সত্যি সত্যি মরল অমল। |
দেওয়ানা খইমাল! ও ঠাকুরবটের কাহিনী
১,
কাহিনীর প্রথম প্রস্তাবেই নায়ক দেওয়ান] ।
আশ্চর্য ফকিবের মুখে এ কাহিনী খইমালা যখন প্রথম শোনে, তখন সে
বালিক1 মাত্র । গঙ্গাতীরে সোমবারের হাঁটে অনেক মান্য আসে, অনেক
বেদাতি। আনাজ ফলফলারি, দরজার কবাট, গোরুর গাড়ির চাকা ।
বারুইপুরের বেগুন বেচা যেয়েছেলের। কৌদল করে ও «যে আমের ঝুড়ি ভরা
বেগুন কেনে তারে আমি পান খেতে দিই” বলে হাতের বাউটি নাচায়।
গিয়ার এ হাটে মেলে না এমন জিনিস নেই। রাজপুরের আনারস,
বাশত্রোণীর গামছা! কাপড়, এমন কি কুঁদঘাট থেকে মুসলমান ব্যাপারীর!
বাশের ছাতা আনে। মগরাখালের বাওপী বেদেনীর। হ্ুন্দরবনের গোল-
পাতা, মধু, হরিণের মাংস এনে বেচেযায়। ক।মডহরীর ব্যাপারীরা
ছাগল+ গাই, মহিষ বেচতে আসে । সোমে হাট, শুক্রে হাট, তবু ঠেলাঠেলির
শেষ থাকে না । এমন জাকের হাট আর কোথাও নেই। অধিক কথা
কি, দূর দূর বোড়াল, জগদ্দল, নিমসন্দী থেকে ব্রাঙ্গণপণ্ডিতর নৌকো চড়ে
আসেন ও নপীরাম কাগজীর কাছ হতে উৎকৃষ্ট তালপত্রের টি, লোহার
বালা, হুগলীর কলম কেনেন, সে কারণে নসীরামের বড় জরশাক। অবসর
সময়ে সে চৌকিতে হেলান দিয়ে “বধু সাধ বৈল মনে” বারুইপুরের কেতন
ঘোষের বাধা! গান গায়, আর ছেলের! *ও নসী দাদা” বলে যতই ঘিরে
বেড়ে ধরুকঃ কখনও একখানি কাগছ্ধ তাদের দেয় না। নসীরামের দোকানে
হুগলীর তুলোট কাগজ, ত্রিবেণীর বাপি কাগজ ও হারেকষ কালি, বঁড়িশার
কলম থাকে । “আমীন গোমস্তা ভিন্ন কারে বেচি না হে" এই নপীব্বামের
আর একটি জাক। ্
এ জশাকের হাট সোমে শুক্রেবসে। তবু দেখে মনে হয় মেলা বসেছে,
স্ানপর্বের মেলা । চাষী, ব্যাপান্সী, তাঁতি, কামার, কুমার, জেলে, মুচি,
শাখা, মনোহার-পনারি সবাই হাটতলায় ঠেলাঠেলি গুঁতোগুতি করে।
সর্বদা মানুষের হই চই-এ হট্টগোল ওঠে, যেন মাহেশের আানযাত্র!
৬৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
অথব1 কালিকাক্ষেত্রে দীপান্িতার মেলা বসেছে, নয়ত বড় গঙ্গায় পিতৃপক্ষে'
শত সহম্র পৈতেধারী পুরুত, তর্পণেচ্ছু যুবক, বাপক, বুদ্ধদের মন্তর পড়াচ্ছে।
হ্যাদে তালেব মিঞা কোথায় গেলে গোঁ নদী পেরোলে কড়ি দিলে ন1?
--ও পণ্ডিত মশ।ই আপনার ছাতা পড়ে রৈল--ওগে। তোমরা আমার
ষাসীকে দেখেই? সাবি মুখপৃড়ী গেলি কোতা, তোর পান ছাগলে খায়
ইত্যাদি চিৎকার । ছেলের কান্না, তালপাতার ভেপুর পৌ৷ পে শব, গোরুর
হাস্থা হাস্ব।॥ ছাগলের ম্যা রব, মুড়ি-ভাজনীর সঙ্গে বাগানের মালীর ঝগড়া”
হাট পেয়াদার সদন্ত আম্ালন “ওগে। আমার নাম দামু পেয়াদা, এ হাতে
কৌতৎ্কার বাড়ি থেয়ে যে জেলের পো” বাপ না বলেছে সে জন মায়ের পেটে
আছে, শোনা যাচ্ছে। জেলের ছেলে হাট-পেয়াদার হাতে বাবুদের তোলা
হিসেবে বাট] মাছ দিচ্ছে বটে, কিন্ত দামু পেয়াদার পেছনে তাকে অতি
মিষ্ট সক্বোধনে আপ্যায়িত করছে।
কোন একজন জলের ছেপে চেঁ'চয়ে বলছে» 'াঝের বেলা জেলে পাড়া,
দিকে হেঁটে মন্দির বাড়ি যায় খন, দেখে নেব ।'
মেছুনীর গলা তুলে দামু পেয়াদার চরিত্র যেমন, সে শালাজের হাতের
পান-জজরল খাব!র জন্যে ঘন ঘন ও-পাডায় ই।!টে, সেই জন্যেই মনের দুঃখে
আজকাল পেয়াদার পরিবার রাতের বেলা ভাত রাধে না, মাটিতে পড়ে
কাদে, এই সব দরকারি খবর হাটে ছড়াচ্ছে। এরই মাঝে মাঝে “একগণ্ড
কড়িতে মাছ হয় ন1 বাছা, গুগলি খাও গে", বলে কোন চাষী বউকে আপ্যায্িত.
করছে। |
এরই মাঝে সদগেপ শিন্লিরা, যার। হাটের সন্নিধানে, গঙ্গার ঘাটে,
বাস ক'রে, নানাজাতের মানুষের নিয়ত আনাগোনা দেখে দেখে কালিকা-
ক্ষেত্র” কালীঘাটের ঘাটপুরুতদের ঘরের ব্রদ্ষণীদের মত লজ্জা! শরম হারিয়েছে,
যাদের দেখে সনাতন দীঘড়ি নিঃশ্বাস ফেলে বলেন 'শওর নয়, শওরের বাতাস
গায়ে লাগলেই মেয়েজাতের জজ্জা! যায় গে। তার! ধামায় মুড়ি মুড়কি ও
পানথিলি নিয়ে হাটুরেদের বেচে বেড়াচ্ছে।
তাদের দেখে জোয়ান ব্যাপারীব। “ভুবন মাসী, সঙ্গে জলপান থাকে»
ত্বৰু তোমার ছুটো কথা শোৌনবার জন্যে তোমার কাছ থেকে মুড়কি কিনে
খাই। মুড়কিতে কি দাও গা, এমন মিটি লাগে? বলে ব্টকের
করে।
দেওয়ান! খইমাল! ও ঠাঁকুরবটের কাহিনী ৬৭
অদূরে, গঙ্গাতীরে পৰিত্র শ্শান। শ্মশান থেকে হরিধবনি ওঠে, চিতার কাঠ
ফট্ফট্ শবে ফাঁটে। শ্রশানের ভীষণ দৃশ্ত দেখলে মন নিমেষে উদাস হয়।
সনাতন দীঘড়ির কথায় বিশ্বাস আপে «কিসের দাপে ভূবন কাপাও বাপ?
এশ্বর্য? প্রতিপত্তি? কোম্পানীর পেক্কারি,পেয়ে ধরাকে সরা দেখছ? একনুটি
খড় মুখে দিয়ে চিলুতে চড়িয়ে দিয়ে দেখলে বুঝবে শেষ শয্যেয় সবাই সমান।
কি হেস্টিংসের মুন্সী, কি কুকুর ফেলা মৃদ্দোফরাস ভিখিরীচরণ ভোম। দুজনকেই
পুড়তে দেখেছি, সব জানি রে বাপ, নবকাস্ত মিত্ির আর ভিখিবী ডোম।
চিলুর ওপর ছুজনই সমান। তাই বলি দাপ করো ন1।,
এ কথা বলে সনাতন দীঘড়ি গল তুলে কর্কশ, অথচ তদ্গত কণ্ঠে “কে
হে কামিনী নীরদবরণী, গাইতে গাইতে কালীতলার মাঠ দিয়ে চলে যান।
সভার গানে সর্বদা হাহাকার বাজে, যেমন হাহাকার পরিত্যক্ত দেবালফের
দরজা ঝড়ের ঝাপটায় ধডাস ধড়াস করে। সনাতম দীখড়ির জীবন এক
কর্কশ, নিঃসঙ্গ ক্রন্দন মাত্র।
গঙ্গার ও তীরে শ্বশান রইলে কি হয়, এদিকে হাটে বড়জাক। এ
হাটে বাউল মন ভ্রমরার গান গায়, হাট-পেয়াদার! টোল-ডগর বাজিয়ে
“বেদে এসেছে ধরে নে" যাবে, ছেলের মায়েরা সাবোধানে খেক হে!”
ৰলে শোহরৎ দেয়। কালীঘাট, বড়িশা ও স্থৃতোহুটির কুটনীঘা! নৌকো
চড়ে এসে পান-স্থপারি কিনবার ছলে কোন মেয়েট। সুন্দরী, কেমন করে
চুরি করি, তার সন্ধানে থাকে।
এই হাটে প্রতিদিন আশ্চর্ঘ ফকির তার পুথি পড়ে। আশ্চর্য ফকিরের
চোখে পরকলা, গায়ে মলিন জামা, পায়ে নারকেল দড়ি বীধা চটি। সে
হাটের অদূরে তেঁতুল গাছের নিচে বসে। তার পুথি পাঠের শ্বর অতি মধুর”
বাগমারীর লোনাঙ্জলার মাছের ব্যাপারী সাধু সাউ, দক্ষিণের বন-বাদার
বেষেনীরা, এই সব দেশন্দেশের লোক মোহিত হয়। সাধু সাউ-এর
চরণাশ্রিতা গোলাপী আশ্চর্য ফকিরের কাছে প্রেম ও পরিণয়ের বিবিধ কিচ্ছা?
শুনতে শুনতে উত্তেজিত হয়ে খেপা খুলে ফেলেঃ আবার বাধে, আবার খোলে
€ও ঘন ঘন গরম নিঃশ্বাস ফেলে বলেঃ “তোমার পাঠ শুনে আমার কলজ্ের
ভেতরটা! যেন আছাড়ি-পিছাড়ি করে । কেন করে বলতে পার 1,
আশ্চর্য চুপ করে থাকে। সহসা উত্তর দেয় 'না। বাগমাক্ীর লোনা-
জলের কোনে! নির্ণজ্জ যুবতী প্রশ্নের জবাব দিতে এখনে! সে ছুবার চিন্তট
৬৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
করে| যদিও আশ্চধ এখন বৃদ্ধ, লোঁলদেহ, গলার শ্বরের লাবণ্য ছাড়া তার
'দেহের সর্বত্রই জর! এসে জে'কে বসেছে।
তবু আশ্চর্য চুপ করে থাকে । যৌবনে তার চেহার বড় সুন্দর ছিল,
ঝোঁদ লাগলে ডালিম ফেটে পড়ত। বাগমারীর লোনাঁজলার এক ধুবতীর
রূপ দেখে আশ্চর্য ফকির সাজানো সংসারে লাথি মেরে চুঁচড়া পালিয়েছিল।
ফিরে এসে তার নিকার বিবি, সাধের সন্তান ও ঘরদোর কিছুই দেখতে পায়নি।
আজ পঞ্চাশ বছর বাদেও ৫স কথা মনে করলে তার ছুঃখ হয়, কেন না এই
খেদাতালার সংসারে এসে মে কিছুই হাতে পেল না, স্থখ শান্তি, জোয়ান
বেটার রোজগারের তন্ন । হা খোদীতালা, তুমি সামান্য পি”পড়াটাকেও দোসর
জুটিয়ে দেছ, শুধু আশ্র্ধরে একলা আখলে--এ তোমার কেমন বিচার ?
আশ্চর্যের বুকের ভেতর এই বিলাপ আছাডি-পিছাড়ি করে। কেননা
আশ্চর্ষের পেছনে শুধু আফসোস আর হা-হুতাশ, সামনের পথ বড় অন্ধকার,
মহীশুরের নব|বের বেটাদের মসজিদের চত্বরের এক কোণে পড়ে পড়ে ধৃ'কে
ধুকে মৃত্যু। সে মৃত্যুর কথা ভ বলেই আশ্চর্য ভয় পায়। কেননা! সে
গানে অস্তমে কারো খেদার দোয়] টোয়! মেলে না।
যেমন জন্মকালে তেমন অস্তিমে, মানুষ বড় একলাঃ অসহায়, যে দেহ
নিয়ে এত জাাক* সে দেহ অবধি মাটির নিচে পড়ে থাকলে সত্বর
সাটি হয়।
এসব ভাবনায় মাঝে মাঝে আশ্চর্য অস্থির হয়, তখন সে দানী মোড়লের
ফকির-পাটে বাধা শৈলী গয়লানীর মত হো! ছো শব্দে কাদে। তার কান!
গুনে কুকুর চমকায়। দানী মোড়লের ফকির-পাটে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে, লোহার
শল। ছেঁক! দিয়ে পাগপ সারানে! হয়। শৈলীর পাগলা।ম বারো মেসে।
তকে ঠত্র ৫বশাখে ফকির পাটে আনা হয়।
এই আশ্চর্যের কাছে, এক বর্ষার হাটবারে ব্রাঙ্ষণের মেয়ে খইমাল! ও
'পাটনীর ছেলে গোলক সেই আশ্চর্য “কিচ্ছা শুনেছিল।
সেদিন ঘনঘোর বর্ধা। গঙ্গার কানায় কানায় জল। বাশদ্রোণী ও
নাকতলার ঘাট জনশৃন্ত । হাটে ব্যাপারী সামান্ভই । শ্মশানে মড়া ফেলে
€বেথে শবযাত্রীরা। ছাতা মাথায় গাছতলায় । ঘাটে যাত্রী নেই, নৌকে।
€কউ চড়েনি। খইমালা তার মায়ের হয়ে ভূবন মাসীর কাছে মুড়ির কড়ি
দেওয়ানা খইমাল] ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৬৯
চাইতে এসেছিল। তার মা লুকিয়ে মুড়ি ভাবে, লুকিয়ে তুবন মাসীকে,
যোগান দেয় | নতুবা মা-মেয়ের দিনান্তে অন্ন জোটে না।
অন্ন না জুটলে কী হবে? খইমালার অঙ্গে অঙ্গে রপ। তাই তার মা
খইমালাকে কড়ির তাগাদায় হাটে আসতে দেয় না। তাব একটি কারণ
বেদেনীর ভয়। ওরা মেয়েসস্তান দেখলে নিমিষে চুরি করে, বাদী হারে
বেচে আসে।
আর একটি কারণ সমাজের ভয়। সমাজ মেয়েছেলেকে জেয়াদা শান্তি
দেয় মা» শিশু বলে ছু্নাম দ্রিতে বেয়াৎ করে না। খইমালার ম| সনিংশ্বাসে
বলে, “দুধের মেয়েগুলোকে জ্যান্ত পোড়ায় মা, দয়! করে না ।
আজ বড়ো বিপদের দিন ।
থইমালার মা আজ কতদ্দিন ধরে জরে কাতর। ব্যামোয় অস্থির» ঢলে
পড়ছে। অথচ কড়ি কয়টি না পেলে নিজে কী খায়ঃ সন্তানকে কী দেয়।
সাত পাচ ভেবে সে খইমালাকে হাটে পাঠিয়ে দ্িল। কাতরে বললঃ 'ত্বরায়
আ [সস মাগো, হাটে বেদেনীর ভয় ।,
কিন্ত আজ ঘনঘোর বর্ষা। দুপুর না গড়াতেই মেঘে রাতের মত আধার
করল। আকাশে বিজলি চড়াৎ করে। যতদূর চোখে পড়ে শুধু আধার আর
বুষ্টি। এমন দ্রিনে হাটই বা কই, ভুবন মাসী কোথা? এমন দিনে অতি বড়
দুঃখী ও ঘরের বার হয় নাঃ তাই পথঘাট জনশূন্য ।
সভয়ে খইমাল। ত্বরায় তেঁতুল গাছের তলায় গেল। নিয়ত বলে বলে
আশ্চর্যকে অন্য কেউ না, সাধু সাউ-এর চরণা শ্রতা গোলাপী, একটি গোরুর
গড়ির ছই এন খু'টির ওপর বসিয়ে মাচ। বেধে দিয়েছে।
খইমালা দেখল লেই মাচার ওপর আশ্চর্ধ ফকির, গোলাপী, সনাতন দীঘড়ি
ও দানী মোড়ল ঠেসাঠেসি করে বসে। নিচে, মাচার নিচে পাটনীর ছেলে
গেলক। খইমালাকে দেখে গোলকের চোথমুখে স্বস্তি
*কৈতরী, তোরে দেবার জন্তে ভূবন মাসী কড়ি গুনে দিয়েছে আমার
কাছে।
এখন গোলকের 'কৈতরী* সম্বোধনে খইমালার বড়ো রাগ হল। বৈঞ্ক
ঘাটের কাছে ঠেঞচব পাটেঃ ঠাকুরদালানে ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রা দেখতে সে বড়ো?
ভালবাসে তাই গোলক তাকে আড়ালে বলে “কৈতী' কিন্ত এ নাম প্রচার
দেবার নয় মা বলে, “মেয়েছেলের দুর্নাম নিমেষে হয়,” খইমাল। গোলকের দিকে-
45 মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গঞ্প
না! তাকিয়ে মাচার কাছে গিয়ে দাড়াল ও দু'হাত তুলে বলল, “আশ্চর্য,
আমাকে মাচায় নেও ।,
মাচায় বসে খইমালা পা ছুলিয়ে মন থেকে জলকাদ! ঝরাল। তারপর
বললঃ 'আশ্চর্ষ, আজ তু'ম পুথি পড় না?”
'ন1 বাছা, আজ বড় আন্ধার, আমার চোখ চলে না।,
“পথ না পড়লে তুমি মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার খাবে কী?
“খোদ। যা মাপায় দিদি।+
এতক্ষণে গোলাপী মুখ খুপল। সে চুপ করে বসেছিল, আলগোছে,
ছোয়া বাচিয়ে। লনাতন দীঘড় ও দানী মণ্ডল, এদের সাঙ্লিধ্যে বসে সে বড়
নজ্জ পাচ্ছিল। তার নাকে ফাদি নথ ও হাতে জশম। গোলাপী 'কড়ে
রাড়” অবস্থা থেকে খানিক পেটের দায়ে, খানিক অভ্যাসক্রমে বন্ুবন্্রভা
হয়েছিল, এখন যাদও সাধু সাউ* বাগমারীর লোনা ভেডির উৎকল দেশীর
মাছের ব্যাপারীর কৃপায় তার অন্ত কোনে! অভাব নেই, এবং অস্তের1! তাকে
[ধন্কার দিলেও নিজেকে সে পাপী মনে করে না* তবু, মাঝে মাঝে, নির্জনে,
সাধু সঙ্গিধানে, অথরা শ্মশান সামীপ্যে এলে তার মন কাতর হয়। *কত
ভগ জেতের ছেলের জাত খেয়োছ গা» এমন কি বামনী সেজে বাউটির
€লাভে বামুনের পোর জাত মেরেছি। ধর্মে কি নৈবে? মনে মনে সে
নিজের কাছেই জানতে চায় !
“দুটো কথা জানতে চ।ইব, এমন একটা মানুষ নেই, গোলাপী
নিজ্বেকেই বলে ও মাঝে মাঝে নিজের ছঃখে নিজেই কাদে। পাপজীবনের
ফলে দে কোথায় যাবে, ম্বর্গে না নরকে॥ অগ্িকুণ্ডে না যমদূতের] ভাঙশ মারতে
মারতে তার কোমশ শরীর কাটার ওপর দিয়ে হিচড়ে নিয়ে যাবে, এ কথা
বলে দেয় কে? এসব সৎ কথা একমাত্র তারাই বলতে পারে যাদের কোনো
ন্বার্থ নেই।""বেশ্ার ক।ছে বিনান্বার্থে কেউ আসে না।
সকলেই, দুষ্ট, শান্ত, গৃহী, বেনে, মুধী, রাজকর্মচারী, কসাই। কোম্পানির
ফিরি, সৎ, ক্রুর স্মেহশীণ* খল» সব রকম মান্থযই, বেশ্তার চৌকাঠ
€পরোলেই সব তুলে গিয়ে মজা লুটতে চায়। তারপর তারাই বেশ্ট।কে
€দাধারোপ করে। তাহলে গোলাপীকে ছুটে সৎ কথা৷ কে বলে দেবে?
এখন, এই নির্জন বর্ধার মধ্যান্থে, আশ্চর্য ফকিরের ছাউনিতে কিসের
আ।শ।য় এসেছিল গোলাপী কে বলবে ! কিন্ত দানী মোড়ল ও সনাতন দীঘড়ি,
“দেওয়ান! খইমালা ও ঠাকুরবটের কাহিনী খ১
এই ছুই জনের সামীপো বসে, ওপারে শ্শানে শায়িত মৃতদেহের অসহার
পড়ে থাকা দেখে দেখে তার ভেতরে অস্বস্তি হল। এর! সবাই চলে
যাক, তার আশ্চ্কে অনেক কথা বলবার আছে। কিন্তু, এর। সকলেই অন্তু
পৃথিবীর মান্ুষ। দানী মোড়ল স্বপ্নান্য নির্দেশ পেয়ে এক মুষ্টি চাল ও পাঁচটি
হ্পারীর বিনিময়ে পাগল সারায়। যুবতী শ্্রীলোককে লোহার বাল৷
পুড়িয়ে ছেকা দিতে সে এতটুকু দয়ামায়া অনুভব করে না। ওষুধ দেয়, যে
কারণে সংযমী । গোলাপীর মায়! তার উপর খাটে না।
সনাতন দীঘড়ি সাধারণের বাইরে, অন্য জগতের মানুষ । পথে কলু
ছেলের সহসা অর্থাগমে মদবৃদ্ধি হওয়া, দত্তিত চলাফেরা দেখে তিনি যখন
বলেন “কিসের দাপে ভূবন ক।পাঁও বাপ? চিলুতে যখন আমকাঠের তক্তার
শোবে, মুখে প্যাকাটি গুজে আগুনের তাতে দেহ ফুলে ফুলে ফাটবে তখন
এ দ্রাপ কারে দিয়ে যাবে? ।
তখনও যেমন, আবার “ম1 গো» দেখ যেয়ে বাবা আবার শ্মশানে লোটে
কেমন» গাইতে গাইতে যখন বাশদ্রোণীর পেছনের ভীষণ জঙ্গলের পথে চলে
যান তখনও তেমনিই বোঝ! যায়, এ বিশ্বনংসারে সনাতন বড় নিঃসঙ্গ । এমন
মানুষের ওপর গোলাপীর মায়া খাটে না।
আশ্চর্ঘ সংসারের বাইরে | এক জরাজীর্ণ দুঃখী বৃদ্ধ, মহীশৃরের নবাবের
'বেটাদের মসজিদের চত্বরে ও যে একদিন মরবে, এ ছাড়। তার ছিতীয়
ভবিষ্যৎ নেই।
আর মাচার নিচে গোলক, পাটনীর ছেলে। নিয়ত নদী ও জলের.
সান্নিধ্যে থাকে বলে তাঁর কিশোর চাহনি বড় নিষ্পাপ ও উদাস। বৃদ্ধ ফকির
আর দরিদ্র বালক, এরাও তার মোহিনী মায়ার আওতার বাইরে।
চারজন পুরুষ, চারজনের কেউই তার মায়ায় বশীভূত হবার নয়, এই
জন্যে গোলাপীর ভেতরে উশ্মা জমছিল, বেশ্টা৷ হ্বভাব মাথা নাড়া দিচ্ছিল।
এখন খইমালার নিষ্পাপ প্রশ্নঃ “পুথি না পড়লে তুমি থাবে কি?” শুনে
'সে ফোস করে উঠল।
'অআলে! অ'মার ফকিরসোয়াগী | গুধি পড়লে তোর কী রে? তুই
উয়াকে খেতে দিবি ? র
গোলাণীর কথ! শুনে খইমালা বড়ই সম্কৃচিত হল। কড়া কথা সে
কটিৎ শোনে । যখন শোনে, তখনই পালার | . এখন €স চুপ করে রূুইল।
৭২ মহাশ্বেত। দেবীর শ্রেষ্ঠ গ্লু
গোলাপী ভাবল এই'*****ছুখী বালিকা তাকে 1
করে।
“'গরবাব দিস না, বড় দাপ যে!?
গোলাপী» ও তোমায় কিছু বলেনি ।,
আশ্চর্য ফকীরের এই ভীরু, বিনীত মিনতি শুনে সহস। গোলাপীরা
কী মনে হল কেজানে। সে বলল, “আমি শুনব, তৃমি পুথি পড় ।,
এখন আশ্চর্য লজ্জ। পেল, 'আমার এ পুথি গোলাপী, এদের সামনে:
পড়তে পারি ন1। :
«কেন? দানী মণ্ডলের গলা অতি কর্কশ ।
“আজ ভাল পুথি নাই।»
“কেন?
“দীঘড়ি মহাশয়, ভাল পুথি জলে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমার
চোখ চলে না। এখন কে আমায় পুথটুকু নকল করে দেয় ?'
খইমালার বলতে ইচ্ছে হল লিখতে জানলে সে নকল করে দিত । কিন্তু
মুখ খুলতে ভয় হল।
“বিটি কম। চলেন দীঘড়ি ঠাকুর ।”
দনী মণ্ডল ছাত। খুলে ধরল ও মাচা থেকে সনাতন দীঘড়িকে পাশে নিয়ে
ইাটতে হাটতে চলে গেল।
“আশ্চর্য, পুথি পড়। গোলাপী এতক্ষণে পা মেলে বসল, “তোমায়,
দেব বলে ঘরে সিধা সাজিয়ে রেখেছি, এখন চল, আমার গোহালে বসে ভাত
ঝবধবে।,
ক্কৃতজ্ঞ আশ্চর্য পুথি খুলে ধরল ও পড়ল “কাহিনীর প্রথম প্রত্ত/বে নায়ক
দেওয়ানা ।॥
“দেওয়ান মানে কি?
“দেওয়ান! মানে পাগল।,
খইমাল! এ কথা শুনে বড়ই আশ্চর্য হল। সে আরে! কী জিজ্ঞেস করতে,
বাচ্ছিল কিন্তু গোলাপী বড়ই বিরক্ত হয়ে বলে উঠল, “এত কথ শুধাস কেন,
খইমালা1? ঘরেযানা| ঘরে গিয়ে দেখগা তোর মা! কতরাগ করে বসে
আছে।”
এতক্ষণে বালিকার মার কথ। মনে পড়ল। মা তাকে আনতে মান।
দেওয়ানা খইমাল1 ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৭৩
করেছিল। তারপর সত্বর যেতে বলেছিল, এহাটে বেদেন'র
ভয়।
দুরে কার! ডুগড়ুগি বাজায়। সুন্দরবনের সাপুড়িয়া অথব। কালিকা-
ক্ষেত্রের বাজীকর ॥। খইমাল। সাপের খেলা» বাদর নাচ দেখতে কত ভালবাসে,
কিন্তু এখন তার সহসা মনে হল এ নিশ্চর বেদেনীদের ডুগড়ুগি। বেদেনীরা
জাদু জানেঃ তারা একা, অসহায় খইমালার সন্ধান পেলে সত্বর আসবে। মা
বলে, এর বা”য়ের আগে বাতাসের মুখে ছুটতে জানে । মন্ত্রবলে পৃথিবী
ওদের বশ। আজ হাট পেয়াদ1 নেই, কে ঢোল-ডগর-শোহরৎ জানিয়ে
বলবে “ছেলের ম। সাবোধান |,
খইমালা৷ বলল, “আশ্চর্য, আমি যাই ।,
সে নেমে এসে ছুটতে লাগল। কাদায় পা চলে না। বৃষ্টির জুল এখনে!
কলকল শব্দে নাল। দিয়ে বয়ে যায়। এ জলে, খইমাল! জানে, পু*টি, ময়,
শোল মাছ ভাসে । সে-ও মাছ ধরতে পারে । তবে, মাছ ধরা ছোটলোকের
খেলা, ব্রাহ্মণের মেয়ে, হলে ব1 দুঃস্থ অনাথ, হতদরিদ্রঃ় কখনও মাছ ধরে না।
সময় থাকলে খইমাল। ছু" দণ্ড দাড়িরে মাছের খেলা দেখত।
সময় নেই, সময় কোথায়? এতক্ষণ মেঘে মেঘে বেল! চলে গিয়েছে।
সর্ষের ঈাড়াবার সময় নেই, এখন স্্য পশ্চিমে । সহসা» মেঘ ভেঙে আকাশের
কোণে কোণে গলগল করে লাল আলে! উছলে পড়ল। সন্ধ্যার সুর্ধের দৃষ্টি
ঘোলাটে, দেখগে ভয় হয়। মতি শেখের ঘোড়ার কথা খইম্বালার মনে পড়ল।
মতি শেখের ঘোড়1 গাড়িস্থদ্ধ খানায় পড়ে জখম হলে, আর বাচবে না জেনে,
মুচিরা এসে জীয়স্তে চামড়া টানবে জেনে, “ওবে» এমন নিদয় কাজ করতে
আমার কলজ। ফাট্টে যান বলে কাপতে কীার্দতে মতি শেখ মে ঘোড়াকে
জবাই করে|ছল। মানুষ তসজন্ক তাকে আজও নির্দয় বলে? কিন্তু পোষা
জীবের অমন কষ্ট কে দেখতে পারে? ঘোড়ার চোখের দৃষ্টি নির্ষেষে
ঘোলাটে হয়েছিল, গলার সফেন রক্ত অমন গলগলিয়ে চতুর্দিকে বয়ে
গিয়েছিল।
এখন আকাশে যেন গ্রহণের সন্ধ্যা । খইমালা তাড়াতাড়ি ছুটে চলল।
কিস্ত পেছনে কে আলে?
“মা গো! আতঙ্থরে বলে খইমাল। ছুটে যায়। নির্জন পথ। আবার
বিষ্টি নামে । থখইমালার পায়ে মল বান্ধে। আর কোনে শব্ধ নেই।
€.
৭৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গল্প
“খইমালা, ভয় কিসের ?"
গোলক নিমেষে তার পাঁশে এসে দাড়ায় । “কতরী, তুই এমন ছুটিস ?
তার ছুঙ্গনেই এখন ঠাকুরবটের তলে।
ঠাকুরবটের সামনে প্রশস্ত দিঘি। এ ঠাকুরদিঘির জলের এমনিতে
কৃলকিনার1 নেই। এখন ভর] বর্ষায়, দিঘির বুকে টেউ।
“কৈতরী, তুই ছুটলি কেন?”
«তোমার তাতে কি?" খইমালার রাগ হয়েছে।
'ব্বাপো রে! ফেস কেউটে যে।
«গোলক, গাল দিয়ে কথা বলে! ন1।"
গোলক গামছা! দিয়ে হাত মুখ মুছে বলল, “এই যে তোর কড়ি!
সি"ছুরবর্ণ সুন্দর কড়ি। আচলে বাধতে বাধতে খইমাল1 বলল, 'আর
দেয়নি ?"
না।,
«এধন সন্ধে । কড়ি নিয়ে গেলে আমাকে চাল দেবে কে?
গোলক হাসল। বলল, চাল দেবে কে! আশ্চর্যের কাছে পু'খি
শোনবার সময়ে মনে ছিল না?"
“তুই শুনিসনি ?"
শুনলাম তো কী হল। আমর! শরীর খাটিয়ে খাই, আমাদের ঘরে চাল
থাকে। যখন যাব পাস্তাভাত পাব । তোদের বামনাই যত, টৈস্ঘ তত,
এ কথা সত্যি। এখন হেট্টিংস সাহেব কোম্পানির লাট। ওদিকে,
কোথায় কলকাতায় শহর দিনে দিনে বড়ো হচ্ছে। তাই মান্য জন, আসা
ধাওয়া, কেনা বেচাঃ লেন দেন, কোনে! কিছু অন্ত নেই। ঘন ঘন মাহ্ষ এখন
এই গঙ্গা দিয়ে, বড়ো! গঙ্গ] বেয়ে ওদিকে যায়। পয়সা এখন গোলকদের হাতে ।
পাটনীর!] বামুনদের চেয়ে ভাল খায় পরে। দক্ষিণের লোনাবাদ। থেকে মাছ,
ডিম, হরিণের মাংস+ মধু» বাড়ি করবার গোলপাতা, নৌকোয় এরা বাইছে
আর বাইছে। শহরে সব দরকার হয়। সনাতন দীঘড়ি বলেন, এই: তীতি,
তামলী, পাটনীর1 কালে জু পায়ে হ!টবে, কিসের দাপে তুবন কীপাও
বাপ?
তবু$ গোলকেক কথায় খইমালার মনে কষ্ট ছলঃ ভ'তের কথায়। কতদিন
€সে গম ভাতে ক:ঠাপবীচি পোড়া খায় না।
€দ ওরানা খইমাল! ও ঠাকু বটের কাহিনী ৭৫.
গোলকের সেদিকে লক্ষ নেই।
“তুই শুনপি না কৈতরী, আমি আশ্চর্ধের পুথি আরো! শুনলাম ।”
খইমালা পায়ে পায়ে ঠাকুরবটের ঝুরি ধরে ধরে পথে নামল।
“প্রথমে দেওয়ানা, পরে মহান্থখ। তখন রাজপুত্র সোনার পাটে বসল ।»
“আর কী শুনলে?
'অ'র শুননি। গোলাপী মাসী আশ্চর্ধের কাছে ঘোমট। টেনে বসে কত
কথ, বলছে, আমাকে তাড়িয়ে দ্িল।”
“এবার আমি যাই ।,
এখন খইমালার আচলে কড়ি বাধা । মা যদ্দি তাকে মারতে কোনোমতে
মুড নাড়বার ছোটো খুঞ্চে ঝাঁটাখান1 তোলে, সে নিমেষে মার হাত চেপে ধরতে
পারে। বলতে পারে, 'মার কেন? আমার আঁচলে তোমার কড়ি আছে
মা! আমি কিখালি হাতে এসেছি ?'
এমনি সাতপ।চ ভাবতে ভাবতে খইমাল! বাড়িতে পৌছল।
কিন্ত কী আশ্্ষ। আঙ্গ তাদের ঘরে পিদিম, মার মুখে হাসি, পরনে
তোপা। কাপড়খানা, মাথায় কাপড়। আজ তাদের ঘরে অতিথি কুটুম্ব।
খইমালা ত্রস্ত হয়ে াড়াল।
“এই মেয়ে? বৃদ্ধের গল] কী ভীষণ, শুনলে বুকে চেশকর পাড় পড়ে
কেন?
“এই মেয়ে ।,
“সামনে আয়।,
“সামনে আয়। গুরুবাবাকে পেন্নাম করু।”
মায়ের গুরুবাবার চেহারা অতি ভয়ানক। ঘন কৃষ্ঃ রঙ। চুগগুলো শণের
হুড়ি, ঠোটে শ্বেতী । চকমকি ঠুকে তিনি তামাক ধরালেন, মুখ তুগলেন।
চোখের চাহনি বড় উজ্জল । এমন চোখ দেখলে অতি বড় দপাঁও খতমত খায়।
খইমালা সাষ্টাঙ্গে গ্রাম করলঃ যেন বলির পঞ্ড।
শুক্রবারই গুভদিন। লকালে মেরেকে উপোন করিয়ে রেখো । এ হ
বললাম, একখানা কোর! কাপড়, ক'টি এদ্োডালা, ভিঙ্গে-সিক্ষের বিষে
'বনতে আধি বাকি রাখিনি কিছু । : তবে হ্যা, পাঁচন্কনকে সাক্ষী রেখে দলিলটি,
দিতে হবে ।, |
পভ মহাশ্বেতা দেবীয় তেষ্ঠ গল্প
'বাঁবা, তুমি দেবতা, সব জানছ। দলিল করে দিলে জামাই আমায়
ঝট! মেরে তাড়াবে না তো?
“এ কথার অর্থ কী মেয়ে?”
গুরুবাব] ভীষণ তুদ্ধ হলেন। তীর মাথার দুগ্ধারে শণের নুড়ি নড়তে,
লাগপ।
“সে কি তোমার এই তিনখানা নারকেল গাছ” এই ছোনের ঘর আর;
জমিটুকুর পরোয়া করে? ঝা? সে দখল নিতে বাবে?
“দে|,ই বাবা!” খইমালার ম1 গলায় আচল দিল।
“সে আমার কাছে খণবদ্ধ। ভিটেয় পাক] ঘর তুলবে এই জন্য এবার বিয়ে
করতে বেরুচ্ছে । তার য] টাকার দরকার তা বোড়াল থেকেই পাবে । আমি
বলেছি, তাই তোমার মেয়েকে উদ্ধার করতে রাজি হয়েছে । আমাকে অবিশ্বাস,
কেমন? এই জন্তেই বলে ভিখিরির ভালো করতে নেই।,
“না বাবা গোঃ তুমি যা বলেছ তা৷ আমার দিকে চেয়ে। কিন্তু ও আমার
ছুধের মেয়ে, দুধ্ধাত এখনো! সব পড়েনি, ছ'বছুরে মেয়ে, তাই ভরাই। নইপে
যা বলছ তা তো! ভালে)?
“তাই ডরাই! কেন ভরাই?,
গুরুবাবার মুখ থেকে গালাগালি বেরুতে লীগল। মেয়ে জন্মাল যখন»
নকুড় অকালে মোল» তখন মুখে শুন দিয়ে মেরে ফেলনি কেন? মেয়ে
সোয়াগী ? আমার ছ'বছুরে মেয়েছেলেতে কী করে? সগ.গে সলতে দেয়?
ই”বছুরে গাই হলে দুধ দেয় ঘোড়া হলে গাড়ি টানে। মেয়েতে কী করে?'
এখন, খইম্ালার ম1 দেখল, গুরুবাবাটি বিরূপ হলে তার সকল দিক যায়।
মেয়েছেলের ম৷ হয়েছে, সেই মেয়েকে বড় করেছে। এ পৃথিবীতে সে
যহাপাপী । এখন পথের বেউ-বেঙানী লাখি মারলে সইতে হবে, মেয়ের মা,
হওয়ার মতো মহাপাপ এ সংসারে নেই'। ৃ
তাই সে বাবা গো 1 বলে গুরুবাবার পা চেপে ধরল । ঘরের মেঝের
একটি জায়গায় গজাল পোতা, শ্বামী নকুড়দাস মরলে প্রতিবেশীর] পু'তেছিল ॥
লেটির ওপর মাথ। £কে, রক্ত বের করে সে ডুকরে কেঁদে বলল, “তুমি বিরূপ.
হলে আমি মাথ। ছেঁচে আপগ্তঘাতী হব গো !,
খইমালার মার চোখের জলে পা ছুখানি ভিজলে তবে গুরুবাবা সন্ত
ক্লেন।
ওয়ান! খইমাল] ও ঠাকুরবটের কাছিনী নি
নকুড়দাসের বিধবা উনোন ধরাতে গেল। গুরুবাবাটি ক্রোধী হলেও সেবা
করেন বিস্তর । মেয়েকে বলল, তুই কাপড় ছেড়ে জল চাপা, অ:মি দেখি কী
জ্বোগাড় করতে পারি।?
এই গুরুবাবার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক অতি বিচিত্র।
ইনি মায়ের গুরুও বটেন, জন্মদাতা পিতাঁও বটেন। দ্বিতীয় শ্ীর
বিয়োগের পর তার বড়ই চিত্তবিকার হয়েছিল। তখনই গিয়ে সন্নেসী ধরে
ছিলেন ও চেলা হতে চেষ্টা করেছিলেন । সন্ধ্যাসী যখন প্রয়াগে কল্পবাস করবেন
বলে রওন। হচ্ছেন তখন কেঁদে বলেছিলেন, “বাবা গো, আমার আর সংসারে
ঢুকতে ইচ্ছে যাচ্ছে ন। আমি আর ও গোয়ালে ঢুকব ন1।”
সন্নাসী স্বল্নধিনেই ওর সংসারে ঘোর আসক্তির পরিচয় পেয়েছিলেন ।
ৰলেছিলেন, সন্ন্যাসী হতে হবে না সংসারে সকলকে যন্তর দে।”
“আমি মন্তর দিলে ওর] নেবে কেন |,
“নেবে, নেবে । আঙ্গকাল ত সত্যযুগ নেই রে বাপ, যে সাধু-সন্নেসী
হাওয়া খেয়ে থাকবে? এখন সন্নেসী সাধু ধরে মন্তর নিতে খেলে গেরত্যের
ক্গেয়াদা খরচ । অথঠ গুকুমন্তরটি না নিলে চলে না, উটি অবশ্ত কাঙ্জ। তাই
বলি, তুই শিজের মেয়েদের মন্তর দিয়ে কাজ শুরু কর্ু। ক্রমে সবাই তোকে
মাপবে। তবে হ্যা এরপর থেকে আর সংসারের আঠা তেমন করে গায়ে
মাখবি ন|। মেয়ে হোক নাতি হোকঃ কেউ যেন বাঁপ বলে, দাদু বলে
নাড।কে। ঞ
পূর্বপ্রেমের সম্পর্ক গুরুবাবা! এমন করে তুলে দিলেন যে এখন মেয়েদের
কাছে গিয়ে তাদের সংসারজালায় দপ্ধাতে দেখলেও কখনো “আহা” কথাটি
অপব্যয় করেন না। বরঞ্চ বুকে হাত এঁকে বলেন, “এ কবুতর কা কণিজা
নয় হে, পাষাণে বুক বেঁধে তবে গেরুয়া ধরেছি। এইত তারাআমার
'মেজমেঘ়ের বুক থেকে হাসতে হাসতে মর! ছেলে নিয়ে দাহ করতে দিলাম।
সামান্তে কাতর হলে কি আমার চলে?
এখন, খইমালার ম] বাম্নার জোগাড়ে যায় দেখে তিনি চিৎকার করে.
বললেন, 'অল্ল আমি সেবা করি ন1। মিষ্টান্ন আর ভুধ হলেই চলবে ।'
এই বর্ষার ছুর্ধোগ রাতে, রোগনীর্ণ শরীয়ে হতভাগিনী, পরাঙ্গ পালি
বিধবা ছুধ মিষ্টান্ন কোথায় পাবে তা ভেবে তার মন কিছুম!ত বিচলিত হলনা ।
ছুধেষ্ব বালিকা খইমালাকে অকূলে তানাতে এসেছেন বলে তীষ মনে
০৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
এতটুক্ দয়া হল না। তার সন্ন্যাসধর্ষে তবে কি দয়! নেই, মায়া নেই? শুধু
রুক্ষ, ভয়াল উদাসীনতা ?
বর্ষার ভয়ঙ্কর রাতে ছুঃখিনী শকুড়দাসের বিধবা “জোগাড় করে আনি”
বলে ঘর থেকে জাক করে বেরুল বটে, কিন্তু পথে দাড়িয়ে নিমেষে বুঝল সে
কত নিরুপায় ।
আকাশের মুখে মেঘের ঝাঁপ। এ মেঘ সব অলৌকিক, অশরীরী প্রাণীর
মতে ভয়ানক আকার ধারণ করে ধেয়ে যাচ্ছে । কোতোয়ালি ম'হুত যেমন।
করে হাতির মাথায় ভাঙশ মারে তেমনি ভীমবেগে মারতে মারতে পুবে
বাতাস মেঘশনীর অতিকায় জন্তদের কোথায় যেন তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে ।
মাঝে মাঝে বিস্্যুতের নীরব ও ভয়ঙ্কর হাসিতে পথঘ(ট উদ্্ভামিত।
এমন রাতে আকাশের মুখে মেঘের ঝাঁপ। ঘরে ঘরে দরজা বন্ধ।
বৈষবঘাট অতি বধিষু পল্লী, কিন্তু দুর্যোগের রাতে দরজা! খুলে বাঁখে কে?
ওদিকে হাটতলার কাছে কিছু দৌঁকানপ।ট আছে বটে, কিস্তু সুন্দরবনের
বেদেনী, কালিকাক্ষেত্রের তীর্ঘযাত্রীদের ধনসম্পদর লুক ম্ঙগী যাঁাবররা এমন:
সময়ে মদ খেয়ে বড়ই হল্লা করে ও “আমর! কোম্পানির কুটুম। কোম্পানি,
মালের পয়স৷ দিবেক।* বলে দোকান থেকে মাল লুটে লোফালুফি করে।
সেই ভয়ে দোকানির! সত্বর ঝাপ টানে ও নেহাৎ শ্বশানযাত্রীরা এসে।
যখন ঝাঁপ ঠেলাঠেলি করে, তখন খোলে | রাতেবিবেতে শ্রশান-যাত্রীর'
মড়া পোড়ানোর কাজকে ছেঁড়া! ঝামেল। মনে করে ও থানিক প্রেতভয়ে»
খানিক বিরক্তি চাপবার জন্যে ঘন ঘন গাঁজায় দম মারে। তারপর তার
কাণ্ডাকাগ্ুজ্ান-রহিত হয় ও দোকানিদের ঝাপ ঠেলে বলে, শীগগির
জল্পান দাও । তামাক চকমকি দাও) নইলে তোমার ঝণপে আগুন দিয়ে,
€ তামায় বেগুনপোড়া করব ।
সেই ভয়ে দোফানির] তাদের ঝশাপ খোলে। আজ শ্াশানযাআী নেই»
খ্শানে পুবালি বাতাসে তীব্র হাহাকারে মড়ার মাথ! নিয়ে বাতাস গেওুয়া
খেলে, কোন্ দোকানি এখন নকুড়দাসের বিধবার জন্তে ঝাঁপ খুলে বসে
'ধাকবে? |
দেওয়ান খইমাল! ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৭৯
কিন্ত শীত আহার নিয়ে যেতে না পারলে গ্ররুবাব৷ অভিশাপ দেবে,
খইমালার মা এতক্ষণে বুঝল সে যদি কোনো প্রত্যাশায় পথে বার হয়ে থাকে,
সে প্রত্যাশা পুরণ অসস্ভব। দেবের দানবের সাধ্য নয়। এ ঘোর কলিকাল ॥
কলিদেবতার যুগ, কোম্পানির বড় রবব্রবা। এ যুগে হেস্টিংস কোম্পানির
লাট, বিলেত থেকে ময়দানব এসে অট্টালিকা তৈরি করছে। এ যুগে দেবতাদের
শক্তি খব ৷
দেবতাদের শক্তি নেই, মাহযের মনে দয়ামায়। নেই, ঘোর কলি, তার
ওপরে বর্ষার দাপ বড় বেশি। খইমালার মা,» আপন] থেকেই বুঝল, বিপদে
তার পাশে কেউ নেই। সে একলা । নিজেকে একল1 জেনে ষে ভীমবলে
অবস্থার সঙ্গে যুববে তার সে শক্তি কোথায়? সে অনাথা» বিধবা» তাত
খইম।ল1] তার এক সন্তান, তাই দেহ টসকায়নি। দেও আর এক ভয়॥
“মেয়ে কোথায় থাকবে মনে করে তখন অস্থির হলেম, এখন দেখছি দেহথান।
চিতায় দিলেই ভাল করতেম”*-সে বিড় বিড় কবে বলল, “ও মা গে!»
আর্তনাদে সহস|! চমকাল। অদূরে চলমান মৃত্তি তাঁকে দেখে হাত তোলে
কেন?
খইমাণার মার কপালে ঢেল1! লাগল। “ও মা, মলেম [ বলে ছুঃখিনী
মাটিতে ববল। আর তারজ্ঞান নেই।
“এ কে, খইমালার মা? হা! ভগবান, নারীরক্ত ফেললাম! সনাতন
দীঘড়ি দুঃখিনীর হাত ধরে তুললেন ।
“বাছা! আমি তুমি বলে বুঝতে পারিনি আমি ভেবেছিলাম ।,
“জানি বাবা; অপদেবতা ছাড়া কে এমন ছুর্যোগে পথে বেরোবে?
আপনার কোনে! দোষ নেই।,
£এ মাঠে অপদেবতার ভয় বিস্তর, মাছুষও যে অপদেবতার চেয়ে সময়ে
মন্দ হয়। সে যাক্গে। এমন সময়ে তুমি পথে কেন বল!?
খইমালার মা ধীরে দব বলল।
“এমন বাতে তোমাকে ছুধ-মিষায়ের সন্ধানে পাঠায় সে কেমন গুরু, আ্যা?
বশ হাতে অঙ্গ তুলে নিজ্বের পেট ভরায় তুষ্টপদর সে শ্বভাব গেল নাঃ
দেখছি সা!”
খইমালার মা নিক্ষতর |
'তুষ্ট'পদ গুরু হয়েছে। সে আবার বিয়ে দেবে, কেমন? কেমন বিষ্বে
৮০ মহাশ্বেত। দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
হবে তা জানতেই পারছি। যাকগে, চল, দেখি তোমার গুরুসেবার কিছু
করতে পারি কিনা ।”
ঠাকুর পাটবাড়িতে নিত্য সন্দেশ বাতাদের শীতল হয়। এখন সনাতন
দীঘড়ি সেইখানে গেলেন।
ঠাকুর পাটবাড়ি ত্দেরই | তিনি যদিও সন্গযাসীর মতো থাকেন মন্দিরের
আয়ব্যয়ের খোজ নেন না, তবু সেবাইত, চাকর সবাই জানে তিনি একজন
মাপিক। মন্দিরে তিনি কদাচিৎ আসেন ॥ বলেন, “যেদিন থেকে দেখলাম
সেজকত্া ভোগের আতপ চাল শ্বশুরালয় পাঠাচ্ছেন। আর ঘরখোবাকির,
মোটা আতপ ঠাকুরভোগে দিচ্ছেন সেদিনই বুঝলাম এবার দীঘড়ি বাড়ির
সত্বর উন্নতি ঠেকায় কে! এ ঘোর কলিতে উন্নতি করতে হলে প্রথমে
ঠাকুরকে বঞ্চিত করবে, উনি পেতলের পুতুল মাত্র। তারপর অতিথি
কাঙাল, বুড়ো মা, আশ্রিত পরিজন, তাহলেই ক্রমে লাটের মুন্সী হবে।,
এখন শোন যায় সেদিন থেকেই তিনি সেজদাদার সঙ্গে কথাবার্তী কমই
বলেন। নিত্য সকালে একবার করে মার পাদোদক খেতে অন্দরে যেতেন,
কিন্তু যেদিন থেকে দেখলেন মায়ের পায়ের আঙুলে হাজা-ঘা, সেদিন বললেন,
“মা গে! আমার মনে প্রবৃত্তি হচ্ছে না, আর আমি পাঁদোদক খাব না মা, আমি
তোমার অধম ছেলে ।?
শোনী মায় সেই থেকে তার মা মনস্তাপে কারদদেন ও বলেন, 'ওকে ওর
বাপ, দাদা, ভাই, কেউ বোঝে না। বউটা হতভাগী, কাছে ঘেষে না।
আমি এক। ওকে লয়ে থাকতাম, কিস্তু পেটের সন্তান কী ভাষায় কথা বলে
তা আমিও বুঝি নামা],
এখন সনাতন দীঘড়ি ঝটিতি খইমালার মাকে নিয়ে ঠাকুর পাটবাড়িতে
এলেন ও শেকল নেড়ে বললেন, “বীডুজ্জ। দরজা! খোলে। |?
“কে, নকর্তা ?
বাড়ুজ্ছে-পুরোহিত দরজা খুলে দিলেন ও সনাতনকে দেখে তার শুখ
শুকনো হল। সনাতনকে তিনি বড়োই ডরান, কেননা আকাচা কাপড়ে
ফুস তুলেছিলেন বলে একদিন সনাতন তাঁকে খড়ম ছুড়ে মেয়েছিলেন।
এখন তাঁর মনে হুল নিশ্চর কোনে দোষ হয়েছে তাই এই রাতে সনাতন তাঁকে
শাস্তি দ্রিতে এসেছেন। পুরোহিত মনে করেন সনাত্তন নিশ্চঘর অলৌকিক
মন্ত্র জানেন, নইলে এমন নির্ভয়ে বনে প্রান্তরে কোন্ সাহসে ফেড়ান?
ধদেওয়ান| খইমাঁল! ও ঠাকুরষটের কাহিনী ৮১
'আজকের সাদ্ধ্য শীতলের_ফগমিষ্টান্ন কোথায়?
আজ্ঞা 1
সনাতনের প্রশ্ন শুনে পুরোহিতের মুখ ই! হলঃ ক্রমে আলজিভ দেখা গেল।
এমন দুর্যোগের রাতে ফল-মিষ্টাঙ্গের খোজ কেন? তিনি চকিতে ঘাড় উলটে
দেওয়ালের দিকে চাইলেন, শ্বগত ভাবলেন, '্বপো রেঃ ছেঁয়া না পড়লে
জানব অপদেবত11, কেননা এ মন্দির বিশাল বাগানের বুকে অদূরে বাঁশবন,
সমুদ্রতীর হতে প্রবাহিত ঝড়ে ও ঘূর্িবাত্যায় বাশে বাশে ঘষে অতি ভীষণ
শ্ীৎকারের শব ওঠে, তার ওপর বীডুজ্ছে জরে তৃগে ভুগে ছূর্বলমন্তিষ্ক। তার
মন সকল প্রকার সংস্কারের আড়ত।
£ফল-মিষ্টান্ন চাই? দুধ চাই |,
আজ্ঞা ।,
বাড়ুজ্ছে প্রায় কাপতে কাপতে পেতলের গামল! বের করলেন। সন্ধ্যার
শীতলের ফলমিষ্টাক্ন মন্দিরেই বেঁটে দেবার কথা। কিন্তু বাঁডুজ্ছে রোজ অতি
ভক্তিভরে “গোবিন্দো গোবিন্দো” বলে গান করতে করতে বাতাসা ও
সুড়কি মাত্র ভিথিরি, কাঙাণি+ গ্রামবাসীদের বেটে দেন। তীর! তিনজন
সেবায়েত, চাকর, মিলে ভালে। ভালো ফলমিষ্টান্ন বেটে নেন। আজ; যেন
ভগবান তাঁকে বাচাবেন বলেই ঘরে এ গামল। নিয়ে আসবার হ্ববুদ্ধি
দিয়েছিলেন।
*আজ্ঞ।, এখানে বসে কি খাবেন? সহস1 পুরোহিত এ প্রপ্ন করে
বসলেন । মতিভ্রম। মনে যে আশাটি ছিলঃ তার! প্রত্যহ যে কারবার করেন
তা ন'কর্তা ধরতে পারেননি । সনাতনের জবাব শুনে তা ধৃলিসাৎ হল, তিনি
প্রমাদ গণলেন।
“তাতে তোমার দরকার কি হে স্থমুদ্দি? সনাতন হঙ্কার দিয়ে বললেন,
“নিছে বারো মাস খাচ্ছ আর পেটের ব্যাধিতে ভুগে বাশবন অপবিত্র
করছ। ঠাকুরকে আত্তাকুড়ে রেখেছ। আমার কাছে কৈফিয্ৎ চাচ্ছ
কেন, তা 1
'নঃ কর্তা! পুরোহিত কাপতে জাগলেন।
“তোমার মতো! আর এক পিশাচের ভোগের জন্তে লয়ে যাচ্ছি ।
পুরোহিতের দরজার লাথি মেরে সনাতন গামল! হাতে বেরুলেন।
খইমালার মা অদূরে আড়ালে দাড়িয়ে নব দেখতে দেখতে এতক্ষণ
৮২ মহাশ্বেতা! দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প;
কাপছিল, এখন সে পায়ে পায়ে সনাতন দরীঘড়ির পেছন প্ছেন এগোতে,
থাকে।
“চল, আমি লয়ে যাই। এবাসনের ভার আছে।,
যেতে যেতে সনাতন দীঘড়ি কী মনে করে বললেন, “তুষ্ট রাম খহমালারঃ
কার্ধ কোথায় স্থির করেছে? সে পাত্র কোথায় কা” করতে আসবে ?,
“বোড়ালে আসবে বাবা । রামরাম চক্রবতীর বাড়ি।”
“ও, বুঝেছি ।
বাবা, আপনি পাত্রকে চেনেন ?'
থইমালার মা, যদিও হীন-দীন, এবং অবস্থা তার আয়ত্তে নয়, সেই
অবস্থায় জাতে দাস; পাত্র অতি মন্দ হলেও সে বিয়ে দিতে বাধ্য;
তার গত্যস্তর নেই, তবু এখন কৌতুহলে উদ্দীপ্ত হল। কার হাতে যেরে
দিচ্ছি, এ ভাবনাটি তার মনে সত্ব এল। রোগের জাল। দারিব্র্যের লাঞ্ছনা»
এ সংস।রে তার অবস্থা বপির উদ্দেশ্তে পালা পাঁঠার ৫থকে কিছুমাত্র ভিন্ন নয়।,
তবু, কৌতুহল সম্ভবত রক্তে রক্তে থাকে, অস্ভিমেও যায় না। বণির পণ্ড যেমন
কৌতুহুলে যুপকাঠের আশপাশের কোদ্লানে মাটি শোকে ও বুঝতে চেষ্টা
করে কোথায় যাচ্ছি, খইমালার মাও তেমনই কৌতৃহলে জানতে চাইল
পাত্রকে সনাতন চেনেন কিনা । এ কৌতুহল যেমন করুণ অন্যদিকে তেমনই
হাস্তকর। খইমালার মার গশ্ন শুনে সনাতন দীঘড়ি ছুঃখ পেলেন ।'
এ পৃথিবীতে কোনে! কোনো জিনিস, যেমন মানুষের সহজাত অনুভূতি, প্রবৃত্তি,
কৌতুহল দেখতে জানলে দেখা যাস ত1 একধারে বুকফ|টা কান?
জাগায়, অন্য 'দ্কে অনান্য আনে।
. স্থ্যা গো+ আমি তাকে বিপক্ষণ চিনি ।'
“বাবা» পাত্রটি কেমন, আমার এ একটি গুড়ো
“আর এক পিশাচ।'
খইমালার মা নীরব। কৌতৃহলটি যেমন চকিতে জেগেছিল তেমনই
ত্বরিতে নিভে গেল। তার ঘর এজ্দুরে দেখ! যায়। বিদ্যুৎ চমকে গলিত,
হোগলার ছাউনি, পচা! খড় খোচা খোচা বাশের আড়া চোখে পড়ল। এমন
ঘর দেখলে শির়ালও মৃত্র ত্যাগ ক:ঙে আসে না, ঘেন্না! করে, তা আমার
ঘবরটি .যেঘন, জামাইভাগ্য তা হতে আর কী ভালে হবে, হুঃখিন
ভাবল ।
দেওয়ানী খইমাল1 ঠাকুরবটের কাহিনী ৮৩
সনাতন দীঘড়ি সংদাবী মানুষের ছুঃখকষ্ট বুঝবেন না বলে বহুদিন ধরে
পাষাণে বুক বেঁধেছেন। ক্রমে উদাসীন হয়েছেন। তীর কথায় খইমালাক
মার বুকে ব্যথ! লাগল কিনা» সেটি খেয়াল করলেন না। প্ররুতপক্ষে তার
হ্বদয় করুণ!শূন্য নয় কিন্তু খেয়াল কম উদাসীন, আপন ভাবের ঘোরে উদ তব»
যেন ঝড়ের মুখে ছেলেদের তালপত্র বাশী, কখনো বাতাসে ওড়ে, কথনে।
মাটিতে লোটে।
এ গামলাটি নাও ।,
গামল1 হাতে নিয়ে খইমালার ম! দেখল সনাতন চলে যাচ্ছেন । সহ্স! মনে:
হল সে বড়ে! অসহায়। এ সংসারে তাকে দেখবার একমাত্র লোক এ চলে
বাচ্ছেন। উনি তার বিপদে ফল মিষ্টাল্লের গালা বয়ে আনলেন | ঘরে
প্রবেশ করে এখন তার নিজের পিতা» জক্মদ্রাতাকেও হ্বীন মনে হতে
লাগল । মনে দ্বণা এল, নীরবে গামলা নামিয়ে রেখে সে কাপড় ছাড়তে
গেল।
. খইমালা রান্নাঘরে ঘুমে অচেতন | খইমালার মা এখন বুঝল তার অঙ্গে
অঙ্গে ক্লান্তি। তাছাড়াম'থ। দপ দপ করছে। পাতে ৫%ধাতে বান্টি হুচ্ছে,.
বুঝি আবার জর আসে।
কাপতে কাপতে গিয়ে সে গুরুবাবার হাত মুখ ধোওয়ার দ্ধল নাধল ও
অন্য দিকে চেয়ে ভাবল খইমালার জন্যে উনি শ্ব-বিবেচনায় কিছু রাখবেন না।
এমন ফল-মিষ্টি তার খইমাঁল! জীবনেও খায় না। কিস্তু ওকে বলতে দ্বনা হল ।
জরের তাপে মাথায় অদস্ভব সব কল্পনা, পিদীমের সামনে বাছুলে পৌকা যেমন
তেমনই চক্রাকারে উড়তে শুরু করল। আজ সনাতন দিয়েছেন, কালও নেন
তিনিই খইমালাকে দেবেন। ভারে ভারে মিষ্টা্স, আরে] কত কী, তার অপার-
দয়া।
সে মেয়ের কাছে গেল ও দরজায় শেকল টেনে শুতে গিয়ে ভাবল যদি এই
রাঁতে মরে যাই, ত1 হলে অশৌচের অবস্থায় কেউ খইমালাকে বিয়ে করে ন*».
কিন্ত ভগবান কি সদয় হয়ে এমন বাতে মরণ পাঠাবেন, গরিবের কি পুণ্যফন,
থাকে, যে ইচ্ছাম্বতুয হবে? তা হলে ত সকলেই, কানা, খোড়।, আতুব, মরে
রেহাই পেত।
বাইরে আবার বৃষ, বাতাসের তর্জন। খইমালার মা মেষের কাছে গিয়ে
তাকে কোলের কাছে টেনে খুমোতে চেষ্টা করল | ছুঃখের রাত সত্ব কাটে
৮৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
না, সেই জনোই বোধ হয় তার নিদ্রা চমকে দিয়ে মাঝে মাঝে শেয়াল কাদতে
লাগল ॥ এমন রাতে আশ্রয়ছার। হয়ে সকল প্রাণীই কাদে।
ঙ
সেই যে বাদল শুরু হুল, পরদিন তার বিরাম নেই, তার পরদিনও না। প্রমাদ
গনে গঙ্গ! থেকে মাঝিরা নৌকে। সরিয়ে নিয়ে বাশস্রোণীর ঘাটে বেঁধে রাখল।
*বান্ধা নাও দেখি মোচার থোলার মত আছাড়ি পিছাড়ি করে, অয?
গোলকের বাবা ঈশ্বর পাটনীর বন্ধু করাইতি আবিদ মিঞা অবাক হয়ে বলল।
আবিদ মিঞা করাইতি, সে কাঠের তক্তা চেরাই করে বিক্রি করে তাই
নৌকোর মাঝি-মাল্লার সঙ্গে আদান-প্রদান বেশি । তা! ছাড়া স্থন্দরবনের গরান
কাঠের চালান আনতে যায় বলে, সমুদ্র দিয়ে খুপনা, বরিশাল, দিকে দিকে
চলাফের1 করে । তার কথার টানে বোঝ! যায় সে নান। নদীতে নৌকো
বেয়েছে।
এ ঘোর বর্ষায় মানুষের ঘরে ঘরে খর বান। উনোনে জল, বোডালঃ
বশপ্রোণী, জগদ্দল, বৈষ্ণবঘাটা, গড়িয়া, গ্রামে গ্রামে মাহুষের কষ্টের অবধি রইল
না। ঠাকুরদিঘির জল কল কল শব্ধ পাড় ছাপিয়ে বেয়ে চলল | শুধু ছোটো
ছেলের। আমোদ করে, “কই যায় মাগুর যায় খলসে বলেন আমিও যাই» বলে
মাছ ধরতে লাগল ।
মাছ ধরলে কী হবে, রেধে দেন মা-দের উনোনে এমন আগুন নেই।
যেসব বউরা রাপের বাড়ির দিকে সর্বদ। হেলে থাক, তার] ঘোমটার আড়ালে
বলতে লাগল, «এমন দিনে বাপের বাড়ি থাকলে চালছোল। ভেজে খেতাম, কই
মাছের তপ্ত ঝোল হত।* €ৌ-কাটকী শাশুড়ী ননদ বললেন, “মা মাগীর কাছ
থেকে আগুন নিয়ে সো! বাছা, আমরাও তপ্ত ঝোল রশাধতে জানি ।,
এমন বর্ষায় নতুন প্রস্থতির আ তুড়ঘর, মরপাপনন রোগীর ঘরের মালসা, আর
শবপানের চিতা ভিন্ন কোথাও আগুন দ্বেখ!] গেল না । বালি চালভাজা চিড়েমুড়ি
'খেয়ে খেয়ে লোকের ব্যামে৷ ধরে গেল | কবিরাঙ্গ বাসায় নাইতে খেতে সময়
পান নাঃ শুধু এ-বাড়ি ও-বাড়ি যান। যে সব বুড়ি গিষ্টি, প্রবীণা দাসী বা বুনো
'জাতের মেয়েছেলে টোটক। ওষুধ জানেন তাদের কাছে অনবরত মানুষ ধরুন)
দিতে থাকল। তা ছাড়াও, কতজনের ঘর পড়ে গেল।
দেওয়ান! খইমাল। ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৮৫
প্রথমে বর্ষ! দেখে চাষীর! “আর যেযা বলে বলুক, এবার আউশ আমন
জেয়াদা ফলন হবে । মুনিবমশায় গো, বউয়ের কাকালে রুপোর গোট চাই+,
বলে আনন্দ করেছিল। কিন্তু অতিবৃ্টিতে ধানেন্ব সর্বনাশ হল আখ, তিসি,
সরষে, মসনে, সবই যায় যায় দেখে তার। হাহাকার করতে লাগল।
অবস্থা দেখে সবাই গ্রমাদ্দ গনলেন। বড়শের সাবর্ণ চৌধুরী, ওদিকে
গোবিন্দরাম মিত্তির, ধাদের দয়াবান বলে নাম আছে তার! ভাবতে লাগলেন
আবার কি অন্নসত্ত্র খুলে দিতে হবে? এখন তাদের অবস্থা তেমন নেই,
প্রকুতপক্ষে পয়সা কোম্পানির হাতে, কিন্তু গ্রজাদের সেকথা বোঝানো বড়ে!
কঠিন, তার! তাদেরই বটগাছের ছায়া বলে এতদিন জেনে এসেছে। ক্রমে»
কিছু কিছু হেলে! চাষী, যার ফসলের স্থদিনেও উপোস থাকে, তাব্া! এসে
কাঞ্চিকাক্ষেত্রে মন্দিরের চারপাশে ভিড় করতে লাগল। ভিথিরির সংখ্য
বাড়ল।
এরই মধ্যে, ঘোর বর্ষণে, শুক্রবার খইমালার বিয়ে হয়ে গেল। তাকে
উদ্ধার করে নীলমণি ঘোষাল লাঠি ঠুকে দেখলেন বাড়ির ভিত পোক্ত কিন।।
জিজ্ঞে করলেন নারকেল গাছে ফলন কেমন, তারপর ডুলি চেপে রওনা হয়ে
গেলেন। নীলমণি ঘোষালের বয়স শনেক। শরীরে লোভ ছাড়া অন্য
জনিম নেই ।
বর্ষ! থেমে যাবার পরও ঘোর অজন্মা হল। দক্ষিণাঞ্চলে বড়োই হাহাকার ।
বৈষ্বঘাটা, গড়িয়া» এখানে গৃহস্থদের জমির উপরেই নির্ভর। কিন্তু ফসলের
দুরবস্থা! দেখে সংসার চালাবার ভাবনায় কর্তাদের মাথায় চুল রইল না। ধাদের
মেয়েদের এই নতুন বিয়ের বছর» বছরে আটটি দশটি তত্ব করতে হয়ঃ তীর
নাপতেনী পাঠিয়ে বেয়ানদের কাছে এবারকার মত মাপ চাইতে লাগলেন ॥
যে বেয়ানর1 সমছুঃখে দুখী, তারা বললেন, 'জানি বাছা, এ বছর না পারলে
কিছু বলবার নেই ।* ধার] নির্ধায়া, তার! হ্বিতদ্থি করতে লাগলেন ।
সঝলেই যেযার ভাগ্য নিয়ে ব্যত্ত, খইমালার বিয়ের কথাতে কেউ আমল,
দিলেন না । যে সব মুড়িবেচনী, ধানভানারী, চালভাননীর সঙ্গে খইমালার,
মায়ের লেনদেনঃ তার) শুধু বললে, «এ যে ওঠ চুড়ি তোর বিষয়ে সে-রকম,
হল গা।' ?
খইমাল! বিয়ের কিছুই বুঝল না । শুধু মেটে পিঁছুর আর লাল কুলি পরে
তার আমোদ হল। আর একটি উন্নতি । এখন একাদশীর দিন মা চুনন্লি বাড়ি
৮৬ মহাশ্বেতা দেবীর শেঠ গল্প
থেকে তাকে মাছ এনে বেধে দেয়। চুনরির1 বিল ঠেঁচে বিশ্বক এনে ছন
পোড়ায়। তাদের বাড়ির সবাই বিল থেকে মাছ ধরতে ওত্ত'দ। বোধ হয়
€ইসেলের ধেড়ালটাও পারলে মাছ ধরে আনে । এ মাঁছের জন্তে তারা কিছু
নিল না। বামুনের সধব। মেয়েকে একাদশীতে মাছ খ।ওয়ালে তাদের পুণ্য হয়।
'াছাড়া ছুংখিনীর মেয়ে খইম!লাকে হ্ন্দর মুখের গুণে সবাই ন্মেহ করে।
এইভাবে আরে! অনেক দিন গেল |
থইমালা এখন কিশোরী । পনেরে! বছরে তার রূপ এখনো বালিকায়
মতো। আঁধপেটা খায় বলে শরীর একছারণ, মাথার চুলে তেল পড়ে না, তা
স্ছাড়। সর্বদা মেটে সিহুব, লালরুলি জোটে না । তাই খইমালা কপাল থেকে
চুল উলটে সিঁথি ঢেকে খোপা বাধে । হাতে লাল স্থতো বেঁধে রাখে।
শৈশবে সে একলা ছিল, এখনও একলা। তার মার রোগের শেষ নেই,
পরিশ্রমের শেষ নেই, আমুরও বুঝি শেষ নেইঃ এত কষ্ট, তবু সে আজও
মবেনি |
আজও খইমাল1 তৃবনমাসীর কাছে খইমুড়ি বোগ!ন দেয় । আজও গোলক
'তার জন্ভে কড়ি আনে। বালক বয়সে যদ্দিব গোলক মনের ভাব বুঝত না,
কিন্তু যৌবনে পা দিতে সে এমন হল, যে “কৈতরী” ছাড়া তার চোখে কিছু
রইল না।
গোলক পাটনীর ছেলে । ঈশ্বর পাটনী বুড়ো হয়েছে । গোলক এখনও
গঙ্গায় খেয়! দেয় মানুষকে এদিক-ওদিকে নিয়ে যায়। পাটনীর কাজই এমন,
বিশেষ করে গোলকের মত মাল বওয়। পাটনীর কাজ, যে.অনেক সময়েই তাকে
"একলা থাকতে হুয়। একেবারে একা, গড়িয়া থেকে এদিকে কালিকাক্ষেত্র,
€নৌকোয় খড় থাকে, কাঠের তক্তা» স্থুপুরিঃ চিটেগুড়, পান, তামাকঃ মাটির
বাসন, রকম রকম পণ্য ।
গড়িয়াতে যে হাট বসে তার জ'।ক ক্রমে বেড়ে উঠছে। এখানে একদ।
অহাগ্রতূ অথযা তার পার্যদর] ঠাকুরবটের ছায়ায় বসেছিলেন, সেটি স্মরণে রথের
সময়ে বৃক্ষরোপণ, গাছের পুজে। হয় ও নানারকম গাছ আমদানি হয়, গোলক
তাও বয়।
গোণকেরর নৌকোয় বেদে-বেদেনীঃ বাজিকর, লাগুড়ে, যারা নদীপথে
মমেগ! খুজে খু'জে ফেরে তারাও আদে। তাছাড়া বর্ষার সময়ে মলঙ্গী, নুলিয়া,
'দেওয়ানা খইমাল] ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৮৭
তাঁরা উড়িহ্যা থেকে মেদিনীপুর হয়ে গেঁওধালির পথে গোলকের নৌকোর
এদকে আসে, ও বড়গঞঙ্জার ঘাটে যেসব শতশত চট্টগ্রামী, বরিশালী মাজারা
থাকে তাদের জন্তে স্থ'টকি মাছ নিয়ে এসে বেচে।
একাজ্ে গোলককে অগত্য। অনেক সময়েই এক! থাকতে হয়। গোলকের
নবীন বন্নস, আঠারো! অথবা উনিশ হবে, সমস্ত শরীরে সুন্দর যৌবন, চোখের দৃষ্টি
কোমল, দেখে দেখে যুবতী বেদেনীর! অনেক সময়েই চঞ্চল হয়। পাটনীদের
সমাছে অনেকেই ভাবে, “গোলক যাকে বিয়ে করবে, সে মেয়ে না জানি কত
তপস্তা করেছে ।, সবাই জানে গোঁণকের বাবাকে পাটপী সমাজের সেঃ
ক্ূসসী কুম্থমের বাবা অধর দাস অনেক টাকা আগাম দিকে রেখেছে । টাকার
মধ্যে অধর দাসের প্রাণ, তবু সে কখনো ঈশ্বরকে তাগাদ। করে না। এ
গোলককে জামাই করবার লোভে।
কিন্ত গোলক কিছুই জ্বানে না।
একদিন সুন্দরবনের বিহারী খালে, আবিদ মিঞ'কে পৌছিয়ে দিক্বে
ফিরবার পথে সে গড়িয়ার কিছু আগে থেকেই মন্থর গতিতে আসছিল।
হ্ুপাশে গাছপালা, জলে বাশবনের ছায়া। গোলক অলস চোখে কাকচচ্ছু
জলের বুকে শ্য।ওলার নলীতার দেখছিল। সেই সময়ে, চারদিক স্থির, বাতাস
মন্থর, গোলক সহসা জানতে পারল থইমালাকে দেখতে না পেলে তার জগৎ
আধার হুবে।
ছাঃ! কৈতরী !' সে অস্ফুটে বলল। তার বিশ্বাস হতে চায়নি।
এখন বুঝল তা! যদি না হবে, তাহলে সর্বদা সে থইমালার কথা চিন্তা
করে কেন?
আরো কিছুদিন গেল।
মনের যন্ত্রণা গোলক সইতে পারে না, রাখতেও পারে না, খইমালা ছুঃখী
তাপী যাই হোকঃ তাকে ভালবাসাটি গোলকের পক্ষে পাপ। কী করি,
কোথায় যাই ভেবে সে কয়েকদিন বড়েই অস্থির হয়ে থাকল। আশ্চর্য ফকির
এখন আরো! বুড়া হয়েছে । সে কচিৎ পুথি পড়ে। এখন বেশির ভাগ সময়টা
গালাপীর বাড়ির গোয়াল-ঘয়ের সংলগ্ন ঢে'কিঘপেই থাকে। গোলাপী আজও
পাধু সাউ-এর চরণাশ্রিতা। আশ্চর্ঘ ফকির থকে বলে সাধু সাউও হিংসেবিবা
করে না। বরঞ্চ বাইরে বলে '"ফ'কর সাধু মান্যকে থাকতে বিতে
ট্য়।”
৮৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
আশ্চর্য ফকিরের কাছে একদিন গেল গোলক। পুথি শুনলে যদি মন,
ঠাণ্ড। হয়।
কিন্ত এখন আশ্চর্য ছুবেল। সিধা পায়ে। এখন সে পুথি পডবে কেন?
পুধি তার কাছে আর রাখে ন1।
পুথি না পড, মুখে বল।
প্রথম প্রস্তাবে নায়ক দেওয়ানী» এ ছাড়া আজও আশ্চর্ষর কিছু মনে
নেই | পুথি হাতে থাকলে ০স বলতে পারত প্রস্তাবের পর প্রত্তাবে
কাহিনীর বিস্তার কেমন করা হয়েছে।
গে'লাগীও রাগ করল। বলল, ফকির এখন আমাদের। উয়াকে বেরক্ত
কর কেন পাটনীর পো?
আশ্চর্য ফকিরের কাছ থেকে আসতে আসতে হঠাৎ গোলকের বড়ে! ভয়
হল। এই যে বাত নেই, দিন নেই, শুধু খইমালার ভাবনা, তাহলে কি সে
এর্মনি করেই পাগল হবে? দেওয়ান হয়ে দেশে দেশে ঘুরবে?
কাতর হয়ে গোলক একদিন ঠাকুরবটের কাছে গেল। মনে মনে বলতে
লাগল, হে ঠাকুরবট, তোমাকে ছোটবেল। থেকে দেবতা বলে জানি । বথের
দিনে তোমার ডালে চাপার মাল! ঝুলিয়ে দিতাম, শীতে আকন্দমাল] দিয়ে গড়
করতাম, তুমিই ঠাকুর। সনাতন ঠাকুর বলেন তোমার ছায়ায় পুণ্যবানরা।
বসেছিলেন, এই ঠাকুরদিঘি সেই থেকে গঙ্গার সমান হয়েছে, তুমি দেবত!
হয়েছ, তোমার ছায়া যতদুর যায় ততদুর কাশীধাম, আমাদের বৈষবঘাট বড়
'পহিত্র জায়গা । এ সব তুমিই করেছ» হে ঠাকুববট, তুমি আমাকে কৈতরীক্ক
কথাটি ভুলিয়ে দাও।'
এ কথ|টি মনে মনে বলে গোলক কতই চোখের জল ফেন্গজস। তার পর
দ্ৃগ্তবৎ করতে গিয়ে তার কোমরে কী ঠেকল। গেঁজে ভর] কড়ি।
এখন কড়ির ছোয়া তার গায়ে ছেঁক দিতে লাগল। ভূবন মাসীর দেওয়া,
কড়ি সে কেমন করে দিতে যাবে ? দিতে গেলে খইমালার সঙ্গে দেখা হয়,
বিত্ত দেখ। ন1 হলেই ভালো! ।
অনেক চিন্ত। করে সে হাটে গেল । পাটনীর ছেলে, শরীরে শক্তি ধরে।
গোলক ভাবতে লাগল, “এখন মনেও শক্তি রাখতে হবে। এখন আমি,
বেড়াপাকে পড়েছি। ধাম। করে চাল নিষ্বে যাব, বামুনমাসীর সামনে ঢেগে
দিয়ে বলব আর আমি তোমাদের সঙদা পৌছতে আসতে পারব না মালী ॥
দেওয়ান! খইমাল ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৮৯
এবার একট] দুরের পাল্লার কাজ ধরতে হবে। নইলে বড় অনর্থ হবে ।
কৈতরী বামুনের মেয়েঃ বাপ রে! বামুন যত মড়ি-পোঁড়া হোক, জাতে
গোথরে। সাপ ! আমার চৌদ্দপুকুষ ডুববে নাকি ?
সে বড়ো ধাম কাধে নিল। যেমন ধামায় বেদের] ময়াল সাপ আনে।
ধামায় চাল কিনল, গামছায় বেঁধে ভাঁলঃ লবণ, মশলা, সব নিল। কলুর ঘর
থেকে তেলের ভণড় নিয়ে এক হাত ধরলঃ ও ঝটিতে সব মালপত্র নিয়ে
খইমালার ঘরে গেল।
যেখানে বাঘের ভয় । এখন অপরাহু। দাওয়ায় খইমালা। টেকোনর
পইতে কাটছে।
«এ কি গোলক, এত সওদা কেন? সে হাসিমুখে এগিয়ে এসে
তেলের ভাড়টি নিল।
ধাম নামিয়ে দিয়ে, কড়ির গেঁজে ফেলে দিয়ে গোলক পুরুষকে বলল,
«কতরী ! এর পরে সওদা আনবার অন্য ব্যবস্থা কোরে!। আমার এখন
অনেক কাঙ্জ। ঘড়ি ঘড়ি আসতে পারব ন11,
খইমাল] কী বলে তা শুনবার জগ্ভতে গোলক দ।ড়াল না।
“এমন অজগর জঙ্গলে থাকঃ কেউ আমে না, তাই আসি, নইলে আমার
কাছ নষ্ট হয়। বলতে বলতে সে তাড়াতাড়ি চলে গেল।
আরে কত দিন এই ভাবেই গেল।
খইমালা জানল গোলক এখানেই আছে, কিন্ত সে এখানে আর আসে
না। তার মনেও বড়োই ভাবাস্তর হতে লাগল। হাজার হলেও তারা৷ মা-
মেয়ে নির্বাসনেই থাকে । মায়ের গুরুবাবা, তার মাতামহ যতর্দিন ছিলেন
ততদিন মাঝে মাঝে এসে উপদ্রব করতেন।
এখন তিনি নেই । এখন ত।দের বাড়ি.ত শেয়াল ভিন্ন মান্য হাটে না।
কাক-পক্ষী ভিন্ন, মানুষ খবর নেয় না! এনিজন বনবাসে গোলকই এতদিন
মাঝে মধ্যে “কৈতরী 1 বলে এসে দাড়াত। এখন সে ভরসাটিও গেল।
খইমালার মনে হল সবই আললুন লাগছে, বিশ্বাদ। “কেন গোলক আমার
কে? খইমাল নিঙ্গের মনকে প্রশ্ন করল। তারপর ভাবল গোলক ভিন্ন কেউ
আমদের দয়] করেনি, সেই জন্তেই তার কথা এমন করে নিয়ত মনে হুয়।
মা বলেন কাজ নিয়ে থাকলে মন তুলে থাকেঃ তা হলে আমি কাজে যাই।
একবোঝা নারকেল পাত] নিয়ে সে চাছতে বসল। এতগুলি নারকেল
গড
৯০ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
শল! হলে তবে ঝশাটা হয়। সেই ঝাঁটায় দীঘড়িদের ঠাকুরপাঁট বাড়ির
উঠোন, গোলাব|ড়িতে ঝাঁট পড়ে । রথতলার রথ বেরুবার আগে এখনো নতুন
ঝাঁটায় ঝাট দিয়ে জল ছেটানো হয়। দীঘড়িদের দয় হলে খইমালার ম।”র
কাছ থেকে ঝট! নেন, যন্দও তাদের নিজেদের কম-বেশি চারকুড়ি পাঁচটি
ন!রকেল গাছ, রাজার সম্পত্তি ।
কিন্তু, ক্রমে গোলকের আদর্শনে খইমালার মন এমন হল যে, কাজে মন
বসে না। সে কাতর হয়ে একদিন ঠাকুরপাট বাড়ির দাসীর বালক ছেলেকে
সঙ্গে নিয়ে হাটে গেল। ঘরে চাল €নই। ভূবনকে খেঁঃজ কর দরকার।
তা ছাঁড়া গোলককে হয়ত দেখতে পাবে। এ কথাটি মনের নিচে রইল।
ছেলেটিকে সঙ্গে নিতে হল, নইলে সে যেতে পারে না। আজ আর সেদিন
নেই, খইমাঁলা আশ্চর্য ফকিরের মাচার একলা যাবে। সেদিন ছেঁড়া কাপড়
পরত, আজও ছেঁড়া কাপড় পরে । গরিবের দুঃখ ঘোচাবার জন্তে কেউই
ব্যস্ত নয়, কিন্তু ছুর্ন/মটি নিমেষে দেবে।
হাট এখন আরো বড় হয়েছে। গঙ্গার ওপর খেয়৷ দিয়ে অনবরত ম]নুষ
এদিকে আলছে। এ হাটে তুবনের সন্ধান কর) বৃথা । অনেকক্ষণ এদিকে ওদিকে
বৃথা আশায় ঘুরে খইমাল! দানীমণ্ডুলকে দেখতে পেল। দানীমগুলের সঙ্গে
ঈশ্বরপাটশী কথ। বলতে বলতে আসছে। প্রতিদিন গরম ভাত খাওয়ার গুণ
আলাদা, ঈশ্বরের গায়ে খইমাল1] দেখল বেশ মাংস, চামড়া তেলে স্িপ্» ঈশ্বর
দানীমণ্ডলকে কী বলতে বলতে আসছে।
“আমি চিকিৎস|। করি, বাইরোগ সারাই ন11" দানীমগ্ুল ঈশ্বর-পাটনীর
হাত ঠেলে দিয়ে এগিয়ে গেল। ঈশ্বর রাস্তায় দীড়িয়ে, “ও দানীদাদা
ডেকেও সাড়। পেল না। তখন সে খইমালার দিকে চেয়ে অবাক হয়ে বলল,
“কে ও, খইমাল। ?
“কাকা, আমি ।,
“তা, এমন সময়ে পথে কেন মা? লন্ঝে হয় হয়। বিঙে ফুল ফুটবে
এখন ।"
হাটে গিয়েছিলাম, তা৷ তবনমাসীকে দেখতে পেলাম না। তাকে ন!
পেলে বড়ো মুশকিল ।'
“আচ্ছা, দেখলে পরে যেতে বলব।
“সে কড়ি না দিলে বড়ো মুশকিল ।,
দেওয়ান খইমাল। ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৯৯
থ্যাংরা মারো তোমার বামুনের কপালে! নকুড়ঠাকুর মরেছে আর
তোমাদের খোয়ার শুরু হয়েছে। এর চেয়ে মাঁবেটিতে ভিক্ষে করলে স্থখে
থাকতে । চলো, আবার হাটে যাই ।,
“আবার হাটে যাবে?
'ধাব না? তুমি উপোপী হয়ে পথে পথে ঘুরতেছ, সে মেয়েছেলেকে
হাণাশ করে আগ। হা দেথ দির্ধি, তুমি ঘরে যাও। আ।ম তার গলায়
গামছ। দিয়ে তোমাদের ঘরে পাঠিয়ে দেব থেন ॥,
ঈশ্বরের চোখে মুখে যেন কিসের উদ্বেগ ছিল। কিন্ত খইমালার মুখ দেখে
.ভুবনের ওপর রাগে সে নিজেন্স ছুঃখ ভূলল। যেতে যেতে বলল, “ছোটে!
জেতে পথ্সা হলে এমন চামারই হয় বটে ! বামুনের মেয়ে উপোসী রইল
তুই গিয়ে হাটের তামুলীদের সঙ্গে রসের কথায় মেতে রইলি।”
“গোলক আসে না তাই ভূবনমাসীর খবরও পাই না। এই নির্দোষ
কথাটি বণতে খইমালার মুখ লাল হুল।
তার কথা আর বল কেন, আমায় না জানিয়ে সাগরে যাবে, সেই
কর্ণফুণীর মোহনার, সেই মতলব আটতেছে। কারো সঙ্গে কথা কয় ন1।
আপনভাবেগ ঘোবে থাকে, এখন ত হাটতলাতেই বাস। ঘরে যেতে
চায় না।'
খইমাল। শুধুমাত্র শুনল গোলক সাগরে যাবে। এ কথা শুনতেই তার
মনে হল অপার সমুদ্র, তাতে গোলকের শৌকো৷ মোচার খোলা» ভাসতে
ভাসতে যাচ্ছে ।
বি-এর ছেলেটিকে বাড়ি রওনা করে দিয়ে খইমাল1 ধীরে ধীরে ঠাকুর-
বটের দ্রিকে গেল। ঠাকুরদিঘির পাড়ে এই ঠাঁকুরবটকে সে জাগ্রত দেবত!
বলে জানে। সে শুনেছে অনেক আগে, যখন মানুষের ভক্তি ছিলঃ
তখন এই পুকুরের দেবতা মানুষকে যভ্যিকাজের বাসন দিয়ে সাহাষ্য
করতেন । চড়ক গাছের কাঠটি, তিনি ত মা ছুর্গা। এ দ্িঘিতে ডুবিষ্বে
রাখলে, তুলবার পময়ে নাকি দেখা যেত, সে কাঠের চুড়োয় মাথা ভর] চুল,
দগদগে সিঁদুর
এখন ঘোর কপি ॥। বিস্ত দেবতা বলে যে গাছকে এতাদন জেনেছে এখন
তার কাছে এসেই খইমালা গড় করল । জায়গাটির মাহা ত্ এই যে অন্ধকার
ঘনিয়ে এলেও এখানে থাকলে ভয় করে ন।
মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
গড় করে উঠে সে আচলের ফালি ছি'ড়ে একটি ঝুরির গায়ে গেরো দিল ও
মনে মনে বলতে লাগল, “হে ঠাকুর, আমার মনটি ভাল করে দাও। আমার
মাকে বাচিয়ে রেখ। মা মরলে আমার দীড়াবার জায়গা রইবে না। আর
দেখ গোলক যেন সাগরে ন যায়, তাহলে আমার কষ্ট হবে ।,
এমন সময়ে খইমাল1 চমকাল। কেননা সামনে, অদুরে, শরবনের মধ্যে
ঢাকা ঘাটের বানায় বসে মানুষ । গালে হাতঃ চিত্তামগ্ন। এমন সন্ধ্যায়,
এমন নির্জনে, ঠাকুরদ্িঘির বানায় বসে গোলক কী ভাবে? এসন্ধাা কী
নিংশব্দ, কী নির্জন। ক্রমে বটগাছের পাতায় পাতায় যেমন, খইমালার মনের
ওপর দিয়ে, সন্ধ্যার অন্ধকার ছড়িয়ে গেল । জগৎ চরাঁচর শান্ত । এদিকে ওদিকে
জলের উপর গুটিকয় জোনাকি ছাড়। আর সর্বত্র সন্ধ্যার অন্ধকার । এমন
জায়গায়। এমন সময়ে গোলক !
“কৈতরী* !
গোলকের ভাকে যন্ত্রণা, হতাশা, বিশ্ব । হতভাগ্য গোলক এ নামট'
ছ.ড়া আর কিছু যেন জ্বানে না, যা বলে তার অগ্তরের বোঝা হালকা হর ॥
এই একাট ক্ষতমুখেই যেন তার শোণিত্প্রবাহ উছলে বেরিয়ে এলঃ এমন'
মর্মান্তিক সে ডাক।
'আমি দেওয়ান হব না ঠাকুর। আমায় পাগল করে দিয়ে! না!)
এ কাতর» করুণ মিনতি খইযালার বুকে শেল বিধল। “মাগো! মনে
ম:ন ডেকে, €স পিছন ফিরতে যাবে এমন লমন্নে গোলক, “কে ও? বলে,
পেছন ফিরল।
খইমালার আর যাওয়া! হল ন1।
«কে ও, কৈতরী ?,
খইমালা অস্ফুটে বলল 'হ্যা। গোলক, তুমি এমন সময়ে এখানে ?”
'আমি নিত্য আমি ।॥
“কেন?
'ঠাকুরবটে আমি ঢেগা বেঁধেছি। আমার নিত্য মানসিক ।,
«কেন? না বলে খইমাল অসাবধানে বলে ফেলল, “কিসের আশায় ?
“আশায় নয় কৈতরী | ঠাকুরকে ডাকি, কেননা, আজকাল বড় ভন্ব হয
বুঝি বা পাগল হয়ে যাব ।,
"ও কথা বোলে! না গোলক ।”
৯২
/দেওয়ানা খইমাল। ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৯৩
“পাগল হতে আমার ভয় করে কৈতরী। তখন তো কেউ দয়া করবে না।
সবাই বেধেছেদে দানীমগ্ুলের কাছে নিয়ে যাবে। যদি, যদি তখন মনের কথা
বলে ফেলি?
«মনের কী কথ! গোলক 1?”
খইমালার কথ। যেন সন্ধ্যেবেলার ফুল। তারাই যেন জোনাকি হয়ে
একটি ছুটি করে অন্ধকারের গায়ে ফুটে উঠছে। দূরে কারা মসজিদে আজান
দেল। আহা, খইমালা আর গোলক যখন ছোট ছিল তখন তার] হছুজনে এই
আজানের শব্ধ শুনতে কত ভালবাসত।
“ছোটবেলার কথা মনে পড়ে কৈতরী ?”
মনে পড়ে ।'
আরে! অনেক কথা মনে পড়ে খইখাঁলার। কিন্তু সে কথাবে মানুষকে
বলবার নর !
“সেই তুমি পুকুরে ভেসে গিয়েছিলে !
“তুমি আমায় তুললে গোলক ।”
“সেদিন যদি আমি আর তুমি দুজনে ভেসে যেতাম ?
খইমালার চোখ ভিজে উঠল। গোলক তুমি কি আমার মনের ৷
জান?
“আমার মনে বড় কষ্ট কৈতরী। মানুষ যদি জানে তাহলে কলঙ্কের শেষ
থাকবে না ।,
“গোলক তুমি ঠাকুরবটকে কী কথা জানাও ?'
তুমিকী বল?
“গোলক, তুমি সাগরে যেয়ে! না।” কথাটি বলতে খইমাঁলার বুক ফেটে
গেল। কিন্তু কেন যেন তার মনে হল এমন করে গোলকের সঙ্গে সে কোনোদিন
কথ! বলতে পাবে ন। গোলক, কেন তুমি আশ্চর্ধ ফকিরের গল্প শুনেছিলে ?
“আমি সাগরে গেলে তোমার কষ্ট হবে কৈতরী ?'
খইমালা মাথ! নাড়ল। এখন আর লজ্জা কাকে ? ঠাকুরবট তুমি আমার
লজ্জা! রাখ। গোলককে এ কথাটি আজ ন1 বললে নয়।
£না কৈতরী, তা হয় না। অমন কথা! বলতে নেই। আমি, আমি বে
পাটনীর ছেলে কৈতরী |,
'গোলক, আমার বুক যে ফাটে।'
৯৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
“তা হয় না কৈতরী, তা যে হতে নেই। গোলক খইমালার হাতটি
ধরল । বললঃ «এ জন্মে যে তা হয় না কৈতরী ॥
ছুজনেই স্তব্ধ, নিশ্চপ। অন্ধকারে জোনাকি উড়ছে।
“মা গো!” গোলকের বুক ধেন ফেটে গেল। সে দৌড়ে চলে গেল ।
খইমালার শরীর এখন চঞ্চল, হাত যেন পুড়ে যায়। গোলক, তোমার জন্টে
আমি পথে বুক পেতে দিতে পারতাম, তোমার সব ছুঃখ আমি চোখের জলে
ধুয়ে দিতাম, কিন্তু সে তো! এ জন্মে হবার নয়।
ভাবতে ভাবতে, ছোট একটি নিঃশ্বাস ফেলে খইমাল! ঠাকুরবটের পাড়
থেকে নামল, ধীরে ধীরে বাড়ির দ্বিকে চলল।
সামনের কালীতলার মাঠ দিয়ে সনাতন দীঘড়ি যাচ্ছিলেন । এখনো!
তার গলায়, গানের নামে সেই ম্বরহীন হাহাকার, “কাশী কাধ্ধী
কে বা চায়! কিন্ত«? এখন তার বয়স হচ্ছে, হাহাকারে সে শক্তি
নেই। মানুষ দেখে অভ্যাসবশত, “কিসের দাপে মাটি কাপাও বাপ? মাগ
ছেলে কেউ তোমার আপন নয় |» বিড়বিড় করে কললেন। তারপর ঠাহর
করে দেখে বললেন, “কে ও খইমাল] ??
“আজ্ঞা ।
“এমন সময়ে এখানে ?,
“এসেছিলাম 1,
«গোলককেও দেখলাম, ঈশ্বরপাটনীর মেজ ছেলে !,
অন্ত লোক হুলে এর মধ্যে অনেক কদর্থ করত | সনাতন দীঘড়ি সংসারের
মলিনতাকে বড়ই ঘেক্না করেন। তাঁর মনে, এদের ছুজনকে পরপর দেখবার
কোনে! কুব্যাথ্যা প্রবেশ করল না। তিনি বললেনঃ তুমি বাড়ি যাও মা, সন্ধে
হয়েছে | এমন সময় বাইরে থাকে না।,
বাড়িতে এসে খইমাঁল৷ বাইরের ছেঁচাৰেড়ার ওপাশে থেকেই মানুষের গল!
শ্তনল | শুনতেই অঙ্জান। ভয়ে তার শরীরের ভেতর নড়ে উঠল। অনেক
বাগে, সেই যেবার বড়ো! বর্ষা হয়, সেবার ঠাকুরবটের নিচে গোলকের হাত
থেকে কড়ি নিয়ে ঘরে ফিরে খইমাল! মানুষের গল! শুনেছিল+ আলে। দেখেছিল,
সেইদিনই তার বিয়ের কথা হুয়।
তার বরটি কেমন, কী বৃত্তান্ত, কিছুই খইমালা জানে না। তবে গত তিন
দেওয়ান! খইমালা ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৯৫
বছর থেকে তার বিঃব। ভাঙ্গী এসেঃ “মামাই ত সব পাবেন গো। বলে
গাছের নারকেল নিয়ে যায়। একে খইমালার মনে বিশ্য় হয়।
বিধবা ভা্ী বলে, “আচ্ছা ঘর তোমাদের ম'মী | এমন ঘরে মামার মুনিষ
মাহিন্দররাও থাকতে চাইবে না।+ তাই খইমাঁল। ভাবে যাঁদের এত আছে
তার] ছুঃখিনীর সামান্ত সম্বল নেয় কেন? কিন্তু এ ভাবনা কখনে। প্রকাশ
করে না। কেনন1, বৈষ্ণবঘ!টে অন্ত গৃহস্থবাড়ির গিক্নীর1 বলেন, 'নকুড় দাসের
বউ! তোম।র জামাইভাগ্য তবু মন্দের ভাল মা! জামাই আনতে গেলে
কুলীনের ঘষে দেওয়া থোওযার অন্ত থাকে না, তা তুমি গাছের ফলফলারির
ওপর দিয়েই পার পাও!» এরপরে খইমাল1 কিছু বলতে গেলে তারই নিন্দে
হবে । এটি খইমালার জীবনের শিক্ষা ।
নিজের হাত থেকে তার রেহাই নেই।
মা বলে মেরেমান্থষের নিন্দে জগতের সর্বত্র। তবু ত+ গঙ্গ৷ পাশে
প্রবহুমানাঁ, তাই, নৌকো-পানপি আসে যায়» শহরের বাতাস গড়িয়ায়,
বৈষ্ণবঘাটায় সর্বদা! লাগে । শহরের বাতাস লাগে বলে নিন্দের প্রচলন কিছু
কম, তবু ফি বছরে ছু পাঁচটি মেয়ে বউ কি নিন্দেয় দুর্নামে আত্মঘাতী হয় না।
“তাতে বাঁ কী লাভ! খইমালা'র মা বলে, 'মেয়েছেলে আত্াঘ'তী হলে গতি
হয় না মা, শেোশানের পেত্বী হয়ে দাপাদাপি করে।,
খইমাল] ধীরে, দাওমায় না উঠে, ঘরের পেছনে গেল ও বুড়ে? আলে ভর
দিয়ে উ“চু হয়ে বেড়ার ফাক দিয়ে দেখতে লাগল।
ভুবনমাপী ও তার সঙ্গে জনুহরি পুরোহিত । “ঘাটের বামুন, ঘাটকাজ
করায়, সে এমন সময় এখানে কেন? খইমালা আশ্চর্য হল। তারপর মনে
পড়ল তার বিয়ে এ জয়হরি ঠাকুরেরই দেওয়া] ।
জয়হরি বড়ে। পয়সার কাঙাল । ঠাকুরসেবায় ঘণ্ট[নাড়া ও ভোগের থানে
জোগান দেওয়া, এ কাজও সে পায় না। পায় ধান, কড়ি, গুড় ঘাটকাপড়,
তাই কেউ তামা, রুূপো। অথব। সোনা দক্ষিণা দেবে বললে সে অমনি তার
তসরের কেঠো৷ কাপড় পরে হাতে পায়ে গঙ্জাজল ছিটিয়ে নিমেষে তৈত্বি হুয়।
ঘাটের মড়ার সঙ্গে বালিকার বিয়ে দিতে* কচি মেয়েকে বেঁধেছেদে জ্যান্ত চিন্তায়
তুলতে সে কিছুমাত্র কাতর হয় না।
সনাতন দীঘড়ি তাকে 'ব্রদ্ষপিশ[চ* বলেন। তা শুনে সে বলে, “আপনি
মহাশয় লোক, য। বলবেন মাথা পেতে লোব, কিন্তু মিছে ছুনাম লোব কেন?
৯৬ মহাশ্বেত1 দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
অন্যায় কাছ জয়হরি করে ন1। শাস্ত্রে বলছে তাই করছি। শাস্ত্র পাণ্টে
দেন, আর করব না।
জয়হরির জশাক শুনে গঙ্গাতীরের হরিসভার বৃদ্ধের সাধুবাদ করেন ও
বলেন, 'বাবা জয়হরিঠ এ কলিকালে তোমার মত ছেলের আছে বজেই
ধর্ম টিকে আছে ।,
এখন সেই জয়হরিকে মার সঙ্গে আলাপ করতে দেখে খইমাল] কান পেতে
শুনতে লাগল। ভাগ্যের ওপর তার হাত থাকে না, কখনও গুরুবাবা, কথনগ
জর্হরি, যে যখন পারে এসে তাকে ভাগ্যের যেদিকে ইচ্ছে ঠেলে দিকে
যায়।
“তবে আর বলছি কি! জয়হরি বলল, আমি জেনে এলাষ+ নীলমণি
ঘোষালের এবাবের রোগটি শিবের অসাধ্য | ভা্গী বিষ খাওয়াতে গিয়েছিল
সেটি প্রমাণ হয়ে পড়াতে, তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে । আমাকে বললে,
“বৈধ্ণবঘাটের বউটি ডাগর-ডোগর হয়ে থাকলে এসে যদি সেবাধত্ব করে ত
বেঁচেযাই। আমি আর ক'দিন থাকব। তারপর গয়না! বল, টাক] বল, সব
তারই পাবে। উট গরিবের মেয়ে, রাজি হলেও হুতে পারে । বোড়ালে,
ধবধবার, জগদ্দলে, যেখানে বলতে গিয়েছি সেখানেই মুখ করেছে ।।
“আমার এক মেয়ে। ওকে ন। দেখে আমি থাকতে পারব না |, খইমালার
মা মেঝেতে আক কাটতে কাটতে বলল।
তুমি ত যোল বছর ধরে দেখছ গা ! এখন ওর বর দু'দণ্ড দেখুক !"
ভূবন খরথর করে বলল | তুবনের ওপর ঠোঁট ফণাকঃ দত দেখা যায়।
সেইজন্যে তার ম্বামী তাকে নেপ্ননি। এখন ছাটে মুড়ি-মুড়কি বেচে,
₹চিৎকদাচ কুটনীর কাজ করে ভুবন হাতে বিস্তর পয়সা করেছে, গাই গরু
ইটের দেওয়ালের খড়ের চাল দেওয়৷ বাড়ি, সবই সাজন্ত। কিন্তু যা পেয়েছে
তাতে ভূবন সন্তষ্ট নয়। শ্বামী* সংসার এসব কথা ভাবতেই তার মনে হয় যা!
পায়নি ত] বুঝি শ্বগের সান । খইমালার মার নারাজ ভাবটি দেখে সে চটে
উঠল । বলল «মেয়ে সোয়ামীর ঘরে যাবে তাতে নেকীর ন্যাকর] দেখ!
সে যিনলে ক'দিনে চোখটি বু'জবে। তখন সোনাদানা নিয়ে মা-মেয়ে মিঠাই-
মণ্ডার হরির লুট দেও না কেন* কেউ দেখতে যাবে ন1।”
“সোনাদানার লোভ আমি করি না মাসীঃ গতর খাটিয়ে এক মুষ্টি অন্ন পেলে
ধন্ধ মানি, অন্ত স্থখের আশ! করি ন1 1,
দেওয়ান! খইমালা ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৯৭
“সে তোর কথা বামুনষেয়ে, মেয়েটার কপালে যদি স্থুখ হয় ত
হোক না !,
যাটির বাধে ফাটল থাকলে সেই ফাটলে বেনোজল ঢুকে পড়ে সর্বনাশ
ঘটায়। খইমালার প্রতি স্ষেহটি তার মায়ের মনে দুর্বল জায়গা । সেই
জায়গায় ব্যথ! দিয়ে কথা বলে ভূবন বিধবার মন নরম করতে লাগল।
“তা ছাড়া দেখে এলাম পরিপুন্ন সংসার । বাসনে কোসনে গাই গঞ্কতে
সব যেন জম্ছমাট হয়ে আছে ।' জয়হরির নিজের চোখেও অমনি সংসারের
ছবি ধরা! আছে।
কাল বলব।*
এ কথা বলে খইমালার মা ভূলনদের বিদায় দিল ও খইমালাকে «দোর দিয়ে
থাকিস* বলে নিজে পথে বের হুল। এখন তার মনে হুল সনাতন দ্বীঘড়িকে
পেলে তবে পরামর্শ নিতে পারে । তিনি অন্যায় করা কখন বলৰেন না।
কিন্তু সনাতন দীঘড়ি সে-রাতে বৈষ্ণবঘাটে ছিলেন না। একল! ডিডি
'বেয়ে যাচ্ছিলেন, এভাবে মাঝে মাঝেই তিনি বেড়াতে যান।
পরে শুনে বলেছিলেন, “নীলমণি এক নরপিশাচ। জয়হরি এক
ব্্মপিশাচ* দুই পিশাচে মিলে যজ্জি করণে তা থেকে ভাল হতে পারে
কি? তা ছাড়া এ মেয়েটি কম্মিনকালেও ওর ভাগ্ী নয়। ও ৰড়ো! পাজি মেয়ে,
সম্পত্তির লোভে নীলমণিকে জল উঁচু জল নিচু বলে খোনামোদ করত ।'
সে কথা শুনে উদ্ভ্রান্ত গোলক বলেছিল, “হা ঠাকুর, তবে বামুনমাসীকে
সে কথা বলে দেননি কেন 1 পাপ ত আপনাতেও অর্শাল !,
সনাতন খুব আশ্চর্য হয়েছিলেন। তিনি জানতেন তিমি আধান্স্যাসী,
উবজে গিয়ে কথা বলে উপকার কর] তার কর্তব্য নয়। মাহথয হয়ে জন্মালেই
তার কিছু কিছু কর্তব্য থাকে এ কথা গোলাগীও বলতে ছাড়েনি। একজন
আধা পাগল, এক বেশ্ঠা, এদের কাছ থেকে সত্যি বথা শুনে তিনি অবাক হনে
বান। সেদিন আর একসের দাপে মাটি কাপাও' এ কথাটি আকাশ ফাটিয়ে
বশতে পারেননি। খিইমালার ভাগ্য! অস্ফুটে বলে চুপ করে
গিয়েছিলেন ।
ভাগ্যকে কে রোধ করতে পারে? বন্তাকে কে বাধতে পারে?
তবঞ্ণবধাটের কেউই জানল না, ভূবন ও জয়হরি দুঙ্গনে খইমালাকে নৌকোয়
তুলে এড়াচি পৌছে দিনে।
৯৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
সেদিন গোলক অবধি ঘাটে ছিল না। ভয়ে শঙ্কায় খইমাল। এদিক ওদিকে
কত তাকাল কিন্তু গোলককে দেখতে পেল না।
পরবে খইমালাকে আর দেখতে পাবে না জেনে গোলক “টকতরী কৈতরী”
বলে কপালে বৈঠার বাড়ি মেরে কাদল।
তারপর, একদিন এড়াচিতে বসে, তুবনের মুখে খইমাল1 শুনল; “আহা”
ঈপ্বরপাটনীর দুঃখে বনের পশু কাদে! অমন ছেলেট! পাগল হয়ে গেল
গে! ! গোলকের মত ছেলে, সে পাগল হওয়া মানে বাপের বুকে শেল পড়ল ।
এ নিয্যস্ কেউ ওষুধ করেছে। কাচা ছেলেকে অমন দেশে দেশে যেতে,
দেয়?
সেই প্রথম, খইমালার ঠাকুরবটের ওপর বিশ্বাসে ফাটল ধরল। দেবতার
মুখ চেয়ে থাকে যারা, দেবতা তাদের দেখে না। তবে মানব কোথায়
যাবে?
৪,
স্থখের দিন পলকে যায়। ছুঃখের দ্রিন সত্বর কাটতে চায় না। খইমালার
জীবনে আর চারটি বছর কেমন করে গেল তা ভাববার কথ! ।
কেঁদে ৫ক্দে তার মার শরীর পাত হয়েছিল। জয়হরি ও ভূবনের কথায়
মেয়েকে পাঠিয়ে সে মহা ফাপরে পড়ে। এড়াচিতে, নীলমণি ঘোষাল এতদিন
বিয়ের প্রাপ্য মর্যাদা নিয়ে সম্পত্তি বৃদ্ধি করেছিলেন । শেষ বয়সে কাশ
৫রাগটি হওয়াতে তিনি তার বিয়ের খাতা রেখে দিকে দিকে সংবাদ করেছিলেন ।
অবশেষে, গ্রামের মগ্ডলদের বাড়ি বিরজাহোমের সময়ে “জ্ঞজোগালী" হয়ে,
জয়ার যাওয়াতে তিনি খইমালার সংবাদ পান।
বিরজাহোম সবাই করতে পারে না। এটি করবার জন্তে মগ্ডলর!
গড়িয়ার মহাশাশান থেকে আগমবাগীশ তান্ত্রিককে এনেছিল । কিন্তু আগম
ব|গীশ যখনই যজ্ঞ করেন, তখনই «বজ্ঞজোগালী* বামূনকে নেন। সে তাকে
সব জোগান দেয়। এক্ষেত্রে আরো দরকার । মগ্ডলর। অকব্রার্ধণ। তাদের
দিয়ে যজ্ঞস্থান লেপবার কাজটিও হবে না। তাই তিনি বললেন, “জয়হরি*
তুই আমার সঙ্গে চল্। একপ্রস্থ পুর্জোর বাসন, একখানা তসর আর একটি
টাকা পাবি। তা ছাড়া হোমটি যদি ভালয় ভালয় হয় ছেলেটি বাচে, তা হলে
শীতের মলিদা তোর ঠেকায় কে!
দেওয়ান! খইমাল্1 ও ঠাকুরবটের কাহিনী ৯৯
আগমবাগীণ পাওনা-থো ওনা সবই দেন, কিন্তু বড়ো হেনস্তা করে কথা
বলেন। &ন বেটা, ঘি খেয়ে নে। জন্মে ত কপালে জোটে না1."'আরে
বামুনের বলদ, বেলপাতায় পোকা লেগেছে দেখিসনি ? এ তার
মুখের বুলি।
এড়াচিতে মগ্ডলদের ছেলেটি বেঁচে যাওয়াতে তিনি আরে শাস্তি-শ্বন্ত্যেন
করতে ব্যস্ত রইলেন। তখনই জয়হরি নীলমণি ঘোষালের সন্ধান পায় ও
খইমালার কথা বলে। নীলমণির ব্বভাবে গুণ বিস্তর। একটি বউকে তিনি
কৌকে লাধি মেরে মেরে ফেলেছিলেন, সেই নামে-মাত্র ভাশ্রীটিকে হঠাৎ
কোথায় বিদায় করলেন কেউ জানতে পারল না।
তবে গোয়াল! বউ সকালে উঠে গাই দোয়। সে বললেঃ “ভোর রাতে দিদি
নাকে কাপড় চাপা দিয়ে কাদতে ক'দতে নদীর দিকে যাচ্ছিল । আমাকে,
বললে আমার নাম চণ্ডী, আমার যে কথা সেই কাজ। ঘোষাল আমায়
ঠকিয়েছে। আমিও আমার ভেয়েদের এনে ওর মাথা ভাঙব।”
গোয়ালা বউয়ের কথা সবাই কানে নেয়নি। তবে জয়হরি, চারটি টাকার
লোভে খইমালাকে এনে দিতে রাঙ্জি হল। নীলমণি বলেছিলেন, “দেখ,
বারুইপুরে আমার ছুটি ছেলে আছে বটে। কিন্ত আমি মরলে তার! ঠিকই
আসবে, জীয়স্তে একটু দেখবে না। বৈষ্ণবঘাটের উটি গরিবের মেয়ে এখন ভাতট?
জলট] দ্রিক, প্রাণট1 বাচুক। তাকে আমি যা দেবার দেব, ভাতের জন্য
ভাবতে হবে ন1।,
হ্য়হরি নিবৌধঃ লোভী তায় হৃদয়হীন ভূবনের সহায়তায় সে খইমালাকে
এনে এড়াচিতে রাখল | পরে ক্রমে ক্রমে, মেয়ের ছুর্ভাগ্যের কথ! জানতে পেন
থইমলার মা যত আছাড়িপিছাঁড়ি করুক, সে কখনই বৈষ্ণবঘাটের পথ মাড়াল
না। মুখে বলত বটে, 'ধইমালার কপালে আছে তাই ছেঁচা খচ্ছে। আমি
কী করব বল, এই জন্তেই মন্ুতে বলছে পুরুতের কলিকাপ্লে কোনো হাত থাককে'
না।* এখন এসব অঞ্চলে শহরের বাতাস বয়। শহরের বাতাস বইলে উটকৌ।
লোকের হাতে পয়সা হয়। সেই সব লোকদের কাছে জাাক করে জরহরি
কথায় কথায় মন বাতায়ন আদি খধিষের নাম আগড়ায়।
আসল কথা জরহরি এদিকে পারতপক্ষে আসত না সনাতন দীঘড়ির ভয়ে ।
তিনি বলেছিলেন, “সব পশুকে মারতে নেই, কিন্ত জঃহরিকে বধ ফরলেও আমাক
রাগ যায় না। জেনেশুনে তুই এমন পাপটা করলি ?"
১4০ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
এ চার বছরে সনাতন দীঘড়িরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে । এখন আর
'তিনি হুরহীন হাহাকারে গান করে করে কালীতলার মাঠে, হাটতলায়,
গঙ্গাতীরে একল! একলা ঘোরেন না। এখন তিনি সকালে সন্ধ্যায়
ঠযকুরপাট বাড়ির চত্বরে বদে গান করেনঃ সকলে শোনে । কখনো"
সখনো ভার্গবতও গড়েন। তা ছাড়। ঠাকুরপ1ট বাড়িতে কাঙালি-
অতিথির সেবা হয় কিনা, দেবতার ভোগে ফ্কাকি পড়ে কিনা, সবই
দেখেন ।
তীর দাদা দেহরক্ষা করব!র আগে, বাকি এজমালি সব সম্পত্ভিই ঘেবত্র
করে রেখে গেলেন। সনাতনের হাত ধরে বললেন, “ভাই, ঠাকুরপাট বাড়ির
আরব্যয়ের সম্পূর্ণ ভার তুমি লও। তুমি ভিন্ন আমি অন্ত সং লোক
জানি ন1।,
এখন সনাতন অনেক কর্তব্য শ্বীকার করেছেন। ভাগবত শুনতে যারা
আসে তার। তীর মুখের শান্ত শ্রী দেখে মনে ভাবে, ঠাকুর নিশ্চয় কিছু
"পেয়েছে । টৈবী কপা না পেলে সেই খ্যাপা হাতির মতো অশান্ত স্বভাব
কোথায় গেল ?
শহরের আওতায় থাকলে মান্থষের মনে ব্যাবসাবুদ্ধি আসে ও সর্বদা মনে হয়
“কেমন করে ধনী হই। কিছু কিছু লোক থাকে, যেমন কাগজের ব্যাপারী
নসীরাম” অথধ। মাছের ব্যাপান্সী সাধু লাউ, যারা একটি ভাব থেতে গেলেও
কোথায় ডাব ফলেঃ কোথায় চালান দিলে লাভ হয়, পানটি গালে দিতে গেলেও
পানের বরজে ণাভ আছে না ক্ষতিঃ এইসব প্রসঙ্গ নিয়ে অনেক কথা বলে।
কিন্ত আসলে, সময় এলে দেখা যায় এর] বডোই হিসেবি, ভীরু, যা জানে তার
বাইরে নতুন ব্যাবসা করতে একেবারে নারাজ।
নিজের দোকানের দাওয়ায় বসে দিনে দশবার এর] বরিশাল থেকে সুপুরি,
সিলেট থেকে চুন, স্থন্দরবনের হোগল! আনতে যায়, কিন্ত কার্ধকালে দেখা যায়
এদের কাছে ণ্ঘর হতে আডিন। বিদেশ।' এদের মতো! লোকরা সনাতন
সীঘড়ির এখনকার চোখমুখ দেখে বলতে লাগল “ঠাকুর কি পেয়েছে সেটি
জানতে পারলে হত।'
সনাতন এদের মনের কথা জানতে পারণে বড়োই আশ্চর্য হতেন। কিছু
পেয়ে তাঁর মনে প্রশান্তি আসেনি! পাননি, কিছুই পাননি তিনি। ভগবান
ভগবান করে ছুটে বেড়িয়েছেন, তারপর আর ছুটে বেড়ালে বুড়ি ছু'তে দেরি
দেওয়ান খইমাল! ও ঠাকুরবটের কাহিনী ১০৯
হয়ে যাবে ভেবে গুটিয়ে এসে নিজের মধ্যে বসেছেন । এখন তিনি যা পাওয়া,
যায় না সেদিকে চেয়ে না থেকে, যাদের কাছে থাকেন তার্বের মনে ছিটেফে।ট।
শাস্তি বিধানের চেষ্টা করেন ।
খইমালার মাও মাঝে মাঝে ভাগবত শুনতে আসে। সবাই চলে গেলেও
স্থাথুর মত বসেথাকে। দীর্ঘ চার বছর ধরে তার ছুটি নীরব চোখ সনাতনকে
তিরস্কার করে আসছে। যারা সাধারণ, তাদের কাছে তার প্রত্যাশা ছিল ন৷
কিছু। কিন্ত যাকে জেনেছিল অসাধারণ বলে, সে কেন দুঃখিনীর বাছাকে
রক্ষা করল না? বিবেকের নির্দেশ মতে কাজ যদি না করঃ তাহলে নিজেকে
বিবেকী বলে প্রচার কর কেন?
থইমালাঁর মার চোখের এ তিরস্কার দেখে সনাতন অনেক সময়ে ভাবেন
অন্য সকলের চেয়ে তবে কি তিনি অন্তরকম 1 তাই কি তার কাছেই সকলের
দাবী থেকে যায় 1 বিৰেকে, নীতিতে, ব্যবহারে, তারই কি এক আদর্শ মানুষ
হবার কথা ছিল?
এ কথা যখন ভাবেন, তখন খইমালার মার চোখের দিকে
তাকালে তার ক্রোধ হ্য়। দেবত। হতে পারেনি তাই খইমালার মা.
অভিযোগ জান।য়। কেন, তিনিও দোষেগুণে মান্ুষঃ এ কথাটি মেনে নেয়
নাকেন?
সনাতন জানেন ন। এতদিন বাদ্দে তাকে সকলের মতো। আর একজন মানুষ,
মাত্র, এ কথা এনা ভাবতে পারে না। তাই তিনি এখন রাগ হলে আর
হেস্টিংসের মুন্সীর কথা বললেন না। বলেন, 'যত বড় পণ্ডিত হও, সাধক
হও, চিলুদ্ধে চড়ালে সবাই সমান । সন্বেপী, শিবাসাধক শ্বামী শিবানন্দ আর
মহাপাপী এ হারাণ শুঁড়িঃ চিলুর আগুনে যখন ঝলসে গেল, তখন আর কারো
চেহারার তফাৎ রইল না। তবে এত দাপ কিসের জ্যা?"
তার মৃখে পাপীর প্রশংস। শুনে দুষ্ট লোক বলে তবে কি তিনি এতঘিনে
কোনে পাপ করেছিলেন।
এই চার বছরে গোলাপী সাধু সাঁউ-এর আশ্রয় ছেড়েছে। সে এখন
নিজেই তামাকের গুল ও কে ৫বচে। যা পায়তা দিয়ে নিজের ও আশ্চর্ক
ফকিরের প্রদ্তপালন হয়। সাধু সাউ সহজে তাকে ছাড়তে চায়নিঃ কিন্ত
গোলাপী বলল, "মন ছিল বলে ঘর বেঁধেছিলাম গা» এখন মন লাই, এখন তুমি
জোর করো না! আশ্চর্য ফকির এখন কানা, চোখে দেখে না। .তার ওপর
১০২ মহাঙ্থে তা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
রক্ত কাসে বলে আমার ঘরের ছোয়া মাড়ায় না। উনি পুথি বলবে, আম শুনব,
এই ভাল গা। তুমিও মেয়ে তোমার বউ ছেলে নিয়ে এস না কেন, পড়ন্ত
কেলায় সেবাযত্বের জন্যে আপনার লোককে কাছে ডাকো । নই মেয়েম'মুষের
হাতের ভাতঙ্গল আর কত খাবে ? নরকের যমদূত ডাঙ্গশ মারবে না?
জীবনের পড়ন্ত বেগার, ঝিডেফুন ফুটবার সময়ে, গোলাপীকে এমনি শুচিবাই
এ পেয়ে বসল | বেশ্তাকে কেউ ভাল কথা বলে না। বেশ্ঠার ঘরের চৌকাঠে
প] দিলেই ভাল লোক, মন্দ লোক সবাই একরকম হয়। সবাই মঙ্জা লুটতে
চায়। তাহলে ভাল কথ। বলবার যখন কেউ নেই, তখন গেলাগী নিজেই ঠিক
করল এখন তাকে ভাল হতে হবে। এ চার বছর বলতে গেলে সে ভালই
আছে। আশ্চধও ভাল আছে । খইমালাকে তার! সব সময়ে চোখে দেখে না।
তবু তার কথা তারা বলে। গেলককে দেখে বলে। গোলক কার দুঃখে
পাগল হল সেটি গোলাপী জানে । মাঝে মাঝে সনিশ্বাসে বলেঃ “ক যে
দেওয়ানা হবার কথ। শুনিয়েছিণে ওকে 1,
কিৎ কদাচ। অন্য সময়ে তার! নিজেদের কথাই বলে। অশ্চর্যের দেহ
গলিত, জীর্ণ । বিস্ত দেহাতীত প্রেমে সে ম'ঝে মাঝে অস্থির হয় ও বলে,
“মামাকে কি গোরগাঁড়া করবি না পোড়াবি গোলাপী ? তুই কেন কলমা
পড়ে ফকিরানী হ না?
গোলাপী এ কথা শুনলে রেগে যায়। বলে* “তোমার সমাজ আর আমার
সমাজ কি এক 1 তুমি গোরে যাবে, আমি গড়ের শৌসানে যাব। আমি
ভাল হয়েছি, তাই তোমার সেবা করি। তা বলে কলমা পড়তে
ধাব কেন?
এর। দুজন (নিজেদের নিয়ে ভালই আছে।
আর সবই পারবর্তনের মুখে । গঙ্গাতীরের সমৃদ্ধি বাড়বাড়ন্ত। গড়িয়ার
হাটে এখন কচিত সাহেবদেরও দেখা! যায়। রথতলার মাঠে রথের ৫মলাটির
জণাক বেড়েছে । এখানে এখন কত পোক যাওয়া আস! করে গু বৈষ্বঘাট।
গড়িয়া দিকে দিকে এমন জনবপতি বাড়ছে যে যারা কচিৎ বাইরে আসে তারা
এসব জায়গ। দেখলে সত্বর চিনতে পারবে কিনা সন্দেহ। চেনা মুখের মধ্যে
ধু তূবনকে দেখ যায় না। সাপে কেটে সে গত বছর মরেঘ্বে। মরবার
আগে তার এতখানি জিভ বেরিয়ে এসেছিল। ওঝা তামার পয়স। দিয়ে
জিওটি ঠেগে ঢোকাতে পারেনি ।
েওয়ান। খইমাল! ও ঠাকুরবটের কাহিনী ১০৩
' কিন্তু, কি ভূবনের মৃতুযন্ত্রণা কি অন্য ৫কানো! যন্ত্রণা, গোলকের উল্লাদ হওয়ার
ছুঃখাটর সঙ্গে কোনে। কিছুরই তুলন। হয় না ।
গোলককে দেখলে সকলেরই বুক ফাটে এই জন্তে যে তাকে দেখলে €কে
বলবে তার ভেতরে চৈতন্য নেই ? তার চোখের চাহনি এখনও তেমনি
ভাবে ভর" গভীর । ঠোটে সব সময়েই মুছু হাসি খেলা করে । তাকে দেখা
ধায় ঘাটের রাণায়, হাটতলায়, ঠাকুরবটের পাড়ে। গোলক সর্বদা আপনার
ভাবে অচেতন। মাঝে মাঝে শুধুকি খেয়াল হয়ঃ তখন ঠাকৃরবাটের ঝুরিতে
নেকডা বেঁধে ধাঁরে বলে, “আমাক দেওয়ানা করে দিও না ঠাকুর ! পাগল
হতে আমার ভয় করে!)
তার কথা শুনলে অতি বড় পাষাণেরও চোখ ফেটে জল আসে। তার
মুখে সনিশ্বান “কৈতরী 1 শুনে সকলেই নিশ্বাস ফেলে । “এমন বাজকাস্তি
চেহারা, এমন ছেলে পাগল হলে মা মাগী কি বাঁচে গো? পথের মানুষও
বলে।
কেউ ওষূধ করেছে, এ কথা আগে সবাই বলত, এখন আর বলে না।
কেননা। রোজাঃ সাধুং সন্্যাসী, ঝাড়ফুক, তস্রম্্র এসব কথা শুনলে গোলক বড
ভয় পায়। ৰলে, সব কথা বেরিয়ে পড়লে তার বড় নিন্দে হবে ও আমাকে
ওদের কাছে নিও না মা।” বলে হাউ হাউ করে কাদে।
গোলকের মা বাবা এখন আর কিছু করতে চায় না। বিশেষত £
€গালকের বাপ। গোলকের মা-কে অনেকে অনেক কথ আজও বলে । দেশ
€জাড়া দেব-দেবীর থা সব থাকতে ছেলেটাকে পাগল করে রাখবে ? এ
কথ] বলে গোলকের ম1 ঘন ঘন মুছণ যায় ।
গোলকের মা-র কথ শুনে ঈশ্বরপাটনী আগে খুব চেষ্টা করত।
কে বললে, “মা গো, পাটনীর বউ! তিরেঁল-কালীবাড়ির ৰালাটি
এনে ছেলাটির হাতে দাও | উ-তে পাগল হাতি ভাল হয় গো।
ঈশ্বর তিরোল কালীবাড়ির বাল! এনে গোলককে দিল গোলক বালাটি হাতে
নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখঙগ। তারপর অবাক হয়ে বললঃ “লোহার বাল! কেন
বাবা? আমি কি সত্যিই পাগল হয়েছি 1”
'মনা বাপ। ই তোমার বায়ের (বাুর ) অন্থক, বালাটি পরলে
ভাল হবে।,
গোলক বাল! পরল, তারপর একসময়ে খাল! কোথায় ফেলে দিল ।
১৯৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গস
গোলককে দেখে দেখে একদিন গোলাপী ঈশ্বরের বাড়ি এল। ভাল হয়ে
যাবার পর গোলাগীর মনে এখন ভাল চিস্তার শেষ নেই। আশ্চর্ধকে-
খাইয়ে দাইয়ে, ওর রক্তকাসের গামল! ধুয়ে মেছ্ধে নিজে শঙ্গান্নান করে:
গোলাপী এ বাড়িতে এল।
“অপাটনীর বউ, কি রাদ্ধ দিদি?
কে, গোলাপী 1 আর দিদ্িঃ রাধি যেষন তেষ্ন ময়া মাছের,
ঝোল।,
“উ কি, থালার পাশে ছাই কেন?
“আর দিদি, বাউড়ীদের শেতলা বললে গোলক বুঝি কার নজরে পড়েছে ।
ভাতপাতে ছাই দিও। অপদেেবতা ছেড়ে যাবে ।
গোলাপীর ছাত ছুটে] ধরে গোলকের মা কেঁদে বলল, “দিঘি, তুমি তো?
কত কিছুর সুলুকসন্ধান জান। মোর ছেলাট। ভাল হয় এমন কুন ফকির (রাজা
জান না?
গোলাপী একজন রোজার খে!জ দিয়েছিল । রোজার দেশ সেই কোথায়,
বরিশাল না৷ কোথায় যেন। স্থপোরির নৌকো! চেপে এ দেশে চলে এসেছে ।
গোলককে দেখে সে বলল, “এই ছাওয়াল নি পাগল অইছে? না মেঞা»
আমি কই, ইনিরে বুঝি কেউ দিওয়ানা! করছে । হোনেন, এই এই জিনিস
লাগব |
জিনিস এল। রোজার বাড়িতে গোলক আর ঈশ্বর। সময় সন্ব্যেকাল।
রোজ] যেই বলল, “দেন শ্বপানের সতীর গলার খইমাল। ওর হাতে দেন |»
অমনি গোলক চঞ্চল হয়।
“নেন, খইমালা জলে দেন !+
এ কথাটি গুনে গোলক আসন ছেড়ে উঠে দাড়াল ।
বাবা গো! কৈতরীকে জলে দিও না বাবা? খইমালাটি গোলক তুলে,
মাথার চুলে জড়াল আর বলল, “ভয় কি কৈতরী ?'
“আরে আরে এ জবর দিওয়ানা, কার নাম কয়? রোজ! চেঁচিয়ে
উঠল।
ঈশ্বর ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে এল। |
তার মনে খটকা লেগে গেল। প্রথমে ইচ্ছে হল গোলককে ধরে মযাবে।
তারপর মনে হুল মেরে ধরে ব৷ কি হবে, এ ভাগোর দোষ । “নেত্য ঠাকুববটকে
দেওয়ানা খইযাল। ও ঠাকুরবটের কাহিশী ১৩৫
গড় করে কাজে যাই ঠাকুরমন্দেরে বা হাসা না দে নৌকো ছাড়ি না। আমারে
ঠাকুরবট এত বড়ে। শ্াস্তিট৷ দিলে?
ঈশ্বর খুব দুঃখ কৰেছিল।
তারপর থেকে ছেলেও বলেঃ “আমাকে গুণীর কাছে নিয়ো! ন1। বাপও
যলে, “ওরে গুণীর কাছে নেব ন।।
দুক্জনেরই ভয় পাছে গোলকের মনের কথাট] বেরিয়ে আসে ।
ঈখর জানে বামুনের মেয়েকে পাটশীর ছেলে ভালবাসে এ কথাটি
জানাজানি হলে কলঙ্কের শেষ থাকবে ন1।
দ[নীমণ্ডল তাকে বলেছিল “ঈশ্বরঃ এতজন আমার কাছে সেরে গেল।
তুমি ওকে একবার আন্লে না? একবার ফকিরপাটে ব।ধতে দিলে না?
তোমার বড়ো ছেলে বলে, বাপ ওর আরোগ্য চায় না। এ কথাকি
ভ।লো। ?'
ঈশ্বর চপ করে রইল।
“অমর ওপর বিশ্বাস না থাকে বলো তেমন গুনিনের কাছে লয়ে যাই।
পেট থেকে সব কথা বের করে নেবে» ছেলে ভালো! হবে । আমার মনে হয়
গেোপণকের এ বাইব্যামে। নয় ভাই, কে ওষু৫ করেছে ।”
ঈখবর মাটির দিকে চেয়ে কাদতে লাগল । ময়লা চাদরে চোখ মুছে বলল,
“গোলককে আরাম করে এমন ওষুধ কোনো! গুণীরঃ কোনো! রোজার হাতে
নেই দাদা | তুম আমি ইয়ার বী করব বলো? ছেলেটির কপাল মন্দ !*
£সে কী কথ। ঈশ্বর 1
হুক কথা । আমি সবজানি। জানি” কিন্ত জানতে পারব না» আমার,
আর কিছু শুধিয়ো না।,
এখন দ।নীমগ্ডলের মনে নানারকম সন্দেহ হতে লাগল । গোলকের পাগল
হবার মূলে ঈশ্বরের কোনে! হাত নেই ত? হাত আছে ভাবতে খারাপ
লাগে। আবার» আর একদিক থেকে ভাবলে দেখা যায় ঈশ্বরই তার আরোগ্য
বাধ। দিচ্ছে । এ-ও কম আশ্চর্য নয়।
সাত-পাচ ভেবে সে ঈশ্বরের বড়ো ছেলেকে বলল, গগন, তোমার মামাশ্বশুরই
যেগু.নন। সে কথা আম ঈশ্বরকে বলিনি। কাউকে কিছুই না জানিয়ে
তে।মগ। বাজ করে! । এতে ত গোলকের থাকতে হবে না» শুধু তোমার মা কাঠ
আংরার আচে পাচসের চাল ভাঙ্গবে । এই ত1'
ণ
১০৬ মহাশ্থেত! দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
আজ্ঞা। চাঁলটি যেমন কালো হবে, শেমনি জানা যাবে ও আর ভালো
হবে না। চালটি সাদা থাকলে গোলক ভালো হবে ।”
“তাই কর গ] যেয়ে। ছুর্গা, দুর্গা ! আমারও কি ইচ্ছে হয় না, ছেলেটাকে
হুস্থ দেখি?
গগন বড়ো গল্গায় বড়ো নৌকো! বায়। ফুরন করে যাত্রীরা তার নৌকোর
ব্রিবেণী হুগলী, দিকে দিকে যায়। বছর কয়েক হুল গগন বড়ো গাছে নেৌকে।
বেধেছে । গোলকের সঙ্গে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলঃ সেই কুম্বম এখন
তার দ্বিতীয় পক্ষ | কুহ্ৃমের বাবা অধর দাস পাটনীসমাজে মান্যগণ্য পুরুষ ।
গগন এখন তার শ্বশুরবাড়ির কথায় ওঠে, তাদের বথাক্জ বসে। গোলককে সে
সারিয়ে তুলতে চায়, সেটি তার নিজের মতে নয়।
“মা! মাগীর কাম্য, জানলেন মণ্ডরকাক1? লইলে, উনারা য্যাত ভালো
ভালে! করুক, আমার বিশ্বাস গোলক ত্যাত ভালো লয় । শ্বভাবের দোষে মাথ।
বিগড়িয়েছে । মা এই গুনিন রোজার পেছনে কম কড়ি ঢালছে না।
ইদিকে আমি আছি, আমার পরিবার আছে, তোমার ছেলে একটি লয়, আরো
আছে, সিটি ভাবা উচিত, না কী বলেন?
“নিশ্ন্ন। সংক্ষেপে বলে দানীমগ্ডল তাকে বিদায় দিল ও তার সাকরেদকে
বলল, «কী র'মবুঝলি? আ্ব্যা? আমরা বলতাম ঈশ্বরের চার ছেলে, ওর
কপাল চ'চ্চড়িয়ে খুলে যাবে। এখন যা দেখছি তা ত ভালো লয়, নাকী
বলিস?”
থভেয়ে ভেয়ে হিংসে বীষ, এ আর ভালোই বা! কী, মন্দই বা কী, বাবণে-
বিভীষণে, কাতিকে-গণেশে, এ আর কবে ছিল না বলো ?' সাকরেদ নিষ্প,হ কণ্ঠে
জবাব দিল। যতদিন দানীমগ্ডলের ভালো! কামাই হত, তারও কড়ির গেছে
মোটা হত, ততদিন সে মাতব্বরের মন রেখে কথা বলত। এখন দানীমণ্ডল
পড়তি মান্য, পাগল সারাতে পীর-থানে যায়, তাই সাকরেঘ কচিৎ দানীর মন
রেখে কথ! বলে।
কিন্তু, গগনের মামাশ্বগুর যথাসময়ে ঈশ্বরের বাড়িতে এলেন। ছেলে
ভালে! হবে এই আশায় ঈশ্বরও শেষে বাজি হয়েছিল । ঈশ্বঘ্ের বাড়িতে
পাচজাতের মানুষের ভিড়, যজ্ঞের জায়গায় মানুষ থই থই করতে লাগল।
এমন কী, সনাতন দীঘড়ি পর্যন্ত ঈশ্বরের অনুরোধে এসে বললেন। এটিও
একটি নামাজিক কাছ । প্রতিবেশীর প্রতিটি কাজই সঙ্গে থেকে কিনবে দিছে
দেওয়ানা খইমাল| ও ঠাকুরবটের কাহিনী ১৯৭
হয়। সে বিয়ে শ্রাঞ্ছ শবযাত্রা চুড়োশ্করণ হোমযজ্। যাই হোক না
কেন।
দীঘড়িদের ঠাকুরপাঠ বাড়ি থেকে বড়ে। বড়ো তাত্রকুণ্ড আনা হলঃ একট!
মত্ত পিদিম, সেট! সারারাত জল চাই।
সব আয়োজন শেষ হলে গুনিন বললেন, “একবার ছেলাটিকে আনা করান,
চক্ষে দেখি। একবার দেখব, বাস |,
কিন্ত গোলককে কোথাও পাওয়া গেল না। এখন তাকে খুঁজতে
যায় এমন সাহস কারোরই হল না। কেননা বাইরে বড় ছুর্যোগ, তুফান,
বৃ্টি। "শ্রাবণ মাসের এই রকম দিনই ভালো” গুনিন বলেছিলেন।
আজ বহুদিন পর সেইরকম হুর্ধোগ |
এমন ছুর্ধোগ খইমালার বিয়ের সময়ে হয়েছিল, আবাম এই হল। এ
চর্ধোগে কেউ বাইরে বের়োরনি। বনের শেয়ালও বুঝি বনে
আছে।
এ ছুর্ষোগে, শ্বশানযাত্ীরা শব বার কলে না, ঘরে রেখে বাসি করে। ইচ্ছে
হলেও বাইরে আসার উপায় নেই। কাকন্বীপ, গেঁওখালি কতই বা দুরে ।
সমুদ্রের বুকে, শ্রাবণে ভাত্রে যে ঘুপিবাত্যা ওঠে, তা দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র
দাপাদাপি করে। আজ অনেকদিন বাদে আবার সোনারপুরঃ লক্ষীকাস্তপু'র,
বারুইপুর, ওদিকে ধবধবা-গোবিন্দপুর, এদিকে এড়াচি, রাজপুর, কামডহরি
সর্বত্র ঘুণি হাওয়ার মাতামাতি, মহাছুর্ষোগ। মাহগষের জগ্ম-মৃত্যু কারে!
জন্তে অপেক্ষা করে না, কিন্ত প্রস্থতির জন্যে দাই ভাঁকবার উপায় নেই, মানুষ
মরলে বের করবার উপায় নেই, জগৎ সংসার নিরুপায় ।
এই হূর্ধোগে, এক! খইমালা* বাড়ির বাইরে।
এ চার বছরে স্বামীর সেব। করে সে তীকে সারাতে পারেনি । ক্রমে
নীলমণি বিছানা নেন। তারপর তার রোগশয্যার খবর পেয়ে ভিন্ন গ্রাম থেকে
সেই বিধবাটি এসে উপস্থিত হয়। সঙ্গে তার ভাইরাও ছিল। ূ
তারাই খইমালাকে যারপরনাই কষ্ট দের। এদিকে নীলমণি* খইমালান্ধ
১০৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ট গল্প
স্পপ-যৌবনকে, খইমালাদের নারকেল গাছ ও ঘোঁ-চালা বাড়ির মতোই নিজ
সম্পত্তি ভাবতেন। নম্পত্তি আছে, অথচ ভোগ করতে পারছেন না॥
সেজন্তে তাকে চোখের আড়াল দেখলেই কুৎসিত সন্দেহ করতেন। বিছানায়
পড়ে থাকলে কী হয়ঃ পায়ে বেশ শক্তি অনেকিনই ছিল। সে শক্তির চিহ্ন
এখনো খইমালার শরীরের কোথাও কোথাও আছে।
শেষের দিকে তার ঘোর সন্দেহ হয় খইমাল! তাকে বিষ দ্েবে। তাক”
হাতেও খেতে ভরস! পান না। সে ভাগ্নীকেও ভরসা হয় না। শেষ অবধি না
খেয়ে তার নাড়ি শুকিয়ে যায়। তারপর তাঁর আগেকার ছুই ছেলে এসে
উপস্থিত হয়। সকলেই মনে করত খইমাল। স্বামীর সম্পত্তির হদিস ছেনে
ফেলেছে । ফলে খইমালাকে বড়ে কষ্ট পেতে হয়। এ-অঞ্চলে বউয়ের ওপর
নির্যাতন এমন কিছু নয়। কিন্তু তার মধ্যেও এ কথাটি বিশেষ রটে যায়, নীলমণি
ঘোষালের বেষ্ণবঘাটার পরিবারটির মতো! সহগুণ এ যুগে কারো পক্ষে
লস্ভব নয়।
এদিকে, তাকে যে তাড়িয়ে দেবে তাতেও কেউ রাজি ছিল না। কেননা
রোগের প্রকোপে নীলমণির নিঃশ্বাসে, কফে, সমস্ত গায়ে তীব্র দুর্গন্ধ ।
খইমাল! ছাড়া কেউ তীর কাছে যেতে পারে না। পরগুদিন নাক বসে যায়, ও
তাই দেখে নীলমণির জ্ঞাতি গুণমণি ঘোষাল কবিরাজকে বললেন, “আন কী
দেখ? এখন আমগাছ কাটতে বললেই হয়।,
আছ সন্ধ্যায় নীলমণি চোখটি বুজেছেন। মৃত্যুর আগে, আন হারাবার
আগেই তিনি আধাবিকারে বলেছিলেন, “আমার পইতেবীধা চাবি, সিন্দুকের
নিচে কিন্তু আর কিছু বলেননি । নীঙলগমণি ঘোষাল আজ সন্দেবেলা মায়?
গিয়েছেন। মড়ার কাছে ওরা খইনালাকে বলিয়ে রেখে গিয়েছিল। এস
বাঁ, এমন ছুর্ধোগে । মড়া পোড়াতে আসতে কেউ রাছি নয়। তাইঠিক
হুল সকালবেল৷ প্রায়শ্চিত্ত করে শবদাহ হবে।
নিজেদের মধ্যে কী ফিসফিস করে বলছিল ওযা, খইমাল শুনতে পান্থ
ওর] বলল মড়া ছুয়ে থাকো, ও মড়া ছুয়ে বসে রইল।
দরজার শেকলটা টেনে দিতে বলল ওরা।
ও ঘরে বসে ওর যেন কী বলাবলি করছিল।
নীলমণির বড়োছেলে চেঁচিয়ে কথ! বলে। সে বললে, 'পনেন় টাক! পাচআন!
ভিনপয়সা খরচ | আমরা তিনজনে ভাগ করে খরচ দেষ। এখন তুমি ধলছ
দেওয়ান! খইমাল1 ও ঠাকুরবটের কাহিনী ১০৯
সতীবস্তোর দেবে না, ঢুলীকে আটগণ্ডা পয়সা দেবে না। পুরুত
তিনটি টাকা নেবে তা দেবে না। বাবা ইয়ার কমে হত্ন কী করে বলে।
দ্ি'নি।,
ভাগ্নী বলছিল, 'এ একবারের খরচ, জানলি হরিশ ? তা" পরে তুই সব
নিজের পেটে পোরুন! কেন?
খইমালার ভাসাভাস! মনে হচ্ছিল কথাগুলে! ও বুঝতে পারছে অথচ যেন
বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।
একটু রাত হতে সবাই যে যার দোরে খিল দিলে । তখন কে যেন ঘোরে
শেকল নাড়া দিলে।
ওদের পাটকরুনী বি। উঠোন লেপে, ধান ভানে, বাসন মাজে ।
খইমালাকে ধা হোক ও তবু একটু দেখাশোনা করত। আজ ঘরে ঢুকে ও
খইমালার কাছে এসে বসল ও ফিসফিস করে বলতে লাগল, কাল তোমার
কাছে এসতে পারবুনি আঙাবউ, কাল তোমায় নে, সকলে টানাছেড়া করবে।
তোমার হাতের আগাকড়টা আমার দেবে মা? আমার ছেল দেশাস্তরী।
বউটা চক্ষের জলে জেন্তে ঝায়। কাল তুমি সতী হবে। সতীরঙগের
(অঙ্গের ) অলঙ্কারে মানুষের ভালো হয় মা!”
খইমাল৷ কিছুক্ষণ ওর দিকে হ্থম্দর, কালো অবাক চোখ ছুটি তৃলে
চেয়ে রইল। বুঝতে পারছে সে, সব বুঝতে পারছে। ওকেই ওর!
কাল নীলমণির সঙ্গে বেধেছেদে পোড়াবে। তাই সতীবন্ত্রঃ পুরুত
আর ঢুমীর কথা হচ্ছিল। খইমালার হঠাৎ মনে হল ওরা কি জানে, এই চার
বছর ধরে ও স্ধু গোলকের কথা ভেবেছে? সেইছন্ে ওকে সতী করতে চায়?
টাকাপয়সা সোনাদানায় কথা খইমালার মনে হল না» কেনন! নীলমণির
সম্পত্তিতে ওষ অধিকার আছে বলে ও কোনে! দিনই মনে করেনি ।
বি অন্বস্তির সঙ্গে ওকে দেখছিল। কী আশ্চর্য কূপ বাঙাবউয়ের--যেন পটের
ঠাকুর । এত অবস্থে, এত অনাদরে তবু. কী রূপ।
এ আগুনের খাপরা কোথায় আখবে সেই ভেবে উনারা ওয়াকে সতী
কততেছেঃ ঝি মনে মনে ভাবল।
খইমালা হাত থেকে লাল কড়, সোনার সরু রুলি, সব বি-কে দিল ।
£এ কী গো আগ্ডজাবউ! এবে সোনা গো!"
তুমি নাও।,
১১৭ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
“নেব?
“নাও ।
তুমি সগ্যবাসী হও মা, বেচেজীয়ে থাকো |,
পাছে কেউ দেখে কেড়ে নেয় সেই ভয়ে ঝি তাড়াতাড়ি চলে গেল।
যাবার সময়ে ভাবল কাল যাকে সতী করবে আজ তাকে কেউ একল! ফেলে
রাখে? এ বাড়ির সবই স্িছাড়া।
খইমালা আন্তে উঠে ধাড়াল। ঝড়ের দাপে গাছপালায় শন্শন্ শব্ধ ।
খইমালার মনে হঠাৎ বাচবার ইচ্ছে প্রবল হলঃ ভীষণ। দরজার চৌকাঠে এক
প1 রেখে ও একবার ভাবল, না» এমন কাজ করবে না|
তারপর দেখল, না, তার মনের কোথাও ম্বামী নেই, কোনোদিন ছিল ন]1।
গোলক তার ছোটবেলার সাথী, কতদিনের বন্ধু। গোলক ছাড়া অন্য পুরুষের
কথা তো সে চিস্তাতেও আনেনি?
খইমাল] দরজার বাইরে প৷ দিল।
যেমন করে হোক সে মীরকাজ্জির ঘাটে গিয়ে হোগলার নৌকোয় চড়বে।
হোগলার নৌকো! রাতদিন গঙ্গা বায়, তাদের দেশের দিকে যায়। হোগলার
নৌকোর মাঝির? তবু শরীরে দয়া রাখে । তাদের পায়ে ধরে খইমালী বলবে,
“যেমন করে পার আমাকে মায়ের দেশে পৌছে দাও | সেখানেও যদি এরা
তাকে ধরে আনতে যায়, তাহলে খইমালা আরো দুরে যাবে !
ছুর্যোগের রাত হলে কী হয়, আসলে শুরুপক্ষ । তাই অন্ধকারটি ঘ্বচ্ছ।
মেঘ-বাদলের রাত বোধ হয় এমনই শ্বচ্ছ হয়। খইমালা এখন দেখল মাথার
চুল সরাতে গিয়ে কিসে যেন চুল বাধে। হাতে সরু রুপি, লোহা। কার
চিহ্? নীঞ্মণি ঘোষালের চিহ্ন?
হাত থেকে টেনে গরনা ও আয়তির চিহ্ন সে ফেলে দিল। গোলাপী
নবকের ভয় করত, খইমাল1 এ চার বছর নরকবান করেছে। পাকা ঘরে
ঘুমালে, আর ভরপেট অন্ন পেয়েও সব সুখ হয় নাঃ নীলমণি তাকে
বড় কষ্ট দিয়েছেন । বিকারে হাত কামড়ে ধরেছিলেন, এখনও ব্যথ।
আছে।
এ নদী, নদীতে নৌকে1 নাচে। এড়াচির পাটনীকা! বড়ো ভীরু, তার!
নৌকো! তুলে নেয়নি কেন? এভাবে আছড়ালে নৌকো নিমেষে ভাঙে।
শ্রখন, একটি দাড় পেলে খইমালা এই তৃফানেই নৌকো বাইতে পারে। এখন
দেওয়ান খইমালা ও ঠাকুরবটের কাহিনী ১১১
খইমালার যনে হল তার শরীরে মত্ত হাতির বল সকালের আলো ফুটবার
আগে, আধারে আধারে সে একাই মার কাছে চলে যেতে পারে, অসাধ্য
সাধন করতে পারে।
কিন্ত সামনের নৌকোয় গোলক ছিল। খইমাল] নিমেষে চমকাল। গোলক
কেমন করে এ দুর্ধেগে এখানে এল ? নাকি গোলক আর বেঁচে নেই, তাই
প্রেত হয়ে প্রেত-নৌ.কা বায়? সে থমকে দাড়াল।
*কৈতরী? তুমি ডালে কেন?
"গোলক, সত্যিই তুমি! এখন খইমালার মনে এক আশ্চর্য অপার
আনন্দ । যেন ঠ!কুরবট তার সব কথা শুনেছেন, তাই গোলক তাকে নিতে
এসেছে । যেন সমাজ নেই, সংসার নেই, লোকনিন্দা পেই। শুধু গোলক আর
খইমাল। ছাডা কেউ নেই।
কবে, কোন প্রাচীন শৈশবে ছুছনে দুজনের সঙ্গে ঠাকুরবটের ছায়ায় বসে
খেল1 করেছিল, গোলকের সে কথাটি মনে আছে তাই ও খইমালাকে নিতে
এসেছে ।
হ্যা, আমি ।,
তুমি কেমন করে এলে?
€তোম'কে নিতে । সন্ধে, দাদ! বললে গুনিন আসবে। গুনিনকে আমি
বড়ো ডরাই, আমার মন পাপ আছে তো? পাপ থাকলে গুনিনকে ভয় হয়।
তাই আমি নৌকে। বেয়ে যাচ্ছিশাম | বাজপুরে জহরি পুরুত বললে,
এড়াচির ঘোষালের অবস্থা এখন তখন, বুঝি হয়েই গেছে। নকুডদাসের
মেয়েটি রশাড় হল। তাই ঠকতরী* তোমাকে নিতে এলাম। জয্নহ'ওর বলে
ভোর হলে ওর] তোমায় জ্যান্ত ছেঁচবে, আহা বড়ো কষ্ট । তার চেয়ে বামুন-
মাসীর কাছে চল।,
গোলকের সব কথাই খইমালার কানে প্রলাপের মতে মনে হল ! কিন্তু সে
নৌকোর এসে উঠল।
বড়ো তৃক্ধান। বাতাসের ছ্বোর। তা ছাড়া এ গঙ্গ। বড়ো! সন্কীর্ণ* এদিক
থেকে ঠেলা ল গলে নৌকো ওদিকে আছ্।ড় খায়। গোলক পাড় দিয়ে ধীবে
খ্বীরে যেছে লাগগ।
বুট? ছাটে খইমালার চুল, কাপড় ভিঙ্গতে লাগন। সে গল। তুলে জিজেস
করল, “গোএকঃ তবে' যে সবাই বলে তুমি পাগল হয়েছ?
১১২ মহাশ্বেতা! দেবীর তরে গঞ্জ
গোলক কিছুক্ষণ জবাব দিল না। তারপর বলল, «কৈতরী, এ কথা বলো
কেন? আমি ঠাকুরবটকে মানত করেছিলাম, পাগল হতে আমার বড়ো!
ডয়।,
খইমাঞ্গার ভাপা ভাঁসা সব কথা মনে পড়ল । কখনো ধীরে, কখনো জোরে»
বাতাস ও নধীর শ্রে'তের খেয়াল মতো নৌকো যেতে লাগল।
«গোলক* আমাকে নিয়ে কোথায় যাও ?
“অনেক দুরে যাই কৈতরী ।,
"সেখানে গেলে আর ভয় নেই ?"
«কিসের ভয়?
“মান্ছষের ।
'না কৈতরী। কালিকাক্ষেত্রে যাই চলো ॥ সেখান থেকে আমর] আরো
দরে যাব।'
অনেক দুরে গেলেই ভালো। এখন খইমালার মনে হুল সে বুঝি আশ্চর্য
কোনো দেশ। দে দেশে কেউ বলে না খইমালা কেন পাটনীর জাতে জাত
দিল। কেউ বলে না তোর মনের কথাটি পাপকথা।
এখন যেন মনে হয় সেইসব কথাই সত্যি। সেই জোনাকি জলা সন্ধ্যায়
বালিকা খইমালা গোলকের সঙ্গে ঠাকুরপুকু'রে পিদিম ভাসাতে যেত।
ঠাকুরবটের ডালে মাল! দিয়ে কে কাকে বলেছিল পরজন্মেও আমি তোমার কথা!
মনে রাখব ?
“আশ্চধ ফকির কেন ভালে! উপাখ্যান বলে নি গোলক? কেন বলেছিল
প্রথম পরস্তাবেই নায়ক দিওয়ানা 1?”
“আম্চর্ধ জানে না €কতগী ।?
. পরের পরস্তাবে কী?
“পরের পরস্তাব আমি জানি না।"
"তবে কে জানে?”
'কেউজ্জানে না।”
“আমার তোমার'জন্তে কষ্ট হুত গোলক '
“কষ্ট কেন কৈতরী ?
“ভয় হুত
ভয় কোরে না কৈতন্বী। এখন আর তোমার কোনে! ভয় নেই ।
'দেওয়ানা খইমাল! ও ঠাকুরবটের কাহিনী ১১৩
, তুমি আমার কথ! ভাবতে ?
গোলক একটু হাসল। এখন আকাশের মেঘ বাতাসের তাড়নায় ভেসে
চলেছে । দিকৃগারা হাতির পালের মতে! কালে! মেঘ।
“গোলক, কালিকাক্ষেত্রে যবে, তা গঙ্গা! গিয়ে খালে পড়তে নৌকো
'ভাঙবে না?
“কোন্ খালে ?
“কেন, বাশদ্রোণীর থালে? না এখন আর মে ভয় নেই?”
ভয় নেই।” গোলক অক্ফুটে বলল, ওই দেখ পুব আকাশ ফস হয় ।*
খইযান। দেখল পুব আকাশ ক্রমে তরল হচ্ছে । অদূরে হাটতলার চাল1।
এমন সকালেও ঘাটে কত লোক ।
গোলক এযে আমাদের ঘাট ?"
হ্া। কৈতরী ।,
“এখানে কেন এলে?
গোলক সে কথার জবাব দিল না।
«গোলক, নৌকো বাও ।*
“না কৈতরী, সকাল হয়েছে ।,
“তাতে কী?
“তোমার কলঙ্ক ।'
“কলক্কে আমি ভয় করি না গোলক, তৃমি আমায় সঙ্গে নাও !, খইমালান্ব
চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল।
“৫কতরী, এতদিন ভাবতাম ঠাকুরবট মিথো, দেবতা নেই, কেন ভাবতাষ
জান ?,
খইমাল! ঘাড় নাড়ল।
যদি আমার মনে সত্যই পাপ থাকে, যদি আমি সত্যিই পাগল হই,
তাছলে জানব ঠাকুর মিথ্যে।?
তা কি হয় গোলক 1 শোননি যেধিন দেবতা চলে যাবেন, সেদিন
থেকেই &ঁ বটগাছের যূল শুকোবে ক্রমে পড়ে যাবে ! লেদিন থেকেই এই
গঙ্গার মাহাত্মা যাবে, নদী মরবে 1,
“শুনেছি তাই না! 1 তুমি বললে বলে মনে পড়ল, নইলে এখন আনব
মনে পড়ে না।,
১১৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প,
'আমার মনে পড়ে। তুমি আমি একসঙ্গেই শুনতাম। সেই, যখন
আশ্চর্য ফকির আমাদের পুথি শোনাত 1,
“আম্চর্ধের পুথি! ঠিক বটে।?
এখন, খইমালার মনে সেই অনেক আগেকার সৌরভ ফিরে আসতে লাগলঃ
বুঝি বা চেষ্ট1! করলেই অনেক কথা মনে পড়ে। কিন্তু না, মনে পড়লেও সব
কথা মনে করতে নেই | কিছু কিছু কথা বুকের কোটরে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে
দেহাত্তে ছাই হয়। কিন্তু গোলক মুখ ফিরিয়ে আছে, খই মালার চেয়ে দেখতে,
দোষ কী?
“কৈতরী ! এ ঘাট দেখা যার । আমি পাড়ে লাগাই, তুমি নেমে যাও।,
“গোলক, তুম আসবে না?
“না কৈতরী। এখন, তোমার মুখের দিকে চেয়ে আমি নিশ্চয় জানলাম
আমার মনে পাপ নেই। কিন্ত ওরা তাজানে না। তুমি ওদের বলে দিয়ো ।ঃ
কিন্ত গোলকের হাতে লোহার কড় কেন? এমন আগ্জি কাটা কড়
দানীমণ্ডল হাতে পরায়, এ কী?
খই মাল] বিশ্মিত মুখে কথা নেই, সে অবাক হয়ে চেয়ে রইল ।
সনাতন দীঘ.ড়, ঈশ্বরপাটপী, গগন, জয়হরি, চেনা-অঠেনা আরে। কত
মানুষ, রাঙা কাপড় পরনে গুনিনঃ গুনিনের হাতে কিসের সর1?
হায় গোলক 1?
ঈশ্বরের গলার স্বরে ছুঃখ* কাতরতা, শোক) গোলকের যে-কথারটি
অপ্রকাশ ছিল, এখন এর! সকলে জানল । খইম[লার জন্যে আজ এত বছর
গোলক পাগল, এখন একথাটি কেমন করে চাপা দেওয়। যাবে?
গোলক তাড়াতাড়ি নোৌকে] নিয়ে মাঝনদীতে গেল। এখন নিমেষে তার
মুখের শান্তভাবটি দূরে গেল। বুঝি খইমালাকে আনবে বলেই ভগবান এ
শাস্তভাবটি দিয়েছিলেন, এখন কেড়ে নিলেন।
“চাল সাদ। থাকুক আর কালো হোক, আমি বলি নাই গোলক পাগল?
বলি নাই উ রোগটি সারবার লয় ?
গগন ছুটে এল, টেচিয়ে বলল। তারপর বলল, ধর গোলকের নৌকো
ধর্। গোলক পালায় ।?
খইমালা অসহায়। তার মুখের ভেতর ভ্িভ আঠার আটকাল* কথ!
লয়ে না।
দ্বেওয়ানা খইমাল! ও ঠাকুরবটের কাহিনী ১১৫.
. ঠকতরী | তুমি ওদের বলো! আমার মনে পাপ নেই, আমি পাগল নই ।
হেই দাদা! তুমি সাতার কাট কেন? তুমি কৈতরীকে শুধোও। হেই
দাদা!
“ঈশ্বরকাকা ! গোলক পাগল নয়। তোমরা ওকে ধর কেন? খইমাল!
আর্তকঠে বলল) খইমালা জানে তাড়া করে ধরলে বাধলে কেমন লাগে,
আহা ওরা কীজ্জানবে! গোলককে অমন করে ধরছে কেন? গোলক কি
বনের পণ্ড?
'কৈতরী! দাদা আমায় ধরে। তবে কি আমি পাগল? হা ভগবান
আমি বদি পাগল হই আমার মনে ষদ্দি পাপ থাকে তাহলে ঠাকুরবট উপড়ে
পড়ে, এই গঙ্গ মাহাত্য হারায়, খবরদার | আমায় পাগল করো না!
গোলক 1,
থইমাল! লোকলজ্জা নিমেষে তূলল। গোলকের ছুঃখ সে বোঝে, তার মতো
ষন্রণা এর! কে সয়েছে?
"গোলক, বৈঠা ফেলো না, জোরে জোরে বাও, সামনে খালের মুখ !
“হেই ঠাকুর | দেবত্বের মায়া করে! তো! আমায় পাগল করো না। নইলে
তোমার মাহাত্মা যায় ।
মজা পেয়ে এখন অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেয়। গগন তাদের লবার
আগে।
£কেন এত কষ্ট করলি কৈতরী! নাই, ঠাকুর নাই। এ গঙ্গা শুধু জল।
শুধু জল।,
গোলক বৈঠা ফেলল, ডিডির মুখ উলটে জলে ঝাঁপ দিল।
'যাস্ না গোলক, সামনে বাওড় ।* ঈশ্বরের আর্ত চীৎকার কত দুরে গেল।
আশ্চর্য ফকিনের পুঁথির শেষ প্রস্তাবে কী ছিল খইমাল! জানে না।
“গোলক ! আমায় সঙ্গে নাও!” তার আর্ত আহ্বান গলায় ফুটল না) সে
দেখল কী ঠাকুরবটে, কী জাহৃবীতে কোথাও দেবতা নেই। গোলক, খইমাল।
আর তার ডিস্উকে ব1 টানে তা শুধুই নদীর শ্রোত। গোলক আর খইমালাকে
৫দ-ন্োত কলার খোলার মত অধহেলে ডিডিহদ্ধ শৃন্যে ছ'ড়ে আবর্তে ঘুরিয়ে
লাধনের ফেলায় ফেলল।
তারপর তীব্র শ্োত, তারপন্ন বড়ো! গঙ্গা। ভাসতে ভাসতে গোলক আর
খইযাঙ! কতদুর গেল, আর দেখ! গেল.না।
শরীর
১। সন্ধ্যায় মেয়েটি একটা রুপোলি ফিয়াট চালিয়ে গড়িয়াহাটার মোড়ে
আসে। গাড়িটা বুলেভার্ডে রাখে । ও বাদিকের ফুটপাথে এসে দ্রাড়ার।
উলটোদিকে বাজারের সামনে একটা কালো গাড়ি এসে দাড়ায় । একটি
যুবক চালায় । ছেলেটি গাড়ি থেকে নামে না। ছেলেটির চুল এই বরেসেই
কাচাপাকা! পোশাক ওর সাধারণত শাদদাই থাকে। ও গাড়িতে বসে
মেয়েটিকে দেখে।
মেয়েটি কখনো! কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলে। রুমাল বের করে ঘাড়ট।
মোছে। তারপর রাস্তা পেরিরে ওর গাড়িটা নিরে বেরিয়ে যার । ওদিকের
কালে গাড়িটা তখন আত্তে সরে যায়।
মাঝে মাঝে মেয়েটি কারো সাথেই কথা বলে না।
তখন কালে গাড়িটা খুব তাড়াতাড়ি সরে সেখান থেকে বায় ।
২। মাঝে মাঝে মেয়েটি বিকেলে কুপোলি ফি্াট চালিয়ে বালিগঞ্জের সেই
চায়ের দোকানটার সামনে আসে । তখন কালে। গাড়িট। থেকে যুবকটি নেমে
আসে । ওর! ছুজ্ধনেই চায়ের দোকানে ঢোকে । কেউ কারে। সঙ্গে কথা
বলে না। কোনো কোনে। দিন মেয়েটি কোনে। ছেলের সঙ্গে কথ। বলে। তখন
এই যুবকটি বেরিয়ে যায়। অবশ্ত যুবকটি দেখে নেয় মেয়েটি রুমাল বের করে ঘাড়
মুছল কি না। প্রায়ই মেয়েটি কারে! সঙ্জেই কথা৷ বলে ন!। যুবকটি অবস্ঠ
দোকানের মালিকের সঙ্গে কথ| বলে, গল্প করে । যুবকটি শাদা পোশাক পরতে
কখনো ভোলে না।
৩। মাঝে মাঝে মেয়েটি রুপোলি কিয়াট চালিয়ে ছুপুরে পোোপাড়ায
দেই বাড়িটার সামনে যার়। উলটোদিকের ফুটপাতের গা ঘেষে একটা
কাঞ্চন গাড়ি এসে গ্লাড়ায়। গীড়িটার সামনের সিটে এক ফুবক"**।
সকালে মেয়েটির কুপোলি গাড়ি কোথাও দেখ! যায় না। কেনন
অনেক বেল! অবধি ঘুমোয়। ওর রাত অনেক রাতে হয়--বখন পথের
কুকুর, কানিসের বেড়াল ঘুমিয়ে পড়ে। চাদ এবং পথের নিয়ন বিশ্রাম
চায়, কলকাতার পথের গোটাকয়েক স্ৃত্তি শুধু ধাড়িরে থাকে, আই তৃকলেই-
/
শরীয় ১১৭
স্ুমিয়ে থাকে | শুধু আরশোলা ও ইছুরদের কথা বলা গেল না। ভক
এলাকার ইছুররা এই সময খুমস্ত খালাসী ৰ1 ভিথিরি পেলে পায়ের গোড়ালির
নিচ থেকে সাবধানে একটু একটু মাংস কুরে খেয়ে চলে যায়। আর নরমাংসে
ওদের প্রবল ভালবাসা । শোন! যায় বিশ্বিসারের গীত এক সময়ে আম
নরমাংস'"
মেয়েটি ক্ল্যাটে ফিরে আসে আটট]1 নাগাদ | এসেই বাথরুমে ঢোকে।
স্টিমবাথ নেয়। ওকে নিতে হয় | কেননা ওর কাছে কিছুক্ষণ বাদে যিনি
আসেন, তিনি যদিও সকলের, “সব নিবি কে সব নিবি আয় বলে, এক সময়ে
যদিও তিনি তার পৈতৃক বাড়ি ঘর দোরের অনেকগুলোই দিয়ে দিতেন তবু
এখনে! তিনি নামে এবং পরিচয়ে নৃপতি। যদিও তিনি সকলের, তবু গৌড়!
বিধবা] যেমন মুণ্ডর ডাল আর হলুদ ছোন না, নৃপতিও মেয়েদের চামড়ায় নোংরা
খকলে স্পর্শ করেন না। দিকে দিকে বন্তৃতা, মিটিং করে, এই অসম্মনে স্ব
ও সমাধিস্থ আমাদের বাংলার এদ্রিক থেকে ওদিক অপরের জন্তে ছুটোছুটি
করে ওর বয়স যাটের কাছে হল। তবে এখনে বাপের মতো (উনি এক ফরাসি
জকির ছেলে ) স্থৃবিপুল চেভারা । এখনে উানও প্টিমবাথ নিতে ভোলেন না ।
€&র বয়সে কলকাতায় ওকে অন্তত পনেরোট। মেয়ের জন্যে সময়ে সময়ে ফ্ল্যাট
রাখতে হয়েছে। প্রতিটি ফ্্যাটে এ ট্টিমবাথের বন্দোবস্ত গকে করতেই
হয়। “সাধারণ মানুষ 1 বলে ঠেঁচানে। হচ্ছে এক কথা, কিন্ত কত আর
সাধারণ হতে পারেন নৃপতি? ফরাসি রক্ত আনব বাঙাল পরিচন্ত
নিয়ে?
ক্্যাটে ক্রযাটে ট্িমবাথ রাখেন, আর মেয়ে খু'জতে জী এম.এর কাছে যান।
এম-এর পুরে। নাম বলা যাবে না, তবে একথ। নিশ্চনতর বোঝা যাচ্ছে এম,
কাজের লোক। শ্বতঃসিদ্ধ এই গাণিতিক নাশিফল। নৃপতির যদি রক্ষিতা
দরকার হয়, তাকে ওদের কাছেই যেতে হবে | কেনন। নৃপতির আবার কুৎসিত,
মুখ ও স্থন্দর দেহের ওপর প্রবল আসজি। এ লব মেয়ে আজকাল হরদম
ভূতীয় শ্রেণীতে মেলে । এই মেয়েটার বিশেষত্ব অবশ্থ অন্তত । এর বাপ হম
কোনে। এক উপজাতির মান্য । ওর। দুজনে একাধিক খুন করে ধর! পড়েছিল ।
ফালি হয়ে যায় । ছোটো মেয়েটা সরকারি তত্বাবধানেই বড়ে। হয়। তারপর
স্থলে পড়ে, কলেছে আলে । ওর মুখচোখের কথা না বলাই ভালে! । একধরনের
প্রাচীন, কর্কশ পাথর দিয়ে দিনে যেন মুখটা তৈরি। চোখের চাহনি লাধারণত
১১৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গল্প
ছর্বোধ্য । মুখে কী এসে যায়, শরীর, ওর শরীর, আদিম মাহ্ষদের পুদ্ধিতা
প্রতিমার মতো। কালো, আদিম, কঠিন, ভয়ঙ্কর ।
আর সাহস। আর প্রবল বিশ্বস্ততা বোধ । সেই সঙ্গে যা এমকে আকর্ষণ
করেছে, তা হল কোনে! নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে না মেয়েটা । মেয়েটি
পান করে। ভালে! জামাকাপড় পরে। বেরিয়ে আসে । তারপর ওর
ঘরজায় একট1] টোকা পড়ে। সেই যুবকটি আসে। ছুটো। টোকা পড়ে।
এম আসেন । মেয়েটি একটা খাম মাঝে মাঝে পার এমের কাছ থেকে
খ[মট1 ও লোহার আলমিরাম্র ফেলে রাখে।
তারপর এরা চলে যায়। নৃপতি আসেন | মেয়েটির সঙ্গে মাঝে মাবে
উনি এইভাবে উত্তর-প্রত্যুত্বর চালান। মেয়েটিই কথাটা তোলে, কেননা
প্রায়ই আজকাল ওর মনে হয় ও ঠিক কাজ করছে না ।
এই যে আমাকে দিয়ে ওদের ধরাচ্ছে .*
তুমিযে ওদের চেন।
মেরে ফেলে কেন?
ওদের মেরে ফেলাই ভালো! ।
যদি ওর] বুঝতে পারে.**
তোমাকে টুকরো! করে ফেলবে।
আমাকে ! মেযেটি চুপ করে যায়। কী যেন ভাবে।
বৃপতি ছ্বিগ্যেস করেন, তোমার সেই তার খবর 'পাও না?
না।
এখনে! তাকে ভালবাস?
মেয়েটি উত্তর দেয় না। নৃপতিকে ও একটু বিস্মিত চোখে দেখতে থাকে।
তুমি আমাদের সাহায্য কর কেন? এম বলেন বলে?
হ্যা।
কেনন। মেয়েটি এমের কাছে কৃতত্র। অত্যন্ত কৃতজ্ঞ | এমের হাতে
বন্দী, নিরুপায় । দোকানে দোকানে চুরি করে বেড়াত ও, ধরা পড়ে ওয়ানিং
পায় । তারপর অচেন! লোকের সঙ্গে বায়ে গিয়ে ববত। স্থবিধে পেলেই
তাকে সাহায্য করতে গিয়ে পার্পট সঙ্গিয়ে নিত। মেয়েটি ধরা পড়ল
এক অধ্যাপককে বাচাতে গিয়ে। ভদ্রলোককে এখানে দেখে ও অত্যন্ক
'সঘাত পেয়েছিল। কেননা গুর বাড়িতেই উনি ছাত্র-ছাত্রীদের ভারুতেদ,
শরীর ১১৪৯
নানারকম কথা বোঝাতেন। গর বাঁড়িতেই মেয়েটি যেত অম্থপমকে একটু
কাছ থেকে দেখতে পাবে বলে। অন্থপমের সঙ্গে একঘরে থাকতে পাৰে
বলে। অন্যরা, আলোচনা করত, কথা বলত, বই কাগন্জ পড়ত।
মেয়েটি শুধু অনুপমকে দেখতে | তারপর একদিন অন্থুপম ওখানে আসা
বন্ধ করে দের | তারপর একদিন অন্কপম ভি. আই. পি, হয়ে গেল।
মেয়েটি সেদিন ওকে নিজেকে দিতে গিয়েছিল। অন্থপম ওর ওপর
খুব স্থুবিচার করেনি সেদিন কিন্তু মেয়েটির লজিক দেখে ও অবাক হয়ে
গিয়েছিল।
মেয়েটি অন্থপমকে চায় । এ জগতে কিছু চাইলেই কিছু দিতে হয়। মেয়েটি
নিজেকেই দিতে চায় কেননা ওর আঁর বিশেষ কিছু নেই। অন্থপম অবশ্য
ওকে কিছুই না বলে ওর জীবন থেকে সরে গিয়েছিল। মেয়েটি সেই
সময়ে কিছুদিন কী করেছে, কী করেনি, কিছুই বলতে পারবে না।
কলকাতার পথে পথে উদ্ভ্রাস্ত হয়ে ঘুরত। মনে হত এবার ভৃলে গেছে
অস্থপমকে, আর যন্ত্রণা নেই কোনো। কিন্তু ঘুম ভেঙে যেই চোখ তাকাত
অমনি বুঝতে পারত যেমন ব্যথা তেমনি আছে। তারপর ও অন্ত জায়গায়
যেতে শুরু করে, অন্য জায়গায় মিশতে |
সে যাই হোক, এই অধ্যাপককে দেখে ওর অন্থুপমের কথাই মনে পড়েছিল।
ওকে বাড়ি পৌছে দেবে বলে হাত ধরেছিল। অধ্যাপকের পার্সটা! ও মাসি
থেকে তুলে হাতে দিতে যায় কিন্ত অধ্যাপক “চোর চোর” বলে টেঁচাতে
থাকলেন ।
ফলে আবার সেই থানা-পুলিশ-ও*সি-_বাঁদামি কাগজে আবছা কালিছে
ছাপ! অনেক এ* বি, সি ভি করা1। এম. বললেন, কেতকী তুমি !
বেড়ালছান] যেমন বাড়ি চিনে চিনে ঠিক ফেরে, হাসের ছানা যেমন জলে
পড়েই সাঁতার কাটে, মেয়েটির জেল-পুলিশের প্রতি সেই রকম হোমিং
ইন্সটংক্ট দেখে এম খুবই অবাক হলেন। ওকে ভালো করার চেষ্টা করতে
লাগলেন বটে কিন্তু তারপর সহসা ন্ৃপতি ওকে দেখতে পেলেন। ষে
নুপতির সব কিছুই সকলের, নিজের বলতে শুধু সভা-সমিতির ফাকে ফাকে
ফ্্যাট-মেয়ে-স্টিমবাথের গোপন রহমত ।
পাতি যখন জিগ্যেস করলেন, তৃমি এ কাজ কর.কেন 1? মেয়েটি কিছুক্ষণ
চেয়ে থাকল, তারপর “এম বলেন বলে? এ কথার উত্তবে ঘাড় নাড়ল।
১২, মহাশ্েতা দেবীর েঠ গঞ্জ
ভারও অনেক পরে বলল, “তুমি এ কাজ কর কেন ওদের ভয় পাও
বলে? তোমাহ লোকেদের দিয়ে, এম-এর লোকদের দিয়ে**ওদের*** ?
নৃপতি ওর মুখের ওপর নিজের বাহাতের চেটো দিয়ে থাপ্নড় মারলেন।
চটাস করে তোতা শব্ষ। মেয়েটির ঠোট কেটে রক্ত গড়াল। নিজের
রক্ত দেখলে মেয়েটি এখনো মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায়। এটা ওর
রক্তের ইন্সটংক্ু। ওর বাপ-মাকে ও চোখে দেখেনি কিন্ত ওর বাপ
মা-ও, তাদের গায়ে গায়ে কেউ আঘাত করলে, রক্তপাত ঘটলে তবেই
হেঁসোটা তুলে নিত। মেয়েটি ওর ঠোঁটের রক্ত মুছল। তারপর বলল»
তোমার ছেলেটা না গীটার বাজায়? ও সেদিন এখানে এসেছিল
জানো? জল থেতে। যেন এ ফ্ল্যাট ছাড়া জল খাবার জায়গা নেই
কলকাতায় ।
নৃপতি ওকে ডানহাতে টানতে লাগলেন । বাহাতে এখন একটা গেলাস।
ছুটো৷ হাতই সমানে চলে বলে ওকে সব্যসাচীও বল] হত।
সেইদিনই ভোর রাতে মেয়েটির কাছে অন্গপম এল। মেয়েটির কাছে,
আসবে বলে আনেনি, যে কোনে! আশ্রয় । কিছুক্ষণের জন্যে লুকিয়ে থাকার
জায়গা খুজতে খুজতে এল।
তুই? অন্থুপমের হাতট। পকেটের দিকে গেল। অভ্যাসমাত্র। নিদ্রেকে
বাচানে! উচিত। এই ধারণাবশত ও পকেটে হাত দিল কিন্তু এখনে
ওর হাতের কছিতে জোর নেই।
আমি।
মেয়েটি আর অন্গপম কিছুক্ষন মুখোমুখি গড়িয়ে থাকল। মেয়েটির
পোশাক, ঘরের আসবাব, গেলাসের ছড়াছাড়, নৃপাতর প্রিয় নোংরা ছবির
আযলবাম (কার্পেট পড়ে ছিল) দেখেও অনুপম কিছু বলল না। শুধু
বল, একল। আছ? (তুমি বলল)
হ্যা।
আমাকে একটু রাখতে পারবে? কাল চলে যাব।
পারব। কাশ, কাল আমি তোমাকে পৌছে দেব। তুমি পালাচ্ছ তো?
আমার গাড়ি আছে।
অন্ুপমকে ও নিজের শোবার ঘরে ঢোকাল। তালা বন্ধ করতে বলল
ভেতর'থেকে। ও বাইরে বসে রইল। বসেই রইল। তারপর একসময়
শরীর ১২১
ঘুমিয়ে পড়ল । এই প্রথম ওর মনে রইল না রুপোলি ফি়্াটটা নিয়ে ওর
কোথাও যাবার কথা ছিল । দুপুর গড়িয়ে গেল।
তারপর একসময়ে অতন্ক এল। অতন্ভুঃ এম, আরো লোক, আরো! অনেক
লোক। সিঁড়িতে বুটের শব্দ।
অনুপম ওকে বলল, কত টাকা পাবি।
মেয়েটি কী করল বলে আপনাদের মনে হয়? সেই রাতে ওর ফ্র্যাটে
নৃপতি, এম এদের উন্মত্ত আনন্দের আসর বসেছিন। ও ওদের গুপি করতে
পারত» ম.দ বিষ মিশিয়ে দিতে পারত | মেঞেটি সে-সব কিছুই করেনি।
ও বাথরুমের দরজ1 বন্ধ করে।'ছল। তারপর একট। শব্দ হয়। নিচে
চিৎকার । নৃপতি আর এম পাশাপাশি মুখ বাড়িয়ে দেখেছিলেন আটতল৷
নিচের ফুউপ!থে একটা ভাঙাচোরা! আশ্চর্ধ শরীর পড়ে আছে। শত শত
মানুষের চোখের সামনে ওধের পাশাপাশি মুখ জানালার ক্যামেরায় শাপসির
ফ্রেমে আ্াট। রইল।
ধীবর
লোকট।র জাল আছে। একসময় যখন পুকুরে মানুষ শুধু আগাছা সেঁচত,
মাছ ধরত, পান তুলত তখন ও জাল ফেলত্ত।
মালিকের পুকুরে জাল ফেলে ফেলে মাছ ধরত। এখন আর মালিক
পুকুরে মাছ ছাডে না। জগতের জালটা এখন ঘরেই থাকে। কেউ চাইলে
জগৎ ভাড়। দেয়।
এখন অন্য কাজ করে জগৎ। এখন একদিন যায় ছু"দিন ষায় থান1 থেকে
ডাক আসে ।
জগৎ, আছ নাকি বাড়ি?
আছি।
একবার যেতে হয় যে জগৎ!
কোথা?
বায়পুকুরে ।
শালার। এক বাম়পুকুর চিনেছে বটে।
জগৎ একট] কালে জাঙিয়া পরে । গায়ে বেশ তেল মেখে নেয়। বাঁশের
লগ! নেয় একটা | বায়পুকুরের ধারে পুলিস দাড়িয়ে থাকে । ভোম দাঁড়িয়ে
থাকে। তেরপলের ডুলি থাকে একটা । জগৎ ভোমের কাছ থেকে বিড়ি
নিয়ে টেনে নয় খানিকটা । তারপর নেমে পডে জলে ।
রায়পুকুরের জলের নিচে এর আগে-আগেও আশ্চর্ধ সৰ বিস্ময় লুকোনো
থাকত। মানুষ ডুব দিয়ে বাসন পেত, পুজোর বাসন | গয়না, মোহর» এটা"
€ট] নাকি কতজন পেয়েছে ।
এখন আরেক রকম বিশ্ময় লুকিয়ে রাখে রায়পুকুর | জলের নিচে ডুব দিয়ে
জগৎ চোখ থোলে। ঘোলাটে সবুজ জল। ভীতত্রন্ত তে-চোখো মাছেরা সরে
সরে যায়। কুচো চিংড়িস্ত'ঁয়ো নাচিয়ে নড়তে থাকে । জগৎ আগে বাশ
ধুচিয়ে বুঝে নিত কোথায় নামতে হবে।
এখন আর বাশ খেচাতে হয় না। জলের নিচে কাদায় চিত হয়ে পড়ে
ধীবর ১২৩
থাকে মানযটা1। আশপাশে জন তুড়তুড়ি কাটে । ছগৎ সম্তর্পণে পা ধরে
টানে । কখনে! হাত ধরে । ভারপর ওপন্বে এসে কিছুক্ষণ দম নিয়ে নেয়
ফুলফুস ভরে ।
পেলি জগৎ?
যাবে কুখা ?
সযত্বে জগৎ দেহটিকে তুলে আনে। ছল থেকে তোলার লঙ্জে সঙ্গে
তীব্র পচ৷ গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে দেহটা প্রতিবাদ জানাচ্ছে । জগৎ তেরপলের
ওপর দেহটি শোয়ায়। তারপর পুকুরের কাদ। তুলে কবজি থেকে কম্থই অবনদি
ঘষে ঘষে ধোয়।
লাশ পিছু সাত টাকা নেয় এখন জগৎ। এখন টাকার আর দাম কী বলে!
টাক আর মানুষের প্রাণ ছুটোই খুব সম্তা এখন | জগতের ধারণা! যার! মারে
তারাও টাকা পায়। টাক! ছাড়া কিছু হয় বলে জগৎ বিশ্বাস করে না ।
ও মনে করে, এ ডোম-কনস্টেবল-দারোগ1 নিহত ও হত্যাকারী সবাই
কোনে! না কোনে। ভাবে টাকার লেনদেন করে চলেছে ।
একথা শুনে জগতের ছেলে জগৎকে বলে, বোকাটা ! কিন্তু কেন যে জগৎ
বোক। হল আর অভয় বুদ্ধিমান, সেকথা! অগতের টেকনিকাল স্কুল পাশ ছেলে
জগৎকে বুঝিয়ে দেয়নি কখনো ।
তারপর জগৎ বাড়ি আসে । কার্বলিক লাবান দিয়ে গ1 হাত পা ধুয়ে ফেলে ।
তারপর টাকা আনতে যায়।
জায়গ। শহরের বাহির-আচলে। বায়বাবুদের বাড়ির পুরোনে। দলিলে লেখা
আছে “গঙ্গা-বিধৌত-পবিভ্র-ভূমি-আত্কুঞ্$-শস্তাক্ষেত্র”।
সে গঙ্গ৷ এখন মজা খাল। আমবাগানের একট! গাছও নেই । শঙ্তাক্ষেত্রে
এখন মানুষ থাকে । আর পবিত্র ভূমির তিলমাত্রও রায়বাবুদের দখলে নেই।
শুধু রায়বাগান আর রায়পুকুর নামের মধ্যে রায়বাবুরা টিকে আছে।
বাইরে বলেই এত স্থুবিধে। একট! খুন হয়েছে বলেও কেউ বলে না।
একট ছেলের বাপ-মাও খোজ নিতে আসে না থানায় বা লাশঘরে। সব
চেয়ে অবাক কাণ্ড কী, জগৎ জানে, চেঁচিয়ে কেউ কাদে না অবধি।
জগৎ বুঝতে পারে খুব স্মেহ্হীন হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী । ছেলেগুলোর
দয়াময় নেই । মা-বাপ অবধি চেঁচিয়ে শোক করে না আজকাল।
অথচ জগৎ শুনেছিল শ্থেছ নিক্গার্ী। কেনন! জগৎ যখন ছোটে। ছিল, ও
১২৪ মহাশ্েতা দেবীর শ্রেঠ গঞ্জ
ওয় কাকার সন্ধে গাঙে যেত | গাঙহাটায় রাজবন্দীর ক্যাম্প ছিল। বুড়ো
রাহবন্দী বাবু সন্বেবেলা রামায়ণ পড়তেন। কাকার! সময় পেলে বসে বসে
গ্ুনত।
তখন জগৎও শুনেছে ভালো ভালো কথা । স্বেহ যে নিচে ধায়ঃ ছেলে
মাকে ভূললেও মা! ছেলেকে ভোলে না, এসব কথা তখনি শুনেছে।
রায়বাগানে বসে বসে সে-সব কথা মনে থাকে কই! কেউ কাউকে খুন
করে না, শুধু মাঝে মাঝে এ-পাঁড়া বে-পাড়ার ছেলে নিখোজ হয়ে যায় ।
তখন জগতের ভাক পড়ে।
কেনন৷ নিখোঁজ ছেলেগুলোর শেষ ঠিকান। পুকুরের নিচে। জগৎ শুনেছে
ছেলেগুলে৷ নাকি বনের বাঘ, গর্তের সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর ।
ভয়ঙ্কর যে তা তো বোঝাই যায়। দেখতে যেমন হও না বাপু নিরীহ,
কিশোর. স্থৃকুম!র আসলে তোমরা ভয়ঙ্কর । নইলে আর এমন করে মর?
জগৎ কিছু ভাবে না, তপিক্ে ভাবতে যায় না। সাতট। টাকা নিয়ে ও
পাচটা টাক! ভামিনীকে দেয়। ছু টাকা নিয়ে জগৎ নেশা করতে যায়।
এ ওর এক স্থষ্টিছাড়া অভ্যেল।
কেন খাওঃ নেশ। বলে?
অভয় জিজ্ঞেন করে। জগতের টেকনিকাল স্কুলে পাস করা ছেলে অভয় ।
বাবা যখন মদ খায় নাঃ তখন এ ক'লো কাচা পাকা চুল বন্য চেহারার লে।কটার
সঙ্গে অভয় কথা বঙ্গতে পারে না । কেমন করে কথা বল! যায় তাও অভয়
ভেবে পায় না। লোকট। অভয়ের ভাষাম্ম কথা! বলে না। লোকটা পিশাচের
মতো, ঘেন্না জানে না এতটুকু । লোকট। নিজের নাম বলে-জ্গৎ সী,
জাতিতে ধীবর আজ্ঞে
অথচ অভয় বাবাকে নিয়ে গিয়ে আদালতে আঙঞ্জি করে নামটা পালটে
জগৎচন্দ্র দাশ করে এনেছিল ।
অভয় আর ওর বাবার জগৎ ছুটো৷ আলাদা আলাদ! গ্রহে । শুধু বাবা
যখন মদ খায় তখন বাবার চোখ নরম হয়ঃ ন্বেহমাখা, শাস্ত। বাবা মদ ন।
খেলে অভয় বাবার সঙ্গে কথ! বলতে পারে না এ কি কম দুঃখের কথা ।
অভয় জিজ্ঞেস করে, কেন মদ থাঁও নেশা! বলে?
নেশা !
তবে রোজ খাও না কেন?
ধীধর ১২৫
. না, রোজ খাই না।
যেদ্দিন লাশ তোল সেদিন নেশ! না করে পার না?
না।
জগৎ মাথা! নাড়ে। বলে, বড় কষ্ট হয় অভয়। বড় ভয় হয়।
কাকে?
সকল মানুষকে ৷ সব এমন হয়ে গেল কেন?
অভয় দরজায় হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে । ওর বাবা সব
মানুষকে ভয় পায় আজকাল 1 ওরম11 ওর মা বোধহয় শুধু ছেলেকে ভয়
পায় । মা আর বাবাকি অভয়ের মনের জাল! বুঝতে পারে?
অভয় তে। বুঝতে দেয় না ওদের! অভয় ওদের সঙ্গে সব সময়ে ভদ্র
ভাবে, শান্ত হয়ে কথ! বলে। অভয়ের অসীম মমতা আছে ওর বাবা আর মার
প্রতি।
বাবা, লাশ বখন তোল তখন একদিন নেশা! না করে দেখ |
ভয় করে অভয় । নেশা করে টু*নি ভূলে থাকি।
ভালে নামতে তোমার ভদ্ব করে নাবাবা?
না অভয় ।
জগৎ অল্প হাসে। আঙ্গকাল মাঝে মাঝে ও ডুব সীতার কাটে, এমনিই
কাটে । বনু প্রাচীন দিঘি রায়পুকুর। একদিকে দাড়ালে অন্ত পাড়ের
মাহুঘকে সত্যিই ছোটো দেধায়। বর্ষার দিনে পুকুরের সবুজ জলে বড়ো বড়ো
বৃ্টির ফোটা পড়ে শাদা ফুলঝুরির মতে! ছিটকে পড়ে।
জগৎ তখন মাঝে মাঝে সীতার কাটে পুকুরে॥ নান করে । বড়ো আপন মনে
হয় জলকে, জলকে মনে হয় জীবন। কত শাস্ত আর সবুজ জলের নিচের পৃথিবী ।
কত শান্ত। জলের মাছ, ঢেশড়া সাপ” চিংড়ি-শামুক-হগলি, জলের ঝাঁজি ও
আগাছা । সবাইকে মনে হয় আপনজন |
অভয় তোর মনে খুব বেথা?
বাবা এ প্রঙ্গটা এই সময়েই করে। তাই অভয়ের ভালে! লাগে বাবাকে।
বড়ো ভালো! লাগে। মনে হয় বাবার হংপিশ্ডের ওপর আগু,ল বুলিয়ে আম
জানায় অভয়।
অভয় বলে কেন বাব।?
লেখাপড়া শিখাতে যেয়ে তোন মন্দ বরে দিলাম?
১২৬ াশ্েত1 দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
মন্দ কেন বলছ ?
এই যে কাজ জুটে না, করতে পারিস না কিছু, তাই তোর মনে বেথা?
অভয় চুপ করে থাকে।
তুই যেমন ঘুরিস, তেমন কাজ দেয় না। তোরে আমি মোহনের
দোকানে পাটনার করে দিব।
অনেক টাকা চায় যে!
টাকা দিব, টাকা আমার হবে মা কথুনে।?
মোহনের সাইকেল ও সাইকেল-রিক্সা মেরামতের দোকানে অভয়কে
পার্টনার করে দেয় এ জগতের অনেক দিনের ইচ্ছে।
মোহন পাঁচ-সাতশ টাকা চায় বাব]!
দিব অভয়, নিশ্চয় দিব। তুই যেমন ধান্দা! করবার কর্গা যা।
অভয় সন্মেহ হাসে। তারপর সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়।
জগৎ বড়ো ভালো! ঘরে থাকে এ অঞ্চলে | যার জমি, তিনি বিদেশে
থাকেন। তার জমিতেই এই ছুখানা ঘর আর দাওয়া বেঁধে দিয়েছিল জগৎকে ।
ইাস-মুরগি রাখবার ঘর ভামিনী নিজে বেঁধে দিয়েছে । ভামিনী হাস-মুরগি
পৌষে | জগৎ ডিম দিয়ে আসে বাজারে । এ রোজগারটা ওদের বারোমেসে।
ভালো ঘরট। অভয়ের। একটা চৌকি, একটা টেবিল, একটা চেয়ার ।
্বড়িতে জামা, পাজামা» প্যান্ট, । দেওয়ালে ক্যালেগ্ডার । জগত মাঝে মাঝে
ঘরটার দ্রিকে চেয়ে নিঃশ্বাস ফেলে । কিছুতে বিয়ে করল না অভষ। বিয়ে
করল না স্বজাতে।“বিয়ে করলে একট ছোটে! রেডিও, শ্বশ্জরের সাইকেল-বিক্সা
একটা, খানিকটণ চাষের জমি অভয় পেত।
অভয় বলেছিল, দুর | অভয় হেসেছিল। জগত যেন নতুন করে দেখেছিল
অভয়ের চেহার1। লম্বা ন্থকুমার, কালো! হলেও কুশ্ী। নয় অভয় । মুখের
ভাবটি বড় শান্ত।
জগৎ মাথা নেড়েছিল। এখনো মাঝে মাঝেই মাথ। নাড়ে বিস্ময়ে । অভত়্
এত অচেনা কেন? দিনকালের গতিকে? এদিকে একট! কাজ করতে
লো, এ ছেলে বেড়া বাধবে, মুরগি ঘর করবে, ভামিনীর বেগুনখেত
নিডিয়ে দেবে।
ছগৎদের ঘরের ছেলেরা আজকাল কত টেরি কাটে সরু প্যা্ট পরে,
বগলে রেডিও নিয়ে ঘোয়ে। লিনেম! দেখে। কক্ষ, চড়া কথ! বলে।
ধীবর ১২৭
অভয় ওদোর মতোও নয়। অভয় কাদের মতন ? |
তোর মতো নর, আমার মতো নয়, ছেলেটা কার মতো হল? একট! ছেলে ?
তুমি জান না, আমি মেয়েছেলে হয়ে জানি!
ভামিনী কথা বেশি বলে না। ভামিনীর মনের গোপনে ব্যাথা
আছে, গভীর ব্যথা । ছেলের কাপড় কাচে ও, ভাত রশাধে, অথচ ছেলের
সঙ্গে বসে ছুটো! কথা বলে সুখ পায় না। শ্রাবণ-পৃণিমায় জল বয়ে বয়ে
ভারকেশ্বরে যেত ভামিনী। ছোটবেলা অভয়ও যেত।
গত বছর বলল, আর যেয়ো না মা।
কেন? তোর লজ্জা! করে?
ভামিনীকে ওর জ্ঞাতিরা বলে, তোমাদের পরিচয় দিতে অভয় লজ্জা! পায়,
ভা বোঝ?
অভয় হেসেছিল। বলেছিল, না গেলে কষ্ট পাও তো যাও । তবে
ছ্িনকাল তো ভালো নয় তাই মান! করছিলাম।
যাব? গেলে তুই রাগ করবি না?
রাগ করব কেন?
ভামিনী গিয়েছিল ফুল-সাজানে। বাঁকে জল নিয়ে। আসব!ব সময়ে চিনির
ওলা আর তারকেশ্বরের কুমড়ো এনেছিল একথানা। বাড়ি ফিরে কী
দেখেছিল ভামিনী !
উঠোনে দর[ড়িয়ে অভয় একটি মেয়ে আর ছুটি ছেলের সঙ্গে কথা বলছে।
আমার মা !
অভয় মাথ! হেলিয়ে বলেছিল। ভামিনীরযে কী অবাক লেগেছিল তা
ৰলতে পারে না ভামিনী। ওদের সঙ্গে অভয় যেন সমানে সমানে কথা
ৰলছে।
সেদিন থেকে ভামিনী ছেলেকে আরে! বেশি করে সমীহ করে | ছেলে
অচেনা, বড়ো অচেনা হয়ে গেল গো! ছেলেটা ভামিন*র। এই ছেলের বউ
আসবে, ছেলে-বউ ঝগড়1-কৌদল ভাব-ভালবাস। দিয়ে» সন্তান দিয়ে ভামিনীর
ংসারট। সাজিয়ে দেবে ভাবতে পারে না ভামিনী।
ও শুধু জগৎকে বলে, ওরে সরিয়ে ধিলে হয় না?
কেন?
সবাই জোয়ান ছেল! সরিয়ে রাখছে, দেখ ন1?
১২৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
সে বাবুদের ছেল ।
বাবু-ভদ্দরলোক, এসব কথা অভয় শুনলে বলে আর বোলো না বাবা।
তখন অভয়কে জগতের ভয় করে । বড় কষ্টে জগৎ মদ খায়, বড় দুঃখে
তার কাটে বায়পুকুরে। মানুষ এমন ভয়ের হয়ে উঠল কেন?
অথচ দারোগাবাবু-ভোম-মড়িঘরের ডাক্তারকে ভয় পায় না জগৎ । সেখানে
গিয়ে কেমন গ্যাট-ম্যাট-ফ্যাট বারফক্্রাই করে আসে। দারোগাবাবুর বুকে
কাণীর ছবি আকা লকেট ঝোলে সোনার হারে। দারোগাবাবু জগৎকে
বলে-__ ছেলে লেখাপড়। শিখেছে, একটা কাজ খুজে দে।
' আপনি একটা স্থলুক্-সন্ধান দিন না বাবু ।
কাজ কি আরহয়না? কাজ হয়।
কোথায় হয় বাবু?
একবার আসতে বলিস থানায় ।
ও বাবা! আমার ছেলে আমার মত ভীতু যে!
তবে যেয়ে বল্গা দারেগাবাবুকে মাঝে মাঝে খোজধবর দিস, টাক!
পাবি। একথা আবার বিশ্বসংসারে বলতে মাস ন! যেন।
না বাবু। কিসের খোঁজখবর ?
বল্গা যেয়ে। সে বুৰবে।
অভয় একটু হেসে উড়িয়ে দেয় বাবার কথা। বলে খোঁজখবর কী দেব |
তার চে” উনি আমান কর্পোরেশনে একটা কাজ করে দিন ন! নৃসিংহ দত্তকে
বলে! লোক নিচ্ছে ওর]।
এই ভালো! কথাট। শুনে দারোগাবাবু যে কেন রেগে যায় কে জানে।
বলেঃ চাকরি করবে! চাকরি গাছের ফল যে তাকশি টানলে পডবে?
কেন? কাজের কথাঃ হাতে হাতে টাকা পছন্দ হলন11 তোর কপালে
জগত বিস্তর কষ্ট আছে। খুব কষ্ট পাবি তুই। জল থেকে লাশ তুণবি আর
ডিম বেচবি।
জগতের ছেলে টেকনিকাল স্কুলের পরীক্ষায় পাস করেছে, দারোগাবাবুর
ছেলেটা সিনেমার টিকিট ব্র্যাক করে- সেজন্যেও দারোগাবাবুর মনে মনে রাগ
আছে। জগৎ তা বুঝতে পারে না।
তাই জগৎ লাশ তোলে, শুধু লাশ তোলে। জীবিত থাকতে কত
লাফা”াফিঃ ছোটাছুটি, নাচানাচি । মা গো| জীবিত মানুষকে বড়ে। ভয় করে
খীবর ১২৯
জগৎ। জলের নিচে দেখ শাস্ত, স্থির, অনড়। গলায়-বুকে পাথর, ইটের
ভার। সমস্ত শরীর কেমন মাছেদের খেলাঘর।
জলের নিচের জগৎ শান্ত সবুঙ্গ, রহস্তময়। এমন নগ্ন নয় সব, শবদেহও
নয়। জলের নিচে তেচোখো মাছেদের রূপোলি ভান দেখতে কত
সুন্দর |
লাশ তুলে জগৎ দাত টাকা পায়। পাচ টাকা ভামিনীকে দেয়।
ছু'টাকার নেশা কল্পে । নেশা করে ও অভয়ের ঘরে শ্য়ে দরজা ধরে দীড়ায়।
তোর মনে বড় বেথা অভয়?
হ্যা, বাবা ।
কিসের বেথা জানি রে। তোর কাছ হয় না, হামলে পড়ে কাজ খুঁজে
বেড়াস। তই বেথা এত ।
বাবা.'আমি কিন্ত কাজ খু'জে-"'
অভয় কী যেন বলতে যায়। অথচ বলে না, বলতে পারে না। কাজ!
অভয় কাজ খোজে আর কাজ পায় না সেই ব্যথা অভয়ের ! বাবা গো ! তুমি
অভয়ের ব্যথা! চেন ন1।
জানি অভয়। তুই খুণ্ছে হেদাম অথচ পাস না। আমি তোকে
পাটনার করে দিব মোহনের |
কেমন করে? গুধুধন পেয়েছ ন। চুরি করেছ?
হাসিস না অভয়। বাপকে চোর বলিস না। চুরি আমি করি ন1।
ধারোগাবাবু বলে কাজ দিবে আরো» আরো টাক। দিবে।
-কথ! বললে বিচার করে দেখে তবে কাছে যেয়ো! বাব।।
কেন? ও আমায় ফাসাবে।
বাবা, তুমি বোঝ নাকিছু। কেন মদ খাও বাবা?
আমার ভয় করে অভয়।
ভয় করে?
মানুষকে । এই এত পাপ বাবা! এত পাতক |
অভয় হাসে। মধুর শাস্ত হাসি' অন্তগ্রহের মানুষ যেন জগৎকে দেখে
হাসছে। ্
অভয় বলেঃ খেতে চল । মা ভাত বেড়ে বসে আছে।
অভয় কথ। বললে জগৎ সেকথা। অমান্ত করতে পারে না। জগৎ খেতে
১৩৩ মহাশ্বেতা! দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
যায় । কিন্তু জগৎ দারোগাবাবুর কথা তৃঙ্গতে পায়ে না। রাত করে আসিস
জগৎ । কাজ আছে; এবার অনেক টাকা পাবি।
টাকার লোভেই জগৎ পৃথিমার রাতে বা্পুকুরে নেমে যায়। আজ রাতে
যেন সবই অচেনা! অচেনা । চেন! মানুষদের ব্যবহার পর্ধস্ত অচেনা । শইলে
আজ দারোগাবাবু থেকে শুর করে এতজন লোক পুকুরের পাড়ে কেন? কেন
একটা কালো গাড়ি ?
জলের নিচ থেকে জগৎ উত্তরটা তুলে আনে । একবার নয়, ছবার ওকে
ডুবতে আর উঠতে হয়। ছট। লাশ তেরপলে মুড়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ।
আজ দারোগাবাবু ওকে অনেক টাকা দেয়। এত টাক! জগৎ কখনো
একসঙ্গে দেখেনি । দারোগাবাবু আজ বলে, দাবধান জগৎ। ক'টা লাশ
ভূুললি, কাদের লাশ তুললি কারেও বলবি না। ৰললে নিকেশ করে
দেবে।
ববাপো রে ব্াপেো।! বলি কখুনো ?
ওদের যার! নিকেশ করেছে তাদের বাগ ছুরস্ত» জগৎ্।
জগতের পেটের ভেতরটা বরফ হয়ে যায়। কারা নিকেশ করেছে! ওরা
তো ধর পড়েছিল | ওদের তো থানায় নিয়ে গিয়েছিল ধরে ! জগৎ আর
ভাবতে পারে না, ভাবতে চায় নাঁ। বাড়ি ফিরে এসে এই প্রথম ও মদ
খ।য় না।
কিন্ত অভয় যখন মরে যায় তখন জগৎ ওর লাশ তোলে না। অভয় শেফ
পর্ধস্ত কেমন করে মরে, কার। ওকে মারে কিছুই জানতে পারে না জগৎ্।
ওকে জিজ্ঞেস করবে বলে থানায় আনা করালেন !
ছেড়ে দিই নাই? শুধ| যেয়ে সবারে ?
ছেড়ে দিলে, কখন, কখন-বা ধরেছিলে 1? আমি ধবধবি যেয়ে বসেছিলাঙ্গ
বুনের বাড়ি?
কোথা যায়ঃ কার সঙ্গে মেশে জানতে ধরেছিলাম। তা রাত হতে ছেড়ে
দিয়েছিলাম ।
কোথা?
যা জগৎ। মেলা ভ্যান ভ্যান করিস না।
ভ্যান ভ্যান করব ন1?
না।
ধীবদ্ ১৩১
আমার পুত্ব মরে গেল, জমি নিবংশ হয়ে গেলাম--তা৷ এট, ভান-ভ্যান
করব না?
দারোগা আজ ওকে হাঁকড়ে বের করে দেয় থানা থেকে ।
জগৎ কাদতে কাদতে চলে আসে বাড়ি।
তারপর দারোগাঁও একদিন নিখোজ হয়ে যায়। সাইকেলে বাড়ি ফিরতে
ক্ষিরতে। কোথাও পাওয়া যায় না দারোগাকে ।
জগৎকে ভাকতে আসে পুলিস। চল্ জগৎ। রায়পুকুরে দেখবি চল্।
জগৎ আজ রায়পুকুরের পাড়ে গ্লাড়িয়ে--ঘাটলার ভাঙ| ইট, সিমেণ্টের
চাপড়ে লাখি মারতে থাকে ।
নাম জগত! দারোগাবাবু ধদি লাশ হয়ে থাকে, তবে আজ বায়পাড়া
লাশ করে ফেলাবে।
ছোটো দারোগাবাবু গর্জে ওঠে।
জগৎ জলে নামে । জলের নিচে সব সবৃদ্ধ, শান্ত, অপাধিব। দারোগাবাৰু
আর সাইকেলটা জড়িয়ে বাধা । অভয়ের গামছাটা দিয়ে ।
জগৎ ইট-পাথরের চাপড় টেনে নিয়ে দারোগাবাবুর পেটের ওপর চাপ।
ঘে়। এখন এইরকমই থাকুক। ছুদিন বাদে দেখা যাবে আর কী ব্যবস্থা করা
যায়।
ভারপর জগৎ উঠে আলে।
কী হল? পেলি?
না।
জগৎ মাথা নেড়ে জবাব দ্েয়। ভাারপর গ! হাত প| মূছতে থাকে । আজই
ভামিনীকে বলতে হবে ধবধৰি চলে যাবার কথা ।
ভাল করে দেখেছিলি?
জগৎ ধীবর আজ্ঞা । কুনদিন আপনাদের কান্ধে হেলা করেছি ?
বলেন?
জগৎ একটা ছুর্বোধ্য হাসি হাসে। ছেলে মরে যাওয়ার পর এত মত্ত সম্ভ,
এ মূখে হাসি দেখে ছোটো! ঘারোগাবাবু আজ অবাক হরে যান ।
পিগুদান
পূণিমার পূর্ণঠাদের আলোয় বস্কালট! ধবধব করছিল। অকলস্ক শুত্রতা
করোটিক! থেকে পাদানুপি-মুল-শলাকা পর্যস্ত জু-ইফুলের পাপড়ির মতো দগিশ্ব
জাভা ছড়াচ্ছিল। খেটে গাছখানার শরীরের ভর রেখে কঙ্কালটাকে দেখতে
দেখতে দশরথের বৃদ্ধ লৌলচর্শ দেহ থেকে ফোটায় ফোটায় পানাপচ! জল
ঝরছিল। চোথ থেকে বিফ্লতার ছুঃখে ঝরছিল সরু নদীর ধারা।
বড়ো দুঃখ দশরথের মনে । এ কঙ্কালটাও আস্ত নয়, নিখুত নয় । যতদিন
শরীরে পেশী রক্ত-মাংস-চামড়া৷ থাকে, ততদিন বোঝা যার না গো। কত কষ্ট
দশরথের | প্রথমে পালবাবুকে খবর দিতে হয়। বলতে হয়, “হোথা দেখলাম
খ্বাট ছেড়ে সব আঘাটায় লেমে লাইতে লাইতে নিটাই ঘাট করে লিছে বাবু।
ভবে ঘাটে পু'তা আছে মনে লেয়।,
পালবাবু বলেন, "শালা, আড়াই বছরে কতগুলান মরেছে দশরখ 1 শালার
একট! পু্কনাঁ বাকি নাই?
বোসবাবু বলেন, 'মেরেছেঃ আর পাথর ইটের থলিতে পুরে পাকে ফেলেছে
দ্াদা। তা বাবা দশরথ, ঘাটে মড়া পু'ততো৷ বলে আঘাটায় বউ ঝি চানে নামে
এ তুমি মোক্ষম ধরিছিলে।'
একথা শুনে দশরথ হাসে। তারপর রাতে-ভিতে জলে নামে। কঙ্কাল
তোলে এবং সযত্ে চুনে ও ব্লিচিং-এ মুছে সাফ করে। কন্কালগুলি দেখলেই
দশরথের মনে প্রজ্ঞলত্ত নেহ এবং কৃতজ্ঞতা যুগপৎ কেলি করতে থাকে । তরুণ
কঙ্কাল সব, সেই জন্তে দ্মেহ। পালবাবু আর বোসবাবুর কাছে পেীছে দিলেই
টাক! পায় দশরথ, সেই জন্তে কৃতজ্ঞতা । টাকা গেলেই দশরথ সর্বাগ্রে
মদ কেনে ।
কুসি ওর গায়ে মদ মালিশ করে দেয়, বোতল থেকে ঢেলে দ্নেয়। দশরথ
বলে* কবজি মোটা হযর়লাই | গ্রোড়ালি মোটা হয়লাই, বুঝি দ্বান৷ ছিন
জগতে ? আহা, মায়ের ছেল1 গো! বাপ পিগড পাবেলাই, ই কি কম ছুস্ক ?
কুসি বলে, “তে খালভরার কথায় তরিবৎ লাই। ছেলাগুল। অকালে
অরে তার তরে দুস্ক করিস না?"
পিওদান ১৩৩
দ্বশরথ হহ করে হাসে। লে, “আমি কি বলি তোর। যেয়ে মরগ। ?
ভবে মরছিল বুল্যে তোয় কোমরে গোটাদান] উঠল না কি বল?
'মর যা, পিচাশ |”
দশরথ ভেবে পায় না ও কিসে পিশাচ হল। ও মারে নি ছেলেদের,
পুকুরে ভোবায় ফেলেনি। ও ত শুধু কঙ্কাল তোলে, পালবাবুদের দেয়, নিজে
কমিশন নেয় এই কাজ ও আগেও করতঃ এখনো করে । অযোধ্যার কোনো!
গ্রামে ওর বাড়ি ছিল, প্রসন্নতোয় সরযূর তাঁরে ছিল জনাইয়ের খেত' এখন
আর মনে পড়ে নাকিছু। তিন বছর বয়স থেকে ও এই শহরে। মেডিক্যাল
কলেজে বেওয়ারিশ মড়া শটিত করে শ্বেতশুত্র কঙ্কাল বের করে নিতে ওর
জোড়। ছিল না। তখনে। রামের মা ওকে ঘেন্না করতঃ কাছে আসতে দিত
না। অথচ দশরথ জানে কঙ্কাল হল মানবশরীরের স্থির ও পবিত্রতম পর্ণণিতি।
আর সবই পচনশীল, অশুচি, অস্থ।য়ী।
রামের মা মরে গেছে । রামের জন্যে দশরথ ভাবে না। রাম ছু বছর হল
গ্ষেল খাটছে। কোন্ জেলঃ তা দশরথ জানে না। কিন্ত পাগবাবু বলে রাঁষ
ভাল আছে। বাবুদের ছেলেদের সঙ্গে মিশে ওর পাখা গজয়েছিল।
জেলখানায় পাথর ভেঙে রাম ধীরে ধীরে শাতিতপক্ষ হচ্ছে।
“সব ঠিক আছে।, পালবাবু বলে।
£ই বাবু । দ্শরথ মাথা নাড়ে; পালবাবুতে ওর অগাধ বিশ্বাস।
তাছাড়া, ছেলের ধার ধারে না দশরথ | এখনে। ও চাল কেনে, খালির মাংস,
ম্দ। এখনে। ও কুসির বিগততিরিশ দেহে সাপ খেলাতে পারে। ছেলে
জেলে আছে। ভালে। আছে । দশরথের বাবাও কুসির মতো একজনকে নিয়ে
ভালে থাকত। ছেলের ধার ধারত না। দেহ জরাবপি হবার পরও তার
শরীরে পৌরুষ ছিল। দশরথেরও আছে। বাপ মরেছে খবর পেতে দশরথ
পিও দিয়েছিল। রামও দেবে।
তবে জেল থেকে রাম বেরোলেই দশরথ বলবে, 'তু বিয়েটা করে লে বাপ।
টাকা আমি দিব । বিয়ে করলে রাম হয়ত থিতোবে। অমন দাপিয়ে বিশ্ব
সংসারকে শত্রু করে তুলবে ন1। কিন্ত টাকা যেন জমতে চায় না।
একটি নিখৃ'ত কঙ্কাল পায় না দশরথ। যার! পৃষ্ঠবংশ-গলবিল-হৃৎপিওত-
মুরাশয়ে, ছুরি নিয়ে মরেছিল ) অস্থিসংস্থান যাদের অটুট ছিল। সেই নিষ্কলঙ্ক
বঙ্কালগুলে! যে কাক? নিয়ে গেল! দশরথ যাদের ৫টনে টেনে তোলে+ তাছের
১৩৪ মহাশ্থেত। দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
. করোটিকা-অঙ্গকাস্থি-জঘন-কপাল-উ্যস্থি-অংসফলক-পঞ্জরাস্থি চুপি,
খুতো। কোনো কোনে কঙ্কালের শরীরের প্রতিটি অস্থি. শরৎ
দেখেছে।
সে কঙ্কালে বেশি টাকা পার না দশরখ।
আজ পূর্ণঠাদের শুভ্র জ্যোত্মা-ধোওয়া কঙ্কালটি দেখে দশরথ তাই কীঘল।
পা ও হাতের অ।নুলের একটি হাড় নেই, পজরার শ।যুক আটকে আছে।
কবে দশরথ একথান। আত্ত কঙ্কাল পাবে, কৰে পাবে একখানা বড়ে। নোট ?
চোখ মুছে দশরথ সযত্বে কন্কালটি বস্তায় পুরল। মোড়ের পাগড়িকে একটা
টাকা দিণ, কুসির ভাইটাব জন্তে একটা টাকা কানের পেছনে গু'জল।
তারপর চলে গেল পালবাবুর বাড়ি ।
পালব|বুর থরে সারারাত বাতি নেবে না। সমানে কঙ্কাল আসে আদ্র
যায় এ-ঘরেঃ তাই বাতি জেলে পালবাবু বসে থাকেন আর মদ খান। রাত
হলেই উন ঘুমোতে ভয় পান। কেবলই মনে হয় দশরথ বা নিধিরাম বা চৈতন্ত
ও'কে জাগ্রত না পেলে চলে যাবে দত্তরারবাবুর কাছে। জীবনে যাদের প্রতি
নিয়ত ক্রে।ধ হতঃ মনে হত তার না জক্গালেও দেশের দশের চলে ষেত বেশ,
মনে হত উত্তর-চল্লিশ লোকগুলোর আরো! স্থখভোগের পথে তার! কাটা,
মৃত্যুতে তারা বড় দামি। জীবনে বার] ঘাতকতাড়িত হয়ে একটি দরজা
খোল। পায়নি, মৃত্যুতে তাদের জন্তে দরজার পর দরজা! খোল।।
তাই পাণবাবু। রক্করাও চেখে বসে থাকেন, আছও ছিলেন। কঙ্কালটা!
দেখে বললেন, “আস্ত মাল ল' দেখি দশরখ। তুই পাসনা। অরাপায়
ক্যামনে ?
“আনব বাবু ।,
দশরথ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল। তারপর বলল, “মাল দেন, খাই। ই শালারে
উঠাতে চারবার ডুব দিয়েছি জানেন? বুক দিযে শিক ফু'ড়ে কাদোয় পা
করে[ছিল, তা শাল। উঠতে আর চার না।”
পালবাবু মদ দিলেন। বললেন, “ভাল মাল না পাইলে জার আনবৰি না।,
লা),
দশরথ যেন শপথ নিল। টিউবের আলোয় বড়ে। অপরিচিত দেখাল ওকে,
আ।দম যুগের প্রেত যেন। দীর্ঘদেহ, চামড়ায় জর) চোখে লালসা, মাথা
শক
নেড়াঃ সিক্ত কটিবনতরে বঝাজি। চোখ লাল, €খালাটে, শ্কীত।. পাপবারুর
পিগওদান ১৩৫
,ভয়ভয় করল। মনে হল অনেক মদ খেরে ওকে একট] গোপন সংবাদ দিয়ে
ফেলেন, সাঁহ্স হল ন1।
“কাল সি ওযুধ কোম্পানির দিঘিতে যাব। কোথা মাল আছে।'
“মাল ত সবোই, কী মাল?
“পুলিশের খবর আজ্ঞা, ভালো মাল হুৰে।”
“দেখ ।”
“ছেলেটে। কৰে খালাস হবে ৰাবু' ?
“দেখি, খোজ নেই ।,
পালবাবু চোখ নামালেন। অন্বত্তিৎ ভয়। একটু সময় নিয়ে বললেন,
ছেলের তরে মন পুড়ায়, দশরথ ?,
“লা বাবু । মন পুড়ায় কই। আমার বাপ মোরে দেখে লাই। আমিও
রামরে দ্রেখি লাই। আম আমার দমে জীইব। উ উয়ার দমেজীইবে।
মরব যখন, পিগ দিবে ।”
“দিবে?”
“দিবে । লইলে মোর গতি হবে লাই, তা উ জানে ।
“লেঃ এখন ষ। |”
ওষুধ কোম্পানির বাগানে পৃবত্তন মালিকদের স্থাপিত নগ্নিকা অগ্মর।
দেবশিশুর মৃতি। প্রতিপদের চা। রক্ষীটি অদূরে দাড়িয়ে অস্বস্তিতে মারা
যাচ্ছিল। অভিপ্রেত এক নিখুত কঙ্কালের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে দশরথ
ষে কী দেখছে আর দেখছে ।
“চল দশরথঃ য1।
“যাই ।,
দশরথ মুখ তুলল। ওর মুখে বিচিত্র হাসি, নাকী? হাসি নয়? কঙ্কালের
গলা থেকে অতি যত্বে ও রুপোর হারটা খুলল । একটা পদক। ভবানীপুরের
গোপাল স্তাকর। গড়েছিল। দশরথ আঙ্ল বোলাল। 'রামলাল' লেখাট।
এখনে খোদাই কর আছে। হারট] ও গেঁজের পুরল।
তারপর, রক্ষীষ্টিকে মৃঢ় ও ভীত করে ছ্বশরথ বড়ে। বত্বে ক্কালটিকে কাধে
ফেলল, হাত বোলাল কশেরুকায়। বলল, বস্তাটা পাশ বন্বাবর ফেড়ে ঢেকে
পাও কেনে?"
কন্ধালটি লযস্তবে ঢেকে নিয়ে দশরধ গাচিল টপকে বেরিরে গেল। বুকের
১৩৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গঞ্জ
মধ্যে পবততুল্য তরঙ্গ আছড়াচ্ছে। দশরথ বলল, 'আমায় বুঝাছিল তু জেলে
আছিস বাপ। বাপো আমার আমি জানতাম তু জেলে আছিস |"
যে মাংস-পেশী-রক্ত-শিরা-চুল"্চামড়াকে দশরথ এতদিন অপবিত্র বলে
জেনেছে, এখন তার জন্তে বুকে অভিশপ্ত প্রেতর1 হাহাকার করল। বে
কঙ্ক।লকে মনে হত মানবশরীবের চরম ও পবিত্রতম পরিণ।ত, এখন তাকেই
মনে হল অপচয়। দশরথের চোখে সরযূ নদীর ধারা । আর সে পিও পাবে না।
চগম দৈহিক ভোগস্থখে লিপ্ত থেকে মরে যাবার ইচ্ছে ছিল ওর, জেনে যাবার
ইচ্ছে ছিল পৃথিবীতে কোথাও ওর নাম বেঁচে থাকবে, কেননা রাম রইল।
দ্বশরথ নিক্ষল শোকে মাথা নাড়ল। আবার বলল, “কখুনে। জবান লাই বাপ
আমার | কত নেহে ও কঙ্কালটির পাঁজর1 জাপটে ধরল, জীবিত পুত্রকে দশরখ
এমন করে আলিঙ্গন করেনি ।
পালবাবু ওকে একশে। এক টাক। দিলেন ।
দশরথ নিধিরামকে ডাকলঃ চৈতন্য মদ কিনল দশ বোতল, লাথি মেরে ও
শু'ড়িকে ডেকে তুলল ।
কুলি বলল, “এত রাতে পিয়াজ কাটবঃ সবাই মদ খাবা? তুমিকি পাগল
হয়েছে?
দশরথ বলল, "চুপ যা মাগী । ই মদ লয়, আমারে আমি পিগ্ডি দিছি |
রাম মোরে আবার রাজা কৰে দিয়্যাছে* তু জানবি কী? ক্যাবেও বলতে দিব
ন] দশরথ অপিওগ্িয়। ছিব ।,
জল
বাক্লি গ্রামটা একট! লাল ডাঙাজমির গামলার পেটে বসানো ॥
হেলিকপটার থেকে দেখে অপারেশন-বাকুলির নায়কদের তাই মনে হয়েছিল ।
রিপের্টে লেখা হয়েছিল ভূ-পৃষ্ঠের গড়ন বেদিনের মত। একটা বিশাল
বেপিনের পেটের মধ্যে গ্রাম, চারদিকে জমি উচু ও গোল। পুবদিকে দেড়,
মাইল দুরে ক্যানাল। গ্রামে ১৯টি পরিবার বাস করে, জনসংখ্যা ১০৯1
উৎপন্ন শশ্ত ধান। কর্ষণযোগ্য জমি বেপিনের কানার বাইরে। একটি বড়ে!
তেতুল গাছ, কয়েকটি আম, কাঠাল শিরীষ ও পলাশ গাছ আছে । এ গ্রামের
ধর্মঠকুরের খান প্রসিদ্ধ । পম্দণ সামস্ত সবটুকু কৃষিভূমির মালিক। গ্রামের
১৮টি পরিবার লক্ষণের ভাগচাধী। গ্রামে জলের অভাব খুব বেশি॥
লক্ষণের বাড়ির চৌহদিতে দুটি ইদারাও একটি গভীর নলকূপ আছে।
গ্রামের প্রাচীন পুকুরটি বর্তম নে মজা, জরশূহ্য । চার মাইল পশ্চিমে খরতোর
নদী। আমর] যখন দেখি, »ক্মণের বাড়ি ও ধানের টাল থেকে তখনেঃ
ধেশায়া ঠছে।
তারপর অপারেশন-বাকুপি আকাঁশ থেকে মাটিতে নেমেছিল। সম্পূর্ণ
ব্যবস্থা টোলফোন-ফে।গাত্যাগ ও রেডিও-সিগনালের মাধ্যমে হয়।
গে!কুলঃ নিরাপদ ও তাবিণী লক্ষ্রণ সামস্তের ধানের টাল থেকে ধান টেনে
নিয়ে যা।চ্ছলঃ তেঁতুল গাছের নিচে জমা করছিল, গোকুলের বাবা নির্ভর!
ছেলেদের গালাগালি দিচ্ছিল।
গোকুল সরযূকে বলেছিল, রাতে হোক দিনে হোক পালাতে হবে
পালাবার পথ আছে কিনা আজ দেখে আয়।
“আধারে আধারে যাব।”
সরধু গিয়েছিল। অন্ধকারে মিলিয়ে গিয়েছিল ।
অনেক বাদে ফিরে এসেছিল মুখ শুকনো! করে । বলেছিল* “কোনে! দিক
হতে বেরাবার পথ নাই | সকল দক ঘিরা। সক--ল দিক!
কেনন। তখন অপারেশন-বাকুলি অন্ত হাতে চলে গিয়েছিল। গ্রাম ঘের:
হয়েছিল, «দেখবে যেন একটি মাহিও না বেরোতে পারে? নির্দেশ ছিল।
শৈ
১৬৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
সকালে ১৯ টি পরিবার দেখেছিল চারদিক থেকে গোল হয়ে মানুষের,
সারিসারি মানুষের বেড়াঙ্জীল বাকুলির দিকে নামছে, জালট। ছোটো হচ্ছে।
সরযুর আর কিছু মনে নেই। অনেকগুলি লোক নামছে । এগোচ্ছে,
সংকল্পে ভয়াল। পবিজ্র শপখে কঠিন। নিঃশব্ব | কাকের ওপর ক্রাচ
ক্রাচ শব, বুটের নিচে কাকর প্রতিবাদ জানাচ্ছে । ক্রশাচ-ক্রাঁচ-ত্রচ শখ ।
ক্রমে বাপকর! চুপ করল। শিশুদের চে'থে বিস্মযম। গোকুল অক্ফুটে বলল,
সরযূ! দিঘির ধারে ঝোপ-ছঙ্গল সেথা পলাতে পারলি না?
না। সরযূর পা নডল না। বুটের শব বুটের শব বুটের শব্ধ “থল্ট ।'
কুকুম। “কার নাম গোকুল দাশ? যাস্্রিক গলা। তারপর সরযূর চেতনায়
“একটি কালো পর্দ।। নিরুত্তর বিদ্ধিষ্ঠ অবাধ্য একটা পর্দ|। “কার নাম
গোকুল দাশ? পর্দ নেমে এল।
পর্দ|টা পড়েছে, পড়েই আছে। সরযষূ অনেক চেষ্ট! করেছে পর্দাটা তুণে
'ভালে। করে দেখতে. বুঝে নিতে, “কার নাম গোকুল দাশ? এই প্রশ্নের
পর কী হয়েছিল জেনে নিতে পারেনি | স্মৃতি থেকে পর্দ টা নড়ে না। অবাধ্য,
বিঘধিষ্ট, ভীষণ প্রতিবাদে অনড় হুয়ে থাকে। যেন সরযুর স্ৃতিটা কোনো
সেন্সর-কর] চিঠি । খানিকটা! আছে। খানিকট! কালি ঢেণে অন্ধকার করে
দেওয়া হয়েছে । বাকিটা পড়া যায়। মাঝখানের অন্ধকার অধ্যায়ের পর
সরু যখন আবার মনে করতে পারে আবার যখন বিশ্বতুবন ও বাক্ুলি
«র্ চেতনায় ধর পড়ে তখন বাকুলির চেহারা অন্যরকম।
গ্রথমে বুডো-বুড়ি মেয়ে-শিশুতে বাইশজন লোক। প্রতিটি বাড়ি নিশ্চিহ্ন !
আকাশে ছাই। ছুটি ইদারা ইট ও কাকরে বোজানো। গভীর-ন্কৃপটি
'্উপড়ানে! মাটিতে ঘা হয়ে আছে। তেঁতুল গ1ছটি ছাডা অন্য ছায়াতকুগুণি
জলে ছাই। খরা চলছিলই। লব শুকনে! হয়ে ছিল।
অপারেশন-_বাকুলি সাকসেসফুল।
গামলার পুব কানায়, ক্যানালের পথ আটকে একটি অস্থায়ী আযলুমিনি-
খআমের ঘর। ূর্যে হখন ওঠে, পুব দিগন্ত থেকে রাগে জলতে"জলতে সাদা হযে
থাকে সর্ষের চোথ। হৃর্ধ কোটি-কোটি ফারেনহাইট উত্তাপ ঢালতে-ঢালতে
ওঠে। তাই, হুর্য উঠলেই সরযূরা দেখতে পার আযালুমিনিআমের ঘরটি
নিখাদ রু.পার মত জগছে। ঘরের জানলায় দেবতার মতো গৌরদেহ, তেব
এক যুবক বসে থাকে। তার চোখে ছুরবীন।
জল ১৩৪৯
গভীর নলকৃপটি ঘরের নিচে বসানো । ঘর ও টিউবওয়েল কাটাতারে
ঘেরা। কুলিরা সারাদিন কল টেপে। জল তোলে। ঘন্েধ চালে
আ্যালুমিনিআমের ঘরের চাঁলে নির্ভর সার ঘরের চাল ও ছাউনি বসানো ।
কুলির! হোসপাইপ দিয়ে চালটি ভেজায় বারদশেক। ঘর ঠাণ্ডা রাখার অন্ত
কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। এ বছর এ অঞ্চলে ছুরস্ত খর] | বৃষ্টি নেই ফাল্গুন
থেকে । এখন আযাট। হুর্ধ সব সময়ে কোটি কোটি ফারেনহাইট ঢালছে তে।
ঢালছেই | আটটা বাজলেই দিগন্তরেখা ও আকাশের মাঝখানে বাতাস উত্তাপে
কাপে, মনে হয় দিগস্ত ব্যেপে প্রেতপ্রেতিনী নাচছে। বাতাসে কাকর ওড়ে,
আকাশ ধূমল ও ভয়ংকর দেখায়।
লক্ষণ সামস্তের ছেলে শরদিন্দু ওই যুবকটির কাছে বণে থাকে । ওই ঘরকে
বাকুলির অস্থায়ী ঈশ্বরকে চলস্ত-সংবাদ পরিবেশন করে ।
“এই গ্রামের ওপাশে, ক্যানালের গায়ে যত জমি সব আমাদের । বাব!
করেছিল।,
“চাষ হয়?
€এ বছর হয়নি । জল ছিল না?"
€ক্যানালে জল ছিল না?
“ক্যানালের জল কে নেবে ?
“ওরা?
“কার টান! তিন বিঘে জমি আছে? কে খাজনা দেবে? ওদের হে!
এখানে পাঁচ কাঠা । দেড় মাইল দূরে এক বিঘে। এই হাল।,
“তোমার বাব! জল নিতে পারত।
শরদিন্দু মাথা নাড়ে। না। টানাজমি ছিল টাক] ছিল কিন্তু বাবা জল
নিতে পারত না। কেন পারত না। কেন পারত ন1। তে কথা বাব!
শরদিন্দুকে বুঝিয়ে বলেছিল।
বলেছিল, “তুইও দেখি খেপা ওই গোকুলের মত। গোকুল এতক্ষণ টেঁচাল।
তুইও চেঁচাচ্ছিস।,
বাবা কখনোই চায়নি ভাগচাষীর। জল নিয়ে চাষ করে তাকে বিঘা-প্রস্ধি
ধান বেশি-বেশি দিক । নিজেদের খোরাকি পাক। বারুরাও চায়নি চাষ ভালো
কোক, ছুভিক্ষ ঘুচুক | কেননা, দুতিক্ষ থাকলে তবে লাহায্য-খয়ক্াতি আসে।
বাবা বঞ্সেছিন, 'ক্যানালের ছল এনে বান ভালাতে পারি। ..কিন্ত জলে
১৪০ মহাশ্বেতা দেবার শ্রেষ্ঠ গল্প
অনার দরকার কী? ইদার1 আমার | চাষের জন্তে টিপা কল সরকার আমারে
দেখে দিয়াছে । আমার ঘরে কল বসাছি। জল! ছল দিয়ে কী হবে?
ধান হবে? ধান দেখাঁস না শরৎ। ধান বেচে কত পাব? বিশ হাজার
টাক? জ্বল নিব ন1। ধান বাঁড়াব না। দেখবি এ বছরেই তোর সামনে বসে
বসে পঁচিশ হাজার টাকা দশটা গ্রামে ধার দিব। ধার দিবস্থ্দ নিব। এই
স্থ্দ হতে সকল সম্পত্তি করেছি । ক্যানালে জল আছে মে মোর অজান। ?
“ওদের কী বলব 1,
“সে তুই ভাবগা যেয়ে । এদিকে আকাল হয় বুঝি, সদ্বরে যেতে হবে।
খরাতির টাকা আসবে সে কি গোকুলের কথায়? মোর! গ্রাম-গ্রধানরা
ব্রিপোর্ট দিব তবে আসবে ।,
শরদিন্দু বেরিয়ে এসেছিল। কী বল৷ যায় গোকুলকে ছুরস্ত খরা,
জলাভাবে পোড়তলায় চারা-ধান খাক হয়ে যায়। জল পেলে তবে ধান নাড়া
চলত। ক্যানালে অনেক হ্বল। সকলের চোখের সামনে দিয়ে ক্যানাল দিয়ে
জল বয়ে যায় রাতে জলের গর্জন শে।না যায় । জ্বলের অভাবে চাষ হবে না।
ক্যানালের দু-তীরে বিঘার পর বিঘ! জমি বন্ধ্যাত্বের ক্ষোভে ও বেদনায় ফেটে
চৌচির হবে। গোকুলকে কী বল! যায়?
গোকুল বলছিল, “বাবা কী বললেন ?
'ক্যানালের জল আনতে অনেক হাঙ্গামা।”
ছাজ।মা বলতে সদরে আঙ্জি+ বিড্ডি আপিসে খবর, ক্যানালের খাজবন]।,
বাব বলেন, “হাঙ্গাম। বিস্তর |?
“সব যে মরে গেল? মরে যায়?
লক্ষণ সামস্ত বেরিয়ে এসেছিল। বলেছিল, “কে ওখানে 1? গোকুল?
কী হয়েছে বাবা 1
“আপনি ক্যানালের জল নিচ্ছেন না কেন?
ক্ষমতা নাই বাবা! তোমাদের ক্ষম্জ] থাকে নাও গা। আঞ্ি
লিখ। আঙ্জি তো তৃমি আমার ঘরে কল বসাবার সময়েও লিখেছ | আন্ছি
তুমি ভালই লিখ। খান্জনার টাকা জোগাড় কর, আম বিড্ডি আপিসে
দিয়া দিব ।,
জমি আপনার খাজন। দিব আমর1।+
'আমার ক্ষমতা কী 1,
জল ১৪১
ক্ষমতা! আমাদের আছে?
ক্ষমতা নাই 1 ক্ষমতা অনেক। এই কল বসাবার সময়ে তোমান্ধ
ক্ষমতা দেখি নাই আমি? বাবা গোকুল! এটা বুঝল না আমার জমি,
হলে বা বাড়ির জমি, তাতেই কল বসল। নইলে বিড্ডি তাল তুলেছিল
ক্যানাল আছে । কল দিব কেন?'
“আপনি ক্ষমতাবান লোক তাই চাষের জন্ত সরকার কল দেয়, আপনান্ন
ঘরে কল বসে। বেশ জল নিবেন না। মানুষ যে মরে যায়। তার
কী হবে?
বাবা ! এই যে মরে যায় কথাটা বললে এট। কি ঠিক বললে? বাকুপিতে
কারেও আমি মরতে দিই? কখনে! দিয়াছি? টাকাকে দেয়? ধান-বাদধি
কে দেয়?
"জল বিনা চাষ জলে যার়। তবু আপনি জপ নিবেন না !,
'বাবা। আমি সেকাল] মান্য । আমার বুঝ-সদ্বিত আরেক রকম।
দে|য নিওন] বাবা! একট] কথা শুধাই। ভগবান জল ন] দিলে চাষ হয় খালে
জলে] কখনো হয়েছে? কোথাও হয়েছে?
'কুডাসিমার হচ্ছে।,
£ঠেট] তর্কে লাভ নাই গোকুল। কথায় কুক! বাড়ে। এখন বলঃ+ চির
কাল খর] হলে তোমরা, ঠাকুরথানে পুঙ্গ দিয়াছ জল হয়েছে । এবার হল না
কেন ?, |
«কেন হল ন। আমি কী বলব?
“এবার তোমার চেটাং-চেটাং কথার মাহাত্ম্য ছেড়ে গেল। ঠাকুরের নাষে
তুমি চেটাং চেটাং কথা বল। তোম! হতে বাকুলিতে পাপ ঢুকল।”
“তবে এই আপনার শেষ কথা ?
হ্যা
গোকুল চলে গিয়েছিল। বাব] শরদিন্দুকে বলেছিল চিঠি “দিচ্ছি। সদরে
চলে যা শরৎ । আমার কথা না পেলে আসবিনা । গোকুলের গতিক আমি
ভালে। বুঝি না। এইজন্তেই তোর মা-বউ সব লদরে রেখেছি। বাস ধনে
চলে যাবি। রিপোর্ট লিখাবি সদরে ॥
সদরে থাকতেই খবর পেয়েছিল শরদিন্দু । লগ্মণ সামন্ত মেই। ওছে়্
বাড়ি জলছে।
১৪২ মহাশ্বেতা! দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
শরদিন্দু সব কথাই বলল এখন। বলল, 'বাবারও জেন ছ্থিল খুব । ওই
জগ হতে সব গণ্ডগোল বাধল |,
“ওর] রাতে কোথায় যায়?
“দিঘিতে। দিঘির বুক খু'ড়ে। বিহানে যেয়ে জল আনে । আপনি
ভাববেন নাসার | বিহীন না হতে জল টেনে যায়।।
“তবু ওর] গ্রাম ছাড়ছে না কেন?
বাক্ুলিতে বসে সরযূ নির্ভরসাকে সেই কথাই বলল। বলল, গ্রাম ছেড়ে
বাগুন। কেন?
“কোথা যাব ?
“সদরে যাবে, ভিক্ষা! কয়বে।,
€তোরা ?'
'মোরাও ভিক্ষা করব |
“কেও জল দিল না?”
না। কুড়াসিমায় মোদের নাম শুনলে ডরায় | সাহেব ত্বান করেঃ জল
ঝহে পড়ে যায়। সে জলও দিল না। তৃমিষে মাটিতে কাঠি টেনে জলের
স্থলুক জানতে । তোমারে যে গ্রামে গ্রামে ই'দার1 কাটবার আগে ডেকে
নিয়া যেত। তুমি জানতে। ওই ভাঙ্গাজমিতে কল বসালে জল উঠবে?
এই এত জল?”
£হোথা কোনোদিন দেখি নাই ।
“হেথা বপে*বসে কল টানে শব্ধ শুনি । রাতে ক্যানালে জল বহে
যায়, শব শুনি। আন তেরদিন মাথার জল নাই। সব যেন জলে
গেল।'
নির্ভরস1 চোখ বুজে বসে রইল। একটা ভ্বালা আকড়ে ও বসে থাকে।
জালা আকড়ে ঘুমোয় ৷ মেয়েরা শেষরাতে মজারদিঘির বুক খুঁড়ে জল আনে।
জালায় টঢালে। আজ তেরদিন সেই জল মেপে-মেপে নির্ভরসা সকলকে দেয়।
ওরা সবাই পোড়া ধান নখে খুঁটে চাল বের করে খায়। ওর! সবাই তেতুল
গাছের নিচে বলে থাকে দিনে ও রাতে। সরযু মাঝে-মাঝে গাছে উঠে তেঁতুল,
পাতা ছেঁড়ে। সকলকে দেয়। টক তেঁতুল পাতা চিবলে মুখে লাল। কাটে।
গলা, ভেজে । কিদ্ত এখন আর শরীরে জল নেই। তাই মুখে লাল! তেমন
কাটছে না।
জল ১৪৩
নির্ভরস! বলল, “একবার গেলে আর ফিরতে পারব? নতুন প্রজ্জা বসাকে
শরুৎ |?
'নতুন প্রজ্ঞা বসাবে, বাঁস-পারমিট পেয়েছে, টাক দিবে সরকার ।”
“তবে ?
«তোমারে আর প্রজা রাখে? এখন কারে বাপ্রজা রাখবে। কেৰো চাষ
করবে বল? মেয়ের] বু'়রা, কোলের ছেলের11 তুমি বুঝ না কিছু?
“ষে একবাস গ্রাম থেকে বেরাবে, তাকে আর ফিরতে দিবে না, নয়ত
বেরালে আমি বেবস্থা করতাম।”
“কী করতে? জল নামাতে?
“বেবস্থা করতাম।” নির্ভরস। অবাধ্য জেদে বলল !
সরযু নিঃশ্বাস ফেলল | বলল, “লোচনের পরিবার, ছিরিপ্ধর ম" সোনা
ষাঝির পরিবারঃ এর] চলে যাচ্ছে।”
“চলে যাচ্ছে?
“সদরে যাবে। হেথা পড়ে জীয়স্তে মরবে 1,
নির্ভরসা চোখ বুজে বসে রইল। তারপর বলল, “নাজ রাতে দেখতে
ব্ল।,
“কেন!
'ধর্মঠাকুরের পূজা আমার হত হতে হত। জীবনে মিথ্যা বলি নাই»
আজ রাতে জল ডেকে দেখি। ঠ|কুর জল দেয় কিন1।'
রক্ত দিবে কে?
“তুই দিবি।,
সরযুর বুকে শেল বিশধিল | গৌঁকুলের কথ বুকে বিধে আছে। গোকুলের
ধে তার ওপর খুব বিশ্বাস ছিল? সেকেমন করে বুক চিরে রক্ত দেবে।
জল ডাকবে?
“পারবি না?
স্রযূর বুক ঠেলে নিরস্র কান্না উঠে এল । মাথা নাড়ল ও। গোকুল তো
বলেনি, ংররঠাকুর মিথ্যে? সে তো বলতঃ যে-কাজে পাচজনের ভালো হয়»
সে-কাজ করতে কোনে দ্বিধা থাকা উচিত নয়? গোকুলের কথা মনে করতে
গেলেই কেন কাকরের প্রতিবাদ বুটের ক্রাচ ক্রটাচ শব্ধ মনে হয় সরযূর?
'বার নাম গোকুল দাশ' কথাটা! কেন শুনতে পায় ও1 কেন মনে হয়, ওই
3৪৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
“কার নাম গে'কুল দাশ?" প্রশ্নটার সজে-সঙ্গে ওর চেতনা থেকে একটা
কালো পর্দ। নামিয়ে দিল কে?
সবযু মাথা নাড়ল। বলল, পারব!"
নির্ভ,সা যেন ভরসা পেল। বলল, "অনেক রক্ত লাগে, তাই কারে বলতে
'পারি নাই ।,
সব্যূ মাথা নাঁড়ল বলল, “তবে সেই কথা”
“তা বাছ্ছে জল হবে।'
হ্বে।,
কখনও বৃথা যায় নাই,
সরযু চুপ করে রইল । “অপাবেশন-বাকুলি সাকসেসফুল | সব নিশ্চপ।
কালাস্ত হচ্ছে কোথাও, যুগাস্ত হচ্ছে। সবনিশ্চ*প। ক্যানালের জল বনে
যায় তার শব্দ। ওদিকে কলটেপার শব। জল কত জল। নি-শ্র কান্নাভর!
রক্তাক্ত চোখ ছুটি দিগন্তের দিকে মেলে দিন সরযু। দিগন্তে বাতাস কাপছে ।
যেন প্রোতোৎসব, প্রেতপ্রেতিনী নাচছে দগন্তে আকাশের গায়ে। আধ
জলছে। আকাশ থেকে কোটি কোটি ফারেনহাইট উত্তাপ ঢালছে। বেল!
দখট! হবে।
মাত দশটা] বাজল | হঠাৎ আলুমনিআমের ঘরে বসে যুবকটির মনে হল
বাকুলিতে বাইশটি মানুষ যেন কী করছে। নিশ্চয় ক্যানালে অথবা নদীতে
যেতে চেষ্টা করছে না? ছু-দিকেই পাহার]। তবে কী করছে ওরা?
যুবকটি কোমরে রিভগবার নিলঃ হাতে দৃরবীন। নেমে এল ও সি'ড়ি
ধরে। ক.টাতার পেরিয়ে গামলাটার কানায় এসে দর,ড়াল। চেখে দুরবীন
তুলল।
চাপা ও অশ্বচ্ছ ক্ধ্যোতৎনস!। কিন্তু দরবীনে সব স্পষ্ট দেখ! যায় । মেয়েরা,
বুড়া, হাত তুলে দ।ড়িয়ে আছে । শীর্ণ ক্করলের মতে চেহারা, চুল রুক্ষ ।
কোনো-কোনে। মেয়ের কোলে শিশু ।
একটি মেয়ে মাঝখানে ধ।ড়িয়ে। সেই বুড়োট।। দ্যাট গোকুল দাশের
বাবা। মেয়েটার বুকের আচল নামিয়ে কোমরে জড়িয়ে দিল।
কর, নিষ্ঠর। এক আধিম ৫দবতার মতো দেখাচ্ছে বুড়োটাকে।
বুড়োট। হাত জোড় করে কী বলল । তারপর, যুবকটি শিস্ দিল উত্তে্জনায়।
বুড়োটা একটা ছুরি দিয়ে মেয়েটার বুক চিরে দিচ্ছে। হোআট ক্রুয়েলটি।
জন ১৪৫
মেয়েটার বুক দুটা কেঁপে উঠগ। বুড়ো ওর হাতে একটা পাত্র দিল। মেয়েটা
ছু-হাতে বুকের কাছে পাত্রটা ধরল। রক্ত পড়ছে নিশ্চয়ই । মেয়েটা মাথার
ওপর মালসাট! তুলল। তারপর, রাতের জ্যোতস্সা ও ক্যানালের জলের
শব্ধ ছাপিয়ে চেঁচিয়ে, কান্নাভরা গলায় ডেকে উঠল, “জল দাও! দাও গে
ঠাকুর |,
মেয়েটা 'জ্রল দাও ।' বলতে বলতে ঘুবতে লাগল “বিশ্বতুবন জণে গেল
ঠ।কুর, জল দাও ।”
যুবকটিকে সব রকম সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথ! বলে ব্রিফং করে দেওয়া
হয়েছে । ওরা আরো গোলমাল করলে কী করতে হবে, ওর] ক্যানাল বা
নদীতে যাওয়ার চেষ্টা করলে কী করতে হবে। সব নির্দেশ পেয়েছেন
যুবকটি । কিন্তু তের দিন একট] গ্রামকে এক আ'জল জআলও ন। দিলে রাতে
গোকুল-নিরাপদ-তারিণীর বাবা শুকনো চোখে গোকুলের সঙ্গিনী মেয়েটার বুক
চিরে দেবে, মেকেট? বুকের রক্ত পাত্রে ধরে জল ডেকে ডেকে চেঁচাবে। এর
'জন্তে কোনে! ব্রিফিং তাকে করা হয়নি |
ব্রিফিং হয়নি । নির্দেশ পাননি। ডিলশ্যারেড করে কবে যুবকটির বক্ত-মজ্জ।-
মন ওপরঅলার নির্দেশ ছাড়া কিছু করতে পারে না । হুল্ট-_ চার্জ -স্টপ-_
আযাড-ভানস এইপব নির্দেশ তিনি চেনেন ও শির্দেশ পেলে কাজ করতে পারেন।
এখন এই পরিস্থিততে তিনি অসহায়, নির্দেশ নেই বলে অক্ষম ও নিক্রিন
দর্শ মাত্র । তাই তিনি সারারাত ধড়িয়ে রইলেন। সারারাত, সারারাত
মেয়েটি 'জল দাও” বলে ডাকতে লাগল।
তারপর সকাল হল। স্থ্ধ উঠল। সারা» ক্রুদ্ধ নির্মম হূর্য কোটি-কোটি
ফারেনহাইট । বাতাস জলছে।
তারপর লোকগুলি গ্রাম ছেড়ে বেরোল। যুবকটি কিরে এলেন। শ্বত্থি,
বিশাল ন্বন্ত। এখন শরদিন্দু নতুন গ্রজা। বসতে পারবে । ওর! চলে যাচ্ছে।
বুড়ো-বুড়ি মেয়ে-শিশু । কোনে। বালক-যুবক-প্রৌট নেই। নেই কোনো
কিশোর বা তরুণ। থাকার কথাও নয়।
রুক্ষ ও দগ্ধ প্রাস্তর ধরে হাটতে ই।টতে ওর] সড়কে উঠল। বাস আসবে।
বাস ওদের নিলে ওর] বাসে যাবে। নইলে সাত মাইল হেট সারে
যংবে।
বাসের জন্য অপেক্ষ! করতে করতে সরযূ বলল, “যারা গোকুলদের ধরাল,
১৪৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
তার] বাচল নাঁ। জল ডেকে বুক চিরে রক্ত ফেলালাম, জল হল না। তারা
বাগেকুলদের ধরাল কেন, আমি বারক্ত দিলাম কেন?
কেউ উত্তর দিল না । এ প্রশ্নের উত্তর কারে] কাছে ছিল না। ওরা
দুরে বাসের ধুলো দেখতে পেল। বাস আসছিল, লাল ধুলো উড়ছিল ।
বাতাস জলছিল, বাতাসে কা।নালের জলের শব্দ।
রং নাম্বার
রাত একটা। তীর্থবাবুর ঘুষ ভেঙে গেল। টেলিফোন বাজছে।
মাঝরাতে টেলিফোন বাঙজ্জলে কেন এত ভয় করে?
'হালো। শুলগন “হাসপাতাল থেকে বলছি * আপনাদের পেশেপ্ট
এইমাত্র মার] গেলেন। হালে1।
“আমাদের পেশেন্ট 1 হাসপাতালে আমাদের কোনে। পেশেন্ট নেই ।»
আপনার নম্বর ?+
বিংন্ঘর! ছেড়ে দিন।,
রং নাম্বারে ফোন করেন কেন 1 বং নান্বারে 1,
তীর্ঘবাবু ফোনটা! নামিয়ে রাখেন । ভয় করে। ভীষণ ভয় করে।
হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে কেন? কেন এত রং নাম্বার হয়?"
সবিতা জিজ্ঞেস করেন। আজ অনেকদিন হুয়ে গেল সবিতা বা তীর্থবাবু
কেউ অনেক রাত অবধি ঘুমোন না। ঠিক বারোটায় তীর্ঘবাবু একট'
ঘুমের বড়ি খেবে নেন | থেয়ে চোখ বুছধে শুয়ে মনটা চিন্তাশৃন্ত করে ফে্তে
চেষ্টা করেন।
পারেন না। কিছুতে পারেন না তীর্ঘবাবু। তার চেতনা আর
অবচেতনাঁ» প্রথম স্তরের চেতনা আর অতল স্তরের চেতনা, প্রত্যেকটির
মাঝ দিষে খাঁড়। খাড়া দেওয়াল উঠে বায়। দের়ালগুলোর গায়ে পোস্টার
ঝাটা থাকে।
দীপক্করের ছবি। শৈশবের দীপস্কর, মাথ। ন্যাড়া, ন্যালাভোলা চেহারা! ।
ম্যাট্রিক পাশ করা দীপঙ্কর । গ্রাজুয়েট দীপন্কর। লহ্বা একহারা, ভাবুক
আর শান্ত চেহার]।
শীপঙ্কর | তীর্ঘবাবুর একমাত্র ছেলে। সন্তান, সন্তান, মাহুষ লম্তান
ফেল চার 1 কেন ভালবাসে সন্তানকে? তীর্থবাবু রোজ এই প্রশ্নটা নিজেকে
করেল।
তারপর ঘুম আসে। গাঢ়ঃ অথচ অন্বত্তিতে আতঙ্কে বিপর্ধন্ত ঘুন।
সবিতা বোধহয় তখনও ঘুমোন না। তাই ভিনি ছিজেস করেন কার ফোন ?
১৪৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
রং নাম্বার ।
'কোখেকে?
হাপপাতাল থেকে ।,
হাসপাতাল থেকে? ওগো অংমার্দের ফোন যদি হয়?
“পাগলামি কোরো না সবু। দীপু নীরেনের কাছে আছে তুমি তো জান।
খন থেকে নীরেন ওকে দিলিতে ভর্তি করে দিতে চেষ্টা করছে। সৰ
ছেনেও পাগলামি কর কেন?
'নীরেনের কাছে যদি থাকবে, তবে দীপু চিঠি লেখে ন! কেন? নীরেন
কেন চিঠি লেখে না আমায়? তোমর] কী ভেবেছে আমি কান্নাকাটি কর?
ছুট যাব নীব্ননের কাছে?
“বু, অস্থির হয়ে! না।,
“আমার যে মনে হয় দীপু লীরেনের কাছে নেই? নীরেন ইচ্ছে করে
মায় কিছু বলছে না?
“চুপ করে| সবুং কেঁদো না। সব ঠিক আছে। তুমি তোজান দবীপুর
পাগিয়ে থাকবার ফোনে! কারণ নেই ।,
“বে ও আসে না কেন?
'সবু, অস্থথে অস্থথে তুমি অবুঝ হয়ে গেছে। দিনকাল খারাপ» এ
অঞ্চলটাও ভালে নয় তাই ও আসে না।,
সবিতা এই সময় কাদতে গর করেন। আতন্তে আহে, গুনে
গুয়রে।
কদতে কদতে এক লময়ে সবিতা ঘু'ময়ে পড়েন। তীর্থবাবুর তু
আসতে দেরি হয়। কী হয়ে গেল দেশের অবস্থা । আচ্ছা, রুগী যদি মার!
যার, তবে টু-খি, এক্সচেঞ্জের নম্বর দিলে ফোর-সেভেনে ফোন করবি তোরা ?
রং নাম্বার । যাদের রুগী, তাদের মনের কী অবস্থা হয়?
কিংবা হয়ত কোনে। অবস্থাই হয় না। আজ্গকাল নাকি সবাই কুকু-
ক্ষেত্রের অর্জুন, চূড়ান্ত নির্ষেদে মৃত্যুকে গ্রহণ করে । লাশ নাকি বিছানাতেই
পড়ে থাকে । খরচ বাঁচাবার জন্য আত্মীয়রা চলে যায়, আর আসে না।
নাকি পড়েই থাকে ঠাণ্ডা গুদামে । কেউ দেখতে আসে ন পর্ধস্ত।
তীর্থবাবুব ভয় করে, খালি খাণি ভয় করে। এ একটা অন্ত কলকাতায়
বাদ করছেন তিনি, অন্ত পশ্চিমবঙ্গে । দেখতে মনে হয় সেই শহর । সেই
সংনান্থার ১৪৯
গড়ের মাঠ-যন্ুমেপ্ট: ভবানীপুর-আনিপুর-চড়কড়াঙগার মোড়! সেই আযাচ়ে
রথের মেনা-ঠচত্রে কালীঘাটে গাজজন*_মাছে বড়দিনের আলোকসজ্জ।।
সে শহর নয়। এ একটা ভূল শহ্র। বং পিটি। ভুল ট্রেনে চড়ে
ভূল শহরে এসেছেন তীর্থবাবু।
নইলে, সবিতাকে বল সবগুলো স্ভোকের কখ! ভূলে গিয়ে তীর্থবাবু
ভাবেন, নইলে দীপস্কর চিঠি লেখে না কেন? কেন নীরেন খবর দ্ধের না
দীপক্করের?
কেন, কেন সন্তান চায় মানব, কেন ভালবাসে আতকে, আত্মঙ্জাকে 1
সৃত্যুতে মুখাপ্ি করবে বলে? রং আন্পার ॥ যতদিন জীবিত আছেন তত.দনই
সন্তানকে চান তীর্থবাবু। কাছে থাক তুই, পাশে থাক। আমার জানা
বত্ত্রণা নেঃ ভাগে নেঃ। আমার সঙ্গে এক হয়ে যেতে শেখ,
রং হোপ।
কোথায় একটা এক্সচেঞ্ধ আছে যেন, এই শহরে কোথায় আছে একট!
এক্সণ্জে 1 কে সেখানে বসে তীর্থবাবুকে শুধু বলছে রং নাশ্বার। রং সিচি।
»ংহোপ!
কেসে? কোথায় সেই অদৃশ্ত অপারেটর 1 অপারেটরদের দেখা বাস ম!
কেন?
ভাবতে ভাবতে তীর্থবাবু টুপ করে ঘুমের ভেতর ডুবে যান। এই ব্বকমই
চলে দিন থেকে রাত, সোম থেকে রবি, সকাল থেকে সন্ধ্যা। রাতগুলোকে
ভয় করে তীর্থবাবুর, কেননা ঘুমের মধ্যে শুধু সারি সারি দেওয়াল দেখতে পান
তিনি।
দেওয়ালে দীপঙ্করের মুখ আকা থাকে। ঘুমের মধ্যেই তীর্থবাবু ভাবতে
থাকেন তবে কি মনোজের কাছে যাবেন। মনো ওর বন্ধু, মনের রোগের
ডাক্তার। তীর্ঘবাবুর নিশ্চয়ই অস্থথ হয়েছে। তোমার অস্থ্খ হয়েছে তীর্থ।
মনোঙ রায় দিল। তীর্ঘবাবুর শুকনে| মুখ কাতর চাহনি আর বারবার
কপ।ল থেকে ঘাম মোছার চেষ্টা ও লক্ষ করছিল।
“কী অন্থথ ?
নার্ডের ।,
“নার্ভ তো৷ আমার.ভালোই মনোদ্ধ
£তোমার চিন্তাগুলে! অগীক ।*
১৫5 মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
“অলীক |”
তুমি কী বলেছ তুমি নিজেই শোন ।”
মনোজ্জ টেপরেকর্ডার চালিয়ে দিল। মনোজ রোগীদের শ্বীকায়োক্ষি
টেপ করে নেয়। তারপর বিচার করে। রায় দেয়। তীর্ঘবাবু টেপ-
রেকর্ডারটা দেখ মনে মনে টাকার অঙ্ক হিসেব করছিলেন। এখন হঠাৎ একটা
ক্লাস্তঃ নিচুগলা শুনতে পেলেন।
“আমার মনে হর বাড়িটা আমার নয় । কড়া নাড়লে কেউ দরজা
খুলবে না--কেননা! আমি বং আযাড্রেসে এসেছি। পথে ঘাটে চলতে চলতে
আমার শুধু মনে হয় কলকাতা এখন কলকাতায় নেই । বাইরের বাড়ি-ঘর-
দৌর গড়ের মাঠ মন্ুমেন্ট সব অন্য একটা শহরকে ধরে নিয়ে কলকাতা উধাও
হয়ে গেছে। মনে হয় ইটস এরং সিটি! কোনে! প্রয়োজন নেই তবু এটা
ষেসেই কলকাতাই তা নিজেকে বিশ্বা কথ্াবার জন্তে সেদিন ক্যাওড়া-
তল। গিয়েছিলাম । দেওয়ালের লেখাগুলো পড়েই বুঝতে পারলাম আঙি
ভুলজায়গায় এসেছি । সেদিন আমি ্বপ্প মেখেছি'"''
টেপ রেকর্ডার থামিয়ে দিন যনোজ। তীর্ঘবাবুর দিকে চাইল | বলল-_
«কী ন্বগ্ন দেখেছ তীর্থ?
«আমি বলতে পারব না ।
কৌন্বপ্প?
“আমাকে জিজ্েস কোরে। না! মনেো!জ, আমাকে জিজ্ঞেস কোরে! ন1।
্বপ্পট। আমি মাঝে মাঝেই দেখি ।*
£সেইজগ্যেই আমার জানা দরকার |!
“না মনোজ ।,
: “তুমি অনুস্থ তীর্থ । ম্বাভাবিক, অসুস্থ হওয়া ম্বাভাবিক'*"
«কেন? আমার পক্ষে অসুস্থ হুওয়] শ্বাভাবিক কেন?
“তোমার ছেলে তো'*****
“আমার ছেলে কী?
বাড়িতে নেই ।
এনোছ, আধি জানি নাকে তোমায় কী বলেছে। আমার ছেলে
নীপক্ষর। কাঞ্জিন নীরেনের কাছে আছে লক্কৌতে। ওখান ৫েকে দ্িশ্িক্ষে
পড়বে দীপদ্কর |"
বং নাম্বার ১৫১
. গিড!
মনোজ যেন যন্ত্রণায় আর দুঃখে কথাটা বলল। ভেতর থেকে দীর্ঘনিঃশ্বাস
উঠে এল একট]। তীর্থ” ওদের সময়ের সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথার ভালে! ছেলেট।
এ রকম হয়ে গেল? |
গড!) মনোঙ্গ খসখস করে ওষুধের নাম লিখল। কাগজ ছিড়ে
ফেলল, তারপর একট। ওষুধের শিশি দিল তীর্থবাবুকে।
বলল-_-
'রাতে এটা খেয়ো তীর্থ। ঘুম হবে,
'দাও।,
তীর্থবাবু ওষুধের শিশিটা নিলেন। বেরিয়ে এলেন। মনোজ দরজা!
পর্যন্ত এগিয়ে এল। তারপর বলল---
«বোস তোমার কাছে আর যায়নি তো?
ণা, কেন?
“আমি ওকে বারণ করেছি।”
*৪ এলে আমি ঢুকতে দেব ভেবেছ বাঁড়িতে? .সবিতাকে সব আজে-
বাজে কথা বলে আজেবাজে কথ বলে চলে যায় শুধু! তীর্থবাবু বেরিয়ে এলেন,
এখন সন্ধ্যা হয়েছে ।
না কি সকাল? রাস্তায় কাতারে কাতারে লোক ।
নাকি জনশূন্য পথ?
নির্জন পথ--মেঘ!বৃতা৷ রজনী ***ঝড় ঝঞ্চা--জয়সিংহ চুরিতে শাণ দিচ্ছে।
বববীন্দ্রনাথের বইয়ের এ বর্ণনাটা তীর্থবাবুর খুব ভাল লাগত।
দীপঙ্করের পাঠ্য ছিল 'রাজধি+।
তীর্ঘবাবু বুঝতে পারলেন তার চোখ দিয়ে জল পড়ছে টপটপ করে।
সন্তানর1 এখন ঘাতক, ঘাতক ওরা। পিতামাতাদের নিয়ত হত্যা করে
খাকে। তীর্থবাবু ওষুধের শিশিট! যত্বু করে নিয়ে যেতে লাগলেন। যেন
অলিম্পিকের পবিত্র অগ্নিশিখা নিয়ে যাচ্ছেন।
আজ রাতে শুয়ে শুয়ে তীর্ঘবাবু সেই শ্বপ্নুটা আবার দেখলেন। শুরে
দেখলেন চৌরঙ্গী রোভটার ছু'পাশে লক্ষ মান্য দীড়িয়ে আছে। তার!
সবাই নিশ্চল । পথের ছুপাশে বড়ো বড়ো শাদা উজ্জল আলো৷। পথের
মাঝখানটা রক্তাক্ত । সেখানে গড়িয়ে একটি প্রৌড়া রমণী আলুলাযিত
১৫২ মহাশ্বেত1 দেবার শ্রেষ্ঠ গল্প,
চুলে বুকে হাত চাপড়ে প্রণীর! প্রবীর! প্রবীর! বলে বিলাপ করছে।
মেয়েটিকে দেখেই তীর্থবাবু বুঝতে পারলেন ও পুরাণের সেই জনা।
দূরে দূরে-__ভীষণ প্রান্তরে
মরুভূমে- ছুরস্ত শ্বশানে_
হেথা তোর নাহি স্থান।
ছু্গম কান্তারে, তুষার-মাঁঝারে,
পর্বত-শিখরে চল।
চল পাপ রাজ্য ত্যজি,
পতি তোর পুত্রঘাতী অরাতির সখ! ।
চল পুত্র-শোকাতুর1--
রমনীটি আকাশ ফাটিয়ে টেঁচাচ্ছে। এই সময়- ড্রপ ফেলে দাঁও।
ঘণ্ট1 বাজাও | বলে কার! ঠেঁচিয়ে উঠল । কে বলল এটা মাহিম্মতীপুর
নয়। চলে যাও।
তৎক্ষণাৎ তীর্ঘবাবু বলতে গেলেন শী ইন্জ ইন্ দি রং সিটি! কিন্ত
ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিল।
ঘণ্টা বাজছে । ফোন বাজছে।
তীর্থবাবু উঠে বসলেন। টে(লফোন মানুষ রাখে কেন? ভাড়া দিতে
জিভ বেরিয়ে যায়ঃ নাভিশ্বাস উঠে যায় যখন?
তীর্থবাবু রিসিভার তুললেন।
«ফোর সেভেন.নাইন ?
ঠিক এ নাম্বারটাই তীর্ঘবাবুর সামনের টেলিফোনটার গায়ে জেখ!
আছে। তীর্ঘবাবু বললেন, “নে? ।
“এটা! তীর্ঘন্কর চ্যাটাঞ্জির বাড়ি নয়?
“নো,
তীর্ঘবাব,। আমি! বোস। হ্যা সেদিন যা বলেছিলাম। ""*দুরে
রেল লাইনের পাঁশের বডিটা, হা? দীপঙ্করের। ভায়েড অফ ইনজিওরিস!
আপনি তো! এলেন না । বডি হাজ বীন ক্রিমেটেড। হালো! শুনতে
পাচ্ছেন ?
না,
“এটা ভীর্ঘস্কর চ্যাটার্জি বাড়ি নয়!"
বংনান্াার ১৫৩
না ।
“এট] ফোর সেভেন**নাইন নন?
“না, রং নাম্বার ।”
তীর্থবাবু ফোন নামিয়ে রাঁখলেন। কী ভেবে রিপিভারটাই নামিস্বে
রাখলেন। তারপর বিছানায় ফিরে গেলেন। ন্বপ্নটা আবার দেখতে হবে.
যেমন করে হোক আরেকবার দেখতে হবে। স্বপ্ন দেখে তবে ত্থবাৰু
জানতে পারবেন কেমন করে উন্মাদিনী জনা! রং সিটি থেকে পালিয়ে গেল ॥
প্র ছাডা তীর্থবাবুর হাতে আর কিছুই নেই আজ । জেগে জেগে
কলকাতার পথ ঘুরলে একটাও বেরোবার পথ দেখতে পান না তীর্থবাবু॥
এখন তকে জনার পেছন পেছন যেতে হবে। প্রবীরের মৃতার পর প্রবীরের
বাপ থেকে সবাই যখন দ্াতকদের নিয়ে বিজয়োৎসব করছিল, একা ভন
পালিয়ে গিয়েছিল ।
ীর্থবাবু ঘুমিয়ে পড়লেন ।
১৩
উর্বশী ও জনি
উর্বশীকে কোলে নিয়ে বসেছিল জনি, জ্রনির কোল না হলে উর্বশী বপন্ডে
'পারে ন|। ঠাসঠাস করে আছাড় খায়। এ কী ন্যাক্র] বলে! দেখি?
ডাক্তারের সামনেও জনির কোলে বসবে উর্বশী ? ডাক্তার মোটেই খুশি হচ্ছিল
না। শেষ-বেশ বলল, “উঠে এস এদিকে ।,
উর্বশীকে চেয়ারে সবত্ে বসিয়ে জনি উঠে গেল। ড'ক্তার উর্বশীর দিকে
চেয়ে জনির সঙ্গে কথা বলতে লাগল । জান! কথা উর্বশী মুখ খুলবে না!
যত কথাবাতী» সব ওর জনির সঙ্গে।
প্রথমে গলায় কি কষ্ট হত ?'
“গলা ভেঙে যেত।,
“তারপর ?'
“কাশি হত ।
উর্বশীর দিকে ডাক্তার চাইলে জনির চোখ হিংসেয় হলদে হয়ে যায়, বু
(উর্ধশীর দ্রিকে চেয়ে ডাক্তার বলল, “আগে কিন্তু বোঝনি? কোনো ডাক্তারের
' কাছে যাওনি ?'
জনি হেসে বলল, “আমার জানটা, বুপলেন ভাক্তারবাবু, এই মেয়েছেলে
খেয়ে নিলে । মেয়েছেলে তো জানেন, কিছু হলে বলবে না। এখনও তো!
দেখেছেন কী ছুরৎঃ দেখলে মাথা ঘুরে যায়। গিছলাম ডাক্তরের কাছে।,
কির কাছে?"
£হেকিমি, কোব.জি সব করিয়েছিলাম |”
«হোসেন ডাক্তারের কাছ থেকে চিঠি এনেছ 1 উনিও দেখেছেন?
“উনিই পাগালে। বললে, ভাল বুঝি নাজনি। তোকে এই উর্বশীতে
খেলে । ওর জন্তে তোর জনম ভোর য্যাত খোয়ার।,
“কী হয়েছে, কিছু বজলেন ?,
আনির মুখ বিষণ্ন হয়ে গেল। যেন ঝড়-ছলে চটে-ফেটে গেল কোনে চেন!
পুতৃস অথবা মূর্তির প্রাচীন মুখ । জনি বঙ্ুল। 'আপনি তো! জানেন ডাক্তারবাবু,
উর্বশীকে লইলে সকল থেলা কানা । ও গান গাইবে, বাতচিত করবে,
উর্বশী ও জনি ১৫৫
সাচবে কোমর দৌলাবে। হাসবে। পাবলিক বলবে, হ্যা উর্বশী, কেমন
আছ? ও বলবে, বড়ো স্থথে আছি গো! আমি স্থথের বানী! ছনি মোকে
বড়ো স্বখে রেখেছে ।?
“আরে, কাজের কথ! বলো ?”
জনি ফিশফিশ করে বলল, “হোসেন ডাকার যা বলল, তা শুনে তো মোর
হাত-পা পেটে সীদিয়ে যাচ্ছে ভাক্তারবাবু।'
“কী বললেন?
'বিশলেন, সব বন্ধ হয়ে যাবে জনি। তোর উর্ধশী আর হাসবে না,
গ্গাইবে না, কথা বলতে না।”
“কেন বললেন, বুঝলে কিছু ?'
গলায় জানি কী হয়েছে।?
কী হয়েছে?
“কী জানি হয়েছে ।,--জনি ঘাড়টা এদ্বিক থেকে ওদিক ঘোরাঁল, ফেদ
বলির পশ্ড টের পেয়েছে কাছেই হাড়কাঠ।
“গলায় ক্যানসার হয়েছে অরনি।"
“ওষুধ দেন, সুই দেন।”
“এখন আর লাভ হবে নাজনি। ক্যানসার হাসপাতালেও তো গিছলে।
তাব্রা কিছু বলেনি ?
“বলেছিল ।”
জনির গলা ভেঙে এল, কান্না ঠেলে উঠল গলায়। বলল, 'উ কথাই বলেছে
সার। আপনার ব্যাগাতা করি। উর্বশী না-গাইলে লাচলে মরে যাব
না-খেয়ে।'
জনি কাদছিল। উর্বশী নিধিকার মুখে বসেছিল। ভাক্তারের হঠাৎ ভর
হল। কিসের ভয় তা তিনি বলতে পারবেন ল1। মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন তিনি,
মৃত্যু কত রকম হয়। মরণ নিধন, অন্ত। এন্ড অফ জ|ইফ। বিয়িং
কিল্ড। সীজিং টুবি। সেই বন্ত মৃত, ছাট হাজ সীজড টু বি। উর্বশী
মৃত, নিহত, বরবাদ । কেন না যে-গলাম় উর্বশী কথ! বলে, গান গায়, হাসে,
দে-গলার গ্রাসনালী, শবরগ্রস্থি বিল্লী, গলবিল, কলা, বরকক্ষ, সবর ক্যানসার
সিংহাসন পেতে স্থায়ী রাজত্ব করতে বসে গেছে। সেই গলাটি ক্যানসারের
সিংহাসন রাঙ্গ্যকাল ফুরোলে ক্যানসার স্বীয় সিংহাসন নিয়ে চলে যাঁবে।
১৫৬ মহাশ্থেত। দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
কিন্তু উর্বশী নিলিপ্ত, ভৃূবনমোহিনী, অপরূপণ পীনদ্ধ বুক লাল ঠোট,
চোখ স্থিঃ-স্থির। কাদছে শুধু গরুনি। জনির আকুলতা, উর্বশীর নিপিপুতা
দেখে তরুণ ভাক্তারের ভেতরে সব তিম হয়ে এল। যেন তিনিই মরে
গেলেন, হিম-হিম হয়ে গেলেন। কিন্তু ভয় হচ্ছেকেন1? মরে গেলে তো
আনম কোনে! ভয়-নির্ভয় থাকার কথা নয়।
“কিছু বলেন, ভাক্তারবাবু |,
“জনি, হাসপাতালে গেলে? ক্যানসার হাসপাতালে:**১
ক্যানগার হাসপাতালে কিছু জানে না ডাক্তারবাৰু, পেটের লাড়িতে
ক্যানচার হয়, বুকে হয়ঃ গলায় ক্যানচার হয় কখুনো ?
“ওখানে ভর্ঙ হলে পরে বরং**
“উর্বশী এক। রইবে ন1 যে |!
“রনি, পাগলামি করছ তৃমি। ভর্ধশীর কি ক্ষতি হবে?
'সে আপনি বুঝবে না 1,
নিঃশ্বাস ফেলে উঠে পড়ল জনি। চোখ মৃছে বললঃ “চল্ উর্বশী, ঘরকে
বাই।
নি, তোমার অনেকদিন দেখছি, তাই ভালো কথা বলি শোনে1।
হাসপাতালে যা হয়ঃ ঘরে ত৷ হবে না।,
“হোথা! গেলে উর্বশী ফের লাচবে, গান গ1ইবে, কথ! কইবে ?,
'না জনি ১
“যে-গলায় ও গান গার কর লে.মুহববত, লোলিতাঁ- | সে-গঝা ঠিক
হয়ে যাবে?
ন। জনি।,
“তবে ?
জনি হঠাৎ খেপে গেল । বলল, সব শাঁজ। কানীর দলে গিয়ে সই হয়েছে।
মোকে উর্বশীর কাছ হতে হটাতে চাও। চোপরাও শালা, ফের হাসপাতাল--
হাসপাতাল বাতাবে তো! চাকু ভূ'খে দিব ।+
জনি চেঁচাতে লাগল। শাল! থেকে শুরু করে খারাপ কথার বান ছুটিক়ে
দিল। নার্স, আর্দালি, হাসপাতালের লোকজন ছুটে এল। সবাই সম্তস্ত।
“সব শালা হট্কেস্-ইা ব্ববা, তফাত যাও। লযঘ» তো! দনাদন্ মেরে
দিব। নবাই কানী মোতিযদলে,.যেয়েছে। ক্সামি বুঝি না? চল্ উর্বশী!
উর্বশী ও জনি ১৫৭
তোকে মোর কাছ হতে ছাড়ব ন। শালা ডাক্তার হয়েছে! তোতে-মোতে
ছাড়াছাড়ি করাবেই।'
ডাক্তার বলল, «যতে দাওঃ যেতে দাও, মাথা খারাপ হয়ে গেছে ।,
“তোমা-র মাথা খারাপ হয়েছে। এতক্ষণ দেখছিলে না ওকে? শাল!
অস্থথের কথা বলবে, তো ওর বুক পানে চেয়েছিলে কেন? আমি বুবি
না! কিছু ?'
ডাক্তার উঠে এল । জেনির কাধে হাত রেখে বলল, “েগাবে না জনি।
একদম চেঁচাবে না। আত্মে কথ। বলো, চলে যাও!
উর্বশীর গলা বন্ধ হয়ে যাবে বলছ» আমি চেঁচাব না?
না। চেঁচাবে না 1”
জনি সভয়ে গলা নামাল। বললঃ “েঁচাব না?'
“না ]+
বনি কা্ঘতে লাগল। বুড়ো। ঢোল! ও তালিমার। প্যান্ট পরনে গানে
ঘঙিন গেঞজি) গলায় রঙিন রুমাল, পায়ে ঢবচবে জুতো» মাথায় পালকের টুপি,
ওকে কীছুনে-বা্বরের মতে। দেখাচ্ছে। যেন বাড়ির দেয়ালে সাটা পোস্টার
থেকে সার্কাসের ক্লাউন কাদছে। কাদতে-্কীদতে ও উর্বশীকে সযত্বে কোলে
নিয়ে বেরিয়ে এল ।
হাসপাতালের বাইরে, যেখানে ওষুধের শিশি বিক্রি হয়? সেখানে বলে
হলে রামান্ন! চা বেচছিল। ছ্রনি ওর সামনে বসল, উর্বশীকে বসাল প্যাকিং
বাকের ওপর |
রামাম্না বলল, “কী গে! মেরিজান | চা খাবে? আজ যেলাল ঘাগর!
দেখি |,
জনি বলঙ্গঃ “চুপ যা থলে ।'
“লে, তুখা।'
ণদে।,
আদ] দিই?
রঃ
“কী বুল ড!ক্তার 1"
'ক্যানচার।'
কোথা ?'
১৫৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
'গলার়।
হে:
গলায় তাচ্ছিল্য ঢেলে রামান্না বলল, “গলায় ক্যানচার হয়? মোকে
কাানচার দেখাস না জনি। আমি মড়া দেখে দেখে হন্দ হইছি। ক্যানচার
হলে বাঁবা জ্যান্তে মড়াপচা গন্ধ বেরোবে । আরে সেলুকটার কুথা মনে নেই।
শালাকে গাডি হতে লামাচ্ছে তে হেথা অবধি গন্ধ ছুটছে । মরতে, বুল্লি
জনি, শালাকে অগ্ুরুতে চোবালে, তবু গন্ধ মরেনি |,
“মনে আছে।'
“মরতে সব সিকি ছড়িয়েছিল শাল1।'
“তু কুড়োতে যেয়ে আছাড় খেলি ।”
“তু শাল! সে ফাকে আমার পয়সার কৌটো। লিয়ে ভেগেছিলি। ছু টাকা
ষাট পয়স1 |!
পরদিনকে মাল খেলি কার পয়সায়?
“না! বলিছি ?"
জনি চা খেল। তারপয় ষলল, 'কী করি বুল্ তো?
ধলেংড়ির কাছে যা”
“কেন?
“এ বাবা» কানী মোতির কাম লয়। লেংড়ি বলে দিবে
"এ কুথা কেন বলছিস 1?
রামান্না হুলো” কমই দিয়ে পেট চুলকে বলল, “আমি যেয়েছিলাম লেংড়ির
কাছে। মেয়েলোকটার খাই খুব। বলে ভাল বিণ্উ লিয়ে আয়, ভেজিটেলি
চপ। একটা মড়ার বালিশ চেয়েছিল । সধ.বার মড়ার বালিশ। বলেছি এনে
দিব। তা» বিড়ি খাওয়ালাম, চপ খাওয়ালাম**"ঃ
“নিজের পয়সায়?
পিয়সা আবার কার নিজের হয় বাবা? পয়সা! তুমি কার ? যার কাছে
রই তার ! না, নিজের পয়স] নয়। সেদিন কী হল জানিস?
“কী?
“ভগীরথ ওষুধ বেচেছিল। পার্টির ওযুধ। পেশেন্ মরতে পার্টি খাট
আনতে গেছে। ভঙগীরথ তখনি ওষুধ-হল্লিক, সব লিয়ে হাওয়া। ও টাকা
জিয়েছিল।”
উর্বশী ৩ জনি ১৫৯
“লেংড়ি কী বলে?
রামান্ন গম্ভীর হয়ে গেল। বলঙ, “কানীরে তু বেকার দুষছিস জনি।
ও তোকে মুহব্বত করে ।?
ধুম! কানী, ধুমসি। ওর মুহব্বত কে চায়?
'না রে! সচচ্চ মুহব্বত খুব ভাল জিনিস রে! তোরে খাওয়াষ,
দেখে, ঘরের ভাড়া লেয় না সকল সময়ে। এই সেদিন আম'র কাছকে বসে
কত কাদল। বণল, ত্বনি একবার বললে ওরে জন্মভোর পুষব। তবে হ্যা,
উর্বশীকে ছাড়তে হবে।?
'তু কীবুলল?"
“বুললাম, উ কথা তু বেইয়দ হয়েযা কানী। জনি উর্বশীকে ছাড়বে
না, অন্য বাত বল্।?
লেংড়ি ঝী বুণে?'
“বুলে, কেউ বুঝি উর্বশীকে চায়। তাই বান মারা করেছে। শইলে
গলায় ক্য।নচার হয় না। আমিও বললাম, জনি আমার চিকে দোস্ত, |
লেং।ড়, ওর কথ। আমি জানি। যোকে বল্।,
“কী বুলল ?”
বুলল» আসতে বলিস রেতের বেলাকে ॥
“আজ যাব?
“আরে অজ উই লুকটার চৌথা। লেংড়ি তে! পাত কুড়োবার ক'প্তেন।
্ল নিয়ে হোথা থাকবে । সব জারগায় শালা বেজায় গোলমাল ! চিরবাঁল,
জানা! কুথা। শক্কার মাঠের বাপাশে বিয়ে-ছর।দ্র-পইতে-ছেলের ভাতে
পাত কুড়োবে লেংড়র দল। ভান পাশে মাগনদাসের দল। এ শাণ।
ভিখমাঙাদের ধম্ম-বন্ম সব গেছে, জানলি 1 লেখাড় কখুনে। ডান পাশে যার
না। মাগনদাপের দল বা-পাশে চলে আসবে, হাংনামা করবে। লেংড়িকে
জানে না। আজ শেংড়ি বদরি আর হামিজাকে পিষে যাচ্ছে । হাংনামা
করলে মাগনদাসকে বাপের নাম ভূ'পয়ে দেবে।,
“্দরি আর হামিজা আসবে ?”
'আসবে না মানে ?-যেন্যার ওয়াঁড়ে থাক। হাংনামা নেই। বদরিকে
লেক-বাঁজীরের ফুটপাতর, হামিঞ্জাকে কম্পাবাড়ির ফুটপাতর কে দিয়েছে?
লেংড়ি দেয়নি? বদত্ি এখন খায় কত! বাজান্ল থেকে পাঠার লাড়,
১৬৪ মহাশ্ে তা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
মানের লাঁড়ি, কুমড়ার বুকো, বদরির গতর খুব । বদঠি বুলল, মানি, বদরি
বইতে তোমার ডাস্বিনের কলাপাত মাগনদাস লিতে পারবে ন]।'
আদঙ্গ ওরা খাবে খুব !”
ধুস্! বাংগাণীর ছরাদ্দ? যে ম'ছ মাংসখাবে? তবে লেংড়ি বুলল,
এ হুচ্ছে হকের লড়াই। ছেড়ে দিলে মান থাকবে না। লেংড়ি লড়াই খুব
বোঝে । উ চলে গেলেও লড়াকু বুলে লাম রইবে। উর লামে শাল!
ফুটপাতের জাম দিয়ে দিব ।
“তবে আজ যাব না?
কাল যাস। পুন্লিমের দিন, ভাল দিন।'
ওষুধ দ্বিবে?'
“দিবে না লেংড়ির জবান্ খেলাপ নাই। সকালে যাস না যেন।
আজকাল সকালে হাপ পেন্ট*ল পরে ট্যাক্সি পেেছে। কামাচ্ছে ছু-হাতে।
রাতে যাস। যা খায়, বুতল লিয়ে যাস।,
কানী মোতি নিছুষী ?
ছাযারে।?
“লেঃ বিকশ] ডাক্ একট]1।,
“ঘর যাবি?"
শ্্যা। রোদে-তাতে উর্বশীকে লিয়ে **
'জিনি |'
“বল্ ?
“আমি তোর চিকে ছ্োত্ত মানিস ?'
'জরুর |”
“সেই উদ্দোম বেলা হতে ।?
খলিচ্চয় |?
“উর্বশীকে তু ছেড়ে দে।,
জরনির বুকের ভিতর সব ঠাণ্ডা হয়ে গেল ভয়ে। রামান্না, বামান্না! কত
(দিনের বন্ধু ওর | ওর মুখেও একই কথা? জনির বুকের ভেতর লাশঘরের
ঠাণ্ডা । জনি কি মরে যাবে ভয়ে? মরে গেলেই কি? কিন্তু মরে যাবার
পর কি এত ভয় থাকে, এত অ'তংক? মরলে তো মানুষ সব ভয়-অভয়ের
বাইদ্ে চলে যার? তাই তোযাবার কথা?
উবশী ও জনি ১৬১
এ কথা কেন বুনছিস রামান্ন! ?,
“ও তোকে খেয়ে লিবষে।'
“জানি ।'
জনির মুখ বিষণ্ন হয়ে গেল। যেন বাঁড়ির দেয়ালে সঁটা! পোস্টার থেকে
চেয়ে-থাকা ক্লাউন ঠিক করল, শহরকে আর হালি মুখ দেখাবে না। বিষঞ্ন,
বৃদ্ধ, বাদরের মত শোঁকাকুপ মুখে জনি বলল, “জানি রে রামান্না। কিন্তু তুই
বুল্ রামান্না, ওকে, আমার সনমূকে মুহব্বত করে হাসতে ভিরোতে তি
এতকাল কেটে গেল। এখন ওর আখ, বদন, হাসি নাঁদেখলে আঙগি
মরে যাব ।,
“জানি।
“কেউ বাঁচবে, তু বল? তু তোজানিস, কী হুন্বর জিন্দগী, সবাই
স্থখ চায় । পাবলিক ওকে বুলে, ক্যারসা হায় উর্বশী? ও বুলে “বন্ুত স্থ
মে'। পাবণিক বুলেঃ হম্লোক ক্যায়স। হায়? ও বুলে বন্ুত স্থখ মে ।
পাবলিক বুলে, তবু তু স্থখকে গানা গা | ও গায়, ও জীনেবালে। হাস্তে-
হাসতে জীন1!,
“জানি |,
রামাম্নাও বিষঞ্জ হয়ে গেল | বলল, “উর্বশী জাছুগব্নী, শয়তানের বান্দী,
জিন্। ও যার কাছে গেছে তাকে খতম করে ছেড়েছে । তুকেও খাৰে।
বার কাকে খাবে ঠিক কী?
জনি বলল, “আমি ওকে তার আগে খতম করে দেব।'
তুই ]'
ই।রে।,
রামান্ন নিঃশ্ব!স ফেলল । বলল, 'রাতে €লংড়ির কাছে যাস। যা খার,
লিয়ে যাবি। লইলে কিছু বুলবে ন1।,
ণলিচ্চয় লিয়ে যাব । উর্বশী লাচবে, গান গাইবে, বেরিলি কা বাজার
মেঁ ঝুমকা গিরা রে। লেংড়ি দাওয়া দিবে। লয়তো নিজের বুকেও চাক্ক
ভু'খে দবঃ ওর বুকেও।'
রামান্গা চুক চুকু শব করল মুখে । বলল, “ওই বুকে চাক চালাৰি ?
যাঃ শালা, তবে তুর ছরাদ আমি করব ন1।'
১৬২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
জনি ঘোলাটে চোখ মটকে হেসে বলল, “ছরাদ পরে, কবর দিবি, না লাশ
জ্বালাবি? জানিস?
ছুস্ শালা, ধশ্মের ঠিক নাই।,
*“কবরও “দস, জাপ!সও |”
'ছুম্ শালাঃ তুর কি ছুটো মড়া হবে ?"
'মোকে আর উর্বশীকে, বুল্পি ব্যাণ্ড ব্যাগপাইপ বাহ্িয়ে, আসি-
টিগিং খাতির চেরাগ দিয়ে লিয়ে যাবি ফুলে ঢেকে, স--ব ফুল কিনে লিখি
শহরের | তা-বাদে পহেলা জালাবি। তা-বাদে ছাই দিয়ে কবর দিবি।
ছকাঁদ করবি খুব শোর মচিয়ে। লেংড়ির দল, মাগনদাসের দল, বদির দল,
হামিজার দল সবকে ফুটপাতরে বসিয়ে খাওয়াবি। ক্যাটারিন্ হতে
উদ্দিপর। ব্যায়র। আনবি |,
“পয়সা কে দেবে ?”
“আরে সব ফিরি করবে ছুটকে এসে । জনি মরেছে, উর্বশী মরেছে,
সব দেখবি মিনি মাংনা» ফিরি! শালা, লয়লা-মজনু চলে যাচ্ছে। কেউ
পয়সা চাইবে? আমর] মরে গেলে দেখবি আর কেউ হাস উঠাবে ন]।
গান বাতাবে না, সব আয়, ! হমে গম্নদিল! আর! হমে গম্ দিল দিল !
বলে বুক চ।পড়ে রোতে-রোতে মরবে । শালা» শহরের সব হাস২খেল্ পিয়ে
চলে যাব।,
ম্ুলো বামান্না অ:র জনি হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে জনি উবশীকে
গিকশায় তুলল | উর্যশীর রেশনশ্রেশম চুল বাঁচিয়ে জনি বিড় ধরাল।
রামান্নার দিকে চেয়ে চোখ মটকে ধোয়া ছাডল।
রাস পূণিমার আশ্চর্য টাদদের আলো! কলকাতাঁকে সপ্রেমে অ্র'ন করাচ্ছিল।
থেন জ্যোৎত্সা শ্বয়ং লয়লাঃ কলকাতাট। দিওয়ানা মজনু, জ্যোত্সার প্রেমে
পাগল হয়ে নোংর্7 হয়ে আছে, তাই এই প্রেমমন্ধী জ্যোত্দ্দার গঙ্গাবতরণ।
রাত এখন অনেক। সময় এখন প্রহর-চেতনাহীন। জ্য।ৎনগায় উন্মত্ত
কয়েকটি কুকুর ছাড়া কেউ এত প্রেমপ্ন।বনের স্থুযোগ নিচ্ছে না। কেন না
কলক:তার মানুষ প্রেম ও ভালবাসার দরকার বড়ো কম বোঝে। তারা
ঘু'ময়ে পড়ে, নয়তে। নেশার সন্ধানে ফেরে, নয়ত জ্যোৎ্দার প্রবেশপথ
হ্বানণাগুলি বন্ধকরে দিয়ে অপ্রেমে শবীর খোছে।
উর্বশী ও জনি ১৬৩
এমন জ্যোৎ্ায়। গ্রেম-প্রাবনে ্বনি করতে করতে জনি খামে হেলান
দিয়ে কদছিল। মনে বড়ো ছুঃখ ওর। এখন ও-ই লয়লী ওই মঙগনু।
“আশমাওয়ালে তেরি ছুনিয়া হামে ঘবড়া দিয়া, রে দুনিয়া মে" চান্দনী
কিউ মেরে লিয়ে বাদল হো! গিয়া?
বড়ো ছুংখ ওর | ওর ছুঃখে লেংড়িও চুক্-চুক শব করছিল। সত্তরে পৌছে
লেংড়ি যেদিন বোঝে ওকে ফুটপাথের দখল রাখবার জন্তে চণ্ডিকা হতে
হবে, সেদিনই ও শাড়ি ছেডে ফেলে । শাড়ি বলতে কানি। তখনি ও
হাফপ্যাণ্ট ও গেঞ্জি পরে, আবন্তিলস্বিত সাদা চুল কেটে ফেলে বৰ ছাটে।
ক্ষোমরে একটা লম্বা গেঁজে পাকে-পাকফে জড়িয়ে রাখে, গলায় একটা কালো
কারে বাধা আরশি ।
আরশি হাতে। গেঁজে থেকে আাতুড়ে শিশুর নখ, ধনেশ পাখির ঠোট,
মক্ষঞ্চে পোয়াতির মড়ার চুল, জে*ওচ পোয়াতির মড়ার সিঁছুর, সব নিয়ে
গুনে গেঁথে ও বলল, “কিছু হবার লর় ধন আমার । বান মেরেছে কুনে!
পিচাশ। আমার আর সেদিন নাই,*বে তার বানকে উপট বানে বেকল
ফরি। তোমার বুতল তুমি লাও ধন। তোমার ছুষ্কে মোর বুক ফাট-ফাট
করছে মানিক আমার | যদি এলে, য্যাথন হতে যে-গলায় উর্বশী গাওনা করে,
কথা কয় সে-গলার জখম ধরতে এলেনি কেন?
জনি বিশ্বরে কাদ্ছিল। পরনে ঢোল প্য।ণ্ট, রঙিন গেঞ্জি, গলার
রন রুমাল জড়ানো। পায়ে ঢবঢবে জুতো, মাথায় পালকের টুপি।
ওকে মাহ বলে মনে হচ্ছিল না। যেন বাড়ির দেয়ালে ঈ/ট1 সার্কাসের
পোস্টার থেকে নেমে এসেছে কোনো ক্লাউন। আর সে হাপবে না,
হাসাবে না বলে নেমে এসেছে | বিদ্রোহ করে। কেন নাঁতার বুক ভেঙ্কে
গেছে ।
ভাঙ! বুকের, চিড়থাওয়! হ্বদয়ের বড়ো ছুংখ গো! চিন্তায় বুক পোড়ে।
চিতার আগুনের চেয়ে চিন্তার আগুনে জালা বেশি, দগ্ধে মারে। জনি,
পোস্টারের ক্লাউন হয়ে গিয়ে কাদছিল। আর সে হাসবে কেন? প্রেমধারার
জ্যোখ্? ওর বুক জুড়োতে পারছিল ন1। ভাঙা বুক নিয়ে ও কোথা
যাবে? দ্ধ দিল কাহা। লে যাউ”ঃ অব কৌন্ ঠিকানা হায়?
যে গলায় উবশী, আকুল-অঞ্চলা, বিছ্যুৎ্চঞ্চলা, তউবপী, অনস্ত-রঙ্জিণী, বন-
সঙ্গিনী গান গাইত, ছুথিয়! জিয়ারা রোতে (নন”স্-গাইত, লাভ মি ডাপিং-
১৬৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
গাইত, তোমার গলার গান ছিল--আমার গলায় সর ছিল--গাইত, বাশকা
খিড়কি বাশক] দুয়ার আও বনায়ে ঘরোয়া প্যারা, সে গলা থেমে যাবে
গো। অন্তভে যাবে সে গৌরবশশী_মুঝে ভি লে চলে। হ্বপ্নোকা। পার-ছনি
তাই কাদছিল।
ওর কান! দেখে জ্যোত্স। হাসছিল কুকুরগুলে! ভাঁলবাসাবাসি করছিল।
লেঃড়ি পূণিমার উ:দের দিকে চেয়ে ঘোলাটে চোখ থেকে জ্বল ফেলেছিল
আর বলছিল, “তুমি রামাম্নার চিকে দোষ্ত বাপ আমার়। তোমার জন্তে
উপট বান মারি এমন খ্যামতা মোর নাই বাপ। চোখেও দিশে না
াল। তাই আরশিতে তার ছেরা দেখি নাই।'
“তবে কানী মোতি লয়?
'নাবাপ। ও তোম'রে বড় ভালবাসে ।
“উর প্রেমে ডর লাগে যে?
ঘর কিসের? উর্বশীরে ছাড়। ওরে নিয়ে ঘর কর। উ বশাধবে
বাড়বে, থেতে দিবে, তুমিও বুড়া হলে ।॥
“কস্ক উবশীরে ছাড়ি কী বলে? ও কোথা যাবে?"
“কেউ কিনে লিবে।,
'কে?
“তাই তো দেখগাম ন1 মানিক। কে বুঝি ওরে চায় হলে বাঁনমার!
করেছে।,
"মোর তাই সন্দ। উর্বনীর চ্যায়রা ঘেখে সবার রিষ।
“তুমি পাগল হয়েছ বাপ।'
“পাগল ছিলাম না মাসি, ও মোরে পাগল করল। তখন আহি
জোয়ানটা । ওরে কোলে বিয়ে ট্যাঙ্গা চেপে ঘুর্যে মরেছি কত!
ঢোলপুর, বান্দা, ঝীসী, লাল্থাপুর, হাসিরপুর। দে-খেলা কী-খেলা মাসি!
তখন ও গাইত, আাখিয়! মিলাকে, জিয়! ভরমাকে চলে নহী" যানা! আমি
বলতাম, কভি নেই প্যাক্সী| ও গাইত, জানসে না জানে ছুংগি, যাকে
রাস্তা রোখ, লুংগিঃ সলাইয়াকে পাইয়া) পর পড় জাউঙ্গিঃ রোকে কহুংগি_-
গাখিয়া মিলাকে !'
“সব জানি মানিক ।
“মোদের ট্যাঙ্গাকর পিছে ছেলের! ছুটত* কাগঞ্জ ফুড়াতে। পিছে বসে
উবশী ও জনি ১৬৪
গুই রামান্নাঢোল পিটাত, উর্বশী কি খেল! জনি কা খেল! তখন লব
অন্য রকম দিনকাল ছিল। ঢোলপুরে এক শেঠের ছেলে বণে, “হাজার
টাকা দিব, ওরে তুই বেচে দে। শাটিনের ঠিআরে ওরে বসিষে
রাখব ।'
'পব জানি ।,
“কিন্ত সব লাশ হয়ে গেল মাসি। যে-গলার ও গান গায়, কথা কর,
সেখ! ক্যানচার |”
ক্যানচার লয় সোমা, বান মেবেচছ কেউ।
'কারেও জান?
“কারে জানব ?
“উলট বান মারতে পার ?'
“না বাপ। টেরিটি বাজারে জানসারী ছিল-,
গ্মরে গেছে
'এখন যেয়ে খোদাঘ্ দোয়| মাউ ।,
হায় ৫খাদ1 1,
জনি চাদের দিকে একবার চেয়ে মাথা নিচু করে হাটতে লাগল। কাণী'
মোতি ওকে ভালবাসে? প্যার করে? মুহববত করে? প্যারসে কিউ তুষ
্ববড়াতা দিল,1 উববশীর জন্তে, উবশ্ীর জন্যে । হঠাৎ মনে হল উর্বশী একা
আছে। কানী মোতি জনিকে দেখে, আর ছু বেল! উবশীকে ক্যাওড়াতল।
পাঠায়। জনি ছুটতে লাগল। ছুটতে ছুটতে ও অনাথাশ্রম থেকে পানানো
ছোট জনি হয়ে গেল।
অনাথাশ্রমের দোরগোড়ায় কে ওকে ফেলে গিয়েছিল? কিছু ঘনে
পড়ে না। অনাথাশ্রমটা ছিল পুরনাদজীর। আশ্রমের ছেলেদের লক্ষে
জনিও ব্যাণ্ডেলের পথে পথে “দীনে দয়া কর গো? গা গেয়ে-গেছে
ফিরত। লীপ সিং ওর গানের গলা শুনেই ওকে ভাগিযে নিষ্বে
যায়।
দূলীপ বলত, “চল, তোকে ছুনিয়া গিখাব ।'
দলীপ যে আরেক পুরনঠাদজী, তা জনি বোঝেনি। ভিক্ষের চাল পদ্সা
পুরনটাদজী নিয়ে নিত। বাচ্চাদের লেংড়া, ছুলো॥ হুঠে কর | বামাহ্ধাকে
১৬৬ মহাশ্থেহা দেবীর শ্রেঠ গল্প
পুরনঠাদজই মুলো করেছিল জ্বনি গাইতে পারত বলে ছাড়
পায়।
পাণাবার সময়ে রামাঙ্গা আর জনি দুজনেই পালায়। দপীপ রামান্নার
হাতে একট মাটির হড়ি দিয়েছিল। রামান্া হুলে। হাতের চাপে হাড়িটা
গায়ে চেপটে ধরে অন্ত হাতে টকাটক বাজাত। জনি গান গাইত | ট্রেনে
কাখরার় ।
ছোট বেলাতেই জনি জেনে গিয়েছিল মানুষ বডো স্থখ ভালবাসে । পথে
দেখতে পেত মানুষকে স্থখে রাখবার জন্তে কত আয়োজন । রাজ-জ্যোতিষী
--বিনা অস্ত্রে কত আরোগ্য-সিনেমার কথ। পেখ! কাগঞ্জ বিলোতে-বিলোস্তে
ঘোডার গাড চলে যার। গাডির ছাতে বাসে বাজ্জনদার বাজনা বাঁজায়।
সব সুখী-স্থখী স্থরের গান?
স্থখী-স্ুখী গানের সর বাজিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ছুটত, পেছনে ছুটে ছেলেরা
ডিন কাগন্জগ কুডোত। জনি বুঝত, সবাই বডো স্থুখ ভালবাসে।
অনাথাশ্রমের পুরনচাদজীও স্থখ ভালবাসত। ওর মা-বাবার জন্মদিনে ও
জ।নদেব মিঠাই দিত। যাদের হ্ুলো, লেংডা, কুঠে করে দিত, তারাও বাদ
পডত না । পুবনষ্'দজী একটা বডো টেবিলে উঠে জোঁডাসনে বসত। শিবপুজো
না-কবে জণ খেত নঃ॥ কপালে চন্দনের ত্রিশূল আকাই থাকত। এক ঝুড়ি
লাভড, আর গজ নিয়ে ও ছেলেদের পাপের মধ্যে ছুঁডে দিত আর হুকুম
করত, লে! উঠা! খা! ইস্ উঠা, গানা গাঁ, লাচ কর।,
জনির] খুব হাল্ত, গাইত, নাচত। লেংড়া-হথলো-কুঠেকানারা সব চেয়ে
বেশি হাসত। জনি জেনে গিয়েছিল মানুষ আসলে সুখ ভালবাসে । শহরে
ভখন গোলাপী কাগজ বাতাসকে গোলাগী করে রাখত। কোনো কাগজ
বলত, ক্যাতিষী স্থুখের ভড়ারের শুাডারী। কোনো কাগজ বলত,
কোনো কষ্ট না দিয়ে বিচ্ছিরি সব ঘ লারানেো। চলে। পথের ধরে
তোতাপাখি নিয়ে বনে আবদাল্লা স্থখ বিলোত। সিনেমায় গেলে তো দুশো
মজা। শেষে সব পায়ক সব নায়িকাকে পেয়ে যেত।
দূলীপ যখন আরেক পুরনটাদজী হয়ে জন আর রামান্ন! ট্রেনের কামরার
গন গেয়ে যে পয়সা পেত, সব নিয়ে নিত, তখনো। তাই জনি সখের গান
গাইত। ও জানত মানব সুখ চায় বলে সিনেমা যায়। যত কাঙালি-
€কেরানি-ক্যানভাসার-ফিরিঅলা-ফড়ে-পাইকারস্হকার সবাই সিনেম। যার
উ“শীওঙ্নি ১৬৭
স্থথের খেজে। ছুঃখের সীন, দুঃখের গান, তার] সয়, পরে সব ছুঃখ সুখ
হয়ে যাবে বলে।
তাই ছুঃখের গান, য়ে দিল ক,হা লেযাউ আগে গেয়ে নিয়ে জনি পরে
ময় বন কী চিড়িয়! গেয়ে সকণ্কে স্থখ দিত। বড়ো সহজে সখী হতে পারে
ম.ছুষ | সিনেম! যার] দেখে না, পয়সা থাকে না তারা দর্শকদের লাইন
.দখে শ্ুখ পায়। যে কাঙাপির! মিষ্টির দোকানে ঢুকতে পারে না,
তার। ফেলে-দেয়া ভড় আর খুরি চেটে স্থুখ পায়। হাত-পা লু'ড। ভিথিরির!
চৌরঙ্গীতে গলম্ত পিচে গড়িয়ে পুরনটাদজ্জীদের জন্তে পয়সা চাইতে-চাইতে
আপেলমাকক। মেমদের দেখে সুপ পায়।
তখান ও বুঝে গিরোছল দলীপের থাবা! ছাড়িয়ে পালাতেই হবে। ও
একব-একা স্ৃধ বেচবে দেশ জুড়ে।
রামান্না। পলায়নি, কলকাতায় থেকে যাঁয়। কানী মোতি তখন কানা
হয়ান। ও তথন বাড়উশির বোনঝি। রামান্ন। আর জনি কিছুদিন ফুটপাথ
থেকে টাদ্রনী-বেশমী-বেদ।ন। দ!সীদের ছন্তে খদ্দের আনত ।
জনি দিন ভোর দিনেমার টিকিট বেলাক করত। ফুটপাথে ঘুমোত।
পগল1 থাকলে হবিবের দোকানে শিককাবার খেত। মাঝে-মাঝে গ্র্যান্ড,
£গ্রট ইস্টান হোটেলের সামনে সায়েব-মেমদের ট্যাক্সি ধরে দিত | রামাস্া
বলত, “তুই ভাল আছস জনি।' রর
ফুটপাথে ঘুমিয়ে, সিনেমার টিকট বেলাক করে, খুব স্থথে থাকা যায়।
পকেটে চার আন। থাকলে যে-সব ভিখরির! কলকাতাকে দ্িনেরাতে কিনে নেয়,
বনি তাদের দলে ছিল | চির স্থুখী, স্বাধীন । সেই জন্যেই ও বাঁড়িউপির
কথা শুনত না। মোতিকে বিয়ে কর» সংসারী হও» এ-সব কথা ওর ভালো
নাগত না। কে মোতিকে বিয়ে করে? কে চায় আরেকট] পুরনটদজী,
সারেকট। দণীপ হয়ে বেদানাস্টাদনীদের গতরখাটা রোজগারের পয়সায় ধনী
হতে?
কলকাতার বাতাসে স্থথ উড়ত। জনি বলেছিল, “তুই হেথা পল্ে
থক গা ॥
“তুই কী করবি?
“হৃখ লিয়ে আলব দুনিয়া লুটে, সব কোই কো দেগা-হরিব লুট, করে
দেব শালা | কত স্থখ চাস সবাইকে দেব । বলব সব শংলা ফুটপাবে
১৬৮ মহাশ্বেতা] দেবীর জেষ্ট গল্প
শো” ছাতু খা, গলায় রুমাল বেঁধে মেয়ে-ছেলে দেখ,। গানা গা, হাসতে
খাক। ছিন্দগীমে" স্থখ সবসে বড়া জুয়েল। সবার হাতের মুঠোয় জুয়েল
ধরিয়ে দেব শ.লা।+
“আমি কি শংলা হেথ! পড়ে রইব ?,
না রে! আমি আগে স্থখখুদ্ধে পিই, উসকে বাদ তুকে ভি লিয়ে
যাব।
'তু তবে মোতিকে সাদি করবি না?"
ধুস্গা
“উ বেটি আমাকে সাদি করবে ন!
তুলুলা যে!
“তু চলে গেলে আমার দিল টুটে যাবে ।,
আরে! তু আমার চিক্কে দোত্ত। চলে গেলে ভি ফের ডেকে
লিব।,
তু হেথা থেকে য11
“ঠিক বলছিস ।,
“সাচ্চা জবান ।
“সব মনে আছে তো?
“স--ব |?
“আমি মরলে তু মোর ছরাদ করবি। তু মরলে আমি তোর ছরাদ
করব ।,
খুন সে বাত পাকা কর।'
“লেঃ শালা]?
ছুরি দিয়ে, একই ছুরি দিয়ে দুজনের হাতে চিকে চিরে দিয়েছিল দুজনে ॥
খুব হেসেছিল হুঙ্গনে। একসঙ্গে গলা জড়িয়ে সিনেমা দেখেছিল। হবিবের
দোকানে শিক কাবাব খেয়েছিল। তারপর জনি হাওড়া চলে গিয়োছল।
ষে ট্রেন মামনে পেয়েছিল, তাতেই চেপে বসেছিল । টিকিট কাটেনি, বেঞ্চির
নিচে শুয়ে পড়েছিল।
ভোর নল! হতে রাচি।
রনি তখনই ঠিক করে ফেলেছিল জীবনের নক্শাট। কেমন ঢঙে ছকবে।
ম্বাস্টার জনির ওয়ান ম্যান শে!
উবশী ও জনি ১৬৯
রশাচি, ডালটনগঞ্জ, আরে। উত্তরে গিয়ে পশ্চিম ধয়ে কাশী, এলাহাবাদ,
লক্ষে
একেক জীবন একেক খেল1। জীবনের নকশা খেলার নকশার মতো
রকম-রকম | যখন যে সবি চলত, দেই ছবিঞ নকশ]! দেখতে জনি।
হাটে, চৌরাভ্তায়। চকে । মজনুর গলায় গাইত, চলতি হ্যায় কারোয়1।
লায়লীর গলায় গাইত, আশমণাওয়ালে তেরি ছুনিয়! মুঝে ঘবড়া দিয়া ! ভিলেন
হয়ে বলত, বাচ্চে, মেরা চাকুসে তের1 কলিজ! নিকাল দুংগি! ভাড় হয়ে
প্যাপ্টের পেছনে বালিশ গুজে নাচত।
ঝমাঝম পয়স। পড়ত থালায়। ঘাদের সবচেয়ে বেশি স্থখ দরকার, তাদের
হাতে টি:কট কেনার পয়সা থাকে না। তারা সবাই জনির খেলা দেখত।
জনি বলত, “দুনিয়া! বালে! দুনিয়া খে স্থুখ চিড়িয়]। উড়তে-ফিরতে
রছে। হাম চিড়িয়1 পাকড়কে তু-লোককে দিয়ে দিচ্ছি।' তানসেন হয়ে
সায়গলের গলায় গাইত, “বিনা পংখে পঞ্ধী হু" ম্যার!) আকবরের গলার
বলত, “তানসেন ! তুম এ গান কিউ গায়! তানসেন 1” তানসেনের গলায়
বলত, “য়ে গান! নহীঁ শাহানশা ! য়ে টুটে হয়ে দিল কা পুকারা হায়!»
তানসেন হয়ে ও শুয়ে পড়ে বলত, “মেরা পিয়াস বুঝাও 1, তারপরই উঠে
পড়ে তানী হয়ে যেত। আকাশ পানে হাত তুলে গাইতঃ 'বরুসো রে!
কালে বদারয়া, পিয়! পর বরসো !'
সকলকে স্থুখ দিয়ে ও ফিরে যেত স্টেশনের প্র্যাটফর্মে। একল] পড়ে
থাকত বেঞ্িিতে। যে-জীবনের যে-নকশ।!| সায়েব মেমর। কুকুর নিয়ে সিমল!
যেত। ওর খুব সাধ যেত একলা জীবনে একট] নেড়ি কুত্তা পোষে। নাম
দেয় রোভার । কুকুরটার গলায় চেন বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। সকলকে বলে,
আলছেছিহান। মাংস দিতে পারি ন। বলে বেঁটে হয়ে আছে।
আরে! অনেক সাধ যেত। নৌটক্কীর ফুলকলিয়শাকে পাশে বণিয়ে ট্যাগ!
চেপে ঘোরে । বাজারের আনারকে সঙ্গে নিয়ে নাচ দেখায় । চা-দোকানের
পান্নাকে নিয়ে রাত কাটায়।
কিন্ত জীবনের নকশ] বড় বিচিত্র । ফুলকলিয়-আনার-পান্স। এসব কথ।
জনির চেয়ে অনেক রইস-রইস লোকের কাছে শুনে, সেইমতো কাজ-করে, হচ্ড
হয়ে গিয়েছিল । সবই শুধু বলত, সার্দী করবি? ঘর দিবি?'
জনি বলত, “ধৃূদ,। আজাদী ম।মূষ বান্দ্যাগরি করে না। সাদী করে
১৯
১৭০ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
মরে গাধারা। আমি বলছি তদের হাতে ছুনিয়া লুটে স্খ এনে
দেব।
মেয়েরা হেসে লুটোপুটি খেত। বলত, “মিনি মাংনায় অত সুখ হয় না
জনি 1?
'মিনি মাংনা কিসে? আমি তুদের চুড়ি দিব, কাপড়লত্বা দিব, রোজ
হোটেলে লিয়ে গোস, খাওয়াব।,
'সে ত সবাই বলে। কাজেকরে কি?
নোটক্কীর ফুলকলিয়পার মাপি খড়ি পেতে গুনত। বলত, “তোর! মিছা
ওরে বাধতে চাস। এক লায়লী আছে ওর । সে ওকে ঠিক ঢু'ড়ে লিবে।
ওকে মনন করে দিবে।”
বয়সের গরমে জনি চির স্বাধীন | সে সেই আনন্দে, হাহা কনে
হালত। বলত, “ছু'ড়িয়া লা-রাজ মৌলি। তবতু চলে চল্ তু মোষ
লায়লী হবি ?,
মর গাষা 1,
'মরবি তো তুই।'
তুই আগে মরবি।
'আমি মরলে আমার চিক্কে দোস্ত, ছরাদ করবে। খুন্ মে খুন মিলাকে
পাকা! বাত। আমার মড়ার আগে পিছে গ্যাস' বাতির রোশনাই যাবে,
ব্যাণ্ডে। বাজবে, ষফত লোককে আমি স্থখ দিয়েছি সবাই বুকে হাত চাপড়ে,
হায়! গমে' দিল| হায়! দুনিয়া কে খুশিকি রোশংনি বত গইল, |
ৰলে কাদতে-কীদতে বাবে । তু মরলে মেহংতর এসে ফেলাবে।'
বুড়ি ওকে মারতে যেত। বনি হেসে পালাত। কিন্তু একদিন
ফুলকলিব! ওর কাছে এসে পাধরেছিল। বলেছিল, 'তুঝসে মেরি মুহববত
হযে গেল জনি। 'তুকে বিনা কিছু ভাবতে পারি না। ঘর চাঁই না, সাদী
চাই না, তু মোরে লিয়ে চলে চল্।,
“কোথা !
“যেথা যাবি?
বড় ভরম্ত-পুরস্ত মেয়ে ছিল ফুলকলিয়1| মুখে বসন্তের দাগ ছিল বং
মাা-মান্জা, কপালে উল্লকি। শরীর যেন ছুধতরা কলসি, হাটলে পরে
উদ্ছনে-উছলে পড়ত।
উর্বশী ও জনি ১৭১
জনি বুঝেছিল, ফুলকলিয়শার চোখের দিকে চেয়েই বুঝেছিল, ছুরি চলে
গেছে মেয়েটার কলিজায় | সাদী না করলে যে জনির পাশে বসে টাঙ্গা চেপে
শহরে ঘুরতেও রাজি নয়ঃ সে যেখানে নিয়ে যাবে জনি, সেখানে চলে যেনে
চাইছে?
জনির ভয় হয়েছিল। বলে কি মেয়েটা? জনি বাউণ্,লে ভবঘুরে।
আজ এখানে, কাল সেখানে ঘুরে বেড়ায়। জনির কোনো দ্বাধীন হবার স্ব
নেই। জন্ম থেকেই ও শ্বাধীন। জনিজানে স্থখ এক পাখি। সে পাখি
রঙিন পালক হুর্ে ঝল্কে উড়ে বেডায়। জনি বারবার সেই পাখি ধরে এমে
দেয় ক্যাংলা উদ্বোমপারা মাহুধদের হাতে । জনি কি করে নৌটক্কীয়
ফুলকলিয়ার ভরম্ত-পুরস্ত শরীর? গ্রেমার্ত বক্তা হৃদয়ের দায়িত্ব নেবে?
জনি পালিয়ে গিয়েছিল। ফুলকলিয়শার মাপির অভিশাপ বোধহয় ওকে
তাডা করছিল। নইলে কেন ও যাবে বোশ্বাই? কেন ভুলেশ্বরের চকে
হামিদ ওকে বলবেঃ “কিসের মাস্টার জনি ওয়ান ম্যান শো? আমার
উবশীর খেল, দেখেছিল ?"
“দেখালে দেখব ।*
'দেখবার আগে পীরের মস্তরপড়া ফিরোজার ভাবিজ পরে লিৰে জমি ।
লইলে উব শী তোকে দিওয়ান! করে দিবে ।"
“আরে ছোঃ, অমন অনেক উবশী দেখেছি ।'
'এমন দেখিস নাই ।
“কি আছে তার ?'
“কি না
£হোঃ।॥ অমন বাত সবাই করে ।'
উর্বশী সেদিন পেশোয়ান্ব-কীচুলি-ওড়না পরেছিল । পিখির পাশে বাপটা,
গলায় মাল, কানে ঝুমকো। | হামিদের কোলে বসে উর্বনী গান গাইছিল।
বাত করছিল। উর্বশীর গায়ের রং আপেলের মত, বুক যেন পুরস্ত নাশপাতি,
চোখ পক্নের পাপড়ির মত, তরু আকাশে উড়ন্ত চিল ঠোট ফুটস্ক
গোঙাপ--”
দেখে জনির মাথা থুরে গিয়েছিল । এমন উর্বশী, তবু ওর খেলায় ভিড় হয়
কেন? উর্বন ফযাশ-ফ্চেশে গলায় গান গাইছিল। বাত করছিল। ভাড়ামি
করছিল।
১৭২ মহাশ্বেত| দেবীর অরেঞ্জ গন্ধ
খেলা ভাঙতে হাযি্ জনিকে বলেছিল, “মোর সাথে আয় ।,
“কেম ?"
“উর্বশী মিঠা গাইবে ।,
“আমার কোলে বসবে?
“আমার কোলে, তোর কোলে ।'
নতুন-নতুন খেলার নকশ! জনিই বানিয়েছিল। অনাধাশ্রমে জনি সামাস্
লেখাপড়া শিখেছিল। তারপর স্থখের পাখি ধরবার নেশায় দেশে-দেশে
তুঃতে-খুরতে কাজ চালানো! হিন্দি, ইংরিজি, মারাঠি, গুদ্বরাতি শিখেছিল।
সিনেমার বই কিনত হরদ্ম। বলতঃ “আ বে হামিদ ইনভেস না করলে
বিজ্বনেছ হয় ?
বলত, “খেলার নকশা হবে কমেডি ফিনিস। হাপি এন্ডিং। দেখ,
ব়সাত মে" পয়ল! হিরো পয়লা হিরোইনে কমেডি । ছুসর] পার্টিতে টাঁজিডি।
টাজিডি ফিনিসে মান্ষের মন ভারি হয়ে যায়। কমেডি ফিনিসে মায় হাতের
মধ্যে শখ কি চিড়িয্'1 পেয়ে যায়। কমেডি ফিনিসে মজা ।,
এখনো! আধো! ঘুমে, উর্বশীর পাশে শুয়ে জনি হামিদকে দেখতে পায়।
হামিদ কাদছে হাহা করে। বলছে, “মদের লিশায় তুর কাছে উকে বিকে
দিলাম জনি । উকে লিস না। ওর মুখ না দেখলে আমি মরে যাব। তবু
বেচে তোকে টাকা দ্বিব। উকে তু লিস না,
“ভাগ শালা, টাক। কে চায়?
ধতোর বুকে চাকু ভূখে দিব জনি। ও জাছুগরী, জীন্। আমি ওকে
লাহোরীর কাছ হতে আনি। আমার কাছ হতে তু উকে নিলি? আমার
জান খেয়ে জাছুগরী তোকেও সাজা দিবে রে ।
জনি ক তা জানত? আহা হা। কি-রূপ, কিশ্জপ। তেরি গোরে
ব্দন যে গোরা কালে কালে আিয়”।।
সেদিনই বোস্বাই ছেড়ে পালায় জনি উর্বশীকে নিয়ে।
কানপুর, বাস, আগ্রা, দিলি পেশোয়ার, লাহোরঃ করাচি, ভূপাল, কত-
কত জায়গা । সব জায়গার ক্যাঙাল উদ্দোমপার1 লোকরা চকেন্বাজারে-
সুটপাথে-পথে সখ কি চিড়িন্ব1 হাতে ধরতে চঢায়। ফুটে। পয়সার কারবারী
মব॥ পকেটে পয়সা থাকলে মাল খায়, গান্ধা খায় জনির খেলা দেখে । পয়স!
ন। থাকলে দুনিয়ার নামে কোনে মামলা! দায়ের না করে মরে যায় পথে।
উর্বশী ও জনি ১৭৩
কিন্ত দিন কারো! সমান যায় না। সেদিনে, যৌবনের দিনে, জনি
রামাক্নাকে ডেকে এনেছিল । রামান্না বাজন। বাজাত এক হাতে। ছুলে!
হাতে যন্তর চেপে। টাঙ্গায় বসে জনি আর উর্বশী শহর ঘুরত। জনি
গোলাপী কাগজ বাতাসে উড়িয়ে বাতাসকে স্বখের পাখির গোলাপী
পালকে রঙিন করে দিত। তদ্দিনে সারা লোক জেনে গিয়েছিল জনি
উর্বশীর মহববতে দিওয়ানা। উর্বধী গুলিত্ত। জনি উসকে বুলবুল।
হ্খ-পাগল ক্যাঙাল ছেলেরা গাড়ির পেছনে দৌড়ে-দৌড়ে কাগজ
ধরত |
রাসপূণিমার প্রেমময়ী জোৎনায় নির্জন পথে ছুটতে-ছুটতে জনি বুড়ো
হয়ে যেতে লাগল। ওর চারপাশ থেকে স্থদদিন ঝরে খসে পড়তে লাগল।
শীতের হাওয়ায় ঝরা পাতা আমলকী ডাল যেন। সকল পাতা খসে পড়ে
এক সময়ে যেমন নিষ্পত্র স্তাডা ডাল শুধু থাকে, তেমনি করে স্থদিন খসে ঝরে
পড়ে জনিকে স্যাড়া করে রেখে গেছে।
একদিনে স্থদ্দিন যায়নি । ক্রমেজনির খেলা আর তেমন লোক টানতত
না। তখন বডো-বডে। জ্খাক জাকালো শহর ছেড়ে বর্ধমান, কেট্টনগর, সিউডি,
বোলপুর॥ বহরমপুর, রামপুরহাট । ছেঁডা তীবুঃং ঢবঢবে বাজনা । জনির
ঢোল প্যাণ্ট, রঙিন গেঞ্চি, ঢবঢবে জুতো, পালক বসানো কাগজের টুপি
হলে চলে ।
কিন্ত এ খেল! ভালবাসার খেল! । জনি না হয় উর্বশীকে তিরিশ বছর
ভালবেসে-বেসে দিওয়ানা, মজন্থ । লায়লীর তো চাই ঝুটো মোতির হার,
বেলোয়াবী চুডি, শাটিনের ঘাগরা। তারপর কলকাতা। তাবুতে ঢুকে পড়
উনিশ পয়সায় খেল্ দেখ। চড়কের মেলা» রাসের মেলা, তারকেশ্বরের মেলা,
গাজা! পার্ক, ধাপার মাঠে খেল্।
মোতি এখন এক চোখ মা শীতলাকে দিয়ে কানী মোতি। মোতির
অবস্থা পড়েছে । রেশমী-ঠাদনী-বেদানাদাসীব্াা একে একে ক্যাগড়াতলা সই
হয়েছে।
কানী মোতিই ওদের বেকবাগানের পেছনে বস্তিতে এনে তুলল।
জনি ছুঃখ করে বললঃ তোরও এই ছাল ?'
-”'হবেনি ?*
-এমন হল ?
১৭৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
- “হল ॥
কানী মোতির চেষ্টায় রাঁমান্না হাসপাতালের সামনে ফুটপাথে চায়ের
দোকান দিল। প্যাকিং বাক্ষের দোকান, প্যাকিং বাক্সের তক্তার নিচে ইট
পেতে বেঞ্চি। গরমাগরম চা আর লেড়ো বিশ্ব্ট। ভাড়ে খাও ফেলে
দাও।
কানী মোতি জনি আর উর্বশীকে ঘর দিল। পিসবোর্ডের টুকরো আর
পচা পাকিং ব্যাক্সের তক্তার পার্টিশান করা তিনখান! ঘর | কানী মোতি বলল,
গশ টাক। ভাড়। দিস জনি ।”
বস্তি বাড়ি। গল! পচা ঘর । একট] থাট। পারখানা বাইশটা পরিবার
ব্যবহার করে। মোতির মত আরো বু ঘর, বু ঘরওলী আছে বস্তিতে ।
ছোটে! ছেলে মেয়ে, বুড়ো-হাবড়ারা দোরগোড়ায় বসে। ময়লার গন্ধে বাতাস
ভারি।
জনির বুক ভারি হয়ে এল। এই ঘরে উর্বশী থাকবে? উর্বশী নিধিকার।
জনির বুক আরো ভারি করে দিল কানী মোতি। খেল দেখাবার পর কাশতে
কাশতে জনি মরে যায়।
কানী মোতি মিছরির ফ্কাথ এনে দেয়। হেকিমী দাওয়াই, সত্যপীরের
মাছুলি।
কেন এত করিস মোতি ?"
কানী মোতি বলল, “ওই উর্বশী তোকে খেল জনি। ওকে ছেড়ে দে
ছুই ।'
--€কিউ, ক্যা মতলব ?
--যোর সাথে থাক্।"
_গ্দুর হ ডাইনি ।,
কানী মোতি কেদে উঠে গেল। কিন্ত আজ পাত বছর ধরে জনির কাছে
ভাড়া চায় নাঃ দিলে পরে নেয় । চা-বিস্কুট-পাউরুটি-মিছরি ও বচের কথ নিয়ে
আনে। জনিওকে ডাইনি বলে। .মোতি বলে, একদিন ওই ডাইনিকে
আমি পুড়াব |
কানী মোতি যখন বেগে কথা বলে, জনির ভয় করে না। কিন্ত মাঝে
মাঝে কানী মোতির বুক কান্নায় ভেঙে গান উঠে আসে । কানী মোতি সেই
শব ঘ্বাতে পা ছড়িয়ে বসে ছাজায় ওষুধ দেয় আর গান গার ॥। জনির যেমন
উর্বশী ও ছনি ১৭৫
সব গান পুরনো, কানী মোতির লব গানও তেমনি প্রাচীন, আদিম। সকল.
পতিত পতিতার বুকচের] কান্না । কানী মোতি বিদ্বরে গায়ঃ
“দের আলোর সমান
রূপসী ছিলাম
তোমাদেরি সমান রঙে গে!
বাড়িতে পরিতাম
বেনারসী শাড়ি
দোরেতে দাড়াত
কত জুড়ি গাড়ি
বাবুরা আঁসযে
কত ভালবাসিয়ে
ঈ/দমনি বলে
ডাকিত গো!”
এমন গান শুনলে জনির বুক ভাঙে । কলকাতায় আজীবন থাকল .কানী
স্থখের দরকার বুঝল না?
ঘরে পেইছে গেল জনি।
বাতাসে দুর্গন্ধ । চাদের আলোঃ স্ুর্ধের রোদ এ বস্তিতে ঢুকতে মান
জনি ল্ফো জালাল। উর্বশী ওর দিকে চেয়ে বসে আছে বিছানায়, বালিশে
ঠেস দিয়ে। একা জনি বুঝল উর্বশীর চোখ অভিমানে ভারি।
“আ. গিয়া মেরি জান !,
জনি উর্বশীকে চকাস করে চুমু খেল । উর্বশী সাঁড়া দিল ন1। একেবারে
চুপচাপ।
জনি বুঝল, উর্বশী চোখে কি প্রশ্ন ।
*লেংড়ি কিছু জানে না রে। বলে তোর তবে কেউ বানমার। করেছে।
লেঃ," গুলি মার্ ফজুল বাঁতে। কাল খেল্ আছে। আজ তোকে লিয়ে
প্যার করব।'
লেংড়ি যে বোতলট। ফেরত দিয়েছিল, সেটার ছিপি খুলে জনি উর্বশীর
ছবিকে তুলে বলল» “চিআপঁ! আজ পাতে শুধু প্যার করব। কা টাদনী
লায়লী | মোকে দিওয়ান। করে দিল।'
ক্যাওড় ধূপ জেলে দিল এক্ গোছা। লাল প্যান্ট আর সবুক্ধ কোট
১৭৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
পরল। বোতল গলায় ঢেলেছে। মাথার ভেতর বিশ্বব্রন্ধাণ্ড ঘুরপাক খাচ্ছে।
মাথায় টুপি পরতে-পরতে চোখ টিপে জনি বলল» “কি জানে লেংড়ি? কি
হানে ডাক্তার? আমার কোট-পেন্ট,ল পুরনো, টুটাফুটা! 1? তোকে কন্দিন
লতৃন ঘাগর কিনে দিই নি। কোন্ জানে লতুন জাম! কিনি বলং?'
উর্বশীর বুকে হাত বুলিয়ে জনি বলল+ “কাল থেকে দেখবি সব বদলে যাবে।
এমন খেল্ দেখাঁবি এমন গানা গাইবি না, লোকে বলবে ফিন্ খেল্ দেখা!
উবশী কথা বলল ন!।
“আজ রিয়াস্সাল করি। কাল আবার শহরটা জিনে লিব উর্বশী, তু
মোরে ছেড়ে যাবি না বল্?
উর্বশী নিরুত্তর |
«কাল ক্ইে গানাটা হবে। শুরুতে আমি বলব, উবশী কা খেল। উ
মোর লয়লা, আমি ওর মজন্গ। আপোনার। ওর লক্ষ্মী । আপোনার। যা বলবেন,
উ জবাব দিবে। যে গানা বাতাবেন, উ গাইবে । যেষা বলবে, স--
করবে ।”
উর্বশী নিবিকার |
জনির চোখের সামনে সব ধোয়া ধোয়া । মাথায় বিশ্বত্রত্ষাওড চন্কব খাচ্ছে।
পুরন্টাদজীঃ দলীপ, বাঁমান্গা, হাণ্মদ, ফুনকলিয়। মোতি, লেংড়ি, ডাক্তার,
সবাই হাপছে। আঙল দেখিয়ে বলছে, “তু হেরে গেলি জনি ।,
কভি নেই! জনি গর্জে উঠল। রঙিন কোট-প্যাণ্ট, ঢবঢবে জুতো,
মাথায় টুপি, জবি বলল, “মোরে হারায় কে? বাতাও? হা হাম জনি
হায়। বেজন্মা, বেধম্মা! আমি তুদের স্থখের চিডিয়৷ ধরে এনে দিই নি?
সবাই হাসছে, অবিশ্ব'সের হাসি।
জনি বললঃ “আরে হাম কৌন 1 উব্ধশী মেরা! মালিক, আমি উপ কী
বান্দা। উর্বশী গান! গায়» আয়গা আনেবালা! তুর? জানিস না? উগায়
ফল ইন্ লাভ এগিন ! তুরা জানিস না? খেল্খতম হলে তুর! ওরে
শুধাস না? তুম ক্যায়স৷ হায় উবশী? আরে উ বাতাতী নেই। সুখ
মে হা? আমি সুখে আছি, ভাল আছি গো! জনি মোরে রানী করে
যেখেছে। তুর বুলিস না» মোরা কেমন আছি উবশী1? ও বুলে না
তুমর! সুখে আছ গো ভাল আছ?
ওর! চলে গেল। হঠাৎ জনি দেখল ঘরে শুধু ও আর উবর্শী। জনি
উবশী ও জনি ১৭৭
উবশীকে জড়িয়ে ধরল। বলল, 'বল্ মোরে ছেড়ে যাবি না? বল্ উর্বশী,
তুকে না দেখতে পেলে আমি মরে যাব।'
উবশী নিবণক।
'লম্ফো। নিবাব? আ্বাধারে তো তু মোর সাথে বাত করিস? সৰ
শুনতে পাই আমি ।॥ লম্ফো নিবাব? উবশী কথ! বলল ন]।
জনি কাদতে লাগল। গলা পচা ঘর, লম্ফোর আর ধৃপের ধোয়া ।
উবঁশী একা তৃবনমোহিনী হাসি হাসছে।
জনি কাদতে লাগল।
উ্বশীর খেল! জনি আর উব'শীর খেল! এ সিঙ্িনে লাস্ট শো!
উনিশ পয়স] টিকিট। কেন আর ঢুকে যাও।
পর্দা সরে গেল জনি ঢুকল, চেয়ারে বসল, কোলে উর্বশী ।
আর্জ জনি মূখে রং মেখেছে। সকালে টুপিতে নতুন পালক গজেছে।
উর্বশীর পরনে আজ রোলেক্পের বেনারসী, মাথায় ঝুটো মোতির মুকুট
গায়ে রোলেক্স জরির গয়ন]।
জনি বলল, “আজ উর্বশী এমন খেল্ দেখাবে, যেমন আপোনারা দেখেন
নি। উর্বশী, পাবলিককে হ্যালো! বল্,
“হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো পাবপিক! আমি উর্বশী! আই আ্যাম
উব্শী। মায় ছ' উবশী।,
গান] গাই+ লাচ করি, বাতচিত করি ।*
পাবলিক বলল, “তুমি কি-কি করতে পার ।?
'গলাট] ভাঙা-ভাঙা কেন গে.”
তুমি যে লাগর সেজে আইসকিম খাওয়ালে '*
হাসির হরুর1 উঠল ।
“উর্বশী, একট। গান গাইবে |
£কেয়। গান? কিগান? হুইচ সং?
“এক হিন্দি, এক বাংলা, এক ইংলিশ ।'
উবশী হাসল, মাথা নিচু করল। ঘাড় হেলিয়ে জনিকে কি-যেন বলল।
জনি মাথ। নেড়ে সম্মতি জানাল ।
উর্বশী বললঃ এক লাগর আইসকিম খাওয়াল» এক লাগর ঠাণ্ডাই শরবৎ,
গলাটা তেমন যুতে নেই ॥ লরম-লরম গাইব ?
১৭৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গজ,
“না না, গরম-গরম গাও ।
উর্বশী গাইতে লাগল,
চলতে চলতে আল্বিদা মত,
বোলে"!
"ঝিলিমিলি কাচের চুড়ি
সোহাগ রানী গে!”
"ডো! রে মি!”
বাহা রে বাহ! গলা ভেঙে বসে গেছে যে গো আজ |”
'লাগরদের উৎপাতে |,
“তবে বাত কর ।'
€তোমর। শুধাও ।,
'আরে উব্শী ! হাজার টাক পেলে কি করবে গো?
“আমি আর জনি ফুতি করব।'
'লাথ টাকা পেলে ?'
“তোমাদের লিয়ে আমি অ।র জনি ফুতি করব।?
দশ লাখ টাক! পেলে?
উবশী ফিশফিশ করে বলল, ম্থখের চিড়িয়া ধরে এনে তোমাদের হাতে
ধরিয়ে দিব।'
“কি হল? চুপ করলে কেন?
“তোমর]। বল না।,
'গল৷ এত নিচু কেন? লাজ লাগছে?
লাজ লাগছে ।,
জনি কানছে কেন।”
«ও বোকাটা» বুড়ো ভামটা |,
বশী, তুমি কেমন আছ? আমরা কেমন আছি? তুম ক্যায়সা।
হ্যায়? হমূলোক ক্যায়সা হ্যায়? আ্বোরে বাতাও, য্যারলা বাতাতে হো?
পয়স! দিয়ে ঢুকিছি, তোমার কথা শুনতে পেছি না জান?
উবঁশী চুপ করে রইল। জনির চোখে আতঙ্ক। উবশী কথা বলে না?
€কন।? |
“ক। হয় উব্শী ?
উর্ধধী ও জনি ১৭৯
উর্বশী নিরুত্তর |
কা হুয়া? বেল্ খতম তো! কয়ে?
উর্বশী তার অভ্যস্ত, কোমল মধুর গলা! ভুলে গেল। সহসা উর্বশী
চেঁচিয়ে উঠল। বড় বিশ্বর, ফ্যাশফেশে, কাঙ্গাভর! আর্ত গলায় চেঁচিয়ে উঠল
উবণশী।
'আমি ভাল নেই গো? মোর গলা বন্ধ হয়ে গেছে। আর আঙি
হাসব না গো, গান গাইব না। বাতচিত করব না গো পাবলিক। সুখের
চিড়িয়া! যে ধরে এনে তুমাদের দিত, বে ধরে গ্সানত সখ কি চিড়িয়াঃ সে
উবশী আর স্থখে লাই গো! কেন জান? মোর গল। বন্ধ হয়ে গেল,
গলার আওয়াজ বেরাবে না আর! সব বন্ধ হয়ে গেল গো পাবলিক?
আমি ভাল নাই গো, সুখে নাই, তোমরা কি করে ভাল থাকবে বাতাও?
ভুমাদ্দের সকল স্থখ কেড়ে লিলে মোর গল! ?
পাবলিক হতবাক।
রুদ্ধপ্রায়, বিশ্বর গলায় উবর্শী বলল, “মোর গলা যে চলে গেল, আমি
আর ভাল নাই! ভাল নাই! ভাল নাই!"
“ভাল নাই গো 1 বলে উর্ধশী বুক ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠল। কিন্ত
হঠাৎ কান্নাটা, চীতৎকারটা থেমে গেল। পর্দ। পড়ে গেল। নন্্রস্ত, আতংকিত
পাবলিকের ঠেলাঠেলি, চীৎকার | ভীষণ, ভীষণ, ভাষণ চীৎকার করল সকলে,
“কি ছল? কিহল?,
ভেতরে কি ভাঙছে, চুরছে, দমাস দমাস শব । বিভ্রান্ত, কৌতুহলী,
আতংকিত জনত। স্টেজে উঠে পড়ল, পর্দা ছিড়ে ফেলল। তারপর নৰ
কোলাহল থেমে গেল।
নৈঃশব্য, নৈঃশব্য, নৈঃশব্বা |
পাবলিক সভয়ে দেখল ভেন্ট্রলে! ফুইস্ট জনি ওর কথা কও পুতুর্
উবশীকে দলে-মুচড়ে ভাঙছে আর হাহাহা করে কাদছে।
জনির মুখ ও বুক চোখের জলে ভেলে যাচ্ছে, ঠোট নড়ছে। ঠোঁট বলছে,
“আমি ভাল নাই গে! । কেন না আমার গল! বন্ধ হয়ে গেছে।”
কিদ্ধ গলা দিয়ে একটুও আওয়াঙ্ব বেরোচ্ছে না ।
বায়েন
ভগীরথ যখন খুব ছোট তখনি ওর ম1 চণ্ডীকে বায়েনে ধরেছিল। বারেছে
ধরবার পরে চণ্তীকে সবাই গীঁঁছাড়া করে দিল। বায়েনকে মারতে নেই,
বায়েন-মরলে গাঁয়ের ছেলে-পিলে বাচে না। ভাইনে ধরলে পুড়িয়ে মারে,
ৰায়েনে ধরলে তাকে বাচিয়ে রাখতে হয়।
তাই চণ্ডীকে সবাই গ'-ছাড়। করে রেলের ধারে চাল! তুলে দিল।
ভগীরথ বড় হয়েছে অন্য মার কাছে, অন্ত মা-র আদরে-অনাদরে । নিজের
মা কাকে বলে ভগীরখ জানে না। শুধু মাঠের ওপারে ছাতিম গাছের নিষ্ে
একটা চাল! ঘর দেখেছে, শুনেছে ওখানে চণ্ডী বায়েন একলা থাকে।
কখনো মনেও হয়নি চণ্ডী বায়েন কারে মা হতে পারে । দুর থেকে দেখেছে
ঘরের মাথায় লাল নেকড়ার ধবঙ্জা, মাঝে মাঝে দেখেছে উদত্রাস্তের মত ধান-
ক্ষেতের আল ধরে চৈত্রের চষা দুপুরে লালকাপড় পরে কে যেন কাঠি দিয়ে
টিন বাঞ্জাতে বাজাতে মজা! পুকুরের দিকে যাচ্ছে, পেছনে একটা! কুকুর ।
বায়েন যখন যাঁয় তখন টিন বাজিয়ে সাড়া দিতে দ্বিতে যায়। বীায়েন যদি
কোন ছোট ছেলে বা যুবা পুরুষকে দেখে তখনি চোখের দৃষ্টিতে তাদের শরার
থেকে রক্ত শুষে নিতে পারে।
তাই বায়েনকে একলা। থাকতে হয়। বায়েন যাচ্ছে জানলে যুব বুড়ো সব
পথ ছেডে সরে যায়।
একদিন শুধু একদিন ভগীরথ তার বাধা মলিন্দরকে বায়েনের সঙ্গে কথা
বলতে 'দেখেছিল।
চক্ষু লামা ভগীরথ, ওর বাব! ধমকে বলেছিল ।,
বায়েন প1 টিপে টিপে পুকুর-পাড়ে এসে ধীড়িয়েছিল।
ভগীরথ এক পলক দেখেছিল পুকুরের জলে লাল কাপড়,,তামাটে মুখ,
জটাবীধা চুল।
দেখেছিল ছুই চোখে কি ক্ষধিত দৃষ্টি, যেন ভগীরথকে চোখ দিয়ে মেরে
ফেলবে।
না, ভগীরথের মুখের দিকে চায়নি বায়েন। ভগীরথ যেমন কয়ে কালে!
কীয়ের ১৮১
ছলে বীয়েনের লাল ছায়া দেখেছিল, বীয়েনও ঠিক তেমনি করেই ভগীরখের-
ছান্াটাকে দেখছিল। ভগীরথ শিউরে উঠে চোখ বুজে ছিল, বাবার কাপড় চেপে
ধরেছিল।
«কেন এসেছিস ?' ভগীরথের বাব! হিসহিসিয়ে উঠেছিল।
“মোর মাথায় তেল লাই গঙ্গাপুত্ত, ঘরে কেরাসিন নাই । একল! মোকে
ভর লাগে গো !?
বায়েন কাদছিল, চণ্তী বায়েন। জলের ওপর ওর ছায়া-চোখে জল পড়ছিল।
“কেন, এ শনিবার বারের ডাল] দেয় নাই ?"
শনিবার শনিবার ভোমপাড়ার একজন বারের ডাল! নিয়ে যায়, চালঃ ডাল,
লবণ, তেল নিয়ে গিয়ে ছাতিম গাছের কাছে রেখে ছাতিম গাছকে সাক্ষী রেখে
“্বায়েনের বারের ডাল। দিলাম গো” বলে ছুটে চলে আসে।
কুকুর খেয়ে দিলে ।'
“টাকা লিবি ? টাকা লে।'
“আমায় কে জিনিস বিচবে 1
“দেব, আমি কিনে দেব, তুই এখন যা!"
'আমি একল। থাকতে পারি না।'
“তবে বায়েন হলি কেন? যা বলছি
ভগ্গীরথের বাব! পুকুর-পাড় থেকে একদল] কাদা তুলেছিল।
গঙ্গাপুত্ব, এ খোকাট! কি"""
একটা বিগ্রী গালি দিয়ে ভগগীরথের বাব! কাদার দলাটা ছুঁড়ে মেরেছিল।
ভখন পালিয়ে গিয়েছিল চণ্ডী বায়েন।
“বাবা, তুমি বায়েনের সঙ্গে কথা বললে?
ভীষণ ভয় পেয়েছিল ভগীরথ। বীয়েনের সঙ্গে কথা বললে তার মৃত্যু
অবধারিত। ভগীরথের মনে হয়েছিল ওর বাবা মরে যাবে আর বাবা মরে
যাওয়ার কথা ভাবলেই ভগীরথের মনে হত মাথায় বুঝি বাজ ভেঙে পড়ল, বাঁপ
মরণে সৎ-ম। যে তাকে তাড়িয়ে দেবে তাতে সন্দেহ নেই ।
“এখন বায়েন বটে, কিন্ত উ তোর ম1।,
বাবা আশ্চর্য গম্ভীর গলায় কথাটা বলেছিল। গলার কাছটায় ভেল!
আঁটকিরে গিয়েছিল ভগীরখের । ম11 বায়েন কারে। মা হয়! বীয়েন কি
মানুষ 1 বায়েন তো! মাটি খুঁজে মরা ছেলে বের করে, আদর করে, দুধ
১৮২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গঞ্জ
খাওয়ার, বায়েনের দৃষ্টিতে একটা গোটা গাছ অন্ধি চড়চড়িয়ে শুকিয়ে যেতে
পারে। ভগীরথ তো একটা জল-জীয়স্ত ছেলে । সে কেমন করে বায়েনের
পেটে জন্মাল? ভগীরথ ভেবে পায়নি ।
'আগে মানুষ ছিল, তোর মা ছিল।”
£তোমার বউ?
'আমার বউ।'
মলিন্দর কি ভেবে যেন নিঃশ্বাস ফেলেছিল । বলেছিল--“তোরে সব বলে
যাব ভগীরথঃ তোর কোন ভয় লাই |,
ভগীরথ অবাক হয়ে ওর বাবার দিকে চেয়ে চেয়ে আল দিয়ে হাটছিল।
মলিন্দর গঙ্জাপুত্রের গলায় এমন ম্বরও কথনেো। শোনেনি । শুধু ডোম নয় ওরা,
শ্রশানের ডোম। শ্রশানে এখন মিউনিসিপ্যালিটি শুধু একজন ভোম থাকতে
দেয়। ভগীরথর] বাশবেতের কাঁজ করে, সরকার মুরগী খোঁয়াড়ে কাজ করে,
অয়লা ফেলে সারমাটি করে । এক মলিন্বর ছাড়া এ অঞ্চলে কোন ভোম নাহ
সই করতে জানে না। সেইজন্ত মলিন্দর কিছুদিন আগে মহকুমার লাশখরে
কাজ পেয়েছে।
সরকারী কানজ্জ। মলিন্দর গঙ্জাপুত্র লিখে বেয়াল্লিশ টাক! মাইনে নেবার
কাঙছ্জ। ভগীরথ জানে বাবা মাঝে মাঝে বেওয়ারিশ মড়া! চুন আর ব্রিচিং
পাউভারে পচিয়ে হাড় বের করে। হাড়, যদি গোটা মানুষের হাড়, নয়তো
খুলি নিদেনপক্ষে পাজর।-খাচাটা পাওয়া যায়, তাহলে অনেক লাভ।
সরকারবাবু কলকাতার হবু ভাক্তারদের কাছে খুলি-হাড়-কঙ্কাল মোটা! লান্ে
বেঁচে দেয়। বাঁবাকে দশ-পনের যা দেয় তাতেই বাবা খুশি। এই উপরি
টাক! সুদে খাটিয়ে খাটিয়ে বাবা কয়েকটা শুয়োর কিনেছে।
মরিন্দর গারে পিরান পরে, পায়ে জুতা পরে মহকুম। যায়, পাড়ায়ও সম্মানী
মাছুষূ।
সেই মলিন্দর চোখ লাগ কয়ে অনেকক্ষণ চণ্তী বায়েনের ঘরের ওপরে গেরুয়া
আকাশের কপালে এতটুকু একটা সি“ছুর-ফোটার মত লাল নেকড়ার নিশানটুকুর
দিকে চেয়েছিল। বিড়বিড় করে বলেছিল--'বধাররে ডর খায়, অন্ধকারে
খাকতে লারত তারেই বিধাতা! বায়েন করে ছাড়ল? 'এখন মলে বীয়েন শান্তি
পার, কিন্ত বায়েন নিজে না যর়ে তো কেউ ওর জান নিরিলিরযাদা?
খুব ভুংখু না পেলে মলিম্বর এত কথা বলে না।
বায়েন ১৯৩
“কে মানুষকে বায়েন করে বাবা ?
“বিধাতা ।,
মলিন্দর ভাল করে চেয়ে দেখেছিলভগীরথের আশ-পাশ দিয়ে ছুপুরের রোগে
কোন ছায়া চলেছে কিনা? বায়েনর] ঠিক হাট-বাজারের ফুল, গোলাপ, মাখন-
বালার মতত+ নান। ছলাকল! জানে | ধর কোনে। ছোট ছেলেকে বার়েন নিতে চায়,
লে যখন হেঁটে যাবে চারদিক রোদে পুড়লেও তার মুখে ঠিক ছার? থাকবে।
অদৃশ্ব হয়ে বায়েন গ্াচলের ছায়। ধরে ছেলেকে আড়াল করে নিয়ে যাৰে।
ছেলেটা মরে গেলে কেউ যদি দোষ দেয় তাহলে ৰায়েন মুচকি হেসে বলবে--
“তা কি জানব বল? খর রোদ দেখে এট্ট.ছেয়া দিতে গেলাম তা তোমাক্ষ
ঠোকাট। যেন ননীর পুতুল।, এট্টৎ তাতে মরে গেল 1?
ভগীরথের আশপাশে কোন ময়লা, গন্ধওঠা লালচে আচলের ছায়া দেখতে
না পেয়ে মলিন্দর যেন নিশ্চিন্ত হয়েছিল। বলেছিল---তোর কি ভয় বাপ?
তোর কুনে৷ অনিষ্ট উ করবে ন|।
তবু ভগীরথ ভরসা পায়নি।
শুধু এদিকে মন চলে গিয়েছিল ওর । ধানক্ষেতে যাক? গরু নিয়ে বাক,
কেবল মনে হত, রেললাইন ধরে ছুটে চলে যায় ওখানে । গিয়ে দেখে আসে
একল। থেকে থেকে বায়েন কি রকম ভয় পায়। দেখে আসে বায়েন মাথায় তেল
মেথে চুলের জল কেমন করে ঠচত্রী বাতাসে শুকোয়।
যেতে পারত না ভগীরথঃ ভয় পেত।
মনে হত যদি আর ন1 ফিরতে পারে কোনদিন 1 যদি ওখানেই ভগীরথকে
একট। গাছ করেঃ একট] পাথর করে রেখে দেয় ৰায়েন?
কয়েকদিন ভগীরথ শুধু চেয়ে দেখত।
দেখত ছাতিমগাছ আর চাঁলাঘরের মাঝামাঝি আকাশট1 যেন কার কপালেন
মতন। সেই কপালে এক ফৌোট! পিন্দুর-টিপের মত লাল নেকড়ার নিশানট!
কখনে! স্থির হয়ে থাকেঃ কখনে! দোলে । মনে হত ছুটে চলে যায় একবার,
আর পাছে ছুটে যায় সেই ভয়ে উলটোদিকে ছুটে ভগীরথ বাড়ি চলে
আসত ।
আশ্চর্য, বায়েনের ছেলে বলে ওকে কেউ হেনস্তা করত না বয় বেশি
খাতির করত। বায়েনের ছেলেকে খাতির করলে বায়েন মে কথ! জানতে পারে।
সে তাল খাতির দেখায়।
১৮৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গল্প
তার কচিকাঁচা ভাল থাকে । যেদুর ছাই করে তার ঘরে শুধু যরতেই
থাকে ছেলেপুলে।
ভগীরথের এখনকার মা-ও কিছু বলেনি। সতীনের ছেলের ওপর ওর
অনুরাগ আছে, ন। বিরাগ, ছেষ না ভালবালা* তার কোনটাই ও কোনদিন,
প্রকাশ করেনি। তার প্রধান কারণ ওর নিজের ছেলে নেই। ঠৈরবী আৰ
সৈরভী ছুটো মাত্র মেয়ে। পুত্রসন্তান ন]1 থাকলে স্বামীর ওপর জোর থাকে
না। তাছাড়। এখনকার মার ওপরের ঠোট ফাকঃ মাড়ি বের কর]। বাড়ি থেকে
বেরোতে চায় না বেশি। বলে--কুন মুখ দেখাতে যাব সি বল দেখি? মুখ
মোটে বুজে না যি।* ন1 হাপলেও মনে হয় মাগী হালতেছে।--দেখ গঙ্গা পুত,
মলে পরে মুখখান] গামছ। দিয়ে ঢেকে দিও--জানলু ? লইনে মানুষ বলবে দ্বাতী
ভোমনী চলল।
যশি শুধু কাজ করে, ঘর নিকোয়, ভাত রাধে, কাঠ কুড়োয়ঃ গোবর
চাপড়া দ্েয়ঃ শুয়োর তাড়ায়, মেয়েদের মাথার উকুন বাছে, ভগীরথকে 'বাঁপ”
বলে কথা বলে, খেতে এন বাপ, লাইতে যাও বাপ, যেন ওদের মধ্যে
কুটুমের সম্পর্ক, বায়েনেরর ছেলেকে যত্ব-আত্তি না করলে বীয়েন তার মেয়ে
ছটোকে বাণ মেরে দিতে পারে। যশি জানে। আরো জানে, একদিন
ভগগীরথের ভাতের ওপরই তাকে নির্ভর করতে হবে।
মাঝে মাঝে মাড়ি বের করেও ভয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে, কে জানে
ভর দুপুরে বায়েন ওর মেয়ে ছুটোর কথ! মনে করে মাটি দিয়ে পুতুল গড়ছে কিনা»
বান ফু্ড়ছে কিনা । তখন যশিকে যত কুচ্ছিত তার চেয়েও কুচ্ছিত দেখায় ।
অনেক দুঃখে মলিন্দর ডোমপাডার সবচেয়ে কুৎসিত মেয়েটিকে সাঙা করেছে।
কয়েকটা গায়ের ডোমপাড়ার সবচেয়ে স্থন্নরী মেয়েটি বায়েন হয়ে যাবার পর
মলিন্দর আর রূপসী মেয়ে দেখতে পারে না।
মলিন্দর বউকে নাকি খুব ভালবাসত।
হয়তে। সেই ভালবাসার কথ। মনে কবেই একদিন মলিন্বর ভগীরথকে চণ্ডী
ধায়েনের কথা বলল। দুজনে রেললাইনের পাশ দিয়ে হাটছিল। মলিন্দরের
হাতে মাংসের পৌোটলা, এই এক আশ্চর্য দুর্বলত। মলিন্দরের, নিজের হাতে পাল?
শুয়োরগুলোকে ও কাটতে পারে ন1। শুয়োর পোষে, বড় করে, তারপর
কাটবার দরকার হলে গোটা শুয়োরট। কাউকে বেচে দেয়। যেকেনেসে
মলিন্বরকে একটু মাংস দেয়।
বায়েন ১৮৫
“এট্ট, গাছের ছেয়ায় বসি?
যেন তের বছরের ছেলের অনুমতি নিল মলিন্দর, বটগাছের গু'ড়িতে
হেলান দিয়ে ববল। ভগীরথ জিজ্ঞেন করল--“এখান হতে ডাকাতর] যায়ঃ না
কি বাপ?"
ভগীরথ এখন বুনিয়াদী ইস্কুলে যায়। এই সরকারী স্কুলের দেয়ালে ওদের
মাস্টারমশাই এক সময়ে দেয়াল-পত্রিকা লিখিয়েছিলেন ছেলেদের দিয়ে। নিজে
হরফগুলি লিখে এনেছিলেন । ভগীরথ সেগুলি কালি দিয়ে ভরেছিল। সেই
লেখাটি পড়ে ভগীরথ জানতে পেরোছিল উানশ শো পঞ্চন্্র অচ্চ,ৎ আইনের
পর থেকে ওর] কেউ আর অচ্চ* নর।
জেনেছল ভারতীয় সংবিধ।ন বলে একটা জিনিস আছেঃ তার প্রথমেই
একট মৌলিক আধকারের কথা স্প& করে লেখা আছে, তার। নাকি সবাই
সমন।
দেপ়াল-পত্রিকাটা এখনে৷ টাঙানো আছে। 1কস্ত ভগীরথর]1 জানে দহপাঠির!
বা ম[স্ট।রঞ1 ওদের একটু দুরে বসাই পছন্দ করেন। এই ইস্কুলে অন্ত জাতের
ছেলের। নেহাত গরিব বা অপারগ না হলে আসে না। আসবে কেন? এখন
চারদিকে ইস্কুল ।
য1 হোক. ভগীরথ এখন একটু অন্ত রকম ভাষায় কথ। বলে। মলিন্দর ওর
কথ। শুনতে ভালবাসে ও ভগীরথের পাশে প্রান্ই ওর নিজেকে এক অযোগ্য
বাপ বলে মনে হয়।
ভগীরথ ডাকাতদের কথা জিজ্ঞেস করল। এখন এই সোনাড'ঙা, পলাশী,
ধুবুলিয়৷ জায়গায় জায়গায় সন্ধ্যার ট্রেনে ডাকাতি খুব বেড়ে গিয়েছে।
ডাকাতি সবাই করে বলতে গেলে । ভদ্রলোক গরীব ছাত্র কলোশ্র বাসিন্দে
পাকা বাঁড়িক্স মালিক--নান1! রকম পরিচয় তার]! বাইরে দেয়, কামরায় ওঠে।
তারপর ঠিক সময়ে চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দেয় অন্ধকার মাঠে। অন্ধকার
থেকে সেথোর। আলে । তারপর সবাই মিলে য। পারে নিয়ে থুয়ে মেরে ধরে
টম্পট দেয়। বিশেষ করে এই বটগাছটা সদ্ধের পর বড় ভয়ের হয়ে উঠেছে।
তাই ভগীরথ ডাকাতের কথা জিগ্যেস করল। মলিন্দর কিন্ত সে কথ!
বিশেষ গায়ে মাখল-না ॥ শুন্ত মাঠের দিকে চেয়ে আকাশে ও মাঠে কি যেন
খুঁজল, তারপর বলল-আমি আগে নিমায়া-নিদার ছিলু জানলু বাপ।
তোর ম ছিল তুষু তুষু ফ্যানেকে কানত। বিধেতার বিচার ।
১২
১৮৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গ্প
যেন ভগবানই একদিন ডে[মপাড়ায় এসে পাশা উল্টে দ্রিলেন। চণ্ডী
হয়ে গেল বায়েন নিষ্ঠুর নির্দর শিশুহস্তা। আর মলিন্বর হয়ে গেল তুষুপ্রাণ।
হতেই হবে।
একজন যদি অমানুষ হয়» মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে অলৌকিক জগতের
অদৃশ্য দরজা খুলে ঢুকে যায়, তাহলে আরেকজনকে মান্থযের মত মাছগষ হতেই
হবে।
ভগীরথ এই সময়ে বুঝতে পারল, ওর বাবা ওকে কিছু বলতে চান্ব!
ভগীরথ একটু আশ্চর্য হল। (সই একদিন বাব! বায়েনের সঙ্গে কথা বলেছিল
আর বলেনি। আহ আবার বায়েনের কথ! কেন ?
মলিন্দর ভগীরথের হাত চেপে ধরল। বলল--*ভয় কি? সবাই জামে
আর তুই তোর মায়ের বিত্বাস্ত জানবি ন1?
ওরা গঙ্গ,পুত্র । ওর] ভোম, মলিনর বাশ বইত, কাটত আর চণ্ডীর ছিল
কাচ ভাগাড়ের কাজ ।
ওর বংশগত উত্তরাধিকার । এই গ্রামের উত্তরে বিলের ধারে বটগাছতলে
কাচা ভাগাড় । পাঁচ বছরের নিচে শিশু মরলে এখন পোড়াঁতে হয়, তখন সবাই
পুতে দিত। এ ভাগাড়ে চণ্ডীর বাব! খন্ত। দিয়ে গর্ত খু'ড়ত, কাটা গাছ দিয়ে
গর্ত ঢেকে রাখত, শেয়াল তাড়াত। হই হই হুইয়।""*ওর গ্রমত্ত কণ্ঠের ভয়ঙ্কর
ডাক রাতে বিরেতে হরদম শোন]! যেত।
শুধু মন আর গজ] খেত চণ্তীর বাবা। আর শনিবার একটা ভাল! হাতে
গায়ে বেরত। বলত--আমি আপোনাদ্দের সেবক গো, আমি গঙ্গা পুত, আমার
ভালাট! দিয়ে দেন গো।।'
সবাই ওকে ভয় পেত। ওর চোখ থেকে ছোট ছেলেমেয়েকে সপিদ্বে
ঝাখত। একটাও কথা না বলে ওকে ভিক্ষে দিয়ে চলে যেত।
একদিন একটা ফন? মেরে, কটা চোখ, লালচে চুল, এসে ধাড়িয়েছিল।
বলেছিল _ “আমি চণ্ডী, অমুক গঙ্গাপুত্তের বিটি, বাপ মরে গেল। বাপের ভালা
এখন মোকে দেন ॥”
“বাপের কাজ তুই করবি?
'করব।,
“তোকে ভয় লাগে না।'
“মোর ভয়ডর নাই ।”
বায়েন ১৮৭
এই ভয়ডরের কথাট! চণ্ডী বুঝতে পারত না। ছেলে মেয়ে মরলে মা বাপ
কাদে সে শোকের অর্থ বোঝ] যায়। কিন্তু মরাকে কি কেউ বাড়িতে ধরে
রাখে, না রাখতে পারে? তার সৎকার করাটা! তো! চণ্তীর কাজ? অন্তত্র
জীবিকা । এতে ভয়ের কি আছে, নিষ্ঠ্রতাই বাকি? যদি থাকে সেও
তো! বিধাতার নিয়ম । সে নিয়ম তো গঙ্গাপুত্ররা তৈরি করেনি। বে
তাদের এত ঘেন্না করে কেন মাহষ, কেন ভয় পায়?
এই চণ্তীকে মলিম্বর বিয়ে করেছিল। তখন মলিন্দর সরকায়বাবুর
সঙ্গে হাড় বেচার কাজ করত | গো-ভাগাড়ের হাড় থেকে সার হয়ঃ নে
হাড়ের দাম আছে। হাতে পয়স| ছিল মলিন্দরের, বুকে সাহস, রাতে মাঠ দিক্বে
চেঁচাতে চেঁচাতে ও ফিরত--'কিসিকে। নেই ভরতা, হাম আগুন খাতা!
কিসিকো! নেই ডরত11,
সন্ধেবেলা লন হাতে একা! চণ্তীকে ৰটগাছতলার় ঘুরতে দেখে ও
বলেছিল-_-“এই, তু আ্রাধারে ভরিস ন11?'
“না। হাম আগুন খাতা জানিস? চণ্তীর হাসি দেখে মলিন্দর খুব অবাক
হয়েছিল। সেই বৈশাখেই ও চণ্তীকে বিয়ে করে। আরেক বৈশাখে চত্তী়
কোলে ভগীরথ এসেছিল।
চণ্ডী ভগীরথকে কোলে নিয়ে একদিন কাদতে কাদতে ফিবে এসেছিশ,
বলেছিল--“মোকে ওরা ঢেলা মেরেছিল গঙ্গ পুত্ত। বলল আমার নজর মন্ৰ ।'
*কে ঢেল। মারল 1
'লাও! তাকে কি তুমি মারবা ?
“ঢেল! মারল কেন 1,
মপিন্দর উঠোনে বেড়া পু'ভতে পু'ততে প্রায় নাচতে শুরু করেছিল চট্কা
রাগে। “আমার বউকে ঢেলা মারে কে? কার এত আম্পর্ধ? গালাগানি
দিতে শুরু করেছিল মলিন্দর ।
চণ্ডী ওর দিকে কিছুক্ষণ নিণিমেষে চেয়ে বসেছিল । তারপর বলেছিল--.
'মোর মন চায় না গঙ্গাপুতত, খস্তা ধরতে মন চায় না, কিন্তক বিধাতা ই কাজ
মোকে দিয়ে করাবে, তা আমি কি করব বুল?
চণ্ডী আশ্চর্য হয়ে ঘাড় নেড়েছিল, নিজের হাত পা দেখেছিল | ওর ঘংশে
ভাই-কাকা-দাদ1 থাকলে বংশের কাজ করত, কিন্ত কেউ নেই। ওর সেই
আদিম যুগের শাশানৈ ধাপ, যখন হুরিশ্চন্জর চাড়াল হরেছিলেন তখন চত্তীদের
১৮৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
পূর্বপুরুষ ওকে কাজ শিথিয়েছিল। আবার যখন হরিশ্চন্ত্র রাজা হলেন তখন
সসাগর] পৃথিবী গর, দ্ান করতে লাগলেন ভারে ভারে ।
“মোদের কি বেবস্থা ?
সেই আদিম গঙ্গাপুত্র রাজসভা ফাটিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। ওদের কানে
ভেতরে রাবণের চিতা শে! শে! করে, তাই ওরা প্রতিটি কথাই ঠেঁচিয়ে বলে,
ধীরকণ শুনতে পায় না।
“কিসের বেবস্থ! ?"
“বামুন গাই-বলদ পাবে, নন্েসীর নিত্য ভিক্ষা, মোদের কি বেবস্থা ? মোদের
কি দিলে 1"
পৃথিবীর সকল শ্মশান দিলাম ।'
“কি দিলে ?
“নসাগরা পৃথিবীর সকল শ্মশান তোমাদের দিলাম |,
“দিলে?
গ্লাম, দিলাম, দিলায |
তখন সেই আদি গঙ্গাপুত্র দুই হাত তুলে ভীষণ নেচেছিল। উল্লাসে
বলেছিল--হা» মোরা শ্শান পেয়েছি গো» সকল শ্মশান পেয়েছি | এ পিথিমীর
লকল শ্বশান মোদের ।'
সেই মানুষটির বংশের একজন হয়ে চণ্ডী কেমন করে জাতকর্মে লাখি
মারত 1 মারলে যে সে দেবরোধষে পড়ত না তার ঠিক কি? অথচ, চণ্ডী
ভীষণ ভর করত ইদানিং খত্তা দিয়ে গর্ভ খু'ড়ে ও মুখ ফিরিয়ে নিত। গে
কাটা ঝোপ চাপা দিলেও ওর ভয় যেত না। মনে হত যে-কোন সময়ে মুখে
আগুন নিয়ে একটা শেয়াল বটগাছের মত বড় বড় খাব! দিয়ে মাটি খু'ড়তে
শুরু করবে।
ভগমান--ভগমান--ভগমান**“চণ্ী গুনগুন করে কাদত। একছুটে চলে
আসত বাড়ি। ঘরে বাতি জেলে বসে থাকত আর ভগীরথের দিকে চেয়ে
ঠাকুরকে ডাকত। এই সময়ে চপ্তী সব সময়ে কামনা করত গ্রামের প্রতিটি
শিশু যেন অথণ্ড পরমাস্ু নিয়ে বেঁচে জীয়ে থাকে, কেন না আগে তার যে
হূর্বলত! ছিল না এখন সেই দুর্বলত হয়েছে।
ভগীরথের কথ! মনে করে ওর প্রতিটি শিশুর জন্ত ক হয়, নিদারুণ কষ্ট
হয়।, যদি বটতলায় বেশি লময় থাকতে হয় ওর বুক ছুধে টনটন করে। দুখ
বায়েন ১৮%
নিচ কয়ে ও গর্ত করে, বাপকে মনে মনে দোষ দেয়। মেয়েকে কেন সে
এই নিষ্ঠুর কাজে ব্রতী করে গেল?
'আপনার। অন্ত মাঁছষ দেধে লাও, মোর মন উঠে ন1।”
চণ্ডী একথাও বলেছিল একদিন। কিন্তু ওর কথা কেউ কানে নেয়নি।
মলিন্দর ওর কথা বিশেষ বুঝত না, কেন না, অন্ত মানুষ যা দেখে ভয় পায়, ঘ্বপা
করে, সেই অশুচি শবদেহ* হাড়, চামড়া নিয়েই ও জীবিকা । চণ্ীর
কথাবার্তা শুনে ও বলত--ধুস্ যত মিছ! ভর |?
চণ্তী বেশি কাদলে বলত--“তো মানীর বংশে তো কেউ লাই, কে আসবে
শুনি?
এই সময়েই সেই নিদারুণ ঘটনাট1 ঘটেছিল। গ্রামে বেড়াতে এসেছিল
মলিন্বরের এক জ্ঞাতি বোন। তার মেয়েট। ক'দিনেই চণ্তীর স্যাওট] হয়েছিল।
গ্রামে সেবার খুব বসন্ত হচ্ছে । চণ্ডীর! কোনদিনই টিকে নেয় না, শঈতলাতলায়
যায়। ননদের মেয়েটিকে কোলে নিয়ে ছিল চণ্ডী । ননদকে নিয়ে পুজো! দিয়ে
এসেছিল শীতলাতলায়। রেললাইনের ধারে বিহারী কুলীর1 যখন কাজ করত
ওর] একটি শীতলাথান বসিয়ে গেছে । সেখানে পাকাপাকিভাবে বিহাঝী
পুরোহিত থাকেন একজন।
কয়েকদিন পরে সেই শিশুটিই, কি আশ্র্ধ, মায়ের দয়ায় মার। গেল ।
চণ্ডীর বাড়িতে নয়, অন্থাত্র, কিন্তু মেয়ের মা-বাবা-পিসী-কাক1 সবাই বলতে
লাগল চগ্তীই ওকে নিয়েছে ।
আমি 7
ই গো তুমি |?
“আমি লয় গে। আমি লয় ।
চণ্ডী ওদের সমাজের মেয়েপুরুষগুলিয দিকে চেয়ে সকাতরে বলেছিল ।
ই তুমি!”
“কখুনে। নয়।' চণ্ডী সাপের মত ফুসে উঠেছিল। বলেছিল” “আমা
হতে কারো মন্দ হবার লয় | জান আমি কার বংশ?
ভীরু কুসংস্কারে অন্ধ মান্থ্যগুলি ভীত চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে
বলেছিল--“টুক্নিকে মাটি দিবার কালে তোমার বুক হতে ছুধ মাটিতে পড়ন
কেন?
হারে বোকার সমাজ !
১৯০ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
চণ্ডী কিছুক্ষণ স্বণা ও বিশ্ময়ে সকলের দিকে তাকিয়েছিল। তারপর
বলেছিল--“ঠিক আছে। পিস্বিপুরুষের শাপ মোকে লাগুক, ডর করি না। উ
কাজ ছেড়ে দিলাম আজ হতে ।”
“কাজ ছেড়ে দিবি ?'
“দিব। যা» যেয়ে বীরপুরুষ সব, পাওর! দেগা। মোর মন ইকাজে
বহুদিন লাই, গঙ্গাপুত্ত গোরমেণ্টের ঘরে সরকারি কাজ পাবে, ই কাছে আমি
যরতে যাব কেন?"
সমাজের সকলকে বোব। করে দিয়ে চণ্ডী ঘরে চলে এসেছিল । মলিন্মরকে
বলেছিল-_-“কাক্জ যিখানে সিথা ঘর মেলে না? সিথা চলে যাব। উরা
মোকে কি বলে ত৷ জান ?'
মলিন্দর চণ্ডীকে ঠাট্টা করে অবস্থাট! সহজ করে নেবার জন্ শ্বভাবসিদ্ধভাবে
ঠেঁচিয়ে হেসে বলেছিল-_-“কি বুলে উর11? তু বায়েন হছিস?'
বলেই মলিন্দর আর্তনাদ চেপে নিয়েছিল। কি বলল! মলিন্দর একি
ভয়ানক কথা উচ্চারণ করল ?
চণ্ডী কাপতে শুরু করেছিল বাশের খুঁটি ধরে | উত্তেজনার, ছুঃখে, রাগে,
চভূগুণ চেঁচিয়ে ও বলেছিল--“ঘরে বন্শধর রইতে কেউ উ বাক্য মুখে ল্যায়?
আমি বায়েন? আমি ঘরের ছেলে ফেলে, মর1 ছেলেরে দুধ দেইঃ মরা
ছেলে লিয়ে সোহাগ করি? আমি বায়েন ?,
'চুবো !
মলিন্দর ওকে ধমক দিয়ে উঠেছিল, কেন না তখন ভর দুপুর! এ সময়ে
মানুষের কুকথা-দুঃনংবাদ বাতাসের মুখে ধায়। এ লমরে মাথার তেলঃ ভাত
না থাকলে মনে ভ্যঙ্কর ভিংসে-রাগ-আক্রোশ সহজে ধূইয়ে ওঠে। মলিন্দর
গর সমাছ্ের লোকের শ্বভাব চরিত্র জানত।
'আমি বায়েন লই গে! আমি বীয়েন লই 1,
চণ্তীর কান্না চিল ছো৷ মেরে বাতাসকে পৌছে দিয়েছিল । বাতাস নিমেষে
সে কান্নার খবর ঈশান থেকে অরি আকাশের সবকটা কোণে ছড়িয়ে দিয়েছিল।
এ একবার কেঁদেই চুপ করে গিয়েছিল চণ্ডী, আর কোন কথা ধলেনি,
মলিচ্দরকে নাকি বলেছিল--'মোর! খ্াধারে চলে যাই কুখা ?"
“কুথা যাবি ?'
“পালাব! ”
বায়েন ১৯১
কুখা?
জানি না।?
চণ্ডী মলিন্দরের কাছে এসে ভগীরথকে কোলে নিয়ে বসেছিলঃ বলেছিল-
“কাছে গুইড়ে এসো» বুকে মাথা রাখি ।
বলেছিল-__মোক বডে। ডর লাগছে। পিত্তিপুরুষের কান্ধ করব না বলে
এলাম থিকে ডর লাগছে । এতদিন তো৷ ডরি লাই ? আজ আযামন ডর
লাগছে, তুমাকে আর দেখব না, ভগীরথকে আর দেখতে দিবে না, ভগমান 1”
এই কথাটি বলে মণিন্দর চোখ মুছল। বলল--এখুন মনে ল্যায় বাপ,
সিদিন ভগমান উর মুখ দিয়ে কথ।ট1 বুলিয়েছিল, জানলু ?'
“তাপর ?'
তারপর চণ্ডী কয়েকদিন আচ্ছন্ন হয়ে বসে থাকছিল। অল্প কাজকর্ম করে
আর ভগীরথকে কোলে নিয়ে বসে থাকে, গান গায়। ঘরে খুব ধুনো৷ জালে
পিদিম জালে আর মাঝে মাঝে কাণ পেতে শোনে।
একটান] ছুটো মাস খুব ভাল কেটেছিল। আর চগ্ডীকে ডাকতে আসেনি
কেউ। আর দরকারও হয়নি। খুব শান্তিতে ছিল ওর! সেই কট দিন চণ্ডী
খুব শান্ত হয়ে গিয়েছিল, বলেছিল--“ই--কাচাকচিদের অন্য বেবস্থা হতে হয়।
ই বেবস্থা। খুব মন্দ।”
“হবে? বেবস্থা। হবে। দিকে দিকে হচ্ছে !+
চণ্ডী বলত -“ভাল করলাম কী মন্দ করলাম কে বুলে দিবে? দেখঃ মোক
যন বুলে নিশি য্যাখন শুনলাম ত্যাখন জানি মোক বাপ হাকুর দেয়
“তুই শুনলি।
মন বুলে যেমন হই-হই-হইয়! ডাক উঠে, বাপ কি শেয়াল তাড়ায় নাকি?
চুপযা চণ্ডী |,
মলিন্দর ভয় পেত । মাঝে মাঝে কি তারই মনে হত ন! চণ্ডী বায়েন হয়ে
যাচ্ছে, চণ্ডী রাতে চমকে উঠে বটতলায় কাদের কান্না শোনে? হয়তে। সমাজ
যাবলছে সেকথাই দত্যি। মনে হত এর চেয়ে দেশ-গ্রাম ছেড়ে শহরে
ষাওয়। অনেক ভাল।
সমাজও চণ্ডীকে ভোলেনি। চগ্ডীর ওপর চোখ রাখছিল। চণ্ডী তা
বুঝতে পারত না এই যা! সমাজ যখন চায় তখন লক্ষ্যে চোখ রাখে, যখন
চাস না তখন অলক্ষ্যে চোখ রাখে। সমাজের অসাধ্য কাছ নেই।
১৯২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
তাই একদিন বাড বাদলের রাতে, মলিন্দর যখন মদ খেয়ে নেশায় টুপটুপে
হয়ে ঘুমোচ্ছে, ওর উঠোনট। মান্থষে মানুষে ভরে গিয়েছিল। ওকে ডেকে
তুলেছিল কেতন, চণ্ডীর কি রকম মেসো । বলেছিল, তোর বউ বীয়েন কিনা
দেখে যা!'
ঘুম ভাঙা চোখে মাণন্দর বোকার মত ওদের দিকে চেয়ে বসে ছিল
কিছুক্ষণ।
“দেখে যা শাল! দেখে ধা, ঘরে বায়েন পুষ্কে মোদের ছেলেগুলোকে সারা
করছিস ত্যাতদিন ধরে |.
মলিন্দর দেখতে গিয়েছিল। দেখছিল-বটতলাক় মশাল জলছে, লন ।
সমাজের বেটাছেলের। ভিড় করে চাক বেধে আছে, কেউ কথা বলছে না।
“চণ্ডী রে!
মলিন্দরের আর্ত চিৎকারট। কে শুনেই ছুরি দিয়ে কেটে ফেলেছিল ।
সবাই স্তব্ধ, সবাই দেখছে এর! কি করে।
“চণ্ডী 1,
চণ্ডী দাড়িয়ে ছিল। হাতে একটা! দা» পাশে লঠন+ এক পঁজা কাটা গাছের
ডাল পাশে উচু করা।
'ডাল ঝোপ এনে আমি গর্ত ঢাকছিলাম গো ।”
“কেন, তু উঠে এলি কেন?
“শিয়ালগুলো টেঁচাতে যেয়ে য্যামন থেমে গেল ত্যামন মোক মন বুলল--
উর। গর্তে যেয়ে খাবলাচ্ছে, মর] তুলবে ।"
তু বায়েন!” গ্রামের লোকের! মন্ত্রধ্বনির মত বলল, সভয়ে।
'ক্যাও পাওরা দেয় না থি।'
শতুবায়েন |?
£মোক বংশকাজ। উর কি জানবে 1?"
“তু বায়েন !,
“আমি বায়েন লই গোঁ, বুকে কচি ছেলা, মোক বুক ছুধে ফেটে যায়।
বাঁয়েন আমি লই ! গঙ্গাপুত্ত তুমি বুল না৷ গো» তুমি তে সব জান ?'
লগনের আলোয়, বৃষ্টিতে লেপটানে। বুকের আচলট! দেখছিল মনিন্বর
ন্ত্মুগ্ধের যতো ! বুকের ভিতর ফেটে যাচ্ছিল মলিন্দরের । কে বলছিল, “ও
মলিন্বর সাপ দেখলে তু কাছে যাস, আগুনে যেয়ে হাত ঢুকাস, এখন যাস না!
বায়েন ১৯৩
তু? তুদ্দের কত ভালবাসার বিয়ে, ভালবালার ঘর। তু গেলে মহ] সর্বপাশ
হয়ে যাবে ।
মলিন্দর কাছে গিয়েছিল, রক্ত চোখ দিযে চণ্ডীকে ভাল করে দেখতে
দেখতে টেচিয়ে উঠেছিল জন্তর মত--'আরি ই-ই-ইহার |! তু বায়েন।
বটতলায় এসে কারে ছুধ দ্বিচ্ছিলে রে 1 আবি ই*ই-ই-ই-গে1।'
গল্গাপুত ''"হায় গো ।+
চপ্তীর ভীষণ ও বুকফাটা৷ কানন! মাটির মৃত শিশুদের, চণ্ডীর বাবার অশান্ত
আত্মাকে, ওর আদিমপুরুষ সেই আদিম ডোমকে অব্ধি ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।
মান্থষের জগৎ থেকে অমান্ুষটি অতিলৌকিক লোকে নির্বাসনের সময় মানুষের
আত্মা বুঝি অমনি করেই কাদে । অমনি আকাশ-মাটি-পাতাল কীপিয়ে।
কিন্তু মলিন্দর ছুটে ঘরে এসে ওর শ্বশুরের শনিপুজোর ঢোলট] নিয়ে আবার
বটতল। চলে গিয়েছিল। ঢেলে কাঠি দিয়ে গ্রাম কীপিয়ে ঠেোঁচয়ে উঠেছিল--
“আমি মলিন্দর গঙ্গাপুত্ত শোহরৎ দেই। আমার বউ বায্চেন হয়্যাছে গো
বয়েন হ্য়্যাছে 1?
“তাপর 1" ভগীরথ জানতে চাইল।
“তাপর সমাজ উকে বেলতলা লিয়ে গেল বাপ । জানলুঃ একেল হতে
সিয্যামন ডরাত, সি একেবারে একেল হয়ে গেল। উই উই শোন বায়েন
গান গায়।' |
অনেক দুর থেকে টিনের কৌটোর শঙ্খ আর এক আশ্র্য গানের স্থুর
ভেসে এল। সেখানে শব নেই। কথা নেই বলে মনে হয়, কিন্তু কথা ধান্নে
ধীরে শোনা গেল।
ঘুষ এস ঘুম এস রে সোনা» ঘুম এস রে যাছু-*"
গানট! ভগীরথ জানে গানটা গেয়ে ওর এখনকার ম] গৈরবী-সৈরভীকে
ঘুম পাড়ায়।
চিল, ঘরকে যাই বাপ !)
মলিন্দর অভিভূত ভগীরথকে নিয়ে ঘরে ফিরে চলল। ভগীরথ বুঝতে
'পারল--বায়েনের গানটা ওর ভেতরে ঢুকে গেলঃ ওর রক্তে মিলে গেলঃ একটা
হুবোধ্য বেদনার মত ওর কানের ভেতর বাজতে থাকল!
তার কয়েকদিন পর ভগীরথ ছুপুরবেল! একলা চলে এল মন্্া বিলের
পাঁশে | অনেক দুর থেকে ও টিনের শব্দ শুনেছে, গুনে ছুটে ছুটে এসেছে ।
১৯৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গল্প
জলে বায়েনের ছায়া । বীয়েন ওকে দেখছে না। চোখ নিচু করে জল;
ভরছে মাটির কলসীতে।
“তোমার আব কাপড় নাই 1?
বায়েন চুপ) বায়েন মুখ ফিরিয়ে আছে।
“তুমি ভাল কাপড় পরবে ?
গঙ্গা পুত্তের বেট! ঘরে যাকৃ।”
'আমি, আমি এখন ইস্কুল পড়ি । আমি ভাল ছেলে ।
“মোক সঙ্গে কথা বুলে নারে । আমি বায়েন।"
'আমি ছেয়াকে বলছি ।
£মোক ছেঁয়াতে পাপ আছে ইকথ গঙ্গাপুত্তের বেট। জানে না?
“আমার ভয় নাই»
ঘরে যাক, এখন ত্যতম্পর তাত। ইকালে দুধের ছেলে বাইরে
ঘুরে না।
'তুমি-*'তুমি একলা থাকতে ভয় পাও ?'
একলা? না বে মোক কুনো ভয় নাই। একল থাকতে বায়েন
ভবে?
“তবে তুমি কাদ কেন?
“কে বুলে?
'আমি শুনেছি ।,
গঙ্গাপুত্তের বেটা শুনেছে! আমি কাদি?'
ছলে লাল ছায়াটা কীপছে। বীয়েনের চোখে জল, বায়েন চোখ মুছল,
বলল -- “ঘরে যেয়ে গঙ্গাপুত্তের বেটা য্যান ফিরে কাড়ে, বায়েনের ধারে কুনোদিন
আসবেনা, লয় তো+*'লয় তে। আমি গঙ্গাপুত্তকে বুলে দিব ।,
ভগীরথ দেখতে পেল আল ধরে বাঁয়েন চলে যাচ্ছে । চুলের গোছ। উড্ভে
পড়ছে, কাপড়ের আচল লাল | অনেকঙ্গণ বদে রইল ভগীরথ, বিলের
জল স্থির হওয়া অন্ধি বসে রইল। কিন্তু আর কেউ গান গাইল না-ঘুম এস
ঘুম এস সোনা, ঘুম এস রে যাছু।
ঘরে গিয়ে বায়েনও অনেকক্ষণ বসে রইল। বসে বসে আকাশ-পাতাল
ভাবতে থাকল। ভেবে ভেবে শেষে উঠে অনেকক্ষণ বাদে একটা ভাঙা
আরুসি টেনে বের করল।
ষায়েন ১৯৫
: শ্যাহারার কিছু লাই।,
অন্ফুটে বলল বায়েন। চুঙ্গগুলো একবার আচড়াতে চেষ্টা] করল। ভীষণ জট ।
টোকাট1 কাপড়ের কথা বলল কেন? উর তে? কিছু মনে থাকার কথা
লয়। ফর্সা কাপড়, ভাল চ্যাহারার কথা? তরু কুঁচকে অনেকক্ষণ ধরে ভাবল
বায়েন। অনেকদিনই ও মানুষের মত গুছিয়ে কিছু ভাবতে পারে না।
ভাববার কিছু নেইও ওর । শুধু গাছের পাতার শব্ৰ, বাতাসের ভাঁক, রেলের
আওয়াজ নিয়ে কত কথা আর ভাব যায় !
কিন্ত আজ ওর মনে হল টোকাটার সর্বনাশ হয়ে যাবে। হঠাৎ মানুষের
বউয়ের মত অবিবেচক মলিন্দরের ওপর রাগ হল। টোকাটাকে সামলে বাখা'
কার কাজ? বাঁয়েনের নজর থেকে আড়াল করা কার দায়িত্ব?
উঠে, লন জেলে ও হুনহুন করে রেললাইন ধরে ধরে এগোতে লাগল।
লাইন ধরে এগিয়ে গেলে এঁ দুরে গুমটি ঘর, লেভেল ক্রসিং । ওখান দিয়ে আসে
মলিন্দর। এসে আলপথ ধরে ঘরে যায়। লাইন ধরে যেতে যেতে ও লোক-
গুলোকে দেখতে পেল। লোকগুলো লাইন থেকে কি সরাচ্ছে।
না, লাইনের উপর বাশ গাদা করছে এনে এনে ।
আজ বুধবার রাতের ফাইভ-আপ লালগোলায় মেলব্যাগ আসবে । অনেক
টাকা। অনেকদিন ধরে ওর] এই ছন্তে তৈরি হচ্ছে।
€তোর] কে?
বায়েন লঠন তুলল, নিজের মুখের পাশে দোলাল। লোকগুলে৷ মুখ
ছুলছে। ভয়ে সাদা, চোখ বিক্ষারিত। ওর সমাজের মানুষদের এত ভব
পেতে বীরেন কোনদিন দেখেনি ।
বায়েন ?
“তুরা বাশ-গাড়ি দিচ্ছিস তুরা! গাড়ি মারবি? আবার পালিরে যাচ্ছিস, ছা
যোক ডরে ? ই বাশ ফেলা আগে, সর্বনাশ হবে 1
ওরা বাশ নামাতে পারে না লাইন থেকেঃ লর্বনাশ ঠেকাতে পারে না।
ঘমাজ চিরকাল এই করে, সমাজের এই কাজ। ওদেরই একজন একদিন ঢোল
হরৎ দিয়ে ওকে বায়েন করে দিয়েছিল। বাতাসে বুটির ঝাপট, চণ্ডী লঠনট!
হাতে নিল। - অসহায়, কি অসহার চণ্ডী । ও যদি বায়েন হয় তো! ওর পোষ
অন্ধকারের দানবগুলো! এসে এ ট্রেনটাকে থামিয়ে দিচ্ছে না কেন? সমাজ ভে!
এই পারে। শুধু এইটুকু । কি অসহায় চণ্ী, চণ্ডী এখন কি করে?
রি মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
লন হাতে চণ্তী লাইন ধরে ছুটতে লাগল। এক হাত তুলে মানা
করতে লাগল--এসো না আর এসো! নাগো, এখানে পাহাড়-প্রমাণ বাশ
গাড়া।
ট্রেন ছুরস্ত ছেলের মত কোন বাধা! না যেনে একেবারে চণ্ডীর ওপর
ঝাপিয়ে পড়ল।
প্রাণ দিয়ে ট্রেনটাকে দুর্ঘটনা থেকে বাচাবার জন্তে চণ্ডীর নাম অনেক দূর
পৌছে গিয়েছিল । বুঝি বাঁ সরকারের ঘরেও।
লাশ ঘর থেকে ওরা যখন চণ্ডীকে নিয়ে চলে গেল তখন দারোগাবাৰু
মালন্দরদের গ্রামে এলেন । সঙ্গে বি, ভি ও।
“রেল কোম্পানি চণ্ডী গঙ্গাদাসীকে মেডেল দিবে মলিন্বরঃ তা তোদের
বেত্তাস্ত তো আমিজানি। বললাম, ওর কেউ নেই তবু মুকাবিল! করে দেওয়া
দরকার তাই ইনি এসেছেন ।”
“সাহসের কাঙ্জ, খুব সাহসের কাজ করেছে, সবাই ভাল বলছে মহকুমার ।
তোমার পরিবার 1?”
সবাই চুপ করে। সমাজের লোকগুলি এ ওর দিকে চাইল, ঘাড় গল!
চুলকে মাটি দিকে চেয়ে কেউ বলল, “আজ্ঞা আমাদেরি জ্ঞাতি।”
ভগীরথ অবাক হয়ে গেল। সকলের মুখের দিকে চাইতে লাগল ।
চণ্ডীকে ওর। জ্ঞাতি বলল 1 চণ্ডীকে ওরা শ্বীকার করে নিচ্ছে?
«তোমাদের সকলের হাতে তে। ওর মেডেল দেবেন ন1 সরকার ।
'আজ্ঞা আমাকে দেন।”
ভগীরথ এগিষে এল।
তুই কো?
“উনি আমার ম1।'
'বটে, তোর নাম কি--কি করিস...?
বি. ডি, ও* লিখতে লাগলেন । ভগীরথের চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল".
ভগীরথ গল। ঝেড়ে বলল -আল্ঞা! আমার নাম ভগীরথ গঙ্গাপুত্র
বাপ পুজ। মলিন্বরের পুত্র। নিবাস ভোমপাড়]।
মা] ঈশ্বর চণ্ডী গঙ্গাদাসী'""
ভগীরথ বংশপরিচয় দিতে লাগল ।
আজীর
'নামে তুমি পাতন হে, তায় আজীরের* বংশ। তুমারে আমি মিঞা
ছিব নাই হে!
একথা কলে পাতনকে চেত্রের ছুপুরে বের করে দিল সজনলাল | সজনলালের
বাড়িঘর বলতে লালমাটির টোডাঘব।
টোগঙাঘরের নিচের খোড়লে ছাগল থাকে, ওপরে মানুষ । চাল বলতে
তালপাতার টোপ চাল।
সজনলাল সেই টোডাঘরের দরজায় বসে গামছা! ঘুরিয়ে বাতাস খেতে খেতে
বলল, তুমি যাও হে পাতন।,
পাতন সজনে গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ চুপ করে দীড়িয়ে রইল। তারপর
ভীরু মিনতিতে বলল, “আমি আর কার ঠেঙে যাব বল ?
“তা আমি জানি?
“মোরে কেও মিঞা দেয় না ষি।
“দ্ববে কেন?
«কেন দিবে না বল ?"
সঙ্জনলাল কিছুক্গণ অবাক হয়ে চেয়ে রইল । ওর বউ ভুবনদাসী ছাগলের
খোঁড়ল থেকে মুখ বের করে বলল, “কিছু বুঝ না হে তুমি! ভাঙ পিচাশ
বট! ই ত্যাতপ্নর তাতে মান্যকে বের করে দেয়? দেখ না, মাথায় তাতে
লাগরের বুদ্ধি হয়ে গেছে? লাওঃ উকে ঘরে বসাও। তুমি উঠ গো৷ পাতন।
ঠাণ্ডা হও । সম্বে হলো ঘর যাবে।'
তুবনদাসীর মনটা বড় নরম। ও পাতনের মতো নিরীহ মানবের দুঃখ
দেখতে পারে না। তা ছাড়া ওই পাতন, ওর শ্'ড় মনিবের কাছ থেকে চুরি
করে এনে ওকে এক নম্বর খাওয়ায় মাসে একবার । সজনলাল কি! মানুষ ?
মেয়ে বিয়ে দিবি না, না দিলি । তা বলে এই তাতে মানুষকে বের করে দেয়?
পাতন কিন্ত গুটিগুটি ভূবনদাসীর খোড়লে এসে ঢুকল । তুবনদাসীর
কাশের রোগ । কফাশিতে ছিট ছিট ন্বক্ত বেরোয়, পাতভোর জরে শোষে
তুষনদাসী ।
-- আবীর £ অতি জয় অর্থের জন্য আত্মবিকর়কারী।
১৯৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
তাই পাকুড়ঠাকুরের থান থেকে মাছুলি এনে পরেছে ভৃবনদাসী |
রামছাগলের বাতাস ভাল। ভূবনদাঁপী একটা দেড়ে বোকা পাঁঠা আর তিনটি
ছাগলের নার্দির পাশে চাটাই পেতে শোয় । ভালে! থাকে শবীরটা।
সেই চাটাইয়ের এক কোণে বসল পাতন।
চাটাইয়ের অন্যদিকে শুয়ে ছিল ভূনি। সঙ্জনলালের চোদ্ব বছরের ভাগন্ব
মেয়ে ।
পাতন নিঃশ্বাস ফেলল। বয়স হয়ে গেল কত। চুলে পাকধরে গেল।
ভূুনিকে যদি সঙ্গনলাল বিয়ে দিতে ওয় সঙ্গে! পাতনের সংসার
হত ।
“জেবনটা, বুঝলে ভুনির না, সোমসার না হলে বেরথা বার। নাকি
বল?
“আজীর বংশে মিঞা দিয়ে আমার লাভ ?
“মনিব মা বলে, সোমসার কর পাতন |?
“তা তুমি কেনে আছীরের মিঞা দেখ না?"
“আর আজীর কুথা ?"
তা! দেখ পাতন, উ আঙীরপাট্টা মনিব ছেড়ে দিৰে--বলে দেখেছ?
“ন1। দিবে না।,
“তবে তুমার জেবন বেরখা যাবে।'
“বড় কষ্ট তুনির মা!”
'জানি।
ভূবনদাসী নিঃশ্বাস ফেলল। সংসার কর! মানে পরনে ত্যানা, স্ত্রী পুরুষে
একবেল। ভাত জুটবে না, যে যখন ক্ষেতে খাটবে, তখন অল্প পাবে । নইলে
উপোস, বারো মাস উপোস ।
.সেইন্জন্তেই সংসার কর! দরকার । শ্তী-পুরুষের-দরকার পরস্পরের গায়ের
ভাপের। ভাঙা টোপচালের নিচে কঙ্কালের মতো! দু-চারটে শিশুর। নইলে
কি নিয়ে থাকে তুবনদাসীর মতো, পাতনের মতে। মাহ্যর] ?
প্রত্যহ অন্ধের আশা কে করে? ভৃবনদাসীরা করে না1। ওর! জানে এ
পৃথিবীতে কিছু মাহুয রোজ খায়, কেউ একবেলা, কেউ মাঝেমধ্যে।
ওর] তৃতীয় দলে। ভাত কেচায়? ভাত কে পায় রোজ? শশীবাগা
'আমানি বেচে, জামানি খাও । শরীরে তাগদ থাকে, বানরাস্তায় গিয়ে ভাতের
'আজীর ১৯৯
হোটেল থেকে ফেন চেয়ে খাও। নইলে নইলে জঙ্গলে যাঁও। জঙ্গলবাঁবুদের
পাহার1 এড়িয়ে কন্দ খোড়, বাশের কচিপাতা সেদ্ধ করে খাও।
জীবন এইরকমই | সে জীবনে বউ বড় দরকার। তুবনদাসী তাজানে।
তাই ও বললঃ “ই দেশ ছেড়ে ভিনদেশে যেতে পার? ভিন গীয়ে? যিখানে
ক্যাও তুমারে চিনে না? সিথ! গেলে বউ পাও ।»
'যাব কুথাকে? মনিব পুলুস দিয়ে আনা! করাবে ॥
“সিবার আনা করছিল বটেক ।,
'আবার আন করাবে। ধিথা যাই, এ ভোবন স্সিচে আবার আল!
করাবে গো! আজীরের কেও নাই ।,
বুল নাছে! তুমার কথা শুনে মোর বুক ফাটে।,
বড় কষ্ট গো!
“লাও | ই কষ্টের উপায় তুমার হাতে নাই ।,
“না। মনিবের পা ধরে কেন্দ্যেছি কত। বল্যেছি, আজীরপাট! দেন
মাশায়, মোরে খালাস দেন।
উবাকিকরেবল?,
“তাই বলে মনিব। বলে তুর পিত্তিপুকুষকে মোর পিস্তিপুরুষ কিনেছি,
সিকি আমি নিদান করতে পারি? তাল্লে পিতিপুরুষের কোধ হবে বিষম
'লাও |! তবে আর কি করবে বল ?,
“কিছু না। বড় দুঃখ আমার হে! বেধা বুঝ, তাই বললাম ।*
“ইকি? উঠ কেন? যাও কুথা?'
'যাই। কবিরাজ শওরে যাবে, তা মনিব মার তরে তেল লিয়ে যাই
গকি তেল গো?
“মাথার তেল | মনিব মাক মাথার ব্যামে! তুনির মা! উ তেল দিলে
মাখে ভাল।'
“মনিব মা তুমায় স্তে হু করে বেস্তর।'
ধা করে । কুনঅ সামগগি মোরে ন1 দিয়ে খার ন1। খর! বল বরা বল,
মাংস আমি আনব, উনি আদবে। তা মোর তরে আগে সাপোটে আথবে।,
ধুব খা তাই না?
“খুব!
'নিত্য ভাত খাও?
২৪৩ মহ্হাশ্ব্বেত। দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
*বিয়েনে খাব, ছুপুরে খাব» সাঝে খাব। তা! বাদে মুড়ি খাব, পিপ্রাজ্ খাব,
গুড় থাব। খাই খুব।'
বেস্যর দেয় না কেন?
“দিবে, এবার দিবে ।,
'ভাল আছ হে ভাতের সুখে ।,
“কিন্ত মনে বড় বেথা যি ।
“মনিব শালোমালে। বলেঃ গেগ্ডাই-মেগ্ডাই করে ! বলে যা শালা, বউ ধরে
আন, বিয়াকর। তা আমি বলি মাশায়, আজীরকে কেও মিঞা দেয় না যি!
উ বলে বলবি--তিন সম্ঝে ভাত ছুধঃ বছরে ছুখানা বস্তর। তাতে বউ
মিলে না?
ভুবনদাসী কি ভাবল। তারপর বলল, হোথ! যেয়েছিলে ?
কুথা গো 1?
£শৌশনতলা 1 মায়ের কাছে ?
না,
'উনির পা ধরে পড়গা! উনি দেবাংশী মানুষ । জানলে উনি জানবে ।+
“উনিকে ভয় করে যি!"
«কেন ?'
'মোরে রাতে যেতে বলে যি!
“তা যাবে।,
ভয় করে,
“কেন,
'রাতে গেলে যদি***ঃ
“যেতে বলে, দেবভাবে বলে। মানুষ ভাব উনির নাই। ভয় কি তুমার?”
“যা মোরে বাণ মেরে এখে দেয় বরা খর করে?
“না। তুমার ভয় লাই হে। যেয়ে দেখ।,
“উনি নিদান দিবে 1,
“দত্তে পারে। পারলে উনি পারে ।,
“দেখি!
“তুমি বড় অভাগ। হে। আজীর হয়াছিল তুমার পিত্বিপুরুষ। তুমি তুমার
মালিক লও । তুমার মালিক উ মাতং শু'ড়। তুমার দুঃখে মোর বুক ফাটে।
আজীর ২০১
পাতন একবার সতৃষ্ণ চোখে ঘুমস্ত ভূনির দিকে চাইল। বলল, "চুরি কষে
পাতকি করে কত মদ, চাল, গুড় খাওয়াছি গো! মিএ/ট। দিল ন] তুনির
বাপ।,
*“আজীর যি।,
“তা দেখ, যেয়ে দেখি হোথা !”
হ্যা । যেয়ে পা ধরে পড়বে । আর দেখ, উনি কী বলে মোরে
বলে যেয়ো ॥,
পাতন উঠল। তালপাতার ছাতা মাথায় দিয়ে ও বেরিয়ে এসে হ.টতে
থাকল। এখন কবিরাজবাড়ি যাবে, তেল নেবে ।
মনিব-মা বন্ধযা। তায় যুবতী। শরীরে নানা রোগ তার। পাতনকে
ছাড়া তার একটি দিন চলে ন1। পাতন পাটিপে দেবে। মাথা টিপে দেবে।
উঠোনে মৃছণ গেলে পাতন তাকে পাঞ্জীকে'ল। করে ঘরে তুলবে । আর কেউ
তাকে ছু'লে মনিব মা অজ্ঞান অবস্থাতেও টের পাবে। চেঁচাতে থাকবে।
পাতনের মনিব মাতঙ্গ শু'ড়ি বলে, “খাস কুথা 1? মনিব-মার কাছে থাকবি।
তু গোলাম, ঘরের গোণাম। উর কাছে থাক, আসগুলান দেখ, গরুগোয়াল
কাড়,।
বলে, “তু মোর সাথে হারামি করবি ন। কথুনে।।”
পাতনও জানে সে কথা । মনিব ম!কে পা টিপে দলে, মাথ। টিপে দিলে
প|জ[কোলা করে তুললে, ওর রক্ত চঞ্চল হুয়। চামড়ায় চড়কতলার$আগুন
জলে।
চড়কের রাতে ভক্ত্যার৷ গনগনে কাঠকয়লার আংর1 আগুনের ওপর দিয়ে
হাটে। পাতনও হেটেছে। পাতন যখন পাশে দ[ড়য়ে দেখেছে, আগুনের
আচে শরীর পুড়ে গেছে ওর।
আবার ভক্ত হলে সেই আগুনেই তখন ভোরবেলার শেতল
বেলেমাটির পথ।
সেই আগুন পাতনের শরীরে মনিব-মা জালায়। পাতন যনে মনে ভক্তি
এনে সে আগুনকে শীতল করে নেয়। মনকে বলে, 'উন মানব-মা গো
উকে মাত্তিভাবে দেখতে হবে। কুনঅ পাপ ভাবতেই নাই।”
ও আলীর, বংশাঞ্ক্রমে ক্রীতদাস।
কবিরাঞ্জবাড়ি থেকে তেল নিল পাতন। তারপর এগিয়ে এসে বসল দিখির
১৩
২০২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
ধারে। নামে রাজার দিঘি । জগ এখন তলাঞ্চি। চৈত্রে এই; বৈশাখে
দিঘির বুক ফুটিফাট। হবে।
তখন গীয়ের পচজন এসে দিঘির বুক খুঁড়ে রেখে যাবে সন্ধেবেলা 1
রাতভোর সেই গর্তে চু'য়ে চুয়ে জল জমবে । ভোর না হতে নিলে পরে জল
পাবে না কেউ।
অগ্নিবর্ণ ধেশয়ার মতো! তাতে জল শুকিয়ে যাবে।
তখন সবাই যাবে চার মাইল দুরে ব্লক আপিসে। সেখানে কুয়া! শুকোর
না। কুয়োতে জল মেলে ।
যাবে মাস্টারবাবুর বাড়ি।
এ জেলা টা অনাবৃট্টি আর খর] ছুভিক্ষের জেলা ৷ বছরের পর বছর সরকার
বিলিফের টাক] দেবে।
সেই রিলিফের টাক] নেন মাস্টারবাবু। এ অঞ্চলের পাচখান! গ্রামের
রিলিফের টার্ধ উনি বছর বছর নেন, জানা কথা । যেটা! নিয়ম দরাড়িয়ে যাঁয়।
সেটাকে ই মেনে নেয় পাতন। ? কখনের] কেউ বলে না, “কেনে 1 রিলিফের
টাকা মোদের লেগে, মোর! পাই ন1 কেনে? ধান কুথা যায় ? বীজ কুথা যায় ?"
রিলিফের টাক] থেকে মাস্টারবাবু বাড়ির চারদিকে পুকুর কাটিয়ে, কুয়ো
খুঁড়ে আবাদ করেছেন। ধানভানা কল» শহরে বাড়ি, একখান বাঁপ, কী
করেননি?
জ্বল উন মানুষকে দেন। খাওয়ার জল, রাম্নার জল। তবে আন করতে
দেন ন কাউকে।
পাতনের মনিবেরও ছুটে! কুয়ো বাড়িতে। রাতেভিতে জল পাহার!
ওয়া পাঁতনের একটা বড় কাজ । বড় পাপী মাহ্যগুলো । রাতে জল হেন
জিনিস চুবি করে।
যতদিন না সময়মত খরা! নামছে, ততদিন রাজার দিঘিতে জল থাকে
"| পাতন দ্বিঘির ধারে বসল । অশ্বখ গাছের ছায়ায়। মা যদি বেঁচে
স্থলে ওকে চৈত্রমাসে সদ্ধেবেলায় অশ্থখগাছের ছায়ায় বসতে দিত
শে প্রেতিনীরা তৃষিত আকাজ্ষায় আকাশে অলক্ষ্য আচল
'মাচলের বাতাস লাগলে মান্থষের মরণ হুবেই হবে।
শত ভাই ছিল। তার! সকলেই আজ্ীর |
জাজীর - ২০৩
সকলেই কান্জ করত মনিবের পিতামহের কাছে। মনিবের পিতামহ শু'ড়িখানার
টাকা করেছিল, আবার ধানজমি করেছিল বিস্তর । এখানে নয়, দশখানা গা
পেরিয়ে, বাধের ধারে।
আজীরর] সাত ভ|ই সেখানে থাকত । চাষবাস করত, ধান বয়ে আনত্ত
মনিবের গোলায় ।
তাদের একজনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল । বিয়ের বর, হলুদ ছোপানো ধুতি
পরে বাধের জলে জান করে উঠে ঠত্রমাসের ঈ'ঝবেল। অশ্বখ গাছের নিচে বসে।
সেই যে বসল, আর সে ওঠেনি। সবাই যখন খবর পেয়ে ছুটে এল» তখন
শূন্য থেকে খলখলিয়ে হেসে প্রেতিনী বলেছিল, “কাচা ছেলা আমার গাছের নিচে
চত্তিরে সাঝে বসল কেনে? নাছ্যামায় বসব। তাআচল দিয়ে ছযায়া দিতে
ঢলে পড়ল? চিনির পুতুল ।,
সে সব আজীরঘ্ের বংশ নেই । পাতনের পিতামহ্র বংশ ন। থাকলে
পাতন জন্মাত না । জন্মটা এত দুঃখে কাটত ন তাব্। বড়ো কষ্ট তার মনে। ,
প্রেতলোকে বসে সেইসব আজীররা বংশজের হাতে পি চায়, জল চায়।
পাতন জানে সব। কিছুই করতে পারছে না ও।
আজীর। ওকে কেউ মেয়ে দিতে চায় না। যে কোনে কাঙালি, গরিব,
ভিথিরিরও বিয়ে হয় ওর হবে না। ওর পূর্বপুরুষ ওকে এইরকম ভীষণ শাস্তি
দিয়ে গিয়েছে ।
সে অনেকদিনের কথা। এই খরা-আকালের দেশে সেবার যে খর!
হয়েছিল পে নাকি অসম্ভব খরা । ঘাস পাতা, খেতের শশ্ত তো বটেই, জঙ্গগের
বড়ো বড়ো গাছও নাকি শুকিয়ে জলে যায়।
আকালে খরায় যা হয়ঃ মানুষ ঘর ছাড়তে শুরু করে।
পাতনের পিতৃপুরুষের জোতঙ্মি ছিল না। বড়ো গরিব ওরা» গ্রামের
একান্তে বাস। এমনিতেই তখনকার দিনেই ওরা একমুঠো ভাত খেত কি
খেত না খরার সময়ে আরো কষ্টে পড়ল শ্বামী-স্বী।
ওর] গুনেছিল আজীরিপাট্টা পিখিয়ে কারা যেন এ সময়ে মান্য কিৰে
নেয়। ওর] তাই।
মহাশ্বেতা দেবীর শেষ গঞ্জ
“আমাদের কিনবে গো? ঘোর! স্তিপুকুষ, য্যামন রাখবে, ত্যামন
থাকব, শুধু ছু মুঠ ভাত চাই ।'
ডেকে ডেকে গৃহস্থদের দোরে দোরে ফিরছিল। তখন এই মাতঙ্গ শুঁড়ির
পূর্বপুরুষের জাকের সংসার, খেত-খামার । ওদের এমন করে ঘুবতে দেখে
ও ডেকে আনে।
বাড়িতেই রাখে ওদের, ভাতজল দেয়, পরনে কাপড়। তারপর একদিন
আকাল ফুরোয় । আকাশ থেকে ইন্দ্ররাজ্জার হাতিটা শু'ড থেকে জল ঝরায়
ঝম-ঝমিয়ে। আবার খাল» পুকুরঃ কুয়ো ভরে ওঠে । চারদিক ঢেকে যায়
সবুজে । তারপর আসে আমন ধানের মাস, কাতিক। সেই সময়ে পাতনের
পিতৃপুরুষ বলেছিল।
আমর] বাড়ি যাই মাশায় |?
মাতঙ্গের পূর্বপুরুষ বলেছিল, “বাড়ি যাই। ঘরে এখন আছে কী?
থাবে কী?
“কিছু নাই ।”
“এসেছিলে নিজকে বিচে দেবে বলে |?
«কে কিনে মাশায় ?
“ধর যি আমি কিনি?
“তাহলে ত বেঁচে যাই।
“বল ত পাট্টা লিখাই, সাক্ষী ডাকি ।,
“ডাকেন। শুধা দেখেন--"
“কি?
“মোরা স্ভিপুরুষে বান্দা হব। মোদের সম্ভান ?
“সেও বান্দা হবে ।,
“তার বংশ?"
“বারে কিনে নিব
“মাশায় তুমার বড় দয়া হে! তবে ত আর ভাতের চিস্তা রইবে না
কারো।,
ছু হাত তুলে পাতনের পূর্বপুরুষ আনন্দ করেছিল। যেন হাতে চাদ
পেয়েছে । যেন পুত্র-পৌত্র-গ্ুপৌত্রকে অনন্তকাল ছধেভাতে থাকবার ব্যবস্থা!
করে দিয়ে যাচ্ছে। মাতঙ্গের পূর্বপুরুষ তুলট কাগজ এনেছিল, হীরেকষের
৯৪
আজীর ২৯৫
কালি, খাগের কলম। পার্ট! লিখেছিল বংশীধর পতিতুণ্ড.। সাক্ষী হয়েছিল
গ্রামের পাচজন।
পাটা লেখা হয়েছিল।
'মহামহিম শ্রীযুক্ত রাবণ শু'ড়ি মহাশয় বরাবরেষু লিখিতং গোলক কুড়া ওলছ্
চেতন কুড়া সাকিনা মৌজে মামুদচক মামুলে পরগণা অযোধ্যা সরকার বাজুহার
কন্ঠ মুনিস্ত আধ্ীরি পাট্টাপত্রমিদম্ কার্য্যঞ্চ আগে আমি আর আমার স্ত্রী গৈরবী
নায়ি দাসী এই ছুইজন কহুত সালিতে ভবিষ্যৎ বংশসহসামিল অন্নোপহতী ও
কর্দোপহতি ক্রমে নগদ পণ তিন রূপের! পাইয়। তোমার স্থানে স্ষেচ্ছাপৃবক
বিক্রয় হইলাম- ইতি তাং ১১ কান্তিক সন ১১*১ বাঙ্গালা! মোতাবেক ১৫ সহর
ববি-নীয়ন সন ৩৯ জলুষ
শ্রীমতি গৈরবীনায়ি দাসী
কল্তাঃ
সম্মতিঃ
শ্রীগোলক কুড়।
কন্ত
ছাপ সহি
পাট্টার ওপরে দশমাষ ওজনের রুপোর টাকার মোহর ছিল। পাট্টার নিচে
পাঁচজন সাক্ষীর ছাপসই ছিল। অন্ত কাঙালির। বলেছিল «ই কী করলি গোলক ?
বংশট] শু'ড়ির পায়ে বাঁধা দিপি 1? আজীর হলি ?
গোলক কুড়া বলেছিল, “আজীরের অন্চিস্তা থাকে নাহে। তু শালোরা
যুঝিস কী? ই কালদেশে আবার খর] হবে, আকাল হবে। মোদের আর চিন্তা
খাকে নাকুনঅ। ই আমি কপাল বেদ্ধে কাজ করলাম ।,
'ধুর শালো৷। আজীর হলি |,
সেই থেকে পাতনব1 এই বাড়ির গোলাম | দিন এল+ দিন গেল। সেই যে
পাট্টা, তার আর নড়চড় হুল না৷ কিছু । তিনটে টাক৷ দিয়ে মাতঙ্গের পূর্বপুরুষ
আজ্ীবের বর্তমান ও অনাগত ভবিষ্যৎ কিনে নিল।
এমন অমোঘ সে পাট্টাঃ যে তার আর নড়চড় হয় না। মাতঙ্গ বলে,
“তড়পাস কেন? যা না। যেয়ে দেখ না কাছারিতে। মানুষ জমি কিনে? পুকুর
কিনেঃ সে পাট্ট। সময় গেলে নষ্ট হয় না। মান্য কিনা পাউ। নষ্ট হয় ?
পাতন একবার পালিয়ে গিয়েছিল।
২৩৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গলপ
তখন পাতনের বয়সকাল। সবে তিন সাল খেউরি হচ্ছে । মাথায় ছ মণ
ধানীবস্ত' নিয়ে ও শ্বচ্ছন্দে ছু-ক্রোশ পথ হেঁটে যাঁয়।
সেই সময়ে ভরছুপুরে এক নির্লজ্জ বেদেনী রাজার দিঘিতে সান করে ওকে
দেখিয়ে দেখিয়ে কাপড ছেড়ে পরেছিল । হাতছানি দিয়ে মস্করা করেছিল।
পাতন বলেছিল* “হা! রে ! তুর! ত জাতগোত্র মানিস না। আমায় বিয়া!
করবি?
ধুর । বেদের জাত লই মোর। ?”
“বিয়া! করলে তোকে টাকা দ্িব।,
“পাবি কুথা ?'
“যিথা হয় ।'
বেদেনী হেসে আর বাচেনি। এ সব কথাবার্তার পরদিন ও পাতনের
মনিববাড়ি গিয়ে উঠেছিল । বাশের ও বেতের ঝুড়ি, কাঠের চিরুনি পলার
মালার সওদ| নিয়ে। ডুগড়ুগি বাজিয়ে গান গেয়ে গেয়ে ঢুকেছিল বাড়িতে ।
তখন মাতঙ্গের প্রথম বউ বেঁচে । এ বউটা তখন আসেনি । বেদেনী সেই
মনিব-মাকে বলেছিল, “ই যি মারে বিয়া! করতে বলে গো।'
কারে? তোরে ?
“লয়ত কি মোর পিসিরে 1? দাতীটাবে ?
“উ আজীর |
“কিনে লিয়েছ ?
“উবে নয়, উর পিত্তিপুরুষরে |”
“তাতে উ গেলাম হল?
“হল না? উ কেনঃ উর বংশ হলে সেও মোদের গোলাম হবে । পাটা
লিখা আছে ।
তবে ত লাগর+ হুল না।,
বেদেনী পাতনকে হেসে হেসে বলেছিল। পাতনের চিবুকট। ধবে ক
«বেশ লাগর গো! মনে ধরেছিল খুব ।,
“তবে বিয়া কর ?
ধুর
বেদেনী চলে গিয়েছিল. পরে গ্রাম ছেড়ে বাবার লময়ে বলেছিল, 'গোলাছি
ছেড়ে আয়। বেদে ছ।'
আজীর ই
“কেমন করে ?,
“জাতধম্মে তেগে আয় । মোর সাথে থাকবি ।,
পাতন বোঝেনি বেদেশী ঠাট্টা করছে। ও ভেবেছিল বেদেনী ঠিকই
বলেছে।
জাতধর্ম ছেড়ে বেদে হলে মন্দ কী? দেশে দেশে যাওয়া যায় ডুগডুগি
বাজিয়ে। আর মনিবের জোড়ালাথি খেতে হয় না পেটে ।
পাতন পলিয়েছিল।
পাতনকে ধরে নিয়ে এসেছিল মাতঙ্গ।
মাতঙ্গ পাতনকে উঠোনে হাত-পা বৌধ নারকোলদড়ির চাবুক দিয়ে
নির্মমভাবে মেরেছিল। “মহাপাপী বেট1! তু পালালে তুর পিত্তিপুরুষের মুখ
পোড়ে না? তুছ্জানিস না তু আজীর ?*
“বেদে হলে উ মোরে বিয়া করে গো! মোর সোমসার হয়। মোর
পিততিপুরুষ জল পায়।
'জেতছাড়ার জল ল্যায় পিত্তিপুরুষ ?'
“ল্যায় গে। |
পাতন কেঁদেছিল। ওর কান্ন। দেখে মাতঙ্গ মনে কষ্ট পেয়েছিল। আহা,
বড়ো কষ্ট পাচ্ছে ছেলেটা । কিন্তু ওযদি জাত দিয়ে বেদে হয়, চলে যাক
দেশান্তরেঃ তাহলে মাতঙ্গের সংসারে কাজগুলো করে কে?
মাতঙ্গ বলেছিল “তুকে দেখে মনটা মোর কুকাইছে বাপু! কিন্তক আমি
কী করিবল? তুমার পাত্তপুরুঘে আমার পিত্তিপুরুষে কথা। আনীরপা্টায়
পাচট। সাক্গীর ছাপ। ইকিমোর সাধ্য লাকচ করি?"
“আমি বা কী করি গো?'
পাতন মুখ তুলে জিজ্েস করেছিল। পরে, মাতঙ্গের হুকুমে পাতনের
গায়ে পাকাদদ মালিশ করে দিয়েছিল বেচন* শু'ড়িখানার চাকর। বেচনের
ছুটো বউ। একপাল ছেলেমেয়ে । ও যেতেই চায় না ঘরে। ওর ঘরে ছুই
সতীনে মারামারি আর কৌদল লেগেই থাকে ।
বেচন মদ মালিশ করতে করতে ধলেছিল, “তকে দেখে আমি প্রিষ করি,
পাতন কত ভাল আছে। হারে! কুন স্থখে সোমসার চাস? মোর কথ
ন, সোমসারে কুনঅ স্থখ নাই ।+
ন্জ বেচনের কথা৷ কানে নেয়নি। বলেছিল, “ই গায়ে কুন বেটাছেলেটা
২০৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
পরিবারকে ভাত দেয় ? মিঞারা গোবরঘসি করেঃ কাঠ গুড়ায়। ধান
ভানেঃ পেটের ভাত তুলে। আমি সব দিতাম বেচন। কিন্তুক আজীররে
কেও মিঞা! দিবে না হে।'
“সেই কথা |,
“ত1 দেখ, আগে আমার পিত্তিপুরুষর] মিঞা] পেত কুখা 1? কুথ। যেয়ে
সোমসার করত ?'
“ত্যাতক্ষণ দিনকাল অন্যরকম ছিল হে! পেটে ভাত, পরনে বস্তর, ই
দেখে মিঞা দিত।”
“আখুন দেয় না কেনে?
'আখুন কাঙাল ভিথারি কেও কারে গোলাম হতে চায় নাছে! গোলাম
রইতে চায় না। জীবনভোর, বংশ ধরে সবে গেলাম রইবে, পেটভাতে
রঙ্গবস্তরে খাটবে, হাতে একটা টাকা মাইনে পাবে না, ই দেখে মিঞা! দেয়
কেউ?”
“মোর কপাল !'
“তু এক কাজ করনা কেনে?” বেচনের ভেবে একট। ছিচকে মান্য
বাস করে। সে অসম্ভব সব দুঃসাহদিক কাজ করবে বলে তড়পায়, কিন্তু মুখে
কিছু বলে না। বেচন বলল? “তু মনিবের ঘরের সকল আধিঙ্গীধি জানিস। তু
সিন্ধুক খুলে পান্টাট। চুরি কর্, যেমুন সিন্ধুক খুলবি, ট্যাকার গেঁজেট। নিবি। তা
বাদে চল্ তোতে মোতে ভিনদেশে যেয়ে দোকান দেই গ1।,
“বাপো রে! মোর সাহস নাই ।,
“তবে মরু গা।'
তারপর মাঝে মাঝে পাতনের মনে হয়েছে, কী হয় যদি চুরি করে পাস্টরা-
খানা? যদি চুরি করে ছিড়ে ফেলে কাগজটা? সে কাগজ সে জীবনে দেখেনি ।
শুধু জানে তার সেই যরণক।ঠি আছে মনিবের পিদ্ধুকে । মনিব যে চৌকিতে
শোয়, তার মাথার কাছে দেওয়ালে গাঁথা সিন্ধুক। সিন্ধুকের মুখে বড় কুলুপ।
কুলুপের চাবি মনিবের কোমরে থাকে।
ভাবতে গেলেই ভয় হয়েছে তার। মনে হয়েছে কী করে ও চাবি নেবে,
কুলুপ খুলবে? পাতন বড় ভীরু, বড়ে ছূর্বল । আজীর, খায় দায়, থাকে।
আজীর পয়সা পায় না কি? আজীরের কি ঘর আছেঃ না সংসার, না আলাদ!
কোনো ল্তা? মনিবের ঘর তার ঘর। মনিবের সভা তোমারও সত।।
আজীর ২০৯
তোমার দেছটাও তোমার নিজের নয়। প্রাণ-মন-হাদয় কিছুই তোমার
নিজের নয়।
পাতন তাই পাট্টা চুরি করেনি।
সেই-মনিব মা মরে গেল নিঃসন্তান । নতুন মা এল। মনিব-মার শরীর
বড়ো তাজা, &াতগুলি সাদাঃ চুল বড়ো কালো।
মনিব-মা মাতঙ্গ শুঁড়ির মেয়ের বয়সী হবে। বড় জ্বালা মনিব-মার
শরীরে ।
বিয়ের আগে মনিব হবু শ্বশুরবাড়িতে এক ঝালি গয়না একটা চেলির
কাপড়, একটা মাছ এই পাতনকে দিয়ে পাঠিয়েছিল।
বরের বয়সের কথা মনে কর বিয়ের কনের সর্বাঙ্গ বুঝি জলছিল। তাই
ঝ|লি নিয়ে কনের মা বলেছিল, “পরে মা, গয়না পরো | সোনার পশংশে অজ
শেতল হবে ।
গয়নার স্পর্শে মনিব-মার অঙ্গ শীতল হয়নি । জেওঁচ ফল হাতে নিয়ে কত
বারব্রত করেছে মনিব-মা, কোল জুড়ে ধিয়াপুতা! আসেনি । মনিব-মা এখন
নেমস্ত্ন নেয় না। বলে, বাঝারে সবে মন্দ দেখে । জেওচ মরুঞ্চে সকল
পোয়াতি খায় মাছের মাথা, সখা দই। মোর বেল| হেলন-ফেলন। আঙি
যাই না লোকের বাড়ি গে !"
মনিব-ম1 মাটির মেঝেতে গড়াগড়ি খায় আছুলগায়ে। হুক না হক ভরা
বর্ষায় পুকুরের জলে গিয়ে অঙ্গ ডুবিয়ে বসে থাকে। মনিবের সামনে সাজে
না গোজে না। মনিব ঘরে না থাকলে সর্ব অঙ্গ সোনায় রুপোয় সাজিয়ে বলে,
“কেমন দেখায় রে মোকে?
পাতন বলে, “ভাল ।'
তুর সি বেদেনী হতে ভাল? দঙ্জনলালের মিএশ হতে ভাল।
“হ] দেখ মনিব মা» তুমারে আমি মাত্তিভাবে দেখি তো। আমি তোমার
ছেল! |”
মনিব-মা নিঃশ্বাস ফেলে। বলে, “তু গোলাম পাতন, আমিও । সোনাদান।
হাতে ছানব, টাকা নিব, ই কারণে বাপ মোরে শ্তঁড়ির গোলাম করে দিয়াছে,
নাকী বল্?
২১০ মহাশ্বেত1 দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্
চুপচুপ! কেবাণ্ডনে?
মনিব-ম] পাতনকে ভালবাসে । ছুঃখী জানে ছুঃখীর ব্যথা । মনিব-মা
আগে আগে পাঁতনের বিয়ের কথা! শুনলে জলে উঠত। বলতঃ “আরে আমার
শখের গোলাম। তু বিয়া করবিঃ বউ লিয়ে স্থহাগ করবি, সে কপাল তুর?
বংশ-আজীর না তুই? বিয়। হলে কী হবে? চার পা বেরাবে? আটকুড়া
শুঁড়ি-মরবে তার ভায়ের বংশ শোরের পাল আসবে তার ঠেঙে। তুর ছেলা
তাদের গোলাম থাটবে ?'
কিন্ত এখন মনিব-ম] অন্য কথা বলে। *য1! পাতন ! মিঞা দেখ একটা।
দেখ, অশটকুড়ার ঘর কনে করে মোর রঙে নান। ওগ ধরে যেয়েছে। কবে
মরি আমি | মনে বড় বেথা পাতন। এ দেহ কুনঅ কাজে নিল না ভগমান । না
দিল স্থখ, ন1] দিল ধিয়াপুতা । তা দেখ, আমি গেলে তুরে দেখতে কেও
লাই। তু মিঞাদেখ। বিয়া কর।,
'আজীররে কেও মিঞা দেয় না হে মনিব-মা।,
তুবনদাসীর সঙ্গে কথ! বলে পাতন মনে মনে কী ভাবল। তারপর ঘরে
এসে গোয়ালে সাজাল দিল» গ।ইগরুকে খড়ছজল। মাহিন্দার খেত থেকে
আসবে। তাদের জন্যে বড়ো হাড়িতে ভাত বাধতে পারে না৷ মনিব মা ।
পাতন ভাত কাধল। মনিব মা খ্বাধল ডিংলার টক, বিডেপোত্ত। এই
দিয়ে মাহিন্দাররা থাবে। তারপর বুনো। খরার মাংস রশাধল তাদের ম্ব'মীত্্ী
আর পাতনের জন্তে।
মাহিন্দারর! খেল। পাতনকে ভাত দিল মনিব মা। চেত্রের তাতে
পাতনের অঙ্গ জলছিল। পাতন ত্রান করে এল কুয়োতলা থেকে।
. ভাত থেতে থেতে পাতন বলল, “মা গো! ভূবনদাসী, ভুনির মা বনে
শোশানতল] যাও। যাও শোঁশানতলার ম! নিদ্দান দিবে ।
তাই যা পাতন!"
“যদি নিদান দেয়, তবে সোমসার হয়।'
ছুয় পাতন। হা দেখ, তুর বিল্ল! হলে ইবার ভাল মিঞা আনবি। খু
ৰ ভাল মিঞা ।
“পাব কুথা ?
«আমার মতো মিঞা? এমছনি দলমলে ৈবন ?
তুমার মতে1 1?
আজ'র ২১১
মনিব-মাকে মাতৃভাবে দেখতে হয়, অন্ত চোখে দেখতে নাই। কিন্ত
পাঁতনের ম1 ছিল শীর্ণ, পিঠকুঁজো।
মনিব-মা ভর] যুবতী, এই দলমলে যৌবন তার। চুল খুলে দিলে হাটুর
নিচে পড়ে, চোখ উজ্জল, দ্রাতগুলি সাদা ঝকঝকে । শরীরের প্রতিটি রেখা
নিখুতি। সব যেন পাথর কুঁদে তৈরি। বয়সকাল বৃথা গেলে বুঝি যৌবন
ওইরকম অচঞ্চল হয়, মাঝেমাঝে চোখ জলে হিংম্রতায়। এখন যেমন
অআলছে।
“আমার মতো ।'
'কুথা পাব ?
“খুঁজবি ॥,
তুমাকে মনিব কত সোনাদানা দিয়া আনল গে11"
'তুকে আমি ছুব সোনাদান| |”
“হাই গে 1”
বরে | তু তবু একটা ছেলের লামিল। কার তরে এখে যাব বল? উ
খালভরার গুর্টির লেগে?”
“ভর লাগে গোঁ, ভয় খাই ।”
“আর শুন
“কি 1
“মিঞা বাছ। কর। তা বাদে তুরে আমি লি পাট্টা চুরি করে দিব।
লিয়ে পালাস তু 1?
“নিষ্যস 1?
“নিষ্যস।
'ভূলবে না?"
«না পাঁতন । তু জানিপ না উ খালভরার কাছে আমি গোলাম । ই জীবনে
মোর মুক্তি লাই। উর়ার ফাদ কেটে তু পালালে তাতেও মোর মনে শাস্তি ।.
তোরে পাটা দিব আমি।
তুমাকে ধরবে ধি ?*
«“মোকে 1 উর সাধ্য কী?
'পাপ হবে ধি তুমার ?
'ন্গায় চ্যান কয়ে লিব। লবপাপগঞ্ধায় হয়ে।
২১২ মহাশ্বেতা! দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
গঙ্গা! ই দেশে নাই"
"তু মোরে লিয়ে যাবি। যাবি না? তুর লেগে আমি পাট্রা চুরি করব, গয়না
ছুব তুর বউরে, তু নিয়ে যাবি?"
পাতনের মনে অসম্ভব ছুরাঁশা। বড়ো লোভ হুচ্ছে তার, পাপপুণ্যের হিসেব
চোখ থেকে মুছে যাচ্ছে--“তবে আর শৌশানে যাই কেন? মিএাা দেখি?
“দেখ গা।'
“মনিব-মা» আজীরিপা্রা ছিড়ে ফেললে, গয়না দিলে, উ সঙ্গনলাল ভূমির
সঙ্গে বিদ্বে দিবে।,
'ভূনি রুগা-ভূগাট1।”
“খেলেমাখলে তুমার মতো হবে গো।'
“দেখ তবে।'
সজনলাল বলল, “গয়ন! তু পাবি কুখ। |”
«মনিব-মা দিবে ।'
“নিয্যস ?'
“নিয্যস।,
তখন সঙ্জনলাল আর. ভৃবনদাসী পাতনকে ঘরে এনে বসাল। বঙ্গল, তবে
আর কথাকি? আজীরপাট্টা1! না থাকলে তু গোলাম থাকিস না। ট্যাকা
দিবে মনিব মা?
“মোর আছে পীচ কুড়ি।,
'পেলি কুথা ?' |
'্যাতক্ষণ য1 দেয় মনিব-মা, সব আমি এখেছি না। তা বায়ে! বছরে পাঁচ
কুড়ি ট্যাকা হয়েছে মোর |,
“সি ট্যাকা লিয়ে করবি কী।'
তুমার সমন্ধীর দেশে যাব। জমি লিব, চাষ খাটব। ধারে লিব জমি।
ধান হতে ধার শুধব।
সজনলাল আর ভূবনদাঁপী এ ওর দিকে চাইল। বলল, 'কবে পাৰি
গয়না 1".
“সি আমি সামলে ছব, বলব তৃষায় সময় হলে |
আজীর ২১৩
'মনিব'মা কী বলে !,
“সি সন্ধানে আছে। সময় হলে কাজ হবে গে।।'
ভুবনদাপী নিঃশ্বাস ফেলল। পাতন যদি আজীর না থাকে, ভূনির অঙ্ে
সোন। দিতে পারে, তাহলে আর আপত্তি কিসের? পাতনের চুলে পাক
(রলেও শরীরে শক্তি আছে, নীরোগ শরীর ওর। চেহারাও ভাল। না,
তুনির সুখ হবে।
ভুবনদাসী বললঃ “লে, টুকচে মদ থা ।”
সজ্জনলাল বলল, 'কারেও বলিস না ধেন ?'
“না, কারে বলি?
*কে কানভাঙাভাঙ্ি করে দিবে |,
“বলব না গো!”
'যাস কুথা?
“গোলক শার বাড়ি। মনিব-মা কাপড় কিনবে।,
“ মনিব মা তোরে লজর ত দেয় না পাতন ?,
না না উ মোরে ছেলাভাবে দেখে আমি উরে ম[ত্তিভাবে দেখি।'
'মাত্তিভাবে দেখলে পরে ভাল । তু ত ভামপান৷ আছিস, বুঝিস না কিছু!"
“বুঝি গোঃ সব বুঝি । দেখ, আমার মনিব-মার রঙ্গে নানা *ওগ ধরে
যেয়েছে।'
“্যাতো খায়, তবু ওগ 1 ত্যাতো৷ ভোগে থাকে, তবু ওগ ?"
“উনার রঙ্গ জরজর। বলে বাচবে নাই গে ।
181 তুরে বলদ পেয়ে বলেছে ।”
ভূবনদাসী বলল, “তা কেন? ওগ স্থখী মান্যকে ধরে না? তাল্পে নবীন
ছাতদার মরল কেনে? কবিরাজমশায়ের বুনটা ? কি দল্মলে শরীল গে!
ক বলে পাঁচ ছেলার মা! কবিরাজমশায় এলে দিলে। তা বাদে নালকি
রে আসপাতালে নে গেল, তবু ত বাচল না হে।'
পাতন বলল "'মনিব-মা! বলে বাচব না পাতন। আমি গেলে তুকে
[খতে কেও লাই | মিত্যু জেনে লি মাহাপাতর্কী করবে বলেছে।,
মেয়ে ঠিক হল, মেয়ের বাপ ম1 রাজি হল। কিন্ত মনিব-ম! আর উপযুদ্ক
রি
টিয পায় না।
২১৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গজ
পাতন বলেঃ “মনিব-ম!, দেরি হলে মিঞাটাকে আর আখথবে নি ঘরে।
সামাজে কথা উঠে যেয়েছে কত।”
“মেয়ের বাপ মা! কী বলে?
'উয়! বলে বিয়ার ফুল বিডাফুল। যে সম্বেয় ফুটবে, সেই সম্ঝে বিয়া।
'তা সামাজ শুনে না।'
“র পাতন, জল নামুক। এখুন শু"ড়ি আটটা বাজতে ঘরে আসে । জল
নামলে তবে তিনি বিলম্ব করে । তিনি ঘরে না অইতে কাজ হাসিল করতে
হবে গেো।।,
“দেখ তুমি ।।
মনিব-মার রোগ এদিকে বেড়ে চলে। কথায় কথায় আজকাল মনিব-মা
মুছণ যায়। এই প্রথম ৫বশাখে মনিব-ম। ঠাকুরথনে বলি পাঠাল না» পুছো
দিল ন। ঘণ্টেশ্বরীর মন্দিরে । মনিবকে বলল, “মোর দেহ ভাল দিশে না গো।
সতীনের ছ্যামা দেখি দিনেরাতে । মোর বুঝি দিন নাই গো তুমাকে
আবার সোমসার করতে হবে |”
মনিব বলেঃ “বাজা বলে এত ওগ তুর। দেখ না, কবিরাজ বলে ছেলা
তুর হবে মাতং। ছেল! হলে তুর বউয়ের ওগ যাবে ।,
মনিব-মা চেঁচিয়ে কাদে । বলে, “আমি বাজা, তু আটকুড়া। কার লেগে
ট্যাক। এনে সিদ্ধুকে ভর? তুর জ্ঞাতগুট্ি ?
মনিব-মার অঙ্গে জাল] উঠে যায়। সে কুয়োতলার যাঁটি গায়ে মাখেঃ হঙ
না হক জল ঢালে মাথায় । বিড়বিড় করে বলেঃ “পাতন রে ! তু বিনা মোর
কেও লাই। আমি বিন! তুর কেও লাই, তুকে আমি দিশ! করে দিব ।ঃ
পাতন মনে ভক্তিভাব এনে মনিব মার মাথা টেপে, পা টেপে। মাথার
বাতাস করে।
এবার খর] বড় বেশি। মানুষ ভেবেছিল জ্রল হবে না। শ্মশানতল৷॥
উৈরবী পঞ্চতপা হোম করল সাতদ্দিন ধরে। গ্রামের মানুষ সেখানে ভিড় কনে
রইল ।
জল চেয়ে চেয়ে মানুষ কত ক্রিয়াকাণ্ডই যে করল । গ্রামের পাঁচজন একত্রে
হয়ে পাচবাড়ির মেয়েকে দিয়ে রাজার দিঘির মর। বুকে কাড়া ভাকাল। বর্ণি
পাঠা রক্ত চৌচির মাটির বুকে নিমেষে শুবল, জল হল না।
আকাশ ধৃমলবর্ণ। রাতেও আকাশে অন্ধকার নামে না। ছৃলঃ জল ব0
নাজ্জীর ২১৫
ছাহাকার উঠে গেল। গ্রামের সবচেয়ে নষ্ট মেয়ে পুন্নশশীকে শ্মশানতলার মা
বললেন, "যা বলি তাই কর.।”
গ্রামের সবাই অমাবন্তার রাতে দোরগোড়ায় দুধে জলে একবাটি রেখে
দোর দিল ।
পুন্নশশী উদ্দোম হয়ে মাথায় বীজধানের সরা নিয়ে দোরে দোরে ঘুরে সেই
হুধ-জল নিলঃ ভাড়ে ঢালল। তারপর রাজারদিঘির বুকে সেই বীজধান আর দুধ
ঈ্ল ঢালল। কাপতে কাপতে পুন্নশশী ফিরে গেল ঘরে।
তারপর জল এল।
আকাশ কালো করে মেঘ এল '্রাষ্টের শেষে । ইদরাজার হাতির শু'ড়ে
এত জনও ছিল ! |
ভরে উঠল রাজারদিঘি। কুয়োন্তে জল, খালখন্দে জল । বৃষ্টি মামলে আর
ধরে না । আর তেমনি কি ঝড়! সরকারি জঙ্গলে শালগাছ মাতামাতি জুড়ল।
গ্রামের ঘরে ঘরে চাল উড়ে গেল, মাশ্ষের বড়ে] ক।
এমনি এক ঝড়-বদলের মাতাঁল রাতে, মনিব-মার সময় হল। মহাপাতকী
করল ও |
«পাতন ! পাতন রে! উঠে বস। মনিব-ম1 গোয়ালঘরে এসে পাতনকে
ডেকে তুলল । বলল “চল মোর সাথে ।
কুখা?
চল্ তু । তুর মনিব ঘরে লাই। আজ আসবে না উ।, পাতনের
ক'নের কাছে মুখ এনেছে মনিব মা । মনিব মার গায়ে আশ্চর্ঘ সব গন্ধ । যেন
অঙ্গ দিয়ে পাকিমদ চু"য়ে পড়ছে ।
'আসবে না ??
“নারে ভাম! তু ত্যাতক্ষণ ঘুমে অচেতন। বেচন বলে গেল মনিব যেরে
আঁজ নবীনের ছেলার ঘরে জুটেছে। সেথা পুরনশশী লাচতেছে, আমোদ খুব ।”
তুমি লিয়েছ সব
“সব রে» সব !?
মনিব মার গায়ে একটা চাদর । চোখ যেন জলছে। মনিব-মা বলল,
'আয় তু!”
'কুথা যাব?
“বলব সব। তুর লেগে মহাপাতকী হলাম! চাবি সরালাম হুপুয়ে। এখন
২)৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
তু কত বথা শুধাস পাতন? যদি এসে পড়ে? তুকে মোকে লীয়ন্তে
কাটবে।
চিল তবে।,
“বেরিয়ে তুকে দিব সব। তুর পাট্টা, গয়না । তু নিয়ে চলে যাবি।
আমি এসে যেমুনকে তেমুন নিদ যাব সব স্থমলে এখে । বলব পাতন চুরি
করেছে গো।,
“আর আমি?
তু যেয়ে জঙ্গলের পথ ধরে পণাবি। পরে যেয়ে তুর সঙ্গে গা চ্যান করব।”
চল তবে।, ৃ
আকাশে কড়াকাবাজ্জ বাজে । এই মেঘ, এই বৃষ্টি এই অন্ধকার, সব যেন
উন্মত্ত ব্যাধ। সকলের লক্ষ্য ছুটি পশু । পশু ছুটি দৌড়োচ্ছে।
দৌড়োতে দৌড়োতে পাতন আর মনিব-ম। গ্রামের সীমানা ছাড়াণ, পৌছে
গেল ছুবোইবাবার মাঠে। বাব! বড়ই জাগ্রত। তার থান একটি পাকুড় গাছের
নিচে। বছরে একদিন তার পুজো হয় ধুমধামে। অন্য সময়ে বেচনের কাকা
লধিন্বর বাবাকে ফুল জল দিয়ে যায়। শিণীভূত দুবোইবাবার অঙ্গধোওয়] ছুধ
জ্বল খেলে সাপেকাটা মর] রুগি বেঁচে ওঠে।
মাঠটি বড় মন্দ জায়গ]।
গ্রামের চারদিক, দশকোণ, চৌমাথা» তেমাথা, দিঘিং খেতঃ সব নানা রকম
দেবদেবীদের হাতে । সে পাইচণ্তী, দণ্ডশ্বরী, ধর্মঠ|কুর, বুঢ়নবাবার বাতাসে
প্রেতিনীর] ম্বত্তি পায় না। এই ছুবোইবাবার মাঠে তার। চৈত্রের দুপুরে,
ভ্যোত্সা-হসিত শারদ নিশীথে, এমনি ধার1 আধাড়ে রাতে নাচে. হাসে, গান
করে, মুখে আগুন নিয়ে ছোটে শেয়ালের রূপ ধরে। মরা গাছের ডাল হয়ে পড়ে
থাকে। মান্য প। দিলে মানুষকে নিয়ে শুন্তে তুলে আছাড় মারে ।
এ মাঠের বুক জোড়। শুধু পাথর আর পাথর। অগণিত বছর ধরে এই
গণ্শিলাগুলির চারপাশে কাকর মাটি জমে জমে সব পাথুরে হয়ে গিয়েছে।
পাথরের মাঝে মাঝে বর্ষ। পড়লে ঘাস জন্মায় । অন্য সময় সব হা হাকরে রুক্ষ
অনুর্বরতার বিফল ক্ষোভে ।
এখানে এসে মনিব-ম1 বললঃ “টুকুন ধীড়! পাতন ! দম নি।'
ছুছজনে মুখোমুখি দ্রাড়াল। মানব-মা হাপাচ্ছে। মনিব-মা! এখন এই
পাখথরগুলোর মতই প্রাগৈতিহাসিক, অন্ধকার রহন্তময় |
আজীর ২১৭
এরাও মোকে পাট্টা ।?
গ1 থেকে চাদর খুলে ফেলল মনিব-মা। ছু'ড়ে ফেলে দিল।
“মোর গয়না'"** পাতনের কথা মুখে থেমে গেল। স্বাঙ্গে গয়না পরেছে
মনিব-মী। বিছ্বাতের ঘন ঘন আলোতে পাতন দেখল নাকে বেশর, গলার
হাস্থলি, হাতে বাশাঃ ওপর হাতে জশম, কোমরে রুপোর গোট। দেখল
মনিব মার গায়ে কাপড ভিজে লেপটে আছে।
'স--ব লিয়ে এসেছি । মনিব মা গেঁজে বের করগ একটা । বড় চেন।
গেঁজে গো । এ গেঁজের খাপে পরতে পরতে মদবেচা টাক1।
“কী করবে?
চলে যাচ্ছে, মন থেকে ভাঁক্তভাব চলে যাচ্ছে। মা্নব-মা এখন আগুন,
উত্তপ্ত কুলকাঠের আংর1। ভক্ত্যা হয়ে সে আগুন ভাক্তভরে মাড়িয়ে যেতে
পারে যাঁদ, তবে পাতনের গা পোড়ে ন!। কিন্ত পাতন ভ]1 পারছে না।
মনে মনে যত চেষ্টা করুকঃ ও শুধু দর্শক হয়ে যাচ্ছে । ভক্ত্যা হতে পাছে
না। অঙ্গ পুড়েযাচ্ছে পাতনের |
“কী করবে?” পাতন আবার জিজ্ঞেস করল।
তুর সাথে যাব ।*
মোর সাথে |,
'মোর মত দলমলে মিঞা তু পাবি কুখা পাতন? মে(র1 চলে যাব, যেয়ে
যেথা হয় থাকব চল পাতন, জঙ্গল পেরায়ে আরো পথ, ত1 বাদে বাসরাস্ত'
তা বাদে টিসনঃ টেনে চেপে যাব মোর] ।,
“দাও ।'
«কী 7
“মোর পান্টা। মোর আজীরিপাট্টা ।”
'পান্ট্া লাই পাতন।'
“কী বল?
পা্টালাই। আমি সব দেখেছি হাচুড়ে নামিয়ে, হাটকেছি কত। পাটা
থকে কখুনে1? কবেকার কাগজ । ই দেখ, তু বিশ্বাস যাবি না ই গামছার
বান্ধ! ছিল। লিয়ে এসেছি, দেখ ত সব ছি গুড়া ধুপাটা রে!
“মিছ কথ! ! তুমার [সন্ধকুকে মোরে মারা করাবে বলে এখে এসেছ,
তুমি
৯৪
২১৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
'পাতনরে | মোর কথা গুন্ 1"
'মহাপাতকী করলে যদি তবে মোর পাট্রা !"
পাতন কথা শেষ না করতে মনিব ম! দলমলে যৌবন নিয়ে ওক জড়িয়ে
ধরে। কিন্তু পাতনের বুকে এখন শত শত ক্রুদ্ধ মাতঙ্গের হিং আক্রোশ।
সে ঠেলে ফেলে দিতে চাঁয় মনিব মাকে । মনিব-ম। ওকে জড়িয়ে ধরে ঠেলতে
থাকে। তার শরীরেও এখন অমিত শক্তি ।
পাতন ওকে ছাড়িয়ে দেয় গলার ছুপাশে টিপে, ঝাঁকুনি দিযে। €স
ঝাকুনিতে মনিব-মার গলাটা পেছন দিকে উলটে যায়, ঘাড় ভেঙে মাথা ঝুলে
পড়ে পাশে । পাতন চেয়ে দেখে না। অমনিব-মাকে ফেলে দেয় ও।
পাতন ফিরতি পথে দৌড়োয়। ছাই, তার আজীব্রিপা্টা চাই। তারপর
ও ফিরে আসবে ছুবোইবাবার মাঠে । গেঁজেটা নেবে কেড়ে। তারপর ওই
মহাপাতকী মনিব-মাকে ফেলে রেখে পাতন পালাবে ।
মুক্ত মানুষের জন্তে পৃথিবীটা পড়ে আছে। লে পৃথিবীতে অনেক অনা-
বাদী শশ্ভূমি, অনেক মেয়ে দলমলে যৌবন নির়ে পাতনের, শুধু পাতনের জগ্ে
অপেক্ষা করছে । সে পৃথিবীতে ওকে পৌছোতেই হবে।
পুন্নশশীর নাচ তেমন জমেনি। মাতঙ্গ শুড়ি তই ঘরে ফিরে এসেছিল
তাড়াতাড়ি । সিন্ধুকভাওা দেখে ও শোরগোল তুলে মানুষ ডেকেছিল। ওর
স্বরে তখন অনেক মাহুয।
প[তনকে ওরা ধরে ফেলল। আজীরিপাট্রার কথ! শুনে মাতঙ্গ বুক চাপড়ে
কেদে উঠন।
কাদল ছুবোইবাবার মাঠে প্রাড়িয়ে। মনিব-মার মৃতদেহেষ সামনে
দাড়িয়ে।
মনিব-ম! মিথ্যা বলেনি । সে পার! ছিল না, কোথাও ছিল না। পা্টার
অবশেষ ওই জীর্ণ ধুলোটুকু একটা গামছায় মোড়া ছিল। মাতঙ্গ নিদ্ধেও নে
পাট্ট। দেখেনি। তার বাবাও দেখেনি। ছু-পুরুষ আগেই তৃঙগট কাগজ
কালের প্রকোপে জীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
পাতনকে ওয়া হাতকড়। দিরে নিয়ে গেল খানায় ।
স্তনদায়িনী
মাসিপিসি বনরগা-বাসী বনের মধ্যে ঘর ।
কখনো মাপি বলল না৷ যে, খই মোয়াটা ধর।
যশোদার মাসি কথনো৷ আদর করত» না অনাদর* তা যশোঁদার মনে পড়ে
না। জন্মথেকেই সে যেন কাঙালীচরণের বউ, হাতে গুণে ছযেস্তে-মরস্তে
কুড়িট! ছেলেমেয়ের মা । মনেই পড়ে না ষশোদার, কবে তার গর্ভে সন্তান
ছিল না, মাথা ঘুরত না সকালে, কাঙালীর শরীর কুপি-জালা আধারে তার
শরীরকে ভূ-তাত্বিকেব মতো ড্রিল করত ন|। মাতৃত্ব সে সইতে পারে, কি পারে
না, সে-হিসেব কোনোদিন খতিয়ে দেখতে সময় পায়নি । নিরস্তর মাতৃত্বই ছিল
তার বাচবার ও অসংখ্য জীবের সংসারকে ৰাচাবার উপায়। যশোদ1 পেশাস়্
জননী, প্রফেশ্যনাল মাদার । বাবুদের বাড়ির বউ-ঝির মতো এযামেচার মা ছিল
না যশোদা | এ জীবন পেশাদারদের একচেটিয়া । এযামেচ।র ভিখিরি-পকেটমার-
গণিক! এ শহরে পাত পায় না, এ রাজ্যে ৷ এমন কি ফুটপাথ ও পথের নেড়িকুত্ত॥
ডাস্টবিনলোভী কাক--তারাঁও নবাগত এযামেচাদের ঠাই দেয় না॥ যশোদ।
মাতৃত্বকে পেশ! হিসেবে নিয়েছিল ।
সে জন্যে দায়ী হালদারবাবুদের নতুন জামাইয়ের স্ট,ভিবেকার গাঁড়ি এবং
বাবু-বাড়ির ছোট ছেলের ভরছুপুরে চালক হবার আকাঙ্ষা!। আকাঙ্ষাটি
ছেলেটির মনে হঠাৎ জেগেছিল। হঠাৎ্”হ্ঠাৎ ছেলেটির মনে ও শরাঁরে যেসব
বাতিক চাগাত* তা তৎক্ষণাৎ পরিতৃপ্ত করতে না পারলে ছেলেটি ক্ষান্ত হতো!
ন।। হ্ঠাৎহঠাৎ বাতিকগুলি ওর দুপুরের নৈঃসঙ্গ্যেই চাগাত এবং বোগদাদের
খলিফার মতো! ওকে বান্দা খাটাত। এ পর্যন্ত সেকারণে সে যা-যা! করেছেঃ
তাতে করে যশোদাকে মাতৃত্বের পেশ! নিতে হয়নি ।
এক ছুপুকে হঠাৎ কামের তাড়নায় ছেলেটি তাদের রাধুনিকে আক্রমণ
করে ও র"াধুনিটির পেটে তখন ভরা! ভাতঃ চোকাই মুড়ো ও কচুশাকের ভার
ছিল বলে, আলম্মে শরীর মন্থর ছিল বলে* রণাধুনিটি, 'লঃ, কি করবি কর্?
লে চিতিয়ে পড়ে থাকে । অতঃপর. ছেলোটির ঘাড় থেকে তোগদানী তু
২২, মহাশ্থেতা দেবীর ভরষ্ঠ গল্প
নামে এবং সেস্ক্যারেও কইও না মাসি” বলে সাহৃশোচনা অশ্রু ফেলে।
রপাধুনিটি তাকে, 'ইরাতে আর কওন-বলনের আছে কি? বলে সত
ঘুমোতে যায়। দে কোনোদিনই কিছু বলে দিত না। কেন না তার শরীর
ছেলেটিকে আকর্ষণ করেছে জেনে সে যথেষ্ট গবিত হয়েছিল । কিন্তু চোরের
মন বৌচকার দিকে । ছেলেটি পাতে অসংগত সংখ্যার মাছ ও ভাজ
দেখে মনে-মনে প্রমাদ গণে। মনে করে, রাঁধুনি তাকে ফাসালে সে কেচ্ছায
পডবে। অতএব আরেক দুপুরে সে বোগদাদী জিহনের তাড়সে মায়ের
আথটি চুরি করে, সেটি রশাধুনির বালিশের ওয়াড়ে ঢোকায় এবং শোর তুলে
ঝাধুনিকে তাড়িয়ে ছাড়ে। আরেক দুপুরে সে বাবার ঘর থেকে রেডিও তুলে
নিয়ে বেচে দিয়েছিল। দুপুরের সঙ্গে ছেলেটির এহেন আচরণের সংগতি খু'ছে
পাওয়া তার মা-বাপের পক্ষেও মুশকিল, কেন না! তার পিতা পণ্রিকা দেখে
হরিসালের হালদারদের এঁতিহমতে সস্তানদের গভীর নিশীথে স্থষ্টি করেছিলেন ।
বস্তত এ বাড়িতে ফটক পেরোলেই ষোড়শ শতক । পঞ্জিকা ও স্ত্রী-গ্রহণ এ
বাড়িতে আজে! আচরিত। কিন্তু এসব কথা বাই-লেন মাত্র। এ সকল
ছুপুরে-বাতিকের ছন্যে যশোদার মাতৃত্ব পেশা হয়নি।
কোনো এক দুপুরে কাঙালীচরণ দোকানের মালিককে দোকানে বসিয়ে
কৌচার আড়ালে চারটি চোরাই সিঙাড়া জিলিপি নিয়ে ঘরে ফিরছিল। প্রত্যহুই
ফেরে। যশোদা ও সে ভাত খায়। ছানাপোন। তিনটি বিকেলে বাদি
সিঙাড়া ও জিলিপি খায়। কাঙালীচরণ ময়বার দোকানে তাড়ু নাড়ে ও
সিংহবাহিনীর মন্ৰিরের যাত্রীদের মধ্যে যারা “হারায়ে মারায়ে কাশ্ঠপ গোত্র'
হয়নি সে সকল জাত্যভিমানী বামুনদের “দদ্ত্রাহ্মণের প্রস্তুত লুচি তরকারি,
খাওয়ায় লুচি ভেজে । প্রত্যহই সে ময়দাটা-আশট] সরায় ও সংসারে স্থসার
করে। ছুপুর নাগাদ পেটে ভাত পডলে যশোদার প্রতি তার বাৎসল্যভাব
জাগে এবং যশোদার দ্কীত স্তন নিয়ে নাড়াচাডা করে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
দুপুর নাগাদ ঘরে ফিরতে ফিরতে কাঙালীচরণ অদূর সুখের কথ। ভাবছিল
এবং স্্ীর হৃবতুর্লি স্তনের কথ ভেবে সে শ্ব্গহ্থথ পাচ্ছিল । কচিমেয়ে বিয়ে
করে তাকে কম খাটিয়ে প্রচুর খাওয়ালে আখেরে দুপুরে ব্ুখ মেলে একথা
চিন্তা করে তার নিজেকে দুরদর্শাঁ পুরুষবাচ্চা! মনে হুচ্ছিল। এহেন সময়ে বাবুদের
ছেলে স্ট,ডিবেকার-সমেত ঘ্যাক করে কাঙালীচরণকে বাচিয়ে তার পায়ের
পাত] ও গোড়ালির গোছ ছুটি চাপ। দিল।
ভমদারিনী ২২১
নিমেষে লোক জমল। নেহাত বাঁড়ির সামনে দুর্খটনা, নইলে 'রক্তদর্শন
করে ছেড়ে দিতুম' বলে নবীন পা চেঁচাতে লাগল। শক্তি গ্বরূপিণী মায়ের
পাও সে, দুপুরে রৌদ্্ররসে তেতে থাকে । নবীনের গর্জনে হালদাররা যে-যে
বাড়িতে ছিল॥ সবাই বেরুল। হালদারকর্তা সগর্জনে “হালা আবুইদা ধাড়,
তুমি ব্রহ্মহত্য। করবায়? বলে ছেলেকে পেটাতে থাকলেন। ছোট জামাই
তখন হ্বীয় স্ট.ডিবেকার সামান্ত আহত দেখে স্বস্তিতে হাপ ছাড়লেন এবং এই
পয়সায় ধনী, কালচারে-প।ঠ1 শ্বশুরগোীর চেয়ে তিনি যে শ্রেষ্ঠতর মানুষ, ত।
প্রমাণের জন্ত মিছিন আদ্দির পাঞ্জাবির মতে! ফিনফিনে গলায় বললেন, “লোকট।
কি মারা যাবে? হাসপাতালে নিতে হবে না?”--কাঙালীর মনিবও ভিড়ের
মধ্যে ছিল এবং পথে বিক্ষিপ্ত সিঙাড়। জ্িপিপি দেখে সে বলতে গিয়েছিল,
ছিঃ ঠাকুর! তোমার এই কাজ ?-এখন সে জিভ আগলাল এবং বলল:
'তাই করুন সার ।”--ছোট জামাই ও হালবারকর্ডা কাডীচরণকে শত্বর ছাস-
পাতালে নিলেন। কর্তীর মনে আন্তরিক ছুঃখ হল। ঘ্িতীয় যুদ্ধের সময়ে, যখন
ভিনি ছাট লোহা বেচে কিনে মিত্রশক্তির ফ্যাসি-্বিরোধী সংগ্রামে সহায়ত!
করছেন--তখন কাঙালীচরণ কিশোর মাত্র। বামুন বলে তার ভক্তির রক্তের
পোকা ও সেই কারণে ভোরে চাটুজ্জেবাবুকে না পেলে ছেলের বয়সী
কা্ডালীকে প্রণাম করে তার কাট পায়ের ধুলো! জিভে ঠেকাতেন। কাঙালী
ও যশোদ। তার বাড়িতে পালেপার্বণে যায়-আসে এবং বউমারা পোয়াতি হলে
যশোদাকে কাপড়-সি'ছুর পাঠানো হয়। এখন তিনি কাগালীকে বললেন
“কাঙালী ! ভাইব নাবাপ! আমি থাকতে তোমার কষ্ট অইব ন11,- এখনি
তীর মনে হুল, কাঙালীর পায়ের পাতা দুটি কিম! হয়ে গেছে, ঠেক1 পড়লে
আর পায়ের ধুলে। নিতে পারবেন না। ভেবে বড় ছুঃখ হল তার, এবং “কি
করলে হারামজাদায়। বলে তিনি কেঁদে ফেললেন। হাসপাতালের ডাক্তারকে
বললেন, “সবকিছু করেন | টাকার লিগ্য। ভাইব্যেন ন1।'
কিন্তু ডাক্তারের! পায়ের পাতা! ফিরে দিতে পারলেন ন1। খু'তে| বামূন হয়ে
কাঙালী ফিরে এল। ক্রাচ ছুটি হালদারকর্তা করিয়ে দিলেন। ক্রাচ বগলে
কাঙালী যেদিন ঘরে ফিরল, সেদিনই সে জানল, হালদার-বাড়ি থেকে প্রত্যহ
বশোদার জন্ত সিধা এসেছে । নবীন পাণ্ডা পাগ্ডা-কুলে সেজো। খায়ের
ভোগের আড়াই আনার অংশীদার এবং সেই ছুঃখে সে নিচু হয়ে থাকত।
গিনেমায় রামক্কফকে কয়েকবার দেখার পর সে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই
$
২২২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
যতে দেবীকে “তুই, বেটি, পাগলি” বলে ও শাক্ত-মতে কারণবারি ঘার1 চেতনা
নিধিক্ত করে রাখে। সে কাঙালীকে বলল» “তোর জন্তে বেটির পায়ে ফুল
চড়িয়েছিলুম খেপী বললে, “কাালীর ঘরে আমার অংশ আছে, তার
বরাতে ও বেঁচে উঠবে ।” কাঙালী একথা যশোদাকে বলতে গিয়ে বলল,
গ্যা? আমি যখন ছিলাম না, তুই ওই নবনেটার সঙ্গে লটর-পটর কচ্ছিলি ?
যশোদা তখনি পৃথিবীর ছুই গোলার্ধের মাঝে কাঙালীর সন্দেহী মাথাটি চেপে
ধরল ও বলল, “রোজ বাবুদের ছুটে! ঝি এথেনে শুত আমাকে পাহার] দিতে ।
নবনেকফে আমি আমল দিই? আমি না তোমার সতী স্ত্রী?
বন্য,ত হালদার বাঁডিতে গিয়েও কাঙালী তার প্রজ্ঞলস্ত সতীত্বমহিমার বহু
কথা শুনল। যশোদ। মায়ের মন্দিরে হত্যা দিয়েছে, সথবচনীর ব্রত করেছে,
চেতল! গিয়ে সিদ্ধবাবার চরণ ধরেছে । অবশেষে সিংহবাহিনী স্প্রে ধাইয়ের
বেশে বগলে ব্যাগ নিয়ে এসে তাকে বলেছেনঃ “ভাবিসনি। তোর সোয়ামি
ফিরে আসবে ।” কাঙালী কথ! শুনে বিশেষ অভিভূত হুল। হাজ্দারকর্তা
বললেন, “বু'ঝলা কালী | হালার অবিশ্বাপীরা কয়, মায়ে ন্বপ্ন দিব, তা ধাই
সাইজ! ক্যান? আমি কই, তিনি স্থটি করেন ম| অইয়া, ধাত্রী অইয়া
পালন করে।,
এরপর কাগালী বলল, “বাবু! যয়রার দোকানে কাজ করব কি করে
আর? কেরাচ নিয়ে তো বসে তাড়ু নাড়তে পারব না। আপনি ভগবান।
কৃত লোককে কতভ্ভাবে অন্ন দিচ্ছেন |! আমি ভিক্কে চাইনি । এট্রা কাজের
ব্যবস্থা করে দিন।'
হালদারবাবু বললেন, “হ কাঙালি! তোমার লিগ্য। জায়গা দেইখ্যা
থুইছি। আমার বারিন্দায় ছাউনি দিয়া এট্টা দোকান কইরা দিমু। সামনে
সিংহবাহিনী। যাত্রী আসে, যাত্রী যায়। তুমি মুড়ি-মুডকি, চিড়া
বাতাসার দোকান দাও। অহন বারিতে 'বিয়া লাগছে । আমার সঞ্ধম
পুত্র, হেই আবাইগার বিশ্বা। ষদ্দিন না দোকান অয় তদ্দিন সিধা
যাইবে,
একথ। শুনে কা্ালীর মন বর্ষ। সমাগমে বাছুলে পোকার মত উজ্ডীন হুল
ও ঘরে ফিরে সে যশোদাকে বলল, “সেই যে কালিদাসের শোলোক আছে,
নেই তাই খাচ্ছ, থাকলে কোথায় পেতে? -_আমার কপালে তাই হল রে!
শীবু ব্াছে, ছেলেয় বিয়ে মিটলে ত্বকে দোকান করে দেবে । বছ্িন না দিচ্ছে,
গ্ভনদাযিনী ২২৩
তদ্দিন সিধে পাঠাবে । ঠ্যাং থাকলে কি এরকমটা হতো? সবই মায়ের
ইচ্ছে রে!”
ক্রাচ খটখটিয়ে কাঙালী স্থসংশাদটি আপামরকে বিতরণ করল। ফলে
তার প্রাক্তন মনব নবীন পাণ্ডা, ফুলদোকানের কেই মহাস্তিঃ মায়ের বাধা
চ.কী উল্ল/স* সকলে বলল, “আহা! কলি বললে তো হয় না! মায়ের
তল্লাটে পাপের পতন, পুণ্যের জয়, এ হতেই হচ্ছে । নইলে কাঙালীর পা
খোয়া যাবে কেন? আর হালদারকত্ত। বা বামুনের মন্তির ভয়ে এত কথা
স্বীকার যাবে কেন? সবচে বড় কথা, যশোদাকে বা মা ধাই বেশে দেখ! দেবে
কেন? সবই মায়ের ইচ্ছে ।+
এ ঘোর কলিতে পাচের দশকে কাঙালীচরণ পতিতৃণ্তকে ঘিরে দেড়শ!
বছর আগে হ্বপ্লাদেশে প্রা্থ। দেবী সিংহবাহিনীর ইচ্ছাসকল এভাবে পাক খাচ্ছে
ত1 দেখে সকলে যথোচিত বিন্মিত হয়। হাঁলদারকর্তার হৃদ্-পরিবর্তন, সেও
মায়ের ইচ্ছে। হালদ।রকর্তা পাত্র না €দখে দয়া করেন না। তিনি ম্বাধীন
ভারতের বালিন্দা, যে ভারত মাহুষে-মান্থষে, রাজো-রাজ্যো” ভষায়-ভাষায়,
রাট়ী-বারেন্দ্র-বৈদিকে, উদ্তররাটী কাযস্থ ও দক্ষিণরাটী কায়স্থে, কাপ-কুলীনে
গ্রভেদ করে ন1। কিন্ত তিনি পয়স। করেছেন ব্রিটিশ আমলে যখন ডিভাইড আযাণ্ড
রুল ছিল পলিসি । হালদারকর্তার মানসিকতা তখনই গঠিত হয়ে গেছে । ফলে
তিনি পাঞ্জাবি-উড়িয়া-বিহারি-গুজঃ 1টি-মারঠি*মুসলমান, কারুক্কে বিশ্বাস করেন
ন। এবং ছুর্গত বিহারি শিশু বা অনাহারে কাতর উীড়য়! ভিখারি দেখলে তার
বিয়ালিশ ইঞ্চি গোপাল গেগ্রির নিচে অবস্থিত, চবিতে স্থরক্ষিত হৃৎপিণ্ড
করুনার ঘামাচি আদপে চুলকোয় না। তিনি হরিসালের স্থসস্তান। ফলে
পশ্চিমবঙের মাছি দেখলেও তিনি “আঃ! ছ্ভাশের মাছি আছিল বিষ্টপুষ্--
ঘটর গ্ভাশে হকলডি চিমড়া-চামসা” বলে থাকেন। সেই হালদারকতা গাঙ্গেয
কাঙালীচরণকে কেন্দ্র করে করুণাঘন হচ্ছেন, এ দেখে মন্দিরের চারিদিকে
সকলেই বিশ্মিত হয় এবং কিছুদিন ধরে লোকের মুখে-মুখে এই কথাই ফেরে।
হালদারকর্তা এমন ঘোর দেশগ্রেমী যে নাতি, ভাইপো» ভাগ্নের! দেশনেতাদের:
জীবনী পাঠ্যপুস্তকে পড়লে কর্মচারীদের বলেনঃ “হঃ| ঢাকার পোলা,
মইমনসিংহের পোলাঃ যশুইরা পোলা» ইয়াগর জীবনী পড়ায় ক্যান?
হরিলাইল| অইল দর্ধীচির হাড়ে তৈয়ার । ব্যাদ উপনিষদ হুরিসাইলার লিখা
এ্যাও একদিন গ্রকাশ পাইব ।' তীর কর্মচাবীন্ব। তাকে এখন বলে, “আপনার
২২৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গলপ
চেইন্জ অফ হার্ট হইত্যাছে, ঘটির লিগ্যা আপনার এই দয়া, ইয়ার পাছে
ত্যাখবেন ঈশ্বরের কুন্ বা পার্পাস আছে ।* কর্তা একথায় হ্লার্দিত হন এবং
'ত্রাক্মণের কি ঘটি-বাঙাল অয়? গলায় উপধীত থাকলে হ্যায় পাইখানায় বইয়া
রইলেও মাইন্য দিতে অইব' বলে উচ্চ হাস্য করেন।
চতুদ্দিকে এভাবে মায়ের ইচ্ছার প্রভাবে করুণা-মায়ামমতা-দয়ার স্থবাতাস
বইতে থাকে এবং নবীন পাণ্ডা কয়েকদিন ধরে দিংহবাহিনীর কথা! যতবারই
ভাবতে যায়, যশোদার উত্ত,ত্তনা, গুরুনিতত্বা শরীর তার চোখে ভাসে এবং
ম] যশোদাকে যেমন ধাই সেজে স্বপ্ন দিলেন তাঁকে যশোদা সেঙ্জে স্বপ্ন দিচ্ছেন
কিন1 সেকথ! ভেবে তার শরীরে মন্দ উত্তেজনা জাগে । আট-আনার পা
তাকে বলেঃ “মেয়েছেলের এ রোগ হলে বলে প্যাদ রোগ বেটাছেলের হলে
বলে ম্যাদ রোগ। তুই পেচ্ছাপ করার সময়ে কানে শ্বেত অপরাজিতার
শেকড় বাদ্।?
একথা নবীনের মনে নেয় না। একদিন সে কাঙালীকে বলে, “মায়ের
ছেলে শক্তি নিয়ে র্যালা করব না। তবে একটা বুদ্ধি মাথায় এয়েচে। বোষ্টম
ভাব নিয়ে র্যাল! করতে বাধা! নেই | তোকে বলি, স্বপ্নে গোপাল পা একখান: |
আঁমার পিসি শ্রীথেত্তর থেকে গোপাল এনিছিল পাতরের, সেটা! তোকে দিই।
গপ্নু পেইছিস বলে পচার দে । দেকবি ছুদিনে রমরমা হবে, ঝমঝমিয়ে পয়সা
পড়বে । পছসার জন্তে শুরু কর্, পরে মনে গোঁপাল-ভাব আসবে ।?
কাঙালী বলে, “ছি দাদা! ঠাকুর-দেবতা নিয়ে তামাশা করতে আছে ?”
নবীন তাকে, “তবে মর্গা যা! বলে তাড়া দেয়। পরে দেখা যায়ঃ
ণবীনের কথা শুনলে কাঙালী ভাল করত। কেন না, হালদারকর্তা হঠাৎ
একদিন হার্টফেল করে মরে যান। কাঙালী ও যশোদার মাথায় শেক্ষপীরের
ওয়েল্কিন ভেঙে পড়ে।
১২
কাঙালীকে পথে ব'সফে যান হালদারকর্ডা। কাঙালীকে ঘিরে ভায়া
মিডিয়া! হালদারকর্তী দিংহবাহুনীর যেসব ইচ্ছা প্রকাশ পাচ্ছিল, তা প্রাক-ভোট
রাজনীতিক দল-প্রদত্ব গ্রজলস্ত প্রতিশ্রুতির মতো! শৃদ্কে মিলায় ও নিক্ুদ্দেশ-যাতরায়
নায়িকার মতো রহম্যজালের মায়ায় অদেখা হয়। কাঙ্ালী ও যশোধার প্র্ভিন
স্ভনধাযিনী ২২৫
ত্বপ্র-ফাম্সটিতে যুরোপীয় ডাইনির বডিকিন ফুটকে যার এবং স্বামী-স্ত্রী আতাত্তব্বে
পড়ে। ঘরে গোপাল, নেপাল ও রাধারানী খাবার তরে আখখুটে বায়ন ধরে
ও মায়ের মুখ খার। শিশুদের এই “ওদনের তরে” কান্নাকাটি খুবই ম্বাভাবিক।
কাঙালীচরণের চরণ খোয়া যাবার পর থেকে ওর প্রত্যহ হালদার-বাড়ির সিধায়
ভালমন্দ খেয়েছে । কাঙালীও "ভাতের তরে কাতরঃ হয় এবং মনে গোপালস্ভাব
জাগিয়ে যশোদার বুকে মুখ খুঁশতে গিয়ে ধমক খায়। যশোদা একেবারে
ভারতীয় রমণী, যে-রমণীর যুক্তি-বুদ্ধি-বিচারহীন শ্বামীভক্তি ও সম্তানপ্রেমের
কথা, অন্বাভাৰিক ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা, সতী-সাবিত্রীসীতা থেকে শুরু
করে নিরূপা রায় ও চীদ ওসমানি পর্যন্ত সকল ভারতীয় নারী জনমানসে জাগিয়ে
রেখেছেন। এহেন স্ত্রীৌলোককে দেখেই সংসারের ন্তালা-মাকৃডার বোঝে,
ভারতে সেই এঁতিহা প্রবহমান--বোঝে এদের কথ! মনে রেখেই এই সব
'আগ্তবাক্য রচিত হয়েছে--
স্রীলোকের জান যেন কচ্ছপের প্রায়
বুক ফাটে ত মুখ ফোটে না--
পুড়বে নারী উড়বে ছাই
তবে নারীর গুণ গাই-
বস্তত, বত'মান দুরবস্থার জন্য যশোদার একবারও শ্বামীকে ছুষতে ইচ্ছে
যায় না। শিশুদের তরে যেমন কাঙালীর তরেও তেমনি মমতা! তার বুকে
উছলে ওঠে। পৃথিবী হয়ে গিয়ে ফলে-শস্তে অক্ষম শ্বামী ও নাবালক সন্তানদের
ক্ষুধা মিটাতে ইচ্ছা! যায়। যশোঁদার এই শ্বামীর প্রতি বসল ভাবটির কথা
জ্ঞানী-মুনির1 লিখে যাননি । তীরা প্ররুতি ও পুরুষ এইভাবে নারী-পুরুষকে
ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্ত সে তারা করেছেন আছি যুগে--যখন অন্ত দেশ
থেকে তার] এই পেনিনস্থলায় প্রবেশ করলেন । ভারতের মাটির গুণ এমনি,
যে এখানে রমণীর! সবাই জননী হয়ে যায় এবং পুরুষরা! সবাই গোপাল-ভাবে
আপ্র,ত থাকে ৷ সকল পুরুষই গোপাল ও সকল রযণী নন্দরানী, এ ভাবটি
ধারা অস্বীকার করে নানাক্প “ইটান্নাল শী"--'মোনালিসা--“লা পাসিওনারিয়া'
সলিমন ভ্ভ ব্যোভোআর+-- ইত্যাদি পছন্দমতো কারেপ্ট পোস্টাস্স পুরনো
পোস্টারের ওপরে সাটতে চান ও মেয়েদের সে ভাবে দেখতে চান, তারাও এ
ভারতের ছানাপোন!। তাই দেখা যায় শিক্ষিত বাবুদের এ সকল অভীগ্সা
বাইরের মেয়েছেলেদের জন্তে। ঘরে ঢুকলে তীর! বিপ্লবিনীদের মূখে ও
২২৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গজ
ব্যবহারে নন্দয়ানীকেই চান । প্রসেসটি খুবই জটিল । এটি বুঝেছিলেন
বলে শরৎচন্দ্রের নায়িকার! নায়কদের সতত চারটি বেশি করে ভাত খাইয়ে
দিতেন। শরৎচন্দ্রের এবং অন্তান্ত অনুরূপ লেখকদের লেখার আপাতসরলত?
জাসলে খুব জটিল এবং সন্ধেবেলা শাস্তমনে বেলের পানা খেয়ে চিন্তা করার
কথা। পশ্চিমবঙ্গে ধরাই লেখাপড়া ও চিন্তাশীলতার কারবার করেন, তীদের
জীবনে আমাশার প্রভাব অত্যন্ত বেশি এবং সে কারণে বেল ফলটিতে তাদের
সমধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বেলফল-থানকুনি-বাসকম্পাতাকে সমধিক
গুরুত্ব দিই না বলে আমর! যে কত কি হারাচ্ছি তা নিজের! বুঝি না।
ষা হোক, যশোদার জীবনকথা! বলতে বসে বারংবার বাই-লেনে ঢোকার
অভ্যেস ঠিক নয় । পাঠকের ধৈর্য কিছু কলকাতার পথঘাটের ফাটল নয় যে
দশকে-দশকে বেড়ে চলবে । আসল কথা হলঃ যশোদ1 সমধিক ফাঁপরে গড়ল।
কর্তার শ্রাদ্ধ চলার কালে তার] লুসেপুসে খেল বটে, কিন্তু সব চুকেবুকে গেলে
যশোধা ক্ষাধারানীকে বুকে ধরে ও-বাঁড়িতে গেল। বাসনা, গিন্সিকে বলে-কয়ে
তার নিরিমিষ হেসেলে রান্নার কাজ চেয়ে নেবে।
গিষ্লির বুকে কর্তার শোক বেজেছিল খুব | কিন্তু উকিলবাবু জানিয়ে
গেছেন, কর্তা এই বাড়ির মালিকানা, চালের আড়তে ম্বত্ব তাকেই দিয়ে
গেছেন । তিনি সেই ৰলে বুক বেঁধে আবার সংসার-সাআাজ্যের হাল ধবেছেন।
মাছটা-মুড়োট! বলে বড় কষ্ট হয়েছিল। এখন দেখছেন উৎকৃষ্ট গাওয়া ঘি,
গাঙ্গুরামের দই-সদ্দেশঃ ঘন ক্ষীর ও মর্তমান কল। খেয়েও কোনোমতে শরীরটা
টিকিয়ে রাখা চলে। গিম্সি জলচৌকি আলো করে বসে আছেন। কোলে এক
ছ-মেসে ছেলে, গিন্সির নাতি । এ পর্ধস্ত ছয় ছেলের বিয়ে হয়েছে ও পপ্রিকায়
যেহেতু প্রায় মাসেই স্ত্ীগ্রহণ অনুমোদিত, সেহেতু গিঙ্লির বাড়িতে একতলায়
সার-দার. অাতুড়ঘর প্রায়শ ফাক যায় না। লেডি ভাক্তার ও সরলা ধই এ
বাড়ি ছাড়া হয় না। গিষ্লির মেয়ে ছয়টি। তারাও দেড় বছরে পোয়াতি ।
তাই কাথা-কানি-ঝিচুক-বোতল-রবারক্লথ-বেবি জন্সন্ পাউডার" ানের
গামলার এপিডেমিক লেগেই থাকে।
গিক্লিনাতিকে ছুধ থাওয়াবার চেষ্টায় জেরবার হচ্ছেন ও যশোদাকে দেখে
স্বস্তি পেয়ে যেন বললেন মা আমার ভগবান হইয়া আসছ! যারে দুধ দাঁও
যা, পাধরি। মায়ের অন্গুখ - তা এমুন পোল! যে বুতল মুখে ধরে না। যশোদ!
খনি ছেনেকে ছুধ দিয়ে শাস্ত করল। গিল্লির সনির্বদ্ধ অনুরোধে যশোদা রাত
উনদায়িণী ২২৭,
ন-ট1 অবধি ওবাড়িতে থাকল এবং গিঙ্লির নাতিকে দফায় দফার ছুধ দিল। তার,
লংসারের জন্যে র'ধুনি বামনী ভাত-তরকারি গামলা ভরে দিয়ে এল । ছেলেকে
ছুধ দিতে দিতেই যশোঁদা বলল, 'মা ! কর্তা তো কত কথাই বলেছিলেন। তিনি
নেই তাই সেকথা আর ভাবি না। কিন্ত মা! তোমার বামুন-ছেলের পা
ছুখানা নেই। আমার জন্ত ভাবি না। কিন্তু সোর়ামি-ছেলের কথা ভেৰে
বলছি যা হয় এটা! কাজ দাও। নর তোমার সোমসারে রানা কাজ
দিলে?
“দেখি মা] চিস্তাকইর! দেৰি।” গিক্সি কর্তার মতো বামুনশভজ। নন।
ার ছেলের দুপুরে বাই চাগানে। দোঁষে কা্াপীর পা গেছে একথ। তিনি
পুরো মানেন না। নিয়তি কাঙালীর, নইলে খটখটে রোদে ফিকফিক করে
হেসে-হেসে পথ ধরে সে যাচ্ছিল কেন? তিনি মুগ্ধ ঈর্ষায় যশোদার ম্যামাল
প্রোজেকশান দেখেন ও বলেন, “কামধেন্গ কইরা! তোমায় পাঠাই ছিল
বিধাতা। বাট টানলেই ছুধ | আমার ঘরে যেগুলা আনছি তাদের এযার
দিকিভাগ ছুধ-অ বুঠায় নাই |”
যশোদা বলেঃ €স আর বলতে মা! গোপাল ছেড়ে দিল? বয়স হুল তিন
বছর | এটা তখনো পেটে আসেনি । তাতেও দুধ যেন বান ডাকত।
কোথেকে আসে মা? খাওয়া নেই, মাখ! নেই 1,
একথা নিয়ে রাতে মেয়ে মহলে প্রচুর কথা হয় এবং রাতে ব্যাটাছেলেরাও
একথা শোনেন | মেজ ছেলে, ধার স্ত্রী অসুস্থ এবং ধার ছেলে যশোদার ছুধ
খেল, তিনি সবিশেষ স্ত্ৈ। অন্য ভায়েদের সঙ্গে তার তফাত হল, ভাইর!
পজি দেখে হৃদিন পেলেই সপ্রেম বা অপ্রেমে বা বিরক্ত মনে বা কারবারে খুণ-
চটের কথা ভাবতে ভাবতে সন্তান স্জন করেন। মেজ ছেলে একই
ক্রিকোয়েনসিতে স্ত্রীকে গর্ভবতী করেন, কিন্ত তার পেছনে থাকে স্থগভীর
প্রেম । স্ত্রী বারবার গর্ভবভী হন, সে ভগবানের হাত। কিন্ত সেই সঙ্গে
সী যাতে হন্দরী থাকেন, সেজগেও মেজছেলে আগ্রহী । ক্রমান্বয়ে গর্ভাধান,
ও সৌন্দর্ধের কমবিনেশন কি ভাবে করা যায়, একথা তিনি অনেক
ভেবে থাকেন, কিন্তু কুল পান না। মেজ ছেলে আজ স্ত্রী মূখে যশোদাৰ,
লারপ্ৰাস দুধের কথ শুনতে শুনতে হঠাৎ ৰলেন, 'পাইছি পথ |,
“কিয়ের পথ ?
এই, তোমার কষ বাচাইবার পথ ।,
২২৮ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
“কেম্তে? আমার কষ্ট যাইব চিতায় ওঠলে। বছর-বিয়ানীর আর শরীল
সারে?
“সারব, সারব, ভগবানের কল হাতে পাইছি! বছর বিয়াইবা» ভাহ্ও
থাকব ।”
দ্বামী-স্ত্রী পরামর্শ হল। স্বামী সকালে গিয়ে মায়ের ঘরে ঢুকলেন ও
ঘুচূর-ঘুচুর করে কথা কইলেন। গিষ্মি প্রথমটা! গাইপ্তই করতে লাগলেন, কিন্তু
তারপর শ্বগতচিন্তা করতে করতে বুঝলেন প্রস্তাবটি লাখ টাকার । বউর]
এসেছে, বউর1 মা হবে। মা হলে ছেলেকে ছৃধ খাওয়াবে | যেহেতু যতদিন
সম্ভব ততদিনই মা হবে-_সেেতু ক্রমান্বয়ে ছুধ খাওয়ালে চেহারা ঝটকাবে।
তখন যদি ছেলেরা বারমুখে হয়, বা বাড়ির ঝিদের ওপর উৎপাত করে, গিষ্ি
কিছু বলতে পারবেন না । ঘরে পাচ্ছে না বলে বাইরে যাচ্ছে-হুক কথ!।
তাই যশোদ| যি কচি কাচাদের ছুধ-মা! হয়ঃ তাহলে নিত্য সিধা, পুজোর
পাবণে কাপড়, মাসাস্তে কিছু টাকা দিলেই কাজ হয়। গিষ্লির বাড়িতে
আজ চাপাড়াষণ্ী। কাল স্থবচনী, পরশু মঙ্গলচণ্ডী ব্রত লেগেই থাকে ।
তাতেও বযশোদাকে বামুন-এয়ো! কর! চলবে। তার ছেলের কারণে যশোদার
এত খোয়াব, পাপও স্মালন হবে।
যশোদ! তীর প্রস্তাবে হাতে মন্ত্রিত্ব পেল। নিজের স্তন ছুটিকে বড় মহা
মনে হল তার। রাতে কাঙালীচরণ খুনস্থৃড়ি করতে এলে সে বলল, “দেখ!
এখন এর জোরে সংসার টানব। বুঝে শুন ব্যবহার করবে।, কাঙালীচরণ
সে রাতে গাঁই-গুই করল বটে, কিন্তু সিধাতে চাল-ডাঁল-তেল-আনাজের বহর
দেখে তার মন থেকে গোপাল-ভাবটি নিমেষে চলে গেল। ব্রদ্ষাশ্ভাবে সে
উদ্দীপিত হুল এবং যশোদীকে বুঝিয়ে বললঃ পেটে সন্তান থাকলে তবে তোর
বুকে ছুধ,আসবে। এখন সেকথা ভেবেই তোকে কষ্ট করতে হবে। তুই
সতীলম্ী । নিজেও পোয়াতি হবি, €পটে ছেলে ধরবি, বুকে পালন করবি,
এ তো! জেনেই মা তোকে ধাইবেশে দেখা দিইছিল।*
যশোদ। এ কথার যাথার্থ্য বুঝল ও সাশ্রচোখে বলল, *তুমি স্বামী, তৃষি
গুরু যদি বিস্মরণ হয়ে না-না করি, তুমি সোওরে দিও। কষ্ট আর
কি বল? শিঙ্গিমী কি তেরট] বিয়োক্পনি? গাছের কি ফল ধরতে কষ্ট
হয়? ূ
অতএব, সেই নিয়মই বহাল রইল। কাডালীচরণ পেশাাম্মী পিতা হল।
স্তনদারিনী ২২৯
যশোদা হল প্রফেশনাল মা। বস্তত যশোদাকে দেখলে এখন সেই সাধকমার্গের
গানটির গভীরতা! অবিশ্বাসীরও মনে জাগে । গানটি হল-_
ম! হওয়া কি মুখের কথা?
শুধু প্রসব কল্পে হয় না মাতা ।
হালদার-বাড়ির চক্মেলানে! উঠোনের চারধারে বড়বড় ঘরে বারো-
চোগ্ছটি সুলক্ষণা গাভী হামেশ! হামেহাল বজায় থাকে । দুঙ্গন ভোজপুরী গো"
মাতা জ্ঞানে তাদের পরিচর্যা করে । খোল-ৃসি-খড়-ঘাস-গুড় পাহাড় পাহাড়
আমসে। হালদারগিন্সি বিশ্বাস করেন, গরু থাবে যত, ছুধ দেবে তত।
যশোদার জায়গা এ বাড়িতে এখন গো-মাতাদের ওপরে | গিন্গির ছেলের!
শন্ধাবতার হয়ে প্রজাদের হত করে। যশোদ। প্রজা প্রপালকা । তার
ছুঞ্ধসপঞ্চম যাতে অব্যাহত থাকে সেদিকে হালদারগিঙ্সি কড়া নজর রাখলেন।
কাঙালীচরণকে ডেকে বললেন, গ্ছ্যা বামুন ছেলে 1 দোকানে ত তাড়ু নাড়তা,
ঘরে পাকসাকের ভারট] নিয়! অরে আরাম দেও। নিজের ছুটো, এখানে
তিনটা, পাচটারে ছুধ দিয়! ঘরে গিয়া পাক-নাক করতে পারে ?'
কাঙালীচরণের জ্ঞাননেত্র এভাবে খুলে গেল এবং নিচে এসে ভোজপুরীঘর
তাকে খৈনি দিয়ে বলল, 'ম! জী ত ঠিকহি বলেছে । হামর] গোৌ মাতার ইতনা
সেবা করি--তা তুর বহু তো৷ জগতমাতা আছে।,
এরপর থেকে কাঙাণীচরণ বাড়ির রান্নার ভার তুলে নিল হাতে ।
ছেলেমেয়েদের করে তুলল কাজের সাগরেদ। ক্রমে সে থোড়ঘণ্ট, কলাই
ভাল, মাছের অন্বল বাধতে বড়ই সেয়ান। হল এবং সিংহ্বাহিনীর গ্রসাদী
পাঠার মাথার মুড়িঘণ্ট রে'ধে নবীনকে থাইয়ে-খাইয়ে সেই দুর্দান্ত গেঁজেল
মাতালকে নিছ্ের বশীভূত করে ফেলল। ফলে নবীন কাঙালীকে নকুলেশ্বর
শিবের মন্দিরে ঢুকিয়ে দিল | যশোদ! গ্রতাহ রাধা ভাতব্যঞ্চন খেয়ে পি*
ভব্ু* অফিসারের ব্যাঙ্ক-আযাকাউণ্টের মতো] ফুলে ফেঁপে উঠল। তার ওপর
গিল্লিমা তাকে ছুধ-উঠনো করে দিলেন। পোয়াতি হলে তার জস্তে আচার-
ঝালনাডু-মোরব্বা পাঠাতে থাকলেন।
এইভাবে অবিশ্বানীদেরও প্রতায় জন্মাল, যশোদাকে সিংহবাহিনী এই
কারণেই বগলে ব্যাগ নিয়ে ধাই হয়ে দেখা দিয়েছিলেন । নইলে নিরন্তর
গর্ভধারণ, সম্তান-প্রসব, অপরের ছানাপোনাকে গাভীর মতো অকাতরে ছুগ্ধনান
'কে কৰে শুনেছে বা দেখেছে? নবীনের মন্ থেকেও. হন্দর ভাব চলে গেল।
২৩৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গল্প
পীঠা্ মাথা, কারণবারি, গাঁজা, এহেন উগ্র জিনিস খেয়েও তায় শরীর আর
তাতল না। মনে আপন] হতেই ভক্তিভাব এল। যশোদাকে সে দেখা
হতেই “মা! ম|! মাগো 1 বলে ডাকতে থাকল। চতুর্দিকে সিংহবাহিনীর
মাহাত্মা বিষয়ে বিশ্বাস পুনর্জাগ্রত হুল এবং অঞ্চলটির বাতাসে দেবীমাহাত্যের
ইলেকট্রফাইং প্রভাব বইতে থাকেল।
যশোদা বিষয়ে সকলের ভক্তিভাব এমন প্রখর হল যে বিয়ে-সাধ-অগ্পপ্রাশন-
পইতেয় সকলে তাকে ডেকে প্রধান। এয়োর সম্মান দিতে থাকল। যশোদার
ছেলে বলে নেপাল-গোপাল-নেনো-বেৌচ।-পটল ইত্যাদিকে সবাই সেই চোখে
দেখতে থাকল, এবং যে যেমনটি বড় হল, পইতে নিয়ে মন্দিরে যাত্রী ধরে
আনতে থাঁকল। বাধারানী, আলতারাণী, পল্সবানী, ইত্যাদি মেয়েদের জন্তে
কাঙালীকে বর খুজতে হল না । নবীন আশ্চর্য তৎপরতায় মেয়েদের বর জুটিয়ে
দিল ও সতী মায়ের সতী কনার! যে যার শিবের ঘর করতে গেল।
হালদার-বাড়িতে যশোদার আদর বেড়ে গেল। শ্বামীরা খুশি, কেন না
এখন আর তাদের পাজি উলটোঁতে দেখলে বউদের হাটুতে ঠকঠকি লাগে ন1।
তাদের গোপালরা যশোদার শ্যন্তে লালিত হচ্ছে বলে তার] যথেচ্ছ গোপাল হতে
পারেন বি্বানায়। বউদ্দের “না” বলবার মুখ রইল না। বউরা খুশি । কেন
না দেহের ভোলটি ভাল থাকল। তার] যথেচ্ছ মেম কাটের জামা ও বডিস
পরতে পারল। হোলনাইট সিনেম| দেখে শিবরাত্তির করার সময়ে ছেলেকে
ছুধ দিতে হল না। এ সবই সম্ভব হল যশোদার জন্যে। ফলে যশোদার মুখ
খুলল এবং শিশুদের নিরস্তর স্তন 'দিতে দিতে গিন্নির ঘরে বসে সে ফুট কাটতে
খাকল, “মেয়েছেলে বিয়োবে, তার জন্তে ওযুধ রে, বেলাডডপেসার দেখা! রে,
ডাক্তার দেখানো রে। আদিখ্যেতা| এই তো আমি! বছর-বিউনি হুইছি।
তাতে .কি শরীর ঢস্কাচ্ছে, না ছুধ কমছে? . কি ঘেন্না মা! শুনছি নাকি
ইঞ্রিশান দিয়ে সব দুধ শুকিয়ে ফেলছে। এমন কথাও গুনিনি কখনে। 1,
হালদার-বাড়ির ছেলেদের মধ্যে যারা কিশোর, তাদের বাপ-জ্যেঠা-
কাকার] গৌফ গজাতেই বিদের আওয়াজ দিত। ছুধ*্মার দুধে তারা মানুষ,
তাই ছুধ-মার বন্ধু বি-রশাধুনিকে তারা এখন মাতৃভাবে দেখতে থাকল এবং মেয়ে
ইস্থলের চারপাশে হাটাইাটি শুরু করল। বিয়েরা বলল, 'যশি! ভগবতী
হয়ে এইছিলি তুই |. তো? হতে বাড়ির হাওয়া পালটাল '
ছোট*ছেলে যখন একদিন উদ হয়ে বলে বশোধার ছুথধপান দেখছে তখন
স্তনদারিনী ২৩১
যশোদা! বলল, “তুমি বাছা! আমার লক্ষী | বামূনের ঠ্যাং ধু'তো৷ করেছিলে বলে
€তো৷ এতসব হল 1 বল দেখি কার ইচ্ছেয় হল?"
ছোট হালদার বলল, “সিংহবাহিনীর ইচ্ছে 1,
তার জানতে ইচ্ছে হয়েছিল, ঠ্যাং নেই, তবু কাঙালীচরণ ব্রদ্ধা হয় কি
উপায়ে? কথাটা ঠাকুরদেবতার দিকে চলে গেল বলেঃ সেও প্রঙ্থট ভূলে গেল।
সবই সিংহবাহিনীর ইচ্ছে |
পঞ্চাশের দশকে কাঙালীর ঠ্যাং কাটা যায়, আমাদের কাহিনী এই সময়ে
পৌছেছে । পঁচিশ বছরে, খুড়ি তিরিশ বছরে, যশোদা কুডি বার গ্রাতুডে
ঢুকেছে । শেষের দিকের মাতৃত্বগুলো বেফয়দা যায়, কেন না, কেমন করে
যেন হালদার-বাড়িতে নতুন হাওয়া ঢুকে পড়ল। ওই পঁচিশ না তিরিশ
বছরের গগুগোলটুকু সেরে নিই। কাহিনী যখন শুরু হয় তখনি যশোদা তিন
ছেলের মা ছিল। তারপর তার সতেরো বার সন্তান-সভাবন! হয়। হালদার
গিঙ্নিও মরে গেলেন। তীর বড় ইচ্ছে ছিল, তাঁর শাশুড়ির যেমনটি হয়েছিল,
তেমনটি বউদের কারে! হোক। কুড়িটি সন্তান হলে আবার স্বামী-স্ীর বিয়ে
হবার নিয়ম ছিল বংশে । কিন্তু বউমার1 বারো! তেরো-চোদ্দতে ক্ষান্ত দিল।
ুবুদ্ধিবশত তার! শ্বামীদের বোঝাতে সক্ষম হল এবং হাসপাতালে গিয়ে ব্যবস্থা
করে এল। €স সবই নতুন হাওয়ার কুফলে ঘটল। কোনো যুগেই জ্ঞানী
পুরুষ বাড়িতে নতুন হাওয়া! ঢুকতে দেন ন1। দিদিমার কাছে শুনেছি জনৈক
ভদ্রলোক তাঁর বাড়িতে এসে 'শনিবারের চিঠি পড়ে যেতেন। কদাচ ঘরে
বইটি ঢোকাতেন না। বলতেন, “িউ-মা বোন যে ওই কাগজ পড়বে, সেই
বলবে আমি নারী ! মা নই, বোন নই, বউ নই” ফলে কি ঘটবে তা ছিজ্েপ
করলে বলতেন, “চটি পরে ভাত রাধবে ।” নতুন হাওয়ার প্রকোপে অন্দরে
অশান্তি হয় এ চিরকালের নিয়ম।
হালদার-বাড়িতে চিরকাল যোড়শ শতক চলছিল। কিন্তু সহস! বাড়িতে
'মেশ্বর সংখ্যা অগপিত হুল বলে ছেলেরা যে-যার় যতো নতুন বাড়ি বানিয়ে
সটকে পড়তে থাকল। সবচেয়ে আপত্তির কথা, মাতৃত্ব বিষয়ে গিঙ্লির নাতবৌন্া
এএকেবাযে উলটো হাওয়া! খেয়ে ঘরে ঢুকল। বৃথাই গিন্নি বললেদ, চালের
২৩২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেঠ গজ
অভাব, টাকার অভাব নেই। কর্তার বড় সাধ ছিল হালদারদের দিয়ে অর্ধেক
কলকাতা ভরে ফেলেন। নাতবৌর] নারাজ । তারা বুড়ির দাবড়ি অগ্রাহথ
করে ম্বামীদের নিয়ে কর্মস্থলে ছুটল । এরই মধ্যে সিংহবাহিনীর মন্দিরের
পাগ্ডাদের মধ্যে বিষম কলহ হওয়াতে কে বা কাহার যেন দেবীর যৃতি ঘুরিয়ে
দিল। মা মুখ ফিরিয়েছেন একথা শুনে গিষ্লির বুক ভেঙে গেল এবং মনোদুঃখে
ভরা জ্যোষ্ঠে অসংগত পরিমাণে কাঠাল খেয়ে দাস্তবমি হয়ে তিনি মরে
গেলেন।
গিল্লি মরেই খালাস পেলেন, কিন্তু জ্যাস্ত থাকার জালা মরণ হতে বেশি
গিষ্ির মৃত্যুতে যশোদার আত্তরিক ছুঃখ হুল। বয়স্ক মানুষ পাড়ায় মরলে
বাসিনীর মতো স্থৃবিন্তাসে কেউ কাদতে পারে নাঃ বাসিনী এ বাড়ির পুরোনে।
ঝি। কিন্ত যশোদার ভাতের থালাটি গিন্লির সঙ্গে বিসর্জন গেল, তাই যশোদ!
আরে। স্থুবিস্তাসে কেদে সকলকে অবাক করে দিল।
বাদিনী কাদল» “অভাগ্যিমানী মা? মাঞ্ধীর চুড়োটি খসতে কতা হয়ে
সকলেরে যে আগলে রেকেছিলে মা! কার পাপে চলে গেলে মা গো! ওগোঃ
আমি যে বন্ন, অত ক্যাটাল খেওনি, তা মোর কতা যে ধোটে নিলে ন
গো মা?
যশোদ] বাসিনীকে দম নিতে স্থযোগ দিল ও সেই বিরতিতে কেঁদে উঠল,
ধকেন রইবে মাগো! ! ভাগ্যিমানী তুমি, পাপের সংসারে রইবে কেন বল গো ম! |
সিংহাসন পাতা ছিল তা যে তুলে ফেললে গে বউদিয়|। গাচ যখন বলে ফন
ধরবনি সে যে পাঁপ গো। অত পাপ কি তুমি সইতে পার মাগে!। তা বাদে
লিঃহবাহিনী যে মুখ ফেরালে গো মা। বুঝিছিলে পুণ্যের পুরী পাপের পুরী
হয়ে গেল, এ পুরীতে কি তৃমি বাস কত্তে পার? কন্ধ। চলে যেতে তোমারে! যে
মন চলে গিইছিল গে! মা। শরীলট] সংসারের দিকে চেয়ে ধরে রেখেছিলে বই
তো নয়। অ বউদির! । আলতা দিয়ে পায়ের ছাপ উদিয়ে বাখ গো! ও পায়ের
ছাপ ঘরে রইলে লক্ষ্মী বাদ! থাকবে গো! সকালে উঠে ওতে মাতা ঠেকালে
ঘরে রোগ দুঃখ ঢুকবে ন। গে!”
শবদেছের পেছন-পেছন যশোদ। কেঁদে-কেদে শাশানে গেল ও ফিরে. এসে
স্যনদারিনী ২৩৩
বলল, "চক্ষে দেখহু সগঞ্জ থেকে রথ নেমে এসে চিতার বুক থেকে গিল্লিমাকে
নিয়ে ওপর পানে চলে গেল ।”
গিঙ্গির আদ্ধশান্তি চুকে গেলে বড় বউ যশোদাকে বললেন, “বামুন দিদি।
সংসারে তে। ভাঙন ধরল। মেঙ্গ সেঙ্গ বেলেঘাটার বাড়িতে উইঠা যাইত্যাছে।
রঙা আর নতুন যাইত্যাছে মানিকতলা-বাগমারী | ছোট যাইব গিয়া আমাগো
দক্ষিণেশ্বরের বাঁড়ি।,
“এখানে কে থাকবে?
“আমিই থাকুম। তবে গিয়া নিচতলা ভাড়া দিব হায়। অহন সংসার
গুটাইতে অইব। তোমার ছুগ্ধে সবারে পাল্ছ, নিত্য লিধ! গেচে । হায়
সম্তান দুধ ছারছে, তবুও আট বছর ম! সিধা পাঠাইছে। উনি যা মন লয় তাই
করছে। পোলার] কথা কয় নাই। কিন্তু অহন তো আর পারবাম ন1।”
“আমার কি হবে বড়বউদি 1
তুমি যদি আমার সংসারে পাক-দাক কর+ তোমার প্যাট চলব। কিন্ত
ঘরের হকলডির কি করব। ?”
“কি করব?
তুমিই কও। জেয়স্তে তুমি বারো সন্তানের মা! মাইয়াগুলান্ বিয়]
»ইয়া গিছে । পুলার! ত শুনি যাত্রী ডাকে, মন্দিরে ভোগ খায়, চাতালে পইড়া
থাকে। বামুনও ত শুনি নকুলেশ্বর মন্দির ভালই জমাইছে। তোমার অভাব
কিসেন্ন ?
যশোদা চোখ মুছে বলল, “দেখি! বামুনকে বলি ।*;
কাঙালীচরণের মন্দিরে এখন খুবই রমরুম1| কাঙালী বলল, “আমার মন্দিরে
তুই কি করৰি ?
'নবনের বোনঝি কি করে ?"
“সে মন্দিরের সোম্পার দেখে, ঝাধে-বাড়ে। তুই ঘরেই রাধিস না
কদ্দিন, মন্দিরের উঠ.নে তৃই ঠেলতে পারিস ?
'ওবাড়ির সিধে উঠে গেল। সে কতা মাথায় ঢুকল ড্যাররার?
খাবে কি?
নবীন বললঃ “সে তোকে ভাবতে হবে ন1।”
এ্যান্দিন ভাবিয়েছিলে কেন? মন্দিরে খুব ছু পয়সা হুচ্ছে, তাই না?
সব জসিয়েছ আব আমায় গতরজল করা ভাঙ খেয়েছ বলে বসে ।,
১৫
২৩৪ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
“বসে বলে রাধত কে?
যশোদ! হাত নেড়ে বলল, “বটাছেলে এনে দেয়, মেয়েছেলে রশাধে-বাড়ে।
আমার কপালে নকলই উলটো হইছিল। আমার ভাত খেয়েছে যখন, তখন
আমাকে ভাত দেবে এখন। ন্যাষ্য কথ। ৷
কাঙালী ফস্ করে বলল, “কোথেকে ভাত যোগাড় করলি? হালদার-বাড়ি
তোর কপালে জুটত1? আমার ঠ্য।ং কাটা খেল বলেই না তোর কপান্ে
ওবাড়ির দোর খুলল? কত্বা তো! আমাকেই সব দেবেথোবে বলিছিল। সব
ভুলে বসে আছিস মাগী?
তুমি মাগী না আমি মাগী? বউয়ের গতরে খায়, সে আবার
বেটাছেলে !)
একথা থেকে ছুজনের তুমুল কলহ বেধে গেল। ছুজনে দুজনকে শাপশাপাস্ত
করল। অবশেষে কাঙালী বগল “তোর মুখ আর দেখব না» যাঃ !,
“না দেখলে ন]। দেখবে ।”
যশোদাও রেগে ঘর ছেড়ে বেরলো । ইতিমধ্যে পাগাদের শরিকে-শরিকে
সট হয়েছে, ঠাকুরের মুখ ফেরাতে হয় নইলে সমূহ সর্বনাশ। সে জন্যে
মন্দিরে মহা ধুমধামে প্রায়শ্চিত্ত পুজো! হচ্ছে । যশোদ] সেখানে হত্যা দিতে
গেল। ছুঃখে তার প্রৌঢ়, ছুদ্ধহীন, স্থূল বুক ছুটি ফেটে যাচ্ছে। সিংহবাহিনী
তার দুঃখ বুঝে পথ বাতলে দিন।
তিনদিন যশোদ। চাতলে পড়ে থাকল। নতুন হাওয়! সম্ভবত সিংহ"
বাহিনীও খেয়েছেন। তিনি মোটেই ম্বপ্নে দেখা দিলেন না। উপরস্ধ তিনদিন
উপোসী থেকে কাপতেশ্কাপতে উঠে যশোদা যখন ঘরে গেল, ছোট ছেলে
বলে গেলঃ “বাপ মন্দিরে থাকবে । আমাকে আর নবাকে বলেছে তোরা ঘণ্ট!
বাজাবি, রোজ পেসাদ পাবি, পয়স৷ পাবি।, |
“বটে | তাবাপ কোথা !
গুয়ে আছে । গোলাপী মাসি বাবার পিঠের ঘামাচি গেলে দিচ্চে।
বলল, তোরা পয়সা দিয়ে ল্যাবেঞ্চস খেগে যা! আমরা তাই তোকে
বলতে এছ ॥ |
যশোদা বুঝল হালদার-বাড়িই নয়, কাঙালীর কাছেও তার দরকার
ফুরিয়েছে। জঙলবাতাসা খেয়ে সে নবীনকে নালিশ করতে খেল। নবীনই
সিংহ্বাস্থিনীর প্রতিম! হ্ি'চকে বিমুখ করেছিল ও অন্ত পাগ্ডাদের সঙ্গে বালস্তী
ত্নদায়িনী ২৩৫
পৃঙ্গা, জগদ্ধাত্রী পু ও শারদ ছুর্গ/পুজার বিশেষ রোজগার বিষয়ে ফয়সাল!
হবার পর পুনর্বার প্রতিমাকে হি"চড়ে মুখ ফিরিয়ে সে ব্যথিত নড়ায় পাকি মদ
মালিশ করে গাঁজ! টেনে বসেছিল এবং স্থানীয় ভোটের ক্যান্ডিডেটের উদ্দেশে
বলেছিল* “পুজো দিলি নে তো? মায়ের মাহাত্য আবার ফিরেছে । এবার
দেখে নেব কেমন করে জিতিস 1»
মন্দিরের আওতায় থাকলে এ দশকেও কি কি অলৌকিক ঘটন! ঘটে,
নবীনই তার প্রমাণ। দেবীর মুখ সে নিজেই ফিরিক়েছিল এবং নিজেই
বিশ্বাস করেছিল পাগার1 ভোট-চাই দলনকলের মতো জোট বাধছে না বলে
মা বিমুখ হয়েছেন। এখন মার মুখ ফেরাবার পর তায় আবার ধারণা জন্মাল,
মা নিজে ফিরেছেন।
যশোদ। বলল, এক বকছ ?
নবীন বলল, “মায়ের মাহাত্মের কথা কইছি।,
যশোদ। বলল, “নিজে ঠাকুরের মুখ ঘুরিয়েছিলে ত। জানি ন1 ভেবেছ ?,
নবীন বলল, "চুপ কর যশি। ঠাকুর শক্তি দিলে বুদ্ধি দিলে, তবে ন!
আমা হতে কাজটি হল?
«তোমাদের হাতে পড়ে মায়ের মাহাত্ম গেল!
'মাহাত্য গেল! গেলে পরে পাখা ঘুরছে, পাখার নিচে বসে আছিস,
তা হুল কি করে? চাতালের ছাতে ইলেটিরি পাখা এর আগে
ঘুরেছে?
“তাতো হল। এখন আমার কপাল পোড়ালে কেন, তাই কওদিকি?
আমি তোমার কি করিছি ?'
«কেন? ক্যাঙালী তো মরেনি?
“মরবে কেন 1 মরার বাড়। হয়েছে ॥
“কি হল?
যশোদ। চোখ মুছে ভারি গলায় বলল» “এতগুলো পেটে ধরিছি, সেই' বলে
বাবুদের বাড়ি বাধাধরা ছুধ-ম! ছিলাম। জবান তো সবই । কোনোদিন
কুপথে ছাটিনি।'
'আই ববাস্! তুই হলি গেমায়ের অংশ।'
“মা তে! ভোগেরাগে রইল। অংশ €ে অল্প বিনে মরতে বসেছে।
হালধাথবাড়ি তো! হাত ওঠালে।”
২৩৬ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
তুই বাক্যাঙালীর লঙ্গে বগভ1 করতে গেলি কেন 1 বেটাছেলে ভাতের
খোটা সয়?
“তুমি বা তোমার বোনঝিকে হোথা গছালে কেন ?
“লে ঠাকুরের লীলে হয়ে গেল। গোলাপী যেয়ে মন্দিরে ধন্না দিত। তা
ক্রেমে*ক্রেমে ক্যাঙালী বুঝল ও হচ্চে ঠাকুরের ভৈরব আর গোলাপী ওর
ভৈরবী ।'
“ভৈরবী | খ্যাংরা মেরে ওর হাত হতে সোয়ামী ছাড়িয়ে আনতে
পারি এখনি ।”
নবীন বলল, 'নাঃ! সে আর হতে হচ্চে না। ক্যাঙালী পুরুষ ছেলে,
ওর আব তোতে মন ওঠে? ভাবাদে গোলাপীর ভাইটে সাক্ষাৎ গুণ্ডা, সে
হোথা যেয়ে পাওর। দিচ্ছে । আমাকেই গেট আউট করে দিলে । আমি যদি
দশ ছিলিম টানি, সে টানে বিশ ছিলিম। ক্যাকালে লাথি মেরে দিলে।
যেয়েছিলাম তোর কথা বলতে । ক্যাঙালী বললে, ওর কতা! আমার বল না।
ভাতার চেনে না» বাবু-বাঁড়ি চেনে। বাবু-বাড়ি ওর ইঠ্িদেবতা, সেথ'
যাক গা।ঃ
“তাই যাব |,
বলে সংসারের অবিচারে পাগল-শাগল যশোদা! ঘরে ফিরল। কিন্ধু শুন্য ঘরে
মন টেকে ন1। দুধ খাক না খাক, কোলের কাছে একটা, ছেলে ন1 থাকছে
ঘুম আসে না। মা হুওয়া বড় ভীষণ নেশা । সে নেশা ছুধ শুকোলেও কাটে
ন1। "অগত্যা মান খুইয়ে যশোদা হালদারনীর কাছে গেল বলল, 'রশাধব
ৰাড়ব, মাইনে দেৰে দিও, নাঁদেবে না দিগ। হেথা থাকতে দিতে হুবে।
মিনসে নিজের মন্দিরে থাকতেছে। ছেলেগুলো! কি বেইমান মা] সেথ
গিয়ে জুটেছে। কার তরে ঘর আটকে রাখব মা?
“তা থাকো।। তুমি ছেলেদের ছুধ দিছ, তায় বামুন। তা থাক। কিন্ত
দিদি, থাকতে তোমার কষ্ট হইব। ওই বাসিনীদের লগে এক ঘরে থাকবা।
ক্যারে» লগে ঝগড়াবিবাদ কইর না। বাবুর মাথা গরন। তায় সে গুলা
বুহ্ধে গিয়া দেই দেশী যেয়ে বিয়া বসছে বইলা ম্যাজাজ মন্দ। ক্যাচাকেটি
হইলে তাই চটব ।”
সম্ভান হবার ক্ষমতাই যশোদার লক্ষী ছিল। সেট খতম হতেই তার
কপাঁলে এত, এত ছুর্গতি ঘটল। পাড়ার মায়ের ভক্তবাড়িগুলির শ্র্থেয
তনদারিনী ২৩৭
ছুষ্ধবতী সতীসাধ্বী যশোদার এখন পড়তির সহয়। মাস্থষের শ্বভাবধর্ম হুল
উঠতির কালে অসংগত অহ্মিক। হয় এবং পড়তির কালে অবস্থা বুঝে নিহ্থ
হয়ে থাকি'--এ সারেগার আসে না মনে | ফলে মান্য তুচ্ছ জিনিস নিয়ে
আগের দাপে দামড়াতে যায় ও ব্যাঙের লাখিখায়।
যশোদার কপালেও তাই হুল। বাসিনীর। তার পা ধোয়া জল খেত।
এখন বাসিনী অকেেশে বলল, “তুমি তোমার বাসন মেজে নেবে। তুমি কি
মনিব, যে তোমার এ'টে বাসন মাজব 1 তুমিও মনিবের চাকর, আমিও ।'
'জানিস আমি কে 1'-বলে গর্জে উঠতে যশোদ! বড় বউয়ের মুখ শুনল,
'এই লিগাই আমার ডর ছিল খুব। মায়ে অরে মাথায় উঠাইয়া দিয়া গেছে।
দেখ বামুন দিদি! ডাইকা আনি নাই, সাইধা আসছ, অশান্তি কইর ন1।
যশোধ বুঝল, এখন আর তার টু" কথাটিও কেউ শুনবে না। মুখ বুজে
সে রশাধল বাডল, এবং বিকেলে মন্দিরের চাতালে কাদতে বসল। মন খুলে
কাদতেও পারল না। নকুলেশ্বর মন্দির থেকে আরতিব বাজন। শুনে ও চোখ
মুছে উঠে এল | মনে মনে বললঃ “এবার দয়া কর মা! শেষে.কি টিনের বাটি
হাতে পতে বসতে হবে? তাই চাও?
হালদার-বাড়ি ভাত রে'ধে আর মায়ের কাছে মনোছুঃখ নিবেদন করে দিন
কাটতে পারত। কিন্তু যশোদার কপালে তা সইল ন1। যশোদার দেহ যেন
এলে পড়ল। কেন কিছুতে ভাল লাগে না, যশোদা বোঝে না। মাথার
ভেতর বিভ্রম সব। রশুধতে বদলে মনে হয় এ বাডির ছুধ-মা । কম্তাপেড়ে
শাড়ি পরে সে সিধে নিয়ে ঘরে যাচ্ছে। স্তন ছুটি বড় শুন্য লাগেঃ যেন
বরবাদ । ত্যন বুস্তে শিশুর মুখ নেই, এ তার জীবনে ঘটবে বলে ভাবেনি ।
খুব অন্যমনস্ক হয়ে গেল যশি। ভাত তরকারি প্রায় সবই বেড়ে দেয়,
নিজে খেতে ভূলে যার । মাঝে-মাঝে নকুলেশ্বর শিবের উদ্দেশে বলে, মা
না পারে, তুমিই আমায় সরিয়ে নাও । আর পারি না
শেষে বড় বউয়ের ছেলেরাই বলল, “মা! ছুধ-মার শরীর কি অসুস্থ ?
কেমন যেন হইয়া গেছে ?'
বড় বউ বলল, “দেখি !»
বড়বাবু বলল, 'দেখ! বামুনের মাইয়া, কিছু অইলে আমাগো পাপ
অইব।+
বড় বউ ভিজে করতে গেল। ভাত ঢড়িয়ে যশোদ! রায়। ঘরেই জাচগ
২৩৮ মহাশ্বেত| দেবীর শ্রেষঠ গল্প
পেতে শুয়েছিল। বড় বউ তার আছুড় গা দেখে বলল, “বামুন দিদি | তোমার
ৰাও মাইয়ের উপরটা লাল মতে] দেখায় ক্যান? ইশ! দগদগ। লাল |,
“কি জানি। ভেতরে যেন পাতর ঠেলে উঠেচে। বড শক্ত, টিল পারা।,
“কি অইল ?
"কি জানি? এতগুলোকে ছুধ দিইছি, তাতেই হয়ত অমন ধার! হল ?
ধুর! £ুন্কা হয়, যাইঠোস হয় ছু থাকলে। তোমার তো কুলেরটা
দশ বছইবা।”
“সেটা নেই গো! তার উপরেরটা আছে। সেটা তো! আতুড়ে গেছে।
গেছে; ভাল গেছে! পাপের সংসার !*
'রও কাল ডাক্তার আইব নাতিরে দেখতে | তারে জিগামূ। আমি
যান ভাল দেখি ন1।'
যশোদ। চোখ বুজে বলল, “যেন, পাতরের মাই গো, পাতর পোর]1।
আগে শক্ত গুলিটা সরত নড়ত, এখন আর নড়ে না, সরে ন1।”
€ভাক্তাররে দেখামু।
“না বউদিদি, বেটাছেলে ভাক্তারের কাছে আমি গা আছুড করতে
পারব না?
রাতে ডাক্তার আসতে ছেলেকে সামনে রেখে বড বউ জিজ্জেস করল।
বলল, “ব্যথ! নাই? জাল! নাই কিন্ত হ্যায় জানি আলাইয়! পডত্যাছে।
ডাক্তার বললেনঃ জেনে আস্থন দিকিঃ কুঁচকে গেছে না কি নিপল, বগলের
নিচটা বিচিফোলা মতো কিনা 1,
বিচিফোল! শুনে বড় বউয়ের মনে হল, ছিঃ! কি অসভ্য! তারপর
সরজমিনে ত্দস্ত সেরে এসে বললেন, “কয়, অনেকদিন ধইক্লাই আপনে যা যা
বললেন তা হয়েছে ।
বস কত?
“ড় ছেলের বয়স ধল্লে পরে পঞ্চায় হবে।'
ভাক্তার বলগ্বলন, “ওষুধ দেব ।'
বেরিয়ে গিয়ে বড়বাবুকে বললেন, “আপনার কুকের ক্রেস্ট কি হয়েছে
শুলাম । আমার মনে হয় ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে দেখানো! ভাল।
চোখে দেখিনি । তবে যা! শুনলাম, তাতে ম্যামারি ম্যাণ্ডে ক্যানসার হতে |
পাকঝে।
স্তনদায়িনী ২৩৯
বড়বাবু যোড়শ শতকে সেদিন অন্ধি ছিলেন। অতি ইদানিং তিনি বিংশ
শতকে এসেছেন। তেরটি সস্তানের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন এবং
ছেলের! যে যার পথে মতে বড় হচ্ছেঃ বড় হয়েছে। কিন্তু এখনে তার মগজের
বুদ্ধি-কোষ অষ্টাদশ এবং প্রাক্-রেনেসনীস উনিশ শতকীয় অজ্ঞানের অন্ধকারে
ঢাকা। আজও তিনি বসন্তের টিক নেন না ও বলেনঃ “বসন্ত হয় ছুডলোকের।
আমার টিকা লইতে লাগব না। উচ্চ বংশ, দেবধিজে ভক্তিমান বংশে ও রোগ
হয় না।'
ক্যানসার শুনে তিনি উড়িয়ে দিলেন ও বললেন “হঃ। হইলেই হইল
ক্যানসার । অতই' সোজ। কি শুনতে কি শুনছেন, যান, মলম দ্রিলেই সাব ।
আপনের কথায় আমি বামুনের মাইয়ারে হাসপাতালে পাঠাইতে পারুম ন1।,
যশোদাও শুনেমেলে বলল, “হাসপাতালে যেতে পারবনি বাপু। তার চে
আমায় মত্তে বল। ছেলে বিয়োতে হাসপাতালে গেলুম না এখন যাব?
হাসপাতালে গিছল বলে তো মডিপোডা ঠ্যাং ছুটে। খু'তো৷ করে ফিরে এল ।”
বড বউ বলল 'সিদ্ধমলম আইন দেই লাগাও । সিদ্ধমপমে ঠিক আরাম
হইব। গুপ্ত ফোড়া মুখ লইয়! ফাটব।'
সিদ্ধমলমে কোনোই কাজ হল না এবং ক্রমে যশোদা খাওয়াদাওয়া ছেডে
হীনবল হল। বী! দিকে আচল রাখতে পারে না। কখনে। মনে হয় জালা,
কখনে! মনে হয় ব্যাথা । অবশেষে চামড়া ফেটে ফেটে ঘা দেখা দিল।
যশোদ। বিহান। নিল।
ভাবগতিক দেখে বড়বাবুর ভয় হুল, বুঝি তার ভিটেতে বামূন মঞ্ে।
যশোদার ছেলেদের ডেকে সে ধমকে বলল, “ম! হয়, এতদিন খাওয়াইছে, এখন
হায় যে অন্থখে মরে | তোর] নিয় যা! হকলডি থাকতে হায় কায়েতের
ভিটায় মরব?
কাঙালী একথা শুনে বড়ই কাল ও যশোদার প্রায়াম্ধকার ঘরে এসে
সললল, "বউ! তুই সতীলক্ষী | তোকে হেনস্তা করার পর ছু বছরের মধ্যে
মন্দিরের বাসন চুরি হল, আমার পিঠে ফোড়া হয়ে ভূগলাম, গোলাগী
হারামজাদী ন্তাপলাকে ভূলিয়ে বাক্স ভেঙে সববন্ঘ নিয়ে তারবেশ্বরে দোকান”
দিলে । চ, তোরে আমি মাথায় করে রাখব।»
যশোদ। বলল, 'বাতিটা জাল ।,
কাঙালী নাতি জালল।
২৪০ মহাশ্বেত। দেবীর শ্রে গল্প
যশোঁদা অনাবৃত ও ঘা-বিজ্ঞবিজ্ধে বামস্তন দেখিয়ে বলল, “ঘা দেখেছ?
ঘায়েক গন্ধ কেমন জান? এখন নিয়ে যেয়ে কিকরবে? নিতে বা এলে
কেন?"
“বাবু ভাকলে ।”
“বাবু তবে রাখতে চাইছে না।--যশোদ] নিঃশ্বাস ফেলল, ও বলল,
«আমারে দিয়ে কোনে! সুসার হবেনি জান ? নিয়ে যেয়ে করবে বাকি?
“তা হোক, কাল নে যাব। আজ ঘর পঞ্চের করে রাখি । কাল নিষ্যস
নে যাব।,
“ছেলের! ভালো! আচে? মাঝে মধ্যে নবলে আর গৌরটা আসত, তাও
আসে ন11'
«সব বেটা সাথখশর । আমার ইয়েতে জন্ম তো? আমার মতোই অমানুষ |,
'কাল আনবে?
'সাসব--আসব -আসব।'
যশোদা! সহসা হাসল। সে হাসি বড়ই বুকে দাগা-দেওয়া ও প্রাচীন শ্বতির
কথা মনেশ-্পড়ানেো ।
বশোদা বলল, *ই্যা গে! মনে আচে?
ণকি মনে থাকবে বউ ?'
'এই মাই নিয়ে তুমি কত সোহাগ কত? নইলে তোমার ঘুম হতে! না?
কোল খালি হতো নাঃ এটা বোট ছাডে তো ওটা ধবে* তায় বাবুর বাড়ির
ছেলেগুলো | কি করে পাত্তাম, তাই ভাবি !,
“পব মনে আছে বউ !,
কাঙালীর এ কথাটি এ মুহূর্তে সত্য । যশোদার ক্রিষ্ট, শীর্ণ, কাতর চেহারা
দেখে কাঁঙালীর স্বার্থপর দেহ ও প্রবৃত্তি এবং উদরসর্বন্ব চেতনাও অতীত ম্মরণে
মমতাকাতর হল। সে যশোদার হাতটি ধরল ও বলল, “তোর জর ?,
জন তো হয়ই । আমি ভাবি ঘায়ের তাড়সে 1”
“এমন পচ। গন্ধ কোখেকে আসছে ?'
“এই ঘা হতে।” যশোদ1 চোখ বুজে বলল।
তারপর বলল, “তুমি বরং সা্মসী ডাক্তারকে দেখিও। তিনি হোমোপাখি
দিয়ে গোপালের টাইফয়েড সারিয়েছিল।*
'ডাকব। কালই নে যাব তোকে ।”
স্তনদারিনী ২৪১
কার্ডালী চলে গেল। সে যে বেরিয়ে গেল, ক্রাচের খটখট শঙ্খ যশোদা শুনতে
গেল না। চোখ বুজে, কাঙালী ঘরে আছে জ্ঞানে নিস্তেজ বলল, 'ছুধ দিলে মা
হয়। স_-ব মিছে কতা। ন| নেপাল-গোপালর! দেখে, না বাবুর ছেলের! উকি
মেরে এট্রা কতা শুধোয়।”
ঘা-গুলি শত মুখে” শত চোখে যশোদাকে ব্যঙ্গ করতে থাকল। যশোদা
চোখ মেলে বলল, “গুনচ ?
তারপরই দে বুঝল কাঙালী চলে গেছে ।
রাঁতেই সে বাসিনীকে দিয়ে লাইফবয় সাবান আনাল ও ভোর হতে সাবান
নিয়ে নাইতে গেল। গন্ধ, কি দুর্গন্ধ । বেড়াল-কুকুর ভাস্টবিনে পচলে এমন
গন্ধ হয়। যশোদ| চিরকাল, বাবুদের ছেলের! ত্যনবৃস্ত মুখে দেবে বলে কত যত
তেলে-সাবানে স্তন ছুটি মার্জনা করেছে । সেই স্তন তার এমন বেইমানি করল
কেন? সাবানের ঝাঁঝে চামড়া জলে ওঠে। যশোদা তবু সাবান দিয়ে আন
করে এল ॥। মাথা ঝিমঝিম করে» সব যেন আধার আধার । যশোদার শরীরে
আগুন, মাথায় আগুন। কালো! মেঝেটি বড ঠাণ্ডা । যশোদা আচল বিছিয়ে
শুল। স্তনের ভার সে দর।ড়িয়ে সইতে পারছিল না।
সেই যে শু যশোদা, জরে অজ্ঞ।ন ও বিবশ। কাঙালী ঠিক সময়েই এল)
কিন্ত যশোদাকে দেখে সে বুদ্ধি হারিয়ে ফেলল। অবশেষে নবীন এসে ধমকে
বলল, «এর! কি মানুষ? সবগুলো ছেলেকে ছুধ দিয় বাচাল, তা এটা ডাক্তার
ডাকে না? হবি ডাক্তারকে ডেকে আনছি !'
হরি ডাক্তার দেখেই বললেন, “হাসপাতাল ।,
এমন রুগী হাসপাতালে নেয় না। কিন্তু বড়াবুর চেষ্ঠায় ও স্থপারিশে
যশোদা হাসপাতালে ভরি হল।
“কি হয়েছে? অ ডাক্তারবাবু, কি হয়েছে'--কান্তালী বালকের মতো
কেদে জিজ্ঞেস করল।
প/“«ক্যানসার |,
'মাইয়ে ক্যানসার হয়?
“নইলে হল কি করে 1?
“নিজের কুড়িটা, বাবুদের বাড়ির তিরিশট1 ছেলে-স্ধুব ছুধ ছিল ডাক্তার-
বাবু...
£কি বললে? কত্তজ্নকে ফী করেছে ?"
২৪২ মহাশ্বেতা দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
“তা পঞ্চাশ জনা তে হবে।,
প--ধা-শ-জশান।?
হ্যা বাবু !,
“ওর কুড়িট। সন্তান হয়েছে ?
হ্যা বাবু।,
গড়
বাবু!
“কি ?
“এত মাই খাওয়াত বলেই কি?
“তা বল! যায় না ক্যানসার কেন হয়, তা বলা যায় না। তবে বুকের ছুধ
যারা অতিরিক্ত খাওয়ায--আগে বোঝ নি? একদিনে তো এমনটা
হয়নি ?'
“আমার কাছে ছিল না বাবু । ঝগড়। করে-,
বুঝেছি 1,
«কেমন দেখছেন ?' ভাল হবে তো?
“ভাল হবে| কর্দিন থাকে সেই দেখ। এনেছ তো শেষ অবস্থায়। এ
অবস্থ। থেকে কেউ বাচে না।'
কাঙালী কীদতে কাদতে চলে এল। বিকেলে, কাঙালীর কান্নীকাটিতে
বিপর্ধস্ত হয়ে বড়বাবুর মেজছেলে ভাক্তারের কাছে গেল। যশোদার জন্যে তার
সামাগ্ঘই উৎকা! ছিল, কিন্তু বাবা হুড়কো দিলেন--সে বাবার টাকার ওপর
নির্ভর করে।
ডাক্তার তাকে সব বুঝিয়ে বললেন। একদিনে হয়নিঃ বহুদিন ধরে হয়েছে।
কেন ছয়েছে? তা কেউই বলতে পারে না। বুকের ক্যানসার কি ভাবে বোবা
যাষে? ত্যনের ওপর দিকে ভেতরে শক্ত গুলিঃ সেট! সরানো চলে। তারপর
ক্রমে ভেতরের গুলি শক্ত ও বড় ও জমাট চাপের মতো। হল। চামড়। কমলার .
হওয়া প্রত্যাশিত, যেমন প্রত্যাশিত স্যনবৃস্তের সধকোচন। বগলের নিচে
গ্যাগুটি আওরে উঠতে পারে। আল্সারেশনঃ অর্থাৎ ঘা যখন হলঃ তখন
বল। চলে শেষ অবস্থা। জর? সেটা দ্বিতীয় বা! তৃতীয় পর্যায়ে পড়বে গুরুত্বের
দিক থেকে। শত্বীরে ঘ! জাতীয় কিছু থাকলে জর হতেই পাবে। সেটা
সেকেওারি।
তনদারিণী ২৪৩
এতগুলি বিশেষজ্-কথ! গুনে মেজছেলের মাথ। গুলিয়ে গেল। সে বলল,
“বীচব 7
না।,
কদিন কষ্ট পাইব ?
“মনে হয় না বেশি দিন |”
“কিছুই যখন করার নাই, কি চিকিৎস1 করবেন ?,
£পেইনকিলার, সেভেটিভ, অরের জন্টে আযার্টিবায়োটিক। শরীরও তো
ডাউন খুব, খুবই ।
থাওয়! ছাইর। দিছিল।?
“কোনে! ডাক্তার দেখান নি?
“দেখ ছিল 1,
“বলেন নি?
'বল্ছিল !
“কি বলেছিলেন ?
ক্যান্সার অইতে পারে । আসপাতালে লইতে বলছিল । হ্যায় যাইতে
চায় নাই।?
“চাইবে কেন? মরবে যে!?
মেজছেলে বাড়ি ফিরে এসে বলেঃ “তখন যে অরুণ ডাক্তার কইল ক্যানসার
হইছে তখন লইলেও বাচত বুঝি 1"
তার মা বলল, 'অতই যদি বুঝিস তবে লইস নাইক্যান? আমি কি
বাধা দিছিলাম ?
মেজছেলে ও তার মনের কোথাও অজানা! পাপবোধ ও অন্শোচন। পচা
ও আবদ্ধ জলে বুদ্ব'দের মতে! জাগছিল ও নিমেষে লয় পাচ্ছিল।
পাপবোধ বলছিল--আমাদের কাছেই আছিল, কুনদিন দেখি নাই উকি
মাইরা, কবে বা হছিল রোগ, গুরুত্ব দেই নাই। হ্যায় তো আবুইদা মানুষ,
আমাদের এত জনরে পালছিল, দেখি নাই অরে। অহন হকলে আসপাতালে
গিয়া মরতাছে, পুলা এতগুলা॥ শ্বামী আছে, আমাদের আকড়াইয়া ধরছিল
যহন, তহন আমাদেরই--[| এইও তান্গ। শরীর আছিল, ছুধ বাইরাইত ঠিবর
দিয়া" কুনদিন ভাবি নাই হেয়ার এই রোগ অইব।
পাপবোধের লয় বলছিল--নিয়তি কে খণ্ডাইতে পারে | হেয়ার কপালে
২৪৪ মহাখেতা দেবীর শ্রেঠ গল্প
আছে ক্যানসারে মরণ--ঠেকাইব ক্যাভা। আমাদের এহানে মরলে দোষ
অই'ত-_হেয়ার স্বামীপুত্র কইত কি কইরা মরল। অহন হেই দোষ হইতে
বাচছি। কেও কিছু বলতে পারব না।
বড়বাবু ওদের আশ্বস্ত করে বলল, “অহন অরুণ ডাক্তার কইতাছে ক্যান্সার
হইলে কেও বাচে না। বামুন দ্রিদির যেই ক্যানসার হইছে তা অইলে মাই
কাইট। ফালায়, জরায়ু বাদ দেয়, হেয়ার পরও মাইন্যে ক্যানসারে মরে ।
দেহ, বাবায় বামুন বইলা বড ভক্তি দিয়! গিছে--বাবার দয়ায় আমর বাইচা
আছি। ভিটায় বামুনদিদি মরলে প্রায়চ্চিত্ত করতে অইত |
যশোধার চেয়ে কম আক্রান্ত রোগী কত আগে মরে, যশোদা ডাক্তারদের
আশ্চর্ধ করে প্রায় এক মাস টিকে রইল হাসপাতালে । প্রথম গ্রথম কাঙালী,
নবীন, ছেলের! যাতায়াত করেছিল বটে, কিন্তু যশোদ1! একই রকম আছে।
কোমাটিক, জরে ভাজা-ভাজা আচ্ছন্ন । স্তনের ক্ষতগুলি ক্রমেই বড় বড় হা
করছে এবং শ্ভনটির চেহার1 এখন এক নগ্ন ক্ষতসদশ | আযার্টিসেপটিক লোশন
নিষিক্ত পাতলা গজ কাপড়ে সেটি আবৃত, কিন্তু গলিত মাংসের তীব্র গন্ধ
ঘরের বাতাসে ধুপের ধেশায়ার মতো নীরবে ও চক্রাকারে ছডাচ্ছে সর্বদা] ।
ত দেখে কাঙালীদের উৎসাহে ভ'ট। পড়ল ও ডাক্তারও বললেন, “সাড়া দিচ্ছে
না? না দিলেই তোভাল। অজ্ঞানেই সওয়1 যায় না, সঙ্জানে কেউ এ
যমযস্ত্রণা সইতে পারে ?"
«কিছু জানছে, আমরা আমি যাই বলে?
'বলা কঠিন ।
থাচ্চে কিছু ?'
“নল দিয়ে।”
“তাতে মান্য বাচে 1
গএথন যে খুব--
ভাক্তার বুঝলেন, যশোদার এ অবস্থার জন্ত তার মনে অহেতুক রাগ হচ্ছে ।
যশোদার ওপর কাঙ্ালীর ওপর, যে সব মেয়ের? ব্রেস্ট-ক্যানসার়ের লক্ষপকে
যথেষ্ট সিরিয়াসলি নেয় না এবং আখেরে বীভৎস নক্পক যন্ত্রণায় ময়ে, তাঘের
ওপর। ক্যানসার, রোগী ও ডাক্তারকে নিয়ত পরাজিত করে । একটি রোগীয়
ক্যানসার মানে রোগীর মৃত্যু এবং বিজ্ঞানের পরাজয়, ভাক্তারের তো৷ বটেই।
সেকেওান্ি' পিম্পউমের ওষুধ দেওয়া! যায়ঃ খাওয়া! বন্ধ হলে হ্রিপ দিয়ে
স্তনদারিনী ২৪৫
শরীরকে গ্ল,কোছ খাওয়ানে। চলে, শ্বাস নিতে ফুসফুস অপারগ হুলে অক্ষিজেন
--কিন্ত ক্যানসারের অগ্রগমণ, প্রসারণ, ব্যাণ্ি, হত্যা, অব্যাহত থাকে।
ক্যানসার শব্দটি এক সাধারথ সংজ্ঞা, এ সংজ্ঞা ছার শরীরের বিভিন্ন অংশে
বিভিন্ন ম্যালিগাণ্ট গ্রোথ বোঝায়। “দি গ্রোথ ইন পার্পাসলেল,
প্যারাসাইটিক, আযান্ভ ফ্লারিশেস আযাট দি এক্সপেন্স অফ দি হিউম্ান
হোস্ট।” এর চারিত্র্যবৈশিষ্ট্য হুল, সংক্রমিত শরীরাংশকে ধ্বংসকরণ,
মেটাস্টাশির়া দ্বার! ব্যাণ্তিৎ নিমুভালের পর প্রত্যাবর্তন, টক্সিমিয়।
সংঘটন।
কাঙালী তার প্রশ্নের সহুত্বর না৷ পেয়ে বেরিয়ে এল। মন্দিরে এসে সে
নৰীন ও ছেলেদের বলল, 'আর যেয়ে লাভ নেই । চিনতে পারে না, চোখ
খোলে না, জানতে পারে না! ডাক্তার যা পারে কতেছে।
নবীন ৰলল, যদি মরে যায়?"
'ড়বাবুর টেলিফোন নম্বর আচে» বলবে ।,
“ধর যদি তোমারে দেকতে চায়। সতীল্ষ্ষমী বউ তোমার ক্যাঙালী !
কে ৰলবে এতগুনোর মা! শরীর দেকলে-তা কোনে! দিকে হেলেনি,
চায়নি।»
বলতে বলতে নবীন গুম্ মেরে গেল। বস্তত, অচৈতন যশোদার
ক্ষতাক্রাস্ত স্তন দেখার পর তার গাজা-চরস-মদ জনিত ঘোলাটে মাথায় বহু
দার্শনিক চিস্তা ও দেহতত্থের কথা মিথুনমত্ত ঢোড়া সাপের মতো। মস্থর খেল!
করে। €যমন,--ওর জন্তরেই এত আকুলি-ব্যাকুলি ছিল 1-সেই মনমাতানে!
বুকের এই পরিণাম? হোঃ! মানবদেহ কিস্য নয়। তার তরে পাগল
হয় যে সেও পাগল ।
কাঙালীর এত কথা ভাল লাগল না। যশোদার প্রতি তার মন থেকেই
রিজেকশান এসে গিয়েছিল। লেদিন হালদার-বাড়ি যশোদাকে দেখে মন
সত্যিই কাতর হয় ও হাসপাতালে নেবার পরও ব্যাকুলতা থাকে। কিন্তু সে
অনুভূতি ঠাণ্ডা মেরে আলছে এখন। ডাক্তার যখন বলেছে যশোদ বাঁচবে না
সে মন থেকে যশোধাকে প্রায় অকষ্টে বাদ দিয়েছে । তার ছেলেরাও তারই
ছেলে। তাছাড়। ম৷ স্বাদের কাছে অনেকদিনই দুরের মান্য হয়ে গেছে।
ম! মানে চুড়ো করে বাধ! চুল ধপধপে কাপড়, প্রবল ব্যক্তিত্ব । হাসপাতালে যে
শুয়ে আছে, সে অন্ত কেউ, মা নয়।
২৪৬ মহাশ্বেতা! দেবীর শ্রেষ্ঠ গল্প
স্তনের ক্যানসারে ব্রেন কোমাটোজ হুয়, যশোদার বেল। সেটি মুশকিল-
আসান হল।
সে যে হাসপাতালে এসেছে, হাসপাতালে আছে, তা বুঝল যশোদা এবং
এও বুঝল, এই যে বিবশকারী ঘুম, এ ওষুধের ঘুম। তাতে থুব স্বস্তি হল
তার এবং দুর্বল ও আক্রান্ত, আচ্ছন্ন মত্তিফ্কে মনে হুল হালদার-বাড়ির কোনো
ছেলেটা কি ডাক্তার হয়েছে? নিশ্চয় তার ছুধ খেয়েছে বলে এখন দুধের খান
শুধছে? কিন্তু ওবাড়ির ছেলেরা তো স্কুল না পেরোতে কারুবারে ঢোকে !
যেই হোক, যারা এত করছে তারা বুকের দুর্গন্ধময় উপস্থিতিটা থেকে তাকে
মুক্তি দেয় না কেন? কিছুর্গন্ধ+ কি বেইমানি? এই স্তনকে সে ভাতের
যোগনদার জেনে নিয়ত গর্ভ ধরে ছুধে ভরে রাখত | স্তনের কাজই দুধ ধর]।
কত গন্ধসাবানে ম্তন মেজে পরিষ্কার রাখত, বড্ড ভারি ছিল বলে জামা পরেনি
যৌবনেও |
সেডেশান কমে এলেই যশোদা চেঁচিয়ে ওঠে, আঃ ! আঃ! আঃ 1'--
এবং ব্যাকুল ঘোলাটে চোখে নার্ঁশ ও ডাক্তারকে চায়। ডাক্তার এলে
সাভিমানে বিড়বিড় করে বলে? "দুধ খেয়ে এত বড়টা হলে এখন এমন কষ্ট
দিচ্চ ?"
ডাক্তার বলে» “বিশ্বসংসারে ছুধ-ছেলে দেখছে 1,
আবার ইঞ্জেকশন ও আবার নিদ্রাচ্ছন্ন আড়ষ্টতা। যন্ত্রণা, ভীষণ যন্ত্রণা,
আট দি এক্স্পেন্স অফ দি হিউম্যান হোস্ট ক্যানসার সংক্রমিত হচ্ছে। ক্রমে
যশোদার বাম স্তন ফেটে আগ্নেয়গিরির ক্রেটার-সধূশ হল। পুতিগন্ধষে কাছে
যেতে কষ্ট হয়।
শেষে এক রাতে, যশোদ। বুঝল তার পা ও হাত ঠাণ্ডা হয়ে আদছে।
চোখ খুলতে পারল না যশোদাঃ কিন্তু বুঝল, কেউ কেউ তাত হাত দেখছে।
হচ বিশধল বাহুতে । ভেতরে শ্বাসের ক্ট। হতেই হবে। কারা দেখছে 1
তারা কি তার আপন কেউ 1 যাদের পেটে ধরেছিল বলে ছুধ দেয়, ভাতের
জঙ্য যাদের দুধ দেয়, যশোরার মনে হল সে তে বিশ্বসংসারকে ছুধ দিয়েছে,
তবে সে কি একা-একা মরতে পারে ? যেভাক্তার দেখছে সেঃ যে ওর মুখে
চাদর টেনে দেবে সেঃ যে ওকে ইলিতে তুলবে সে, যে ওকে শ্মশানে নামাবে সে,
যে ওকে চুল্পিতে দেবে সে ভোমঃ সবাই তার ছুধ-ছেলে। বিশ্বসংসার়কে ছুধে
পারলে যশোদ| হতে হয়। নির্বান্ধবে একলা! মরতে হয়, দুখে জল ধিতে কেউ
তনদারিনী ২৪৭
থাকে না। অথচ শেষ সময়ট। কারো! থাকার কথা ছিল। সেকে? কে
সে? সেকে?
যশোদা মার] গেল রাত এগারো টায় ।
বড়বাবুর ধাড়ি ফোন গেল। রাতে গুদের ফোন ডিস্কানেক্ট করা
থাকে।
হাসপাতালের মর্গে যথাবিধি পড়ে থেকে যশোদা দেবী, হিন্দু ফিমেল।
যথ] সময়ে গাড়িতে শশ্ম(নে গেল ও দাহ হল। ডোমই তাকে দাহ করল।
যশোঁদ। যাযা ভেবেছিল ঠিক তাই-তাই হল | যশোদা ঈশ্বর-স্থন্ূপিনী |
সে যা ভাবে অন্যের ঠিক তাই করে, তাই করল॥ যশোদার মৃত্যুও ঈশ্বরের
ম্ত্যু। এ সংসারে মান্য ঈশ্বর সেঙ্জে বসলে তাকে সকলে ত্যাগ করে এবং
তাকে সতত একলা মরতে হয়।